সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আরামবাগের আরেফুল

আমার মোবাইল ফোনে আজও আরেফুল এর নম্বরটা সেভ করা আছে। নম্বরটা ডিলিট করিনি আমি আজও। আসলে ডিলিট করতে পারিনি।সত্যিই বলতে কি আমার ঠিক মনে নেই কবে কোথায় ওর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল আমার আর ওর।সেটা ভুলে গেছি প্রায় আমি। এত দিন বাদে কিছুতেই মনে পড়ছে না ওর সাথে প্রথম দেখার কথা আজ।

 সালটা খুব সম্ভব ভুল না হলে 1996 সাল হবে। হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায় তখন ট্রেন পথ চালু হয়নি। তারকেশ্বর থেকে বাস ধরে আরামবাগ যেতে হয়। সেই ভাবেই খবরের টানে দৌড়ে গেছিলাম একদিন আরামবাগ। সেখান থেকে আরো দূরের কোনো এক গ্রাম গৌরহাটি।

 সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী। গ্রাম জ্বলছে দাউ দাউ করে। এই খবর করতে আমি হাজির আরামবাগ। শুনলাম ঘটনার খবর পেয়ে কলকাতা থেকে দৌড়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরামবাগ মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে ধর্ণাতে বসবেন তিনি। বেশ গা গরম করা ব্যাপার আলাদা একটা অনুভুতি হলো আমার। অল্প বয়সে বেশ ভালো লাগলো।

 সন্ধ্যার অন্ধকারে এসডিও অফিসের এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে একটি রোগা পাতলা ছেলে।সাদা হাফ শার্ট কালো একটা প্যান্ট পরে। পায় একটা চপ্পল,কাঁধে একটা কাপড়ের রং চটা ব্যাগ। বুক পকেটে একটা পেন আর ছোটো নোট বুক জামার পকেটে। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক ঘুরে দেখছে সে। 

 কোনো সময় মহকুমা শাসকের গাড়ির ড্রাইভার এর সাথে কথা বলছে সে ফিস ফিস করে। গ্রাম থেকে ছবি করে খবর করে ঘুরে এসে আমিও দাঁড়িয়ে আছি সেখানে। একটু জড়তা নিয়ে সে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো আমায়, দাদা ভালো আছেন আপনি। আমি ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললাম। 

আরেফুল বললো গ্রামে ঘুরে কি দেখলেন। আমি বললাম ঐ আর কি এক অবস্থা। গ্রাম দখলের রাজনীতি দু দলের। মার খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঠিক বলেছেন আপনি দাদা। এই কথা আর কে বলে বলুন, আর কে ভাবে।


 বলতে বলতে কলকাতা থেকে ধুলো উড়িয়ে মমতা বন্দ্যো- পাধ্যায়ের প্রবেশ। হৈ হৈ ব্যাপার। ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আমরা সবাই। এই আলাপ এর মাঝে আমার অফিস এর নম্বরটা দিয়ে বললাম ওকে, কোনো খবর হলে জানিও ভাই আমায়। সেটাই শুরু আমাদের যোগাযোগের।
 ছোটো পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে আরামবাগ মহকুমা চষে বেড়াত আরেফুল। দুর দূরান্তের নানা খবর পেয়ে ফোন করে জানাতো আমায় ও।খবর পাগল ছেলেটা আমার কাছ আরামবাগ, গোঘাট,খানাকুল আর পুড়শুরার খবর পেলেই ফোন করত বলতো।দাদা, কি বলবো বলুন আবার গ্রাম জ্বালিয়ে দিল দাদা অমুক পার্টি। এটা কিন্তু ঠিক নয় দাদা। এসব কি চলছে বলুন আপনি।

আমি শুনতাম ফোনের অপর প্রান্তে চুপ করে। তখন আরে- ফুলের গলায় ঝরে পড়ত একরাশ অভিযোগ।দাদা আমি পুলিশকে বলেছি। আপনিও বলুন চুঁচুড়াতে এস পি কে। না হলে যে গ্রামের লোকগুলো গ্রাম ছাড়া হয়ে থাকবে। ঘরে ফিরতে পারবে না তারা। 

এই ভাবেই সে দিনে রাতে নানা ঘটনায়।আমায় ফোন করতো।সেটাই ছিল ওর আমার যোগা যোগের একমাত্র মাধ্যম। এই ভাবেই গড়ে ওঠে ওর আমার সখ্যতা। আর সেই সম্পর্কের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ওকে চিনলাম আরো কাছ থেকে।

 একটি ছোটো কাগজের মহকুমায় কাজ করা সাংবাদিক আরেফুল। বলতে লজ্জা নেই ওর মুখের খবরে কত দিন যে হেডলাইন হয়েছে আমার তার ঠিক নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতো আরেফুল। সেই এক পোশাকে। কাঁধে ঝুলি। মুন্ডেশ্বরী বার্তায় খবর ছেপেে খুশি ছিল সে। বড়ো কাগজে সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু করেনি। যদি নিজের মত ঘুরে, নিজের ইচ্ছায় খবর করতে না পারে সেই জন্য। ওর কলম বন্ধ রাখতে অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি লাল পার্টির দাপুটে নেতারা। পরে সবুজ পার্টি ক্ষমতায় আসার পর আক্ষেপ করে বলতো এই জন্য দাদা বদল হলো।

আসলে আরেফুল বোধ হয় জীবনে কোনো দিন শিরদাঁড়া বিক্রি করে নি। আমার আজও মনে আছে সেদিন রাতে আরে- ফুল এর ফোন। দাদা একটা উপকার করতে হবে। মুর্শিদাবাদে  একটি ছেলের কলেজে ভর্তির টাকা নেই। সেমিস্টার এর টাকা না দিলে পড়া বন্ধ হবে একটা কিছু করুন দাদা। 

ওর বাবা দর্জির কাজ করে দাদা। আপনি পারবেন সাহায্য করতে। অনেক চেষ্টা করে সেটা সম্ভব হলো মুর্শিদাবাদ জেলার এক সাংবাদিককে বলে। সেকি আনন্দ ওর  সেদিন। ছেলেটি পড়তে পারছে দাদা।সেই খুশি আমি বহুদিন পর দেখেছিলাম ওর গলায়।

এই তো সেদিনের কথা কোলকাতাতে কাগজ ছাপতে  আসার সময় আলাপ এক বৃদ্ধর সাথে ট্রেনে। অসুস্থ্ বৃদ্ধ পিজি হাসপাতালে যাবে। কিন্তু সাথে কেউ নেই। ছেলেরা দেখে না। ট্রেনে আলাপ করলো আরেফুল।আরেফুল আর সেদিন প্রেসে কাগজ ছাপতে গেলো না।

 ট্রেন থেকেই অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলো আমার কাছে। অচেনা নম্বর হলেও ফোনটা ধরলাম আমি। ও প্রান্ত থেকে দাদা, আমি আরেফুল বলছি। একটা খুব গরীব বৃদ্ধ অসুস্থ্ খুব। ওর কেউ নেই দাদা একটু কাউকে বলে দেবেন যেনো ভর্তি নেয় হাসপাতালে। আমি বললাম দেখছি। তোমার নম্বর থেকে ফোন করলে না। দাদা কি আর বলবো বালান্সটা নেই ফোনে। তাই ওনার ফোন থেকেই কল করলাম আমি। একটু দেখুন দাদা হসপিটাল পৌঁছে আমি বলছি আপনাকে। আমি অবাক বিস্ময়ে চুপ করে শুনলাম ওর কথা। 

এমন হয় নাকি জীবনের রাস্তায় হাঁটতে নেমে পথ ভুলে অন্য পথে চলে যাওয়া। শুধু কাউকে সাহায্য করতে পারবো বলে। আমরা কি এই ভাবে ব্যাট হতে জীবনের ক্রিজে ব্যাট করতে পারবো কোনো দিন বুক চিতিয়ে। না মনে হয়। 

গভীর রাতে আরেফুলের ফোন দাদা ধন্যবাদ ভর্তি করা গেছে। হয়তো পঞ্চাশ টাকা ফোনে রিচার্জ করতে পেরেছে সে কোনো ভাবে। তাই সারাদিন অভুক্ত থেকে রাতে ফোন করলো সে আমায়।

চাকরি করা মাসে বেতনভুক সাংবাদিক হয়ে মাঝে মাঝে যেনো ওর কাছে আমি হেরে যেতাম। ভাবতাম গ্রামের ওই সহজ সরল ছেলেটা কি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে বার বার। যারা আমরা জীবনের মাপা রাস্তায় হেঁটে অভ্যস্ত। আর আমরা চোখ বুজে এলো মেলো পা ফেলে রাস্তায় হাঁটছি। শুধুই নিজের জন্য।নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য।কে জানে।  
এই ভাবে তো স্বার্থপর জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো সেও। কিন্তু কেনো যেনো আমার মনে হয় আরেফুলরা অন্য ধরনের, অন্য প্রকৃতির। তারা রাস্তা ধরে হেঁটে চলে আমাদের সাথে থেকেও, কিন্তু একটু আলাদা ভাবে। 

এই তো সেদিন যেদিন আমার মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে সুযোগ পেলো কলেজে ভর্তির খবর পেয়েই আরেফুলের ফোন দাদা কোনো চিন্তা করবেন না, আমি দেখছি বোনের কি ব্যাবস্থা করা যায়। এই কথা বলে খোঁজ নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে থাকে এমন লোককে খুঁজে বের করে দিল সে। বললো দাদা ভাববেন না আমার পরিচিত ওনার বাড়িতেই থাকতে দেবেন হাবিবুর রহমান নাম আপনার মেয়েকে। আমি অবাক হলাম আবার।

 রাতের অন্ধকারে আরামবাগ এর এক পরিবার চণ্ডীগড় যাচ্ছে শুনে বললো দাদা আমি আছি এখন চণ্ডীগড় কোনো চিন্তা নেই ওদের বলুন আমার এখানে চলে আসতে কষ্ট করে রাতে থেকে যাবে। সকাল হলে ঘর খুঁজে দেখে দেবো আমি। রাতে আর কোথায় যাবে ওরা।

 আসলে এরা বোধ হয় আলাদা হয় আমার আপনার থেকে। আমরা সবাই ভাবি হিসেব করি, রাতে কেউ এলে কি অসুবিধা হবে আমার। এক রাতে কতটা অ্যাডজাস্ট করতে হবে অন্য কারুর সাথে। আমার সুন্দর সাজানো গোছানো জীবনের মোরাম রাস্তায় কতটা অ্যাডজাস্ট করতে পারবো আমি অন্যদের সাথে। কিন্তু আরে- ফুলরা বোধ হয় এই সব হিসেব নিকেশ করে না কোনো সময় কোনো দিন। 

ছোটো কাগজের জীবন থেকে আচমকাই বিদায় নিল সে। মনে হয় অ্যাডজাস্ট করতে অসুবিধা হচ্ছিল ওর। মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলতো কাগজটা ছেড়ে দেবো দাদা। সেটা দিলো ছেড়ে একদিন।

কোথায় চলে গেলো কেউ জানিনা। বহু দিন পর একদিন পঞ্জাব থেকে ফোন এলো। দাদা এখানে গরীব মানুষের জন্য কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি খুব।সরকার এখানে গরীবদের কাজ করতে চাই বলে আমায় সাহায্য করে। আমি অবাক হলাম।পরে শুনলাম ঘর ছেড়ে কাউকে না বলে সে একা একাই চলে গেছে বহু দূরে। অচেনা জায়গায় গিয়ে সে সেই গরীব মানুষের জন্য সাহায্য করে যাচ্ছে। 

সত্যিই তো যাকে একসময় সবাই মিলে এত কিছু দিতে চাইলো সেই নিশ্চিত জীবন ছেড়ে আরেফুল এমন জীবন কেনো বাছলো কে জানে। আসলে এরা বোধ হয় এমনি করেই আমায় আপনাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বলে, দেখো দেখো। আমরা সবাই দেখি কিন্তু দেখেই মুখ লুকিয়ে রাখি চুপ করে থাকি। 

যেদিন ও বললো দাদা আপনি চিন্তা করবেন না বোনের পড়ার জন্য আমার কিছু সোনার গয়না আছে সেগুলো বেচে দিয়ে বোনকে পড়াবো আমি। সেদিন আমি বললাম না না, একি বলছো তুমি। আরেফুল এর গলায় আত্মবিশ্বাস এর সুর। দাদা বোন পড়ে মানুষ হলে আপনার আনন্দ হবে। আমার ভালো লাগবে। একজন সৎ মানুষকে কিছু করলাম। আপনার মত সৎ মানুষ এর জন্য করা উচিত দাদা। আমার চোখে জল এসে গেল।আমি সেদিন ওকে নতুন করে চিনলাম। 

ততো দিনে আমরা দুজনেই দুজনের খুব কাছের মানুষ। বাস থেকে পড়ে গিয়ে আহত হলাম বালিতে  অফিস যেতে গিয়ে আরেফুল তা জানতে পেরে সোজা মহাকরণে পুলিশ কর্তাকে ফোন। জেলার  এস পি কে ফোন,মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কে ফোন করে বসলো।দেখুন আপনারা কি হয়েছে ওনার দুর্ঘটনা হয়েছে। একজন সৎ সিনিয়র সাংবাদিক। উনি নিজে কিছু বলবেন না কোনো দিন নিজের কথা। আপনারা একটু দেখুন।

 শ্রীরামপুর হাসপাতাল পৌঁছতেই হুলুস্থুল কাণ্ড। চারিদিকে সাজো সাজো রব কে আসছে চিকিৎসা করতে। আমি খুব লজ্জিত হলাম। দাদা আপনি ঠিক আছেন তো, আমি বললাম হ্যাঁ গো। এই হলো আরেফুল।

 মোবাইলে এই লেখাটা টাইপ করতে করতে কন্ট্যাক্ট লিস্টে ওর নম্বরটা থাকলেও 9434630156 বহুদিন আর আরেফুলের ফোন আসেনি আমার কাছে। আচমকা বলেনি দাদা, কেমন আছেন। আমি জানি আর কোনো দিন আসবেও না সেই ফোন। তবু মোবাইল ফোনটা হাতে ধরে ভাবি যদি আসে ফোনটা। বলে দাদা ওই যে সেই বুড়োটা যার চিকিৎসা হচ্ছিল না তাকে একটু দেখে দেবেন আপনি। আর ওই যে ছেলেটাকে ভর্তির টাকা জোগাড় করা হলো সে একটা কাজ পেয়েছে দাদা। 

সারা বছরের সালতামামির হিসেব কষতে বসে আজ আরেফুল কে বড়ো  বেশি করে মনে পড়ছে আমার। কেনো যে চলে গেল আচমকা সবাইকে ছেড়ে কে জানে। কাউকে বুঝতে দেয়নি সে অসুস্থ্ ছিল। ভালো ছিল না সে। বড়ো কুকুর ভালো বাসতো সে। চণ্ডীগড় এর সেই স্কুলে তাই কালো সাদা একটা টমকে নিয়ে থাকতো। সারাদিনের শেষে নিজে সয়াবিন আর ভাত রেঁধে খেত। পাশে বসে টমকে খেতে দিতো।দুজনে খাওয়া সেরে একসাথে ঘুমোতে যেত চৌকিতে।

 যেদিন টম চলে গেলো সেদিন আরেফুল অনেক গভীর রাতে ফোন করলো আমায়, বললো দাদা টমকে আমি স্কুলের মাঠে এই মাত্র শুইয়ে দিয়ে এলাম। রোজ সকালে উঠে তাহলে ওকে দেখতে পাবো আমি। কোনো কথা বলতে পারিনি সেদিন আমি।সকালে উঠে টমের কাছে গিয়ে গল্প করতো সে চোখের পানি ফেলে।

আসলে এরা বোধহয় এমনই হয়। রক্ত মাংসের বুদ্ধিমান প্রাণী দু পেয়ে মানুষ গুলোর থেকে একটু আলাদা। স্বার্থপরতার মুখোশ ধারীদের থেকে একদম আলাদা। আজ বড়ো বেশি করে আমি এই শীতের নিশুতি রাতে আরেফুলের একটা ফোন পেতে চাইছি। শুধু একটা ফোন।

 বিশ্বাস করুন আপনারা সত্যিই বলছি ওর ফোনটা রিসিভ করতে চাইছি আমি আবার বহুদিন পর। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে আরেফুল আমাদের থেকে দূরে অনেক দূরে চলে গেছে।কাউকে কিছু না বলে, না জানতে দিয়ে। না খবর দিয়ে। 

ট্রেন করে  চণ্ডীগড় থেকে বাড়ী ফেরার পথে অসুস্থ্ হয়ে ট্রেনের মধ্য মারা যায় আরেফুল। অনেক কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে চলে যায় সে এই ধুলি ধূসর  পঙ্কিল পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু আমার কেনো জানি না আজ ওর সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে ,এই গভীর গোপন রাতে। রাতে সেই পুরোনো গল্প করতে ইচ্ছা করছে ওর সাথে। সেই সব জেলায় জেলায় ঘুরে কাজ করতে গিয়ে,নানা কথা ওর সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে আবার। 

হাত পা ওলা স্বার্থপর মানুষদের সাথে নয়। শুধুই ওর সাথে যে জীবনে নিজের কথা ভাবতে পারলো না। যে নিজে এত বড় স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নিলেও অন্য লোকের কথা ভেবে গেলো সারাটা জীবন ধরে। সেই মানুষটাকে বড়ো বেশি করে হাত বাড়িয়ে ধরতে ইছা করছে আমার আজ এই বছর শেষের নিশুতি রাতে। 

জানি না, আরেফুল আর কোনো দিন সেই পকেট থেকে ছোটো ফোনটা বের করে। আর দাদা বলে আমাকে ফোন করবে না। আমার মোবাইলের স্ক্রিনে আর কোনো দিন ওর নামটা ভেসে উঠবে না।

 তবু যদি আচমকাই রাতে ও ফোন করে বলে দাদা আপনি কাজ করছেন না। কী করে চলবেন আপনি। বুঝলেন দাদা ক্ষমতায় আসার আগে একরকম থাকে সবাই। ক্ষমতা পেলে এরা সব বদলে যায়। সে বাম,ডান যেই হোক। কিন্তু কি করবেন বলুন আমার তো তিন কুলে কেউ নেই আপনার সংসার আছে। বোনকে পড়াতে হবে, তাই আপনাকে সব মেনে নিয়ে, মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে হবে দাদা।কিছুই আমি,আপনি বদলাতে পারবো না দাদা।

 নিস্তব্ধ রাতে আমি চুপ করে অপেক্ষা করি। মুঠো ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমি। ভাবি নিশ্চয়ই আরেফুল এর ফোন আসবে 9434630156 নম্বর থেকে।

 একদিন না একদিন। কারণ আরেফুলরা বোধহয় মরে না। হারিয়েও যায় না। নিশ্চয়ই ও এদিক ওদিক আল্লাহর কাছে লুকিয়ে আছে কোথাও। আবার হটাৎ কোনদিন বলবে দাদা আমি আরেফুল বলছি পাঞ্জাবের গ্রাম থেকে। 

এই রাতে আমি ঘুম জড়ানো চোখে বলবো বলো আরেফুল, তুমি কোথায়। আরেফুল বলবে দাদা আমি আপনার খুব কাছে আছি, একদম কাছে। আপনি আমায় দেখতে পাচ্ছেন না। আমি আপনাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি দাদা। আমি নিথর হয়ে ওর উপস্থিতি টের পাই। চোখের পানি সামলাতে পারি না আর। আরেফুল বলে দাদা আপনি চিন্তা করবেন না।আল্লাহ আছেন ,দেখবেন একদিন সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে। সৎ মানুষের কষ্ট থাকে না।আপনার কষ্ট,যন্ত্রণা সব দুর হয়ে যাবে দাদা।

 আমি হাউ হাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠি।চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যায় সব শব্দ, লাইন, মোবাইলের স্ক্রীন। আমি চুপ করে নিথর হয়ে বিছানায় পড়ে থাকি। দু চোখের পানি সামলাতে না পেরে।

 মনে মনে ওকে বলি এত কান্না জমেছিল আমি বুঝিনি আরেফুল। বিশ্বাস করো ভাগ্যিস তুমি আজ এই রাতের অন্ধকারে এলে। তাই পাথর চাপা বুকে আজ শীতের রাতে আচমকাই দমকা ঝড়ে অসময়ের বৃষ্টি নামলো। যে জলে ভিজে তোমায় অনুভব করলাম আমি আবার। ভালো থেকো তুমি আরেফুল। মন খারাপ হলে মাঝে মাঝে এমন করে এসো আমায় ভিজিয়ে দিয়ে যেও।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...