সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে

আজি   ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে

জানি নে,   জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥

     এই   চঞ্চল সজল পবন-বেগে   উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে   মন চায়

              মন চায়   ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥

মেঘমল্লারে সারা দিনমান।

          বাজে ঝরনার গান।

              মন হারাবার আজি বেলা,   পথ ভুলিবার খেলা-- মন চায়

                        মন চায়   হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥

আসলে বর্ষার এই ঝাপটায় নাজেহাল আমিও। কত বছর আগে কবি এমন দিনে এই কথাই তো লিখে ছিলেন। যে বর্ষার দিনে কাজে মন লাগে না আর কিছুতেই তাঁর। মন শুধু চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে। আজ তো শুধু মন হারাবার বেলা। আর পথ ভুলিবার খেলা। সারা দিনমান মেঘমল্লারে মুখরিত হয় প্রকৃতির রূপ। এমন মনের অনুভূতি নিয়েই তো তিনি পথ ভুলতে চেয়েছিলেন এমন ভরা ভাদরের দিনে। 

আর এই ভরা বর্ষাকে মাথায় নিয়ে হাতে ছাতা নিয়ে অবিরাম বর্ষাকে সঙ্গে নিয়ে আমি চললাম সোজা মন চল নিজ নিকেতনে। কিন্তু পথ ভুলতে নয় নিজের মনের পথ খুঁজে নিতে। শ্রীরামপুর ছেড়ে বোলপুরে। আসলে মন যে কখন কি চায়, কাকে চায় সেটা সে বোধ হয় নিজেই জানে না ভালো করে। মনের আর দোষ কোথায় বলুন। ভেজা মন, ভেজা পথ ঘাট রাস্তা, ভেজা ঠোঁট, গালের নিচে ভেজা কালো তিল, সব আজ কেমন যেনো মনমরা। মাটির ঘরে চুপটি করে ঘাপটি মারা ঠিক ওই হলুদ ছোপ ছোপ সাপের মতই।

 জানলার ফাঁক দিয়ে গলে গলে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা জলের টুপটাপ বৃষ্টির আলতো ছোঁয়া। দ্রুত ছুটে চলেছে ট্রেন ভেজা পথ ধরে। ভেজা মাঠ পেরিয়ে। দূরে আকাশ পানে ঘন কালো মেঘের আস্তরণ। ট্রেনের গতির সাথে তাল মিলিয়ে ছুটে চলেছে সেও। আজ এই বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে নিজেকে কেমন যেনো বেশ ওই গানটাই গুনগুন করে গান গাইতে ইচ্ছা হলো আমার বহুদিন পর। আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে। 

যে বর্ষার ভেজা দিনে পথ হারাতে হয়। ঠোঁটের নিচে লুকিয়ে থাকা ভেজা কালো তিলের সন্ধান পেতে হয়। ভেজা কালো চুলের ঝাপটায় নিজের শুকনো শরীর ভিজিয়ে নিতে হয়। চোখ বুজে বৃষ্টির জলের ধারায় নিজেকে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে ভালোবাসার উত্তাপকে অনুভব করতে হয়। সত্যিই বলতে কি এমন জলে ভেজা বৃষ্টির দিনে প্রকৃতির এই বৃষ্টি ভেজা রূপ দেখে মনটা বড়ো উদাস হয়ে গেলো আমার। বর্ষার জলে সিক্ত প্রকৃতি আজ যেনো ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে উজ্জীবিত। কেমন যেনো সিক্ত। আর সেই সিক্ততা, রিক্ততা, শুন্যতা এতদিন পর আমায় বড়ো বিধুর করে দিলো।
 
জানলার দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে দূরের ওই মাঠ পেরিয়ে তেপান্তরের পানে। অন্ধকার নেমে আসছে ধীরে ধীরে। দূরে ওই বাড়ির ভেজা উঠোনে সাঁঝবেলায় পিদিম হাতে গ্রামের মহিলা সংসারের মঙ্গল কামনা করছে। ভেজা আকাশ,ভেজা মাঠ পেরিয়ে ঘরে ফিরছে জলে ভেজা পাখির দল আপনমনে। ওদের ডানায় সন্ধ্যার মেঘের কালো মেয়ের দীঘল চোখের চাহনি পিছলে পড়ছে। মাঠ পেরিয়ে, কালো মেঘের চূড়ো এড়িয়ে ওরা ঘরে ফিরছে আপনমনে। বৃষ্টি ভেজা আমিও ওদের মত ঘরে ফিরছি আপনমনে। একটু উষ্ণতার খোঁজে। 

আজি ঝর ঝর মুখর বাদরদিনে - অভিজিৎ বসু।
পয়লা আগষ্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...