সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আকাশ কালো মেঘের কথা। আসলে ঈশান কোণে কালো মেঘের ওই আস্তরণ। আর হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলকানি দেখে মন ভালো হয়ে গেলো। সবুজ মাঠের ধারে কেমন ওই নির্ভয়ে ধান বোনার কাজ করে চলা মেয়ের দল হাসি মুখে নিশ্চিন্তে কাজ করে চলেছে এতটুকুও ভয় না পেয়ে। আর এসব দেখতে দেখতে আমার মনে হলো সত্যিই তো এত সুন্দর করে নিবিড় করে এই ভাবে কালো মেঘের আড়ালে আবডালে লুকিয়ে চুরিয়ে থাকা জীবন এর নানা অনুষঙ্গ তো চোখে পড়েনি আমার বহুদিন। যা দেখে মনে হলো সত্যিই অসাধারন এই দৃশ্য।
মা কঙ্কালী তলা থেকে সাইকেলে করে বোলপুর ফিরছি মেরে কেটে চল্লিশ মিনিট সময় তো লাগবেই। শনিবার হলেই আমার মন টানে মার কাছে তাই ছুটে যাই। পূজো দিতে নয়, ভক্তি দেখাতে নয়, শুধু মার টানে ছুটে যাওয়া। চুপচাপ বসে থাকা। হাটে বসে জীবন কে খুব কাছ থেকে দেখা। জীবনের নানা রঙের উজ্জ্বল ছোপ ছোপ সব রঙিন দাগকে নিজের সাদা জীবনের পাতায় তুলে ধরে রাখা।
আসলে রাস্তা দিয়ে সাইকেলে করে আসতে আসতে ভাবছিলাম আমি কত যে মাতব্বরদের সন্ধান পেলাম এই জীবনে সেটা ভাবলে কেমন যেনো থমকে যাই এই বৃষ্টি ভেজা রাস্তায়। ওই কালো মেঘের আড়ালে ঝড় বৃষ্টির মতো মাতব্বরি দেখাতে হাজির হয় তারা কারণে অকারণে।মাতব্বররা জীবনের নানা সময়ে, নানা মুহূর্তে, কত মধুর স্মৃতি নিয়ে হাজির হয়। ঠিক যেনো সিনেমার পর্দায় হাফ টাইম হবার মত ঘন্টা বাজিয়ে তাদের আগমন ঘটে। জানান দিয়ে যায় যে তারা এসেছেন।
অতএব তাদের কাছে হাত জোড় করো, পা ধরো, শিরদাঁড়া বিকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকো। না, এইভাবে এলেবেলে এলোমেলো বিন্দাস জীবন কাটিয়ে দেওয়া একজন পরিকল্পনাহীন মানুষ হয়ে এসব করতে পারব না কিছুতেই আমি। তাই বোধহয় সমাজ, সংসার, জীবন, আত্মীয়, স্বজন,পরিজন থেকে দূরে বহু দূরে সরে এসেছি ধীরে ধীরে। অজানা, অচেনা পথের পথিকদের সাথে পরিচয় করে কেমন দিব্যি সুখেই বেঁচে আছি আর কি।
তাই কালো আকাশের মেঘের ডাকে কোনো ভয় না পেয়ে কেমন খুশি মনে গান গাইতে গাইতে রাস্তায় ঘুরে বেড়াই আমি। কঙ্কালীতলার ফাঁকা মন্দিরে মাকে হাতজোড় করে তাই আমি বলি মা এইভাবে এলেবেলে এলোমেলো বিন্দাস জীবন যেনো কেটে যায় কোনো ভাবে এই শক্তি দাও তুমি আমায় শুধু। যে যাই বলুক, যে যাই করুক, আমি যেনো আমার সাদা জীবনের এই মেঠো পথে এই ভাবেই পথ চলতে পারি হাসি মুখে বাকি জীবনটা।
যে পথে চলতে চলতে কালো মেঘের গর্জন শোনা যাবে, বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাবে, মাতব্বরদের ফিসফাস আর হুংকার আর আস্ফালন শোনা যাবে, মাঝে মাঝে হয়তো দুর থেকে মাতব্বরদের লাথি মারার হুংকারও শোনা যাবে। কিন্তু এই সব কিছুকে তুচ্ছ করে উপেক্ষা করে এমন ফাঁকা রাস্তায় আমি যেনো এগিয়ে যেতে পারি নিজের এলোমেলো, এলেবেলে, জীবন নিয়ে। সাইকেলের টিং টিং বেল বাজিয়ে। ওই কালো মেঘের আস্তরণ সরিয়ে ধীরে ধীরে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন