সাদা জীবনের কালো কথায় আজ একটি মেয়ের মৃত্যুর কথা। সেই মৃত্যুকে ঘিরে সারা রাজ্য জুড়ে শোরগোল। আর এর মাঝে কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে তাঁদের তদন্তের প্রতি আস্থা আর ভরসা রাখার করুন আবেদন। আর তার মাঝে সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, কলকাতা পুলিশ না পারলে এই কেস তিনি সিবিআই এর হাতে তুলে দেবেন। সত্যিই একটা মেয়ের মৃত্যুকে নিয়ে কত কিছুই না দেখতে হয় আমাদের মত ছাপোষা এই দিন আনা দিন খাওয়া আর একটু স্বপ্ন দেখা মানুষদের। যে স্বপ্ন হয়তো সেই মেয়েটিও দেখেছিল। আর মেয়েটির পরিবারও স্বপ্ন দেখেছিল তাকে ঘিরেই। কিন্তু এক নিমেষে, এক লহমায় সব কিছু ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেলো।
আসলে মৃত্যু তো মৃত্যুই। সেই মৃত্যুকে ঘিরে শোরগোল, হৈ হট্টগোল যাই হোক একটা মৃত্যু জীবনের সবচেয়ে কালো একটা দিন, কালো একটা অধ্যায়। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া একটা দিন। যেদিন জীবন আর মৃত্যুর মাঝে কোনো সেতু থাকে না। একজন অপরজনকে আলিঙ্গন করে নিশ্চিন্তে আর নির্ভয়ে। সেই মৃত্যু নিয়ে এত কথা বলার কোনো অবকাশই থাকতো না। কিন্তু এই মৃত্যু যে একদম আলাদা।
কিন্তু সেই মৃত্যু যদি এই ভাবে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হয়। যে মৃত্যু একদম সময় মেনে, নিয়ম মেনে হয় না। যে মৃত্যু আমাদের বুঝিয়ে দেয় এই আপাত সুখের, এই দ্রুত এগিয়ে চলা একবিংশ শতকের এই সমাজ কতটা ঘৃণ্য আর পঙ্কিলতার পাঁকে আজও পূর্ণ হয়ে আছে। সত্যিই সেই রামমোহনের সতীদাহের যুগ পার করে এসেও এত দিন পরেও এত বছর পরেও আমরা বোধ হয় সেই দামোদরের নদীর বালির চরায় আটকে আছি, আজও এতদিন পরেও। এতটুকুও এগোতে পারিনি আমরা এতগুলো বছর পার করেও। আমাদের চিন্তায়, মননে বদল হয়নি এতটুকুও। জৈবিক প্রবৃত্তিকে লাগাম পরাতে পারিনি এতদিন পরেও এত সভ্য হয়েও। সত্যিই আদিম যুগ পার করে এসেও আমরা আজও আদিম হয়েই বেঁচে আছি এই সভ্য সমাজে সেজেগুজে। ক্ষমতার বর্ম পরে হাসি হাসি মুখে ঘুরে বেড়াই কেমন নির্লজ্জের মতো। সত্যিই বড়ো লজ্জা হয় আজ।
জানি সেকথা বারবার বলে আর কি লাভ। তবু তো বলতে হয় মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে। নানা ঘটনার অভিঘাতে আচমকা বাকরুদ্ধ হয়ে। সত্যিই তো জীবনের নতুন স্বপ্ন দেখা একটি মেয়ের মৃত্যুকে ঘিরে রাজনীতির এই নানা টানাপোড়েন। সিবিআই না কলকাতা পুলিশের তদন্ত কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ তার হিসেব নিকেশ করে সবার সামনে রিপোর্ট কার্ড পেশ। সময় বেঁধে দিনক্ষণ মেপে দিয়ে তদন্তের কাজে লাগাম পড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর একসময় সিবিআই নিয়ে এত আপত্তি থাকতো সময়ে অসময়ে। আজ সেই তিনিই তো সঠিক তদন্তের জন্য আহবান করছেন সেই দূরের বাড়িতে বাস করা সিবিআইকেই। যার কাজে সফলতা নেই কোথাও বলে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন সবার সামনেই।
সে তাপসী মালিকের মৃত্যু হোক, রিজওয়ানুরের মৃত্যু হোক, বা নন্দীগ্রামের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনায় চোদ্দজনের নিখোঁজ হয়ে যাবার ঘটনাই হোক। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরির কিনারা হোক। কোনোটাই তো সঠিক ভাবে তদন্ত করতে পারেনি এই সাদা সিবিআই। তবু রবিবার এর মধ্যে পৃথিবী বিখ্যাত এই কলকাতা পুলিশ যদি তদন্তে সঠিক সাফল্য না পায় তাহলে কিন্তু সেই তাপসী মালিকের মৃত্যুর তদন্তকারী সংস্থাকেই দেওয়া হবে আরজিকর কেস এর দায়িত্ব। আর এটাই হলো বাস্তব সত্য।
কিন্তু কেন এমন হয় বার বার বলতে পারবেন এই রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো কুশীলবরা। কেনো মেয়েদের বার বার এই ভাবে পশুর হাতে মরতে হয়। না, তার কোনো উত্তর কারুর কাছেই নেই। একটু হৈ হট্টগোল হয় কদিন তারপর আবার যেকে সেই এক অবস্থা। কেনো কোনো নিরাপত্তা থাকে না কন্যাশ্রী আর রূপশ্রী পাওয়া হাসি মুখে ঘুরে বেড়ানো জীবনের এই ছোটো ছোট সুন্দর ফুলের মত মেয়েদের জীবনে। কে জানে হয়তো তার উত্তর জানার অধিকারও আমাদের মত ছাপোষা মানুষের কারুর নেই। সেই প্রশ্নের জবাব চাইতে গেলে যে বিপদে পড়তে হবে এই আমজনতাকে তবু মনের মাঝে লুকিয়ে থাকে এমন হাজারও প্রশ্ন, হাজার কথা। যার উত্তর মেলেনা কিছুতেই।
শুধু কলকাতা পুলিশের ফেসবুকে ভরসা রাখার আবেদন নয়। সিবিআই তদন্ত চেয়ে কিছুটা নিজের রাজ্যের পুলিশকে দোষ দিয়ে আসল ঘটনাকে কিছুটা থিতিয়ে দেওয়া নয়। নিজের রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে রাজনীতির এমন প্যাঁচ পয়জার করাও নয়। আসলে এর শেষ হওয়া দরকার। এই দ্রুত এগিয়ে চলা একটা দেশে, একটা রাজ্যে এর শেষ হওয়া দরকার। না হলে বার বার এমন ঘটনা ঘটবে। আর বারবার এমন করে উলঙ্গ হবে আমাদের আদিম পাশবিকতা। যা দেখে নিজেরাই আমরা লজ্জা পাবো আর মুখ লুকিয়ে বলবো ছি ছি। আমরা দু পেয়ে সভ্য মানুষরা এমন জীব।
একটা মৃত্যু - অভিজিৎ বসু।
বারো আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন