সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই ওই বিশেষ শ্রেণীর এক জীবীদের কথা। সমাজের বিশেষ শ্রেণীর এই জীবিদের হঠাৎ হঠাৎ করেই দেখতে পাওয়া যায় মাঝে মাঝেই। সব সময় এরা রাস্তাঘাটে জনসমক্ষে বের হন না। আসলে তাঁরা বের হতে পারেন না। আলাদা একটা পরিচয় আছে না তাঁদের। তাঁরা যে ওই বিশেষ এক জীবী সম্প্রদায়ের লোক বলে কথা।
কখনও তাঁদের শিরদাঁড়া জেগে ওঠে আচমকাই। আবার কখনো শীত ঘুমে যাওয়া সরীসৃপের মত এরাও ঘুমিয়ে পড়েন যখন তখন। আসলে এরা তো আর আমার আপনার মত শ্রমজীবী,কৃষিজীবী, মানুষ নয় এরা যে সেই বিশেষ এক শ্রেণীর মানুষ। তাঁরা যে বিশেষ ওই কি বেশ বলে যেনো ওই বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা ঠিক সময় বুঝে, হাওয়া বুঝে, দিনক্ষণ বুঝে পাঁজি দেখে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। চুপিসারে ঠিক যেনো অভিসার করতে যাচ্ছেন তাঁরা।
আর তারপর দল বেঁধে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেন কে কোথায় আছে, হাওয়া বইছে কোন দিকে। তারপর যেদিকে হাওয়া বইছে সেই দিকে বইতে শুরু করেন তারাও। পরিস্থিতি অনুযায়ী এই বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এর লোকজন রাস্তায় হাঁটতে নেমে পড়েন। তারা সে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই, জঙ্গলমহল, পাহাড়, নদী, মাঠ, ঘাট সব জায়গায় এদের অবাধ ও স্বচ্ছন্দ বিচরণ। কেউ কিছুই মুখ ফুটে বলতে পারে না এদের কোনোদিন। কারণ একটাই এরা যে সবাই বুদ্ধিজীবীর দল। নিজের মেধা, বুদ্ধি, মনন, চিন্তা, ভাবনা এসব নিয়েই তো এঁদের কারবার। এঁদের বেঁচে থাকা। এদের শরীরের রক্তে প্রবাহিত হয় অন্য ভাবনা চিন্তার শ্রোত। আমাদের মত সাধারণ আম আদমি নয় যে এরা।
তাই সব জায়গার মত এইবারও তারা অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে, সেজে গুজে, চোখ ঢেকে পৌঁছে গেলেন সেই আরজিকর হাসপাতালের গেটে। যেখানে জোরকদমে চলছে ছাত্র ছাত্রীদের ধর্না, প্রতিবাদ, আর জোরদার আন্দোলন। ওই একরত্তি মেয়েটার জন্য। পৌঁছে গেলেন অপর্ণা সেন, পল্লব কীর্তনিয়া, মীরাতুন নাহার এমন বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের নানা নামজাদা মানুষ জন। ক্যামেরার ঝলকানি, হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি কাটিয়ে অনেক কষ্ট করে তারা আন্দোলনের ঢেউ এর তালে তাল মেলাবার চেষ্টায় বারবার কাতর হলেন তাঁরা।
কালো রোদচশমা পরা সেই গ্ল্যামারাস বুদ্ধিজীবীর কথা শুনতে সবাই তখন উদগ্রীব। শরীর ভালো নেই বলে অল্প দু চার কথা বলবেন বলে বার কয়েক রুমালে মুখ মুছে, কালো চশমার ভেতর থেকে দুঃখ উগড়ে দিয়ে অস্ফুটে দু চার কথা বলে নিজের কাজ সারলেন তিনি। বলে দিলেন মিডিয়াকে আলাদা করে কিছুই আর বলার নেই তাঁর। এই বলে মিডিয়ার ক্যামেরাকে কোনো ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন তাঁরা সবাই গাড়িতে উঠে। হৈ চৈ হুল্লোড় সব শান্ত হয়ে গেলো এক নিমেষে। কারণ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই বাবু শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর দল তখন আবার শীত ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন যে।
নিজের ঘরে ফিরে সুন্দর দক্ষিণ খোলা ফ্ল্যাটের সাজানো ড্রয়িং রুমে তখন টিভির পর্দায় ভেসে উঠেছে নিজের দুঃখ মাখা মুখের করুণ ছবি। বেশ বহুক্ষণ পর ঘরে ফিরে নিজের কালো চশমা ছেড়ে বেশ আরাম লাগছে এখন অনেকটাই। টিভিতে নিজের ছবি, ক্যামেরার ঝলকানি, হুড়োহুড়ি দেখতে দেখতে গরম কফিতে চুমুক দেওয়া। সত্যিই তো তাঁরা যে সব অন্য গ্রহের জীব, অন্য জগতের জীব। আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষদের সাথে তাঁদের ফারাক যে অনেক।
অন্য গ্রহের জীব - অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন