সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুপন

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ একটা কুপনের গল্প। আসলে কি জানেন তো প্রতিদিন তো আমি নানা গল্প খুঁজি। জীবনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা, জড়িয়ে থাকা কিছু গল্প। যে গল্প গাছের পাতায় লুকিয়ে থাকা গিরগিটির মত রং বদলায় না। জীবনের মেঠো পথে উজ্জ্বল হয়ে জ্বল জ্বল করে। আর সেই সব অজানা, অচেনা মানুষ যারা পথের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তাদের সাথে পরিচয় না থাকলেও যে কেমন করে আপন হয়ে যায় তারা কে জানে। আমার এই আপাত এলোমেলো এলেবেলে জীবনে কেমন করে যে আপন হয়ে যায় তারা কে জানে। আসলে জীবন বোধহয় এমনই। যে চেনা মুখ চেনা মানুষ কেমন অচেনা হয়ে যায় কত দূরে চলে যায়। আর অজানা অচেনা মানুষ কত যে চেনা পথের পথিক হয়ে যায় কে জানে। আসলে সেই শীর্ষেন্দুদার সেই বিখ্যাত লাইন অভিজিৎ, জীবনকে দেখো জীবনই হলো সব থেকে বড় শিক্ষক। আর তাই তো জীবন দেখার নেশায় বুঁদ আমি এই বুড়ো বয়সেও।
এবার আসি কুপনের গল্পে। শনিবার আজ তো সেই আমার হাটবার। তাই শুক্রবার রাত কেটে শনিবার এলেই কেমন যেন আনন্দ লাগে আমার। আকাশের নিচে, গাছের নিচে বসে থাকার আনন্দ। বেচাকেনা না হোক একটা বেশ মুক্তির আনন্দ মেলে যে। তাই শনিবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে চললাম মা কঙ্কালীতলায় হাটে বসতে। সাইকেল করে একঘন্টা সময়ে বোলপুর থেকে পৌঁছে গেলাম মা কঙ্কালীতলার মন্দিরে। আসলে এটা ঠিক উইকএন্ড কাটানোর মতো বিষয় আর কি। বেচাকেনা না হলেও একটু ঘুরে আসা আর কি। 
আজ চড়া রোদ মাথার ওপর। ঘেমে নেয়ে একশা হয়ে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছলাম মন্দিরে বেলা বেশ বেড়ে গেছে। সেই সব চেনা মুখ, চেনা মানুষ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে তারা। সব এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে তারা। আমিও বসে পড়লাম ওদের মাঝে। ভাদ্র মাসের প্রথম দিন শনিবার মন্দিরে বেশ ভিড় জমিয়েছেন পুণ্যার্থীর দল। লাইন পড়েছে পূজো দেবার। ঢং ঢং ঘণ্টার আওয়াজ, ধূপের গন্ধে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো। একে শনিবার তার ওপর নিজের সময় খারাপ যাওয়া সব মিলিয়ে ভক্তিভরে মাকে প্রণাম করলাম। যদি সময় ভালো হয় এই আশায়।
 শুনলাম আজ দু জায়গায় খাবার দেওয়া হবে দুপুর বেলায়। এই বলে একটা কুপন দিলো সিপ্পু আমায়। সিপ্পুর সাথে বন্ধুত্বটা বেশ জমে গেছে আমার। দুই অসম বয়সী মানুষের বন্ধুত্ব কিন্তু কেমন একটা কত দিনের যেনো পরিচয় আমাদের। বেশ সুন্দর করে মধ্যাহ্ন ভোজনের কুপন দেখালো। কে দিয়েছে এটা আজ। বললেন মামুদ ভাই দিয়েছেন। ওই দিকে শিব মন্দিরে খাওয়া দেবে আজ। বেশ খুশি মনে বললো সিপ্পু। আর কঙ্কালীতলার মন্দিরের এদিকেও খাওয়াবে আজ।আপনার কুপন লাগবে রেখে দিন। আমি বললাম না লাগবে না আমার কুপন। দাও একটু ছবি তুলে রাখি।
 কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েত এর উপপ্রধান এই মামুদ ভাই। সামনে থেকে  তাঁকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। কিন্তু দু একবার ফোনে কথা বলে বেশ ভালই লেগেছে বেশ। নেতা হলেও অন্ততঃ সাধারণ মানুষের ফোন ধরেন, কথা বলেন, সাহায্যো করেন এটাই বা কটা লোক কজন নেতা আজকাল করেন। ভাবলাম যাক তাহলে ভালই হলো আজ দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছে এরা। চিন্তা কি তাহলে আর।আসলে পেট বড়ো বালাই যে কি বলেন। একঘন্টা সাইকেল চালিয়ে এসে দুটো ভাত খেতে পাবো এটাই যে অনেক বড় কথা। একবেলা পেট পুরে একটু খেতে পেলে যে বর্তে যেতে হয়।  
বেলা বারোটার পর থেকেই দেখলাম দুর থেকে বসে কেমন সব লাইন পড়ে গেলো খাবারের জন্য। সত্যিই তো লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও ভাত তো মিলবে। আজকের মেনু বেশ ভালো ভাত, পোলাও, ছানার তরকারি, পায়েস, চাটনি, পাঁপড়, সাথে আবার দশ টাকার জলের বোতল। ভাবলেও কেমন অবাক হলাম বেশ গুছিয়ে আয়োজন। 
সতী পিঠ মা কঙ্কালীতলায় মার মন্দিরে বসে ভাবছিলাম আমি এই জন্য তো এত দৌড়, এত লড়াই, এত ঠেলাঠেলি, এত হুড়োহুড়ি। মনটা বেশ খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো আমার। হাটের কত লোক যে আমায় এসে জিজ্ঞাসা করলো আমি খেতে গেছি কি না  বেশ ভালো লাগলো ওদের এই জিজ্ঞাসা শুনে। আমার সামনের গ্রামের মেঠো মহিলা যে সকাল হলেই জামা কাপড় নিয়ে চলে আসে সেও বললো মামুদদার কুপন আছে  দিয়ে গেছে আপনি যান খেয়ে আসুন কাকা। আমি হাসি মুখে ওদের বললাম না না এই তো ঠিক আছে। বাড়ী ফিরে ভাত খাবো আমি। 
এরা সব আমার আত্মীয় স্বজন, পরিজন, বন্ধু বান্ধব রক্তের সম্পর্কের নয় কেউই কিন্তু কেমন একটা গাছের ডালে, পাতায় জড়িয়ে যাওয়া সম্পর্ক যেনো তৈরি হয়েছে এই কদিনেই ওদের সাথে। বেশ একটা ভালো লাগা বোধ নিজেকে জড়িয়ে ধরলো এই ভাদ্র মাসের নিদাঘ কাঠফাটা দুপুরে আমায়। বসে বসে দেখলাম আমি গাছ থেকে নেমে মাটিতে চুপ করে থেকে ওই গিরগিটিও কেমন রং না বদলে বসে আছে আনমনে চুপটি করে। মাটির কাছে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে জল রংয়ের ফড়িং দুপুরের রোদ কড়া রোদ গায়ে মেখে। 
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। না এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ী ফেরার সময় হয়ে এলো আমার। এদিক ওদিক আশপাশে তাকিয়ে  দেখলাম খেয়ে এসে সবাই কেমন খুশি মনে বসে আছে সবাই মিলে। দূরে হার দুল বিক্রি করা ভাই বোনের মোবাইল নিয়ে গলা জড়িয়ে গেম খেলা, বৃদ্ধার জলের বোতল হাতে ঘরে ফেরা, খাওয়া শেষে বেঁচে যাওয়া পায়েস নিয়ে প্লাস্টিকে বেঁধে হাসি মুখে ঘরে ফেরা দেখে মনে মনে ভাবলাম সত্যিই তো মানুষ কত অল্পতে যে কত খুশি হয় কে জানে। এই খুশির স্বাদই আলাদা। মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মামন ভাইকে। এইটুকু পেট পুরে খাবার প্রাপ্তিতে কত যে আনন্দ তাদের ভাবলেও মনটা বড়ো ভালো হয়ে যায়। 
সত্যিই কত কম চাহিদা মানুষের দুবেলা না হোক এক বেলা পেট পুরে একটু খেতে পেলেই কি খুশি হয় লোকজন, আমিও খুশি হই। কিন্তু সেটা জোগাড় করতেই যে হিমশিম অবস্থা সাধারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের একদম কাহিল অবস্থা। তার মাঝে সপ্তাহের সাতদিনের দু এক যদি এমন হঠাৎ কুপন জুটে যায় খারাপ কি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও যে একবেলা পেট ভরাতে কাহিল অবস্থা দেশের প্রায় অর্ধেক এর বেশি মানুষের। সত্যিই তো জীবনের এই শুধু একবেলা পেট পুরে খাওয়া পাওয়া যাবে, একটু কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে, একটু আর্থিক রোজগার করা যাবে এটাই তো আসল কথা। কিন্তু কোথায় সেই সব প্রতিশ্রুতি যে প্রতিশ্রুতি দিল্লীর লালকেল্লা থেকে শুনতে পাইনা আর বহুদিন। শুধু একটু ভালো দিনের প্রতিশ্রুতি। 
ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম সেই শিব মন্দিরে যেখানে খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। এদিকে তো খাওয়া হচ্ছিলো মায়ের ভোগের মন্দিরেও। দেখলাম লেখা আছে পঞ্চায়েতের গায়ে শিব মন্দিরের কাছে একমুঠো অন্নের কথা। কবে কি খেতে দেওয়া হবে তার তালিকাও আছে দেয়ালের গায়ে। একজন পঞ্চায়েতের নিরাপত্তা কর্মী বললেন দাদা ভালো করে ছবি তুলে নিন আপনি। দেখুন সাত দিন কবে কি দেওয়া হবে তার তালিকাও দেওয়া আছে কিন্তু।
 একসময় যখন রিপোর্টার ছিলাম এই ভাবেই ছবি তুলতে গেলে কত লোক যে আমায় এই ভাবে বলে দিত দাদা এইসব ছবি তুলে নিয়ে যান, এগুলো দেখাবেন কিন্তু। বেশ ভালো লাগলো এদিনও ছবি তুলে। কিন্তু সেটা যে শুধু নিজের জন্যে ছবি তোলা কোনো চ্যানেলের জন্য নয়। এসব না বলে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আজ তো মামন ভাই এই সব খাবারের আয়োজন করেছেন মন্দিরে। বললেন হ্যাঁ উনি করেছেন। দেখলাম মন্দিরের পাশে তাঁর অফিস। তার টীম কাজ করে চলেছেন এই ভাবেই। বাহ ভালো ব্যবস্থা তাহলে।
সাইকেলে উঠতে যাবো দেওয়ালের গায়ে লেখা, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। চণ্ডীদাস। চোখ আটকে গেলো আমার। দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। সত্যিই তো কতদিন আগে যে এই কথা লিখেছিলেন কবি। তাহলে এই যে এত সাম্প্রদায়িক শক্তি নিয়ে আলোচনা,  তাকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা, দেশকে টুকরো না করতে দেওয়ার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা, দেশের তাবড় তাবড় নেতাদের মাতব্বরি। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি জাগিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। 
সেখানে তো এই ভাবেই একটি হিন্দু মন্দিরে পেট পুরে দুটো ভাত এর ব্যবস্থা করলেন একজন মানুষ। যার আর কোনো পরিচয় নেই। যারা পেট পুরে দুটো ভাত খেতে পেলেন তারাও যে ভগবানের সৃষ্টির মানুষ। তাহলে কিসের এত হিসেব নিকেষ, কিসের এত রাজনীতি, কিসের এত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য মাথা খোঁড়াখুঁড়ি। এই ভারতবর্ষই তো আমার আসল ভারতবর্ষ। যার ছবি আমরা সেই কবে থেকে দেখি। 
যে কথা আমরা শুনি, জানি মন্দিরে ঘণ্টার আওয়াজ, মসজিদে আজানের আওয়াজ যেখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তার জন্যে তো কোনো কসরৎ করতে হয়না আমাদের। তাহলে কিসের জন্য এত মাথাব্যথা। ধীর পায়ে সাইকেলে প্যাডেলে চাপ দিলাম আমি। আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি নেমে এলো। বহুদিন পর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘরে ফিরলাম। একবুক টাটকা বাতাস নিয়ে। মনে মনে প্রণাম জানালাম আমি ভগবানকে। সালাম জানালাম আল্লাকে। 

কুপন - অভিজিৎ বসু।
আঠারো আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

  1. যাঁর দেখার চোখ আছে তিনি প্রতিদিনের সাধারণ বলে মনে করা ঘটনাবলীর মধ্যেই অসাধারণত্ব দেখতে পান। হিন্দু মন্দিরে এক মুসলিম ধর্মাবলম্বীর ভোগ দান, গরীব মানুষের পেটপুরে খাওয়া, সবার উপরে মানুষ সত্যের যে ছবি লেখক একেছেন তা এককথায় অসাধারণ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...