সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রতন দা ও আমি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই রতনদার কথা। সেই বৌ বাজারের সপ্তাহ পত্রিকার রতন চক্রবর্তী। সেই উত্তরবঙ্গ সংবাদের রতন চক্রবর্তী দা। সেই মৌলালির ছাব্বিশ সি ক্রিক রো এর হিন্দি ছাপতে ছাপতে পত্রিকার ভাড়া নেওয়া অফিসে পট পরিবর্তন কাগজের সেই নিউজ এডিটর রাশভারী কিন্তু ভারী মিশুকে আমাদের সবার হাসি মুখের রতন দা। যার কথা মনে পড়লে কত ভালো,কত খারাপ স্মৃতির কথা যে মনে পড়ে ভীড় করে কে জানে। 
সত্যিই বলতে কি আমি ভুলে যাই নি এতদিনেও ওনাকে একদমই। কিন্তু আমার আঁকিবুঁকি ব্লগ এর একটা প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্তকে নিয়ে লেখায় ওনার একটা মন্তব্য দেখে আমার এই বৃষ্টি ভেজা নিশুতি রাতে আমার স্মৃতির উত্তাপ একটু বেড়ে গেলো হঠাৎ ওনার কমেন্টস দেখে। মাথার ওপর অন্ধকার ঘরে ফ্যান এর আওয়াজে ঘুম আসছে না কিছুতেই আমার। বৃষ্টির দাপটে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি আমি। ভাবছি এই ভরা বর্ষায় সাদা জীবনের কালো কথায় আজ কার কথা লিখবো কে জানে। 
আর সেই সময় রাতের অন্ধকারে আমার একমাত্র নেশার  জিনিস মোবাইল এর স্ক্রীন ঘাঁটতে ঘাঁটতে দেখলাম রতন দার মত একজন মানুষ আমার মত একজন অকিঞ্চিৎকর অসার্থক সংবাদ কর্মীর একটা লেখায় মন্তব্য করেছেন তিনি নিজেই। সেই পঙ্কজ বাবুকে নিয়ে লেখার উত্তরে তিনি বলেছেন, তুই সার্থক রিপোর্টার নয় এটা কারা বলে আমি জানি না। আমার বাহান্ন বছরের ধারাবাহিক সাংবাদিক জীবনের পর, ঘরে বসার পরেও কিন্তু তোর সাথে আমার যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি আজও এতদিন পরেও। সেটা তুই ভালো সাংবাদিক বলেই। তোর কাজের সার্থকতা হলো পঙ্কজ বাবুর মত মানুষরা আজও তোর খোঁজ করেন আর এটাই হলো তোর কাজের সার্থকতার অভিজ্ঞান।
সত্যিই বলতে কি মানুষ তো নিজের সম্বন্ধে ভালো ভালো কথা বেশি করে শুনতে চায় অন্য কারুর কাছে থেকে। নিজের প্রশংসা শুনতে চায়। আর সেটা যদি তার কর্মজীবনের যাঁরা শিক্ষক তাদের কারুর কাছ থেকে হয় তাহলে বুকটা কেমন যেনো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গর্বে ভরে ওঠে তার। আমি বাতিলের দলে, আমার কোনো জায়গা নেই, আমি আমার নিজের ব্যক্তিগত কারণে কাজ করতে পারি না এসব শুনেই তো অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি এত দিন ধরে জীবনে সে ঘরে আর বাইরে। তাই হয়তো নিজে অভিযোজিত হতে না পেরে আমি বাতিলের দলে ঢুকে পড়েছি নিজে নিজেই কেমন স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিয়ে। 
আর সেই সব কথার মাঝে রতন চক্রবর্তী দার মত মানুষ যখন এই ছোট্ট কটা লাইনের কথা, কটা শব্দ বলেন কমেন্টস বক্সে লিখে জানান। যা দেখে রাতের অন্ধকারে আচমকা আমি বাতিল হলেও একটু যেনো বিহ্বল হয়ে পড়ি। যা দেখে আমার মনের জোর, আমার মনের উৎসাহ বেড়ে যায় অনেকটাই। মনে মনে ভাবি সত্যিই তো জীবনের এই সব মানুষদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেলাম আমি সেটা বোধহয় ভোলার নয় কিছুতেই এটাও তো কম কিছু নয়। জীবনের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব কষতে বসলে রতনদার হাসি মাখা মুখটা মনে পড়ে যায় আমার। 
আমার মনে পড়ে গেলো সেই যে শিয়ালদহ স্টেশনের নিচ দিয়ে ফুটপাথ ধরে হেঁটে চলে যেতাম বৌ বাজার এর সেই লেবুতলা পার্কের কাছে ভূপতি মিষ্টির দোকানের পাশ দিয়ে ঘিয়ে ভাজা খাবার এর ঘ্রাণ নিতে নিতে সপ্তাহের অফিসে প্রতি শনিবার। সেই পুরোনো শ্যাওলা জমা অন্ধকার বাড়িটায় পা দিতাম খুব সাবধানে যাতে হাওয়াই চটি পরে পড়ে না যাই উঠোনে দুম করে। যেখানে ছিল সপ্তাহ পত্রিকার অফিস। সেই অফিসে গম্ভীর মুখে একটা চেয়ার নিয়ে এককোনে বসে থাকতেন দিলীপ চক্রবর্তী দা। যার সাথে কথা বলতেই আমি কেমন ভয় পেতাম আমি। সব সময় বই নিয়ে বসে পড়াশোনা করতেন তিনি। সেই পাড়াতেই জেলে পাড়া লেনে ছিল আমার ছোটো পিসির বাড়ী। আর সেই নাড়ু কাকুর দোকান রাস্তার পাশে।  
রতন দা আমাকে দেখে বলতেন মৃদু হেসে এসো অভিজিৎ এসো বসো তুমি। চা খাবে তো বলে বইয়ের পাতা ওল্টাতেন তিনি। কেমন আছো তুমি। আমি সেই সব বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, আর অভিজ্ঞ সাংবাদিক মানুষদের কাছে বসে নিজে কেমন হাবুডুবু খেতাম। তবু সেটা বুঝতে দেননি কোনোদিন রতন দা আমায়। দীর্ঘ তাঁর পঞ্চাশ বছরের মিডিয়া জগতে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সময় তাঁর নানা শিষ্য, ভাবশিষ্য উপহার দিতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। আমি এসবের কোনোটাই হতে পারিনি আজও হয়তো। 
কিন্তু সপ্তাহের পত্রিকার সেই দফতর,সেই সময় এর নানা কথা, আদর্শ নিয়ে বেঁচে থাকা কিছু মানুষকে দেখে এটা বুঝতে পারতাম যে সংবাদ মাধ্যমের কর্মী মানেই কিন্তু লুটে পুটে খেয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে সুখে ঢেঁকুর তুলে বেঁচে থাকার জীবন নয়। একটা আদর্শ, একটা ধ্যান ধারণা নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যেখানে অন্য কেউ আমার দিকে আঙ্গুল না তুলতে পারে যে এই মানুষটা ধান্দাবাজ। যেটা আজকের মিডিয়ার দুনিয়ায় একদম বিরল ঘটনা।
রতনদার এই আপাত সুখের নির্মোহ জীবন কাটিয়ে দেওয়া দেখে আমার কেমন যেন বেশ ভালো লাগতো সেই সময়। পরে সেই পট পরিবর্তনের কাঠের তৈরি একচিলতে ছোট্ট অফিস ঘরে পাশাপাশি কাজ করতে করতে আরোও কাছ থেকে দেখলাম আমি রতন দাকে। যাঁর জীবনের নানা ঘটনার কথা আমি কিছুই জানিনা আজও। জানার চেষ্টাও করিনি কোনো দিন। খবরের কাগজের কাজ কি করে করতে হয়, কপি লিখতে হয় সেটা শিখলাম তাঁর কাছ থেকেই। কি করে খবর লিখতে হয় গুছিয়ে সেটাও জানলাম তাঁর কাছ থেকেই। নিজে হাতে ধরে কপি লেখা শেখালেন তিনি আমায় সেই সময়। 
তাঁর সঙ্গে আরোও ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গেলো আমার। প্রথমে জেলায় কাজ করা হুগলী জেলায় ও দক্ষিন চব্বিশ পরগনায় কাজ করা আমরা দুই জেলা রিপোর্টার কলকাতায় ডেস্কে কাজের সুযোগ পেলাম। সেই কাগজের এডিটর তখন অনুপম অধিকারী। পরে আমি আর দিব্যেন্দু চক্রবর্তী যার বেহালায় বাড়ী কলকাতায় বদলি হয়ে চলে এলাম আমরা দুজনই জেলা থেকে। বেশ কিছুদিন একসাথে কাজ করলাম আমরা রতনদার আন্ডারে। বহুদিন পর দিব্যেন্দু চলে গেল নতুন কাজ পেয়ে ওই প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট এর সাদা বাড়ী আনন্দবাজার পত্রিকায়। আর আমি চলে গেলাম হায়দরাবাদের রামোজি রাও এর সেই ইটিভি বাংলায় হুগলী জেলার রিপোর্টার হলাম। সেই সব গল্প আজ তো সব অতীত দিনের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়।
কিন্তু সেই ছোটো সান্ধ্য পট পরিবর্তন কাগজের মাত্র পাঁচশো টাকা বেতনের সেই মুচ মুচে খবরের কাগজের রিপোর্টার কলকাতায় সদ্য পা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি শহরের আনাচে কানাচেতে খবরের সন্ধানে। এরই মাঝে একটি সেই সান্ধ্য দৈনিক কাগজের একটি খবর লিখে আমি পড়লাম মহা বিপদে। ছেপে বেরিয়েছে সেই মুচমুচে বিয়ের একটি খবর। একটি বিয়ে বাড়ীর খবর সেই বিয়েতে কি কি হলো তার পুঙ্খানুপুঙ্খ মজার বর্ণনা। ধর্মীয় এক প্রতিষ্ঠান এর সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের খবর বের হতে হৈ হৈ পড়ে গেলো চারিদিকে।
 যে বিয়ে হবার কথা ছিল বাংলার এক বিখ্যাত সাহিত্যিকের লেখকের মেয়ের সাথে সেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের এক ছেলের। কিন্তু সেটা হয়নি যে কোনো কারণেই হোক। আর কেনো এমন খবর লেখা হয়েছে সেটা জানতে সরাসরি কাগজের অফিসে একদিন সকাল বেলায় ফোন চলে এলো। আমার তো ফোন এর খবর শুনে হাত পা ঠাণ্ডা হবার উপক্রম হলো অফিসে বসেই। রতন দা ধরলেন সেই উকিলের ফোন। কথা বললেন একদম মেপে মেপে। যাই হোক ওনার কথার উত্তর শুনে কিছুটা থমকে যায় সেই উকিল। যদিও পরে আর কিছুই হয়নি এই খবর লেখার জন্যে।
আসলে কাঁচা বয়সের প্রেমের মতো আমিও কাঁচা বয়সের খবর পেয়ে উত্তেজিত হয়ে লিখে ফেলেছি আমি আগু পিছু না কিছু না ভেবেই। আর পরে তার সামাল দিতে স্বয়ং বার্তা সম্পাদককেই পথে নামতে হয়। আমি সারাজীবন এই ঘটনাটা মনে রাখবো। কি করে একজন জুনিয়র লেভেল এর সাংবাদিক, অতি জুনিয়র সাংবাদিককে বাঁচাতে হয় এমন পরিস্থিতি থেকে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতে হয় আমি আছি তবে এমন ভুল আর করিস না যেনো। সেই শিক্ষা তিনি আমায় সেদিন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ফুলটস বল পেলেই ছয় মারতে যাসনা একটু ধরে খেলতে হয় এই মাঠে। কারণ খবরের দৌড় এর মাঠ অনেক বড়ো। বহুদিন ধরে দৌড়তে হবে তাই হাঁফিয়ে যাস না। 
আজ দীর্ঘ বছর পর কর্মহীন দিনযাপন এর মাঝে এই কথাগুলো মনে পড়ছে আমার। বহু দিন পর একদিন রতনদা আমার শ্রীরামপুরের ফ্ল্যাটে এসেছিলেন একদিন। ওনার ভাইয়ের বাড়ী আছে শ্রীরামপুরে অমূল্য কাননে। আমি সেই সময় ইটিভিতে কর্মরত সাংবাদিক। বেশ খুশি হয়েছিলেন আমার ঘরে এসে। বলেছিলেন মন দিয়ে কাজ কর আর সাবধানে কাজ করিস।আসলে এই ধরনের মানুষ আজকের সংবাদ মাধ্যমে বড়োই বেমানান। আজকের দিনে এরা সব ফসিল হয়ে গেছেন হয়তো। তবু তাঁর এই জীবন দর্শন, তাঁর এই বামপন্থার প্রতি আদর্শ, তাঁর জীবন যাপন এর ধারা আমায় আজও মুগ্ধ করে। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে আচমকাই ফোন করে ফেলি আমি। খুব স্মিত হেসে বলেন কি খবর তোর। ভালো তো। মেয়ের কোন ক্লাস হলো। বউ ভালো আছে তো। আমি হেসে বলি হ্যাঁ দাদা। আপনি ভালো আছেন তো। বলেন ওই চলছে বয়েস হয়েছে এই আর কি।

ছেলে বিদেশে থাকে রতন দার কর্মসূত্রে। নিজের গভীর জীবন বোধ, সেই জীবনের কবিতার লাইন লিখে বেঁচে আছেন আমাদের রতনদা। যিনি নিজেও একবাক্যে স্বীকার করেন বড়ো হতে পারেন নি তিনিও। সফল হতে পারেন নি তিনি হয়তো দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর এই বাংলা সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হয়েও। কিন্তু যা হয়েছেন তিনি, যে বিশ্বাস, যে সততা, নিষ্ঠা নিয়ে,
আদর্শ নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি সেটাই তো আসল কথা। 
তাঁর কাছ থেকে আজ এই সার্টিফিকেট পেয়ে মনে হলো তাহলে আমি ঠিক পথেই হয়তো এতদিন ধরে হেঁটেছি। হয়তো খুব বড়ো হতে পারিনি আমিও। হয়তো অনেক অর্থ, প্রতিপত্তি সামাজিক বৃদ্ধি করে উঠতে পারিনি। সংসারের জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থ রোজগার করতে পারিনি। তবু আজ এই সব মানুষদের ফোন, রতনদার মত মানুষদের বার্তা পেয়ে মনে হয় জীবনের অপ্রাপ্তির থেকে প্রাপ্তির ঝুলিটা আজ অনেক বেশি।

 ভাগ্যিস আমার সাথে দেখা হয়েছিল এই সব রতনদার মতো মানুষদের। না হলে হয়তো আমিও আর পাঁচ জনের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যেতাম নিজের স্বার্থ নিয়ে আর ধান্দা নিয়ে। আত্মসুখে মগ্ন থাকতাম। জীবনের আদর্শ ভুলে এই পেশায় থেকেও শুধুই নিজের স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকতাম। তাহলে হয়তো রতন দা আমায় নিয়ে এমন ভালো কথা আর লিখতেন না। যে লেখা পড়ে মনে হয় আমার এই ভাবে জীবন কাটাবার মজাই আলাদা। ভালো থাকবেন রতন দা। 

রতন দা ও আমি - অভিজিৎ বসু।
তিন আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...