সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফাল্গুনী দা ও আমি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বর্ণময় সাংবাদিকের কথা। যে বিখ্যাত সাংবাদিক খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেলে সব জায়গায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করেছেন হুগলী জেলায়। ইংরাজি মাধ্যমের কাগজে লিখে বেশ নাম করেছেন তিনি। যার তারকেশ্বর এর নতুন ফ্ল্যাটের দরজায় বড়ো করে দরজায় লেখা আছে পিতলের নেমপ্লেটে জার্নালিস্ট। বহুদিন আগে গিয়ে দেখেছিলাম সেটা দরজায় লেখা। শুনেছি প্রতিদিন সেই নেম প্লেট পরিষ্কার করেন তিনি নিজে খুব যত্ন করেই। 

সেই বর্ণময়, একদম রঙিন উজ্জ্বল সাংবাদিক হলেন আমাদের সবার সেই ফাল্গুনীদা। ফাল্গুনী বন্দোপাধ্যায়। তারকেশ্বর মন্দির পাড়ার সবার সেই অতি আদরের বিখ্যাত বুচুন বন্দোপাধ্যায়। যার এই নাম শ্রীরামপুরের পল্লীডাক পত্রিকার বিখ্যাত দাপুটে জাঁদরেল সাংবাদিক বঙ্গলোক কাগজে লিখেছিলেন একবার একটি  নিজের লেখা রিপোর্টে। যেখানে মন্দির পাড়ায় হৈ চৈ পড়ে গেছিল সেই রিপোর্ট পড়ে মন্দির পাড়ার সর্বত্রই। আর কি যে উত্তেজনা সেদিন দেখেছিলাম আমরা শুধু একটাই কথা পি এম এটা কি ঠিক হলো রে। হ্যাঁ প্রবীর দাকে পি এম নামেই ডাকতো ফাল্গুনী দা। 

সে যাই হোক সাদা জীবনের একদম সাদা সোজা সাপটা কথার হাসিখুশি সেই মানুষ ফাল্গুনীদার কথা লেখার জন্য আমায় অনেকেই বার বার ব্যক্তিগত ভাবেই অনুরোধ করেছেন। বলেছেন সাদা জীবনের কালো কথায় লেখা হোকনা সেই ফাল্গুনী দার অজানা কিছু কথা। কিন্তু কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে আর ভয়ে আমি লিখিনি এত দিন ধরেই। যদি কিছু মনে করে বলে কুল এটা কি ঠিক হলো রে। 

কিন্তু আমার এই ব্লগে নানা জীবন, নানা জনের কথা আমি লিখছি মাঝে মাঝেই। যারা সমাজের সর্বত্র বিরাজ করছেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে ভাস্বর হয়ে নিজের গুরুত্ব নিয়ে। যাদের খুব কাছ থেকে আমি দেখেছি। যাদের সাথে কাজ করেছি, ঘুরেছি। ঠিক তেমনি ভাবেই তো ফাল্গুনীদার কথা যদি না লিখি সেটা কিন্তু ঠিক হবে না। তাই বুকে কিছুটা বল আর ভরসা নিয়ে কলম ধরলাম আজ আমি। জানিনা শেষ পর্যন্ত এই বয়সে এসে এই লেখার জন্য কুলবিচিকে কি বলবে তুমি। যা আমার নাম ফাল্গুনীদা দিয়েছিলেন সবার নামের মতই। কিন্তু এই লেখার পর আমায় তার কি অবস্থা হয় কি হাল হয় জানি না আমি। 
হুগলী জেলায় তখন সব বিখ্যাত সাংবাদিকদের ভীড়ে গিজগিজ করছে।আমি কেমন যেনো বেমানান সেই সব সাংবাদিকদের মাঝে। ফাল্গুনী দার কথায় আমরা হলাম ডেঙ্গো ডোঙ্গলার দল সব। মানে হলো ওদের মতো কুলীন জাতের  সাংবাদিক নয় যে। সেই হুগলী জেলায় পল্লীডাক পত্রিকার অফিসে তখন বসে চাঁদের হাট। 

সর্বাধিক বিক্রিত কাগজ আনন্দবাজারের বিখ্যাত ইন্টেকটুয়াল সাংবাদিক গৌতম বন্দোপাধ্যায়। যাকে ফাল্গুনী দা বড়ো বলেই ডাকতো বা ব্যান্ডো নামেই। প্রতিদিন কাগজের তরুণ মুখোপাধ্যায়। যিনি আমায় আমার খুব খারাপ অবস্থায় অনেক সাহায্য করেছেন বার বার। যাকে টেকো বলেই ডাকতো ফাল্গুনীদা বরাবর। এদের দুজনের জুটি কিন্তু বেশ মজবুত। 

আর বাইরের জেলা থেকে কাজ করতে আসা বর্তমানের সাংবাদিক দেবাঞ্জন দাস। আর একজনের কথা বলতে হবে সে হলো আমাদের আজকালের নীলু দা। মানে হলো নীলরতন কুন্ডু। এদের মাঝে আমি ছিলাম একদম চুনো পুঁটি আর কি। ছিল রাজপথের নাজিম নামে একজন রিপোর্টার।
কোনো ভাবে খবরের নেশায় যেতাম সেই বিখ্যাত পল্লীডাক প্রেসে হাওয়াই চটি পরে আর একটা ঢোলা প্যান্ট গায়ে একটা বহু পুরোনো গেঞ্জি বা জামা পরে। যার গল্প অন্য কোনো একদিন বলবো। দেখতাম পুরোনো সেই প্রেসে গম্ভীর মুখে সব দাপুটে সাংবাদিকের দল আলো করে বসে আছেন লম্বা টেবিল জুড়ে পাশাপাশি গা ঘেঁষে। বড়ো, মেজো, সেজো, সেই দুর থেকে আসা নাজিম ভাই, টেকো আর তাদের সবার মধ্যমণি হয়ে আলো করে জুড়ে বসে আছেন রাশভারী প্রবীর মুখোপাধ্যায়। ফিনফিনে সাদা পাজামা আর পাঞ্জাবি পড়ে। আমাদের সবার বড়দা প্রবীরদা। আর ফাল্গুনীদার সেই পি এম। 

একটা আঙ্গুল দিয়ে ঘুরিয়ে ডায়াল করা লাল ফোন, একটা ফ্যাক্স মেসিন। আসলে এটা ঠিক যেনো খবরের একটা ছোট মন্দির। মন্দির ঘিরে গোল হয়ে বসে নানা মাপের সাংবাদিকের দল। সেই খাস খবরের তখন রমরমা বাজার জেলায় আর কলকাতায়। খবর করে ক্যাসেট নিয়ে দৌড়ে অফিস পৌঁছে দেওয়ার পালা। কামারকুন্ডুর গৌতম  ধোলে ফাল্গুনীদার ক্যামেরাম্যান। সেই সময় গুটি গুটি করে ইটিভির চাকরি হলো আমার। খাস খবর এর সাথে আর একটি বেসরকারি চ্যানেল বাজারে এলো সেটা দু হাজার সাল।

 জেলায় অফিস নেওয়া হলো শ্রীরামপুরে। আমার বেশ ভালো মনে আছে আজও হাতে খইনি নিয়ে ফাল্গুনীদার সেই বিখ্যাত কথা কুল শোন অনেক কষ্ট করেছিস তুই। একটা কাজ জুটেছে খুব ভালো হলো বুঝলি। তুই আমি একসাথে কাজ করবো দুজনে মিলে। তুই যা খবর পাবি আমায় বলবি। আর আমি যা পাবো তোকে দেবো।  বলেই থু করে খইনির থুতু মাটিতে ফেলে হাঁটা শুরু করত ফাল্গুনীদা। যার সাথে এতক্ষণ ধরে কথা বলছিল তার কোনো জবাব না শুনেই। বেশ মজার চরিত্র কিন্তু একটা। নিজের কথা হলেই কেটে পড়ো। 
 সকালে তারকেশ্বর থেকে ট্রেন ধরে এসেই বলতো আগে ভাই মাছ ভাতটা খেয়ে আসি তারপর কাজ বলেই সেই প্লাস্টিকের চটি পড়ে একমনে হাঁটা দিত মদন বা কোর্টের মাঠের সেই রোহিণীতে। যেখানে মাছ ভাত খেতে যেতো ফাল্গুনীদা। নিত্য দিনের অভ্যাস এর বদল হয়নি তার কোনোদিন। সেদিন কথা হচ্ছিল তরুণদার সাথে। কথায় কথায় বলতো টেকো আজ অপারেশন বের হবো তুই রেডি থাকিস কিন্তু ফাল্গুনী দার কথায়। যেনো যুদ্ধের অপারেশন করতে যাওয়া হবে। কোনোদিন উত্তরপাড়ার দিলীপ যাদব, চুঁচুড়া শহরের তপন দাশগুপ্ত, শ্রীরামপুর এর কেষ্ট মুখোপাধ্যায়, কিম্বা স্বরাজ মুখোপাধ্যায় এর কাছে। 

সবার কাছে ফাল্গুনীদার অবারিত দ্বার। উত্তরপাড়াতে গিয়ে এক নেতাকে বলা শোনো তোমার দাদা কিন্তু অনেক বড় নেতা। তোমার মত নয় কিন্তু। শোনো ঐ মাছ ভাতটা বলে দাও তুমি। আর যাবার সময় একটু ব্রাম্ভন বিদায় দিও আর কি বলব তোমায়। সত্যিই একদম সোজা সাপটা কথা। কোনো রাখঢাক না করেই। বহুদিন পর এই কথা লিখতে বসে আমার নিজের মনে হয় সত্যিই কি অসাধারন এই দাবি সনদ পেশ করা এক সাংবাদিকের এক রাজনীতির লোকের কাছে। যার স্টাইল আলাদা। যার ঘরানা আলাদা। 

 আসলে কি জানেন তো সেই সময় একটা বেশ সুন্দর পরিবেশে আমরা কাজ করতাম সবাই মিলে। মজা করে দৌড়ে বেড়াতাম খবরের পিছনে। এস পি, ডি এম, সিপিএমের দাপুটে নেতাদের, সে দাপুটে সাংসদ অনিল বোস হোক বা রূপচাঁদ পাল হোক বা আরামবাগে বিনয় দত্ত হোক। আর সদ্য নতুন দল তৃণমূল এর সব নেতাদের কেমন তুই বলে কি সহজে কাজ হাসিল করে নিত ফাল্গুনীদা খুব সহজেই। আকবর আলী খোন্দকার এর সাথে কি ভালো যে মজার সম্পর্ক ছিল সেটা মনে হলে ভাবি সত্যিই কেমন সহজে অনায়াসে নেতাদের ঘরে অন্দর মহলে ঢুকে পড়তো ফাল্গুনীদা। আর খবর, খাবার সব জোগাড় করে হাসি মুখে ঘরে ফিরে আসত খৈনি ডলতে ডলতে। আর  বলতো অপারেশন সাকসেস টেকো। 

আমার আজও মনে আছে ফাল্গুনী দার মা কত ভালো বাসতেন আমার মেয়েকে আর বউকে। তারকেশ্বর মন্দিরে পূজো দিতে গেলে আমরা ওকেই বলতাম দাদা কাল যাবো মন্দিরে। হ্যাঁ সাংবাদিকদের হেলাচ্ছেদ্দা যাই করুক তার পরিবারের সদস্যদের বেশ সম্মান আর ভালবাসা দিত কিন্তু ও। যেটা দেখে আমি ভাবতাম আমি কুলবিচি মিচকে শয়তান হলেও আমার বাড়ির লোককে কিন্তু বেশ কেমন যেনো অন্য চোখে দেখত সে। আজও খবর নেয় মেয়ের কি খবর রে মেয়ের। 

যাই হোক যে গল্প বলতেই হয় ফাল্গুনীদার দিল্লি যাবার গল্প। আকবর আলি খোন্দকার তখন শ্রীরামপুরের সাংসদ। সাংবাদিকদের এক এক করে দিল্লী দর্শনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সিং দা এই সব দেখভাল করছেন। বেশ একটা আনন্দের ব্যাপার বটে। জেলার হেজি পেজি সাংবাদিক এমপির হাত ধরে দিল্লী ঘুরে বেড়াচ্ছে বিনা পয়সায় এটা বেশ ভালো বিষয় কিন্তু। জেলার একজন পাতি সাংবাদিক দিল্লিতে ঘুরে দেখছে সব কিছু একদম ভি আই পি ট্রিটমেন্টে। বেশ ভালো ব্যাপার সেটা। 

 আসলে সেই সময় বোধহয় রাজনীতির ময়দানের লোকদের সাথে সাংবাদিকদের একটা ঘরোয়া সম্পর্ক ছিল পারিবারিক সম্পর্ক। আজ যা দেখা যায় না সচরাচর। যাই হোক দিল্লী সফরে গেছেন বিখ্যাত সেই তারক কর্মকার। ফাল্গুনী দা আর তরুণ দা হাজির। সন্ধ্যা বেলায় ফাল্গুনী দা চা করেছেন একদম কালো চা। চা ফুটছে কিন্তু হচ্ছে না কিছুতেই। আকবর দা ডেকে বলছেন কিরে চা হলো। এই তো হলো ফাল্গুনীদার উত্তর রান্নাঘর থেকে। কিন্তু সেই তেতো চা কেনো। দেখা গেলো চা নয় কালো জিরে দিয়ে চা করেছে ফাল্গুনী দা। 
 দিল্লির বাথরুমে ঢুকে ঠাণ্ডা গরম জলে স্নান করতে গিয়ে কি বিপত্তি হলো। সেই গল্প  তো সবার জানা। গরম জল গায়ে পরে হৈ হৈ কাণ্ড। ঠাণ্ডা জলের বদলে গরম জল খুলে দিয়ে স্নান করতে গিয়ে মহা বিপদ ফাল্গুনীদার। আকবরদাকে খুব গাল দেওয়া তুই আমায় গরম জল দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিস। এই জন্যে দিল্লী নিয়ে এলি তুই। বোলে চিৎকার চেঁচামেচি ফাল্গুনীদার। আকবর দা হো হো করে হেসে বলছেন বেশ হয়েছে শালা। তুই আমায় কালো চা খেতে দিয়েছিস যে। 

এই ছিল সম্পর্ক রাজনীতির লোক আর সাংবাদিকের। আমি ভাবি আজকাল বোধহয় এমন কথা ভাবাও পাপ। সত্যিই কি দাপট এই সব রাজনীতির লোকদের আজকাল। তাদের ধরা ছোঁয়া যায়না কিছুতেই। একটু সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য সময় মেনে না গেলে দুর দুর করে গলা ধাক্কা খেতে হয় সাংবাদিককে। আর সেই সব পুরনো দিন এর কথা ভাবলে কেমন যেন একটা বোধহয়। এমন সৌজন্য কি আর মিলবে কোনো দিন কে জানে। 

শুনেছি এক মহিলা সাংবাদিক তখন সদ্য হুগলী জেলায় কাজ শুরু করেছেন। তারকেশ্বর থেকে ট্রেন ধরে সেই মহিলা সাংবাদিক যিনি শ্রীরামপুরে আসতেন। তারকেশ্বর থেকে আসা সেই মহিলা সাংবাদিককে ভেন্ডার ট্রেনের কামরায় ছানার গন্ধে নিজের পাশে বসিয়ে এনে খবর শিখিয়ে দেবার নাম করে নিয়ে আসত শ্রীরামপুর ফাল্গুনীদা। আর সদ্য কাজে যোগ দেওয়া সেই সাংবাদিককে ঘোষ বলে ডাকতো ফাল্গুনী দা। যেহেতু তার বাবা বন্ধু হন ফাল্গুনীদার, সেই ভয়ে মুখ বুজে আর নাক চেপে ছানা আর খইনির গন্ধ উপভোগ করতে করতে তারকেশ্বর থেকে শ্রীরামপুর আসতেন সেই মহিলা সাংবাদিক চুপ করে। শুধু খবর কি করে করতে হয় সেই কথা জানার জন্যই। কি কঠিন যে ক্লাশ নিত ফাল্গুনী দা। 
দীর্ঘদিন পর সেই মহিলা সাংবাদিক এর সাথে আমার কথা হলো বহু বছর পরে ফোনে। তিনি এখন দিল্লিতে এক কাগজের দিল্লীর প্রতিনিধি। জেলা ছেড়ে রাজধানী দিল্লী তে। কিন্তু আজও তার রাজধানীতে পৌঁছে গিয়েও খবর করতে গিয়েও মনে আছে ফাল্গুনীদার সেই ট্রেন যাত্রার কথা, সেই ট্রেন এর ভেন্ডার কামরায় মজার পাঠশালার কথা। সত্যিই তো অসাধারন এই সব নানা অভিজ্ঞতা আছে যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। 

 এমন হাজার হাজার ঘটনার সাক্ষী আমাদের ফাল্গুনীদা। ডান দিকে যাচ্ছি বলে যে বা দিকে চলে গিয়ে অন্যকে জানান না দেওয়া যার একমাত্র কাজ ছিল মাঝে মাঝেই। সিপিএমের জোনাল নেতার ইন্টারভিউ নিতে বসে নোট নিতে নিতে নাক ডেকে চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। কি হাসি মুখে ঘুম ভেঙে উঠে বলেছে সেই জোনাল নেতাকে বলেছে কাল বাকিটা শুনবো আজ আর হবে না ইন্টারভিউ নেওয়া। বলেই ট্রেনে উঠে চলে গেলেন নিজের কাজে। 

রাত দুটোর সময় আরামবাগের এসডিও কে ফোন করে বন্যার জল কি এলো এসডিও সাহেব। নাকি আপনি ঘুমোচ্ছেন নাক ডেকে। বলে গাল দিয়ে আপনমনে বলেছেন সব যে ডুবে গেলো এসডিও সাহেব। উঠুন, জাগুন আর নিদ্রা যাবেন না দাদা আপনি। এটা বোধহয় ওর পক্ষেই সম্ভব ছিল। এমন রিপোর্টার খুঁজে পাওয়া মুশকিল সত্যিই।
জেলার এসপি হাতি তাড়াতে গিয়ে রাস্তায় উল্টে পড়লো ফাল্গুনী দার ঘাড়ের ওপর। দুজনেই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একে অপরের ঘাড়ে। ফাল্গুনীদার চিৎকার কে তুই আমার ঘাড়ে রে বাবা হাতি এলো নাকি। এস পি সাহেবের উত্তর ফাল্গুনী আমি এসপি বলছি হাতি নয়। ফাল্গুনীদার উত্তর নিকুচি করেছে এসপির। হাতি তাড়াতে গিয়ে শালা আমায় মারার প্ল্যান। দাঁড়া আমি দেখাচ্ছি মজা তোর নামে কমপ্লেন করবো আমি ডিজিকে। একবার বেঁচে ফিরি ঘরে। কার মুখ দেখে যে আজ উঠেছিলাম শালা হাতির নিচে মরবো। এসপি শালা কিছুই করতে পারে না। বলেই মজার গালাগাল দিয়ে শ্রাদ্ধ করা এসপির। এটাই তো ওর আসল ইউ এস পি। এটাই ওর আসল মজার রূপ।

 হাজার বিপদেও যার কাছে যার মুখে হাসি আর মজা আর গাল দেওয়া আছে সবাইকে। কিন্তু কেউ তাকে এরজন্য পাল্টা প্রতিশোধ নেয়নি কোনো দিন। পরে বলেনি যে তোমায় ভাই দেখে নেবো। আসলে একজন সাংবাদিক এর এমন সুন্দর একটা জনসংযোগ সেটা সত্যি ওকে অনেক সাহায্য করেছে নানা সময় খবর পেতে। বহুদিন আগের এক ঘটনা গাড়ি নিয়ে খবর করতে জাঙ্গিপাড়া যাওয়া হবে। খবর হয়েছে কিন্তু টাকা নেই আমাদের কাছে। সোজা গাড়ি নিয়ে তারক কর্মকারের ইট ভাটায় যাওয়া হলো। তারক শোন ভাই গরীব ব্রাহ্মণ আজ বড়ো বিপদে পড়েছে। দ্রুত পাঁচশো দে ভাই ছাড় টাকা দে। গাড়িতে তেল নেই একদম। কি সহজ সরল ভাবে বলে দেওয়া। তারপর মুড়ি খেয়ে আমি, দেবাঞ্জন দা ফাল্গুনী দা রওনা দিলাম খবরের জায়গায়। তারক কর্মকার হুগলি জেলার বহু সাংবাদিকদের সাহায্য করেছে সেই সময় বিপদে পড়লে। তৃণমূলের প্রথম দিকের কর্মী তারক কর্মকার।

আসলে এগুলো তো সব হয়তো মনে নেই আমার কিন্তু যা মনে আছে সেগুলো লিখে রাখি আমি। বর্তমানের সুদীপ ঘোষ ফটোগ্রাফার প্রবীরদার প্রেসে আসতো চুপ করে সন্ধ্যা বেলায়। যেদিন তার কাগজে ছবি বের হতো ফাল্গুনী দা বলতো আজ নিশ্চয়ই ঘোষ তোর ছবি বেরিয়েছে তাই এদিকে এসেছিস তুই। শোন এরপর কিছু হলে খবর পাবি না তুই ঘরে বসে বসে। খরচ করতে হবে এর জন্য। বলে গরম চপ আর চার অর্ডার দিতে বলতো ঘোষকে মানে সুদীপ ঘোষকে।  সুদীপ দাও ওর কথা শুনত হাসি মুখে। আজ সুদীপ ঘোষ দা নেই। এটাই হলো আমাদের সবার প্রিয় ফাল্গুনীদা। 
তবে সেই সময় বাইরে জেলা থেকে কাজ করতে এলেও দেবাঞ্জন দা আমাদের সবার সাথে মিশে গেছিলেন নিজের গুণে। কোনো খবর দেওয়া, কি লিখেছেন সেই কাগজ ফ্যাক্স করে অন্যকে দিয়ে দেওয়া। যে কাগজ নিয়ে  কাড়াকাড়ি পড়ে যেত প্রবীরদার প্রেসে সন্ধ্যা বেলায়। নীলুদা সবার শেষে রিপোর্ট পাঠাতো অন্যদের লেখা হয়ে গেলে। আর সারাদিন পর রাজপথের নাজিমুদ্দিন আসতো খবর নিতে সেটা দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো ফাল্গুনী দা। সন্ধ্যার সেই সময় খবর লিখে মুড়ি চপ খাওয়া একসাথে। আকবর দা সেই সন্ধ্যায় হাজির হলে প্রেসে মদন এর দামী চপ আর মুড়ি জুটত আমাদের। সাথে বিখ্যাত দিলীপের লাল বা দুধ চা। এই সব স্মৃতি তো অমলিন হয়ে থেকে যাবে জীবনে। 

রাতের নাইট ডিউটির অনেক বিখ্যাত গল্পের মধ্য সেই বড়বাজারে আগুন লাগা দমকল মন্ত্রী তারকেশ্বরের মার্কস বাদী ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রতীম চট্টোপাধ্যায় এর গল্প। মন্ত্রী এসেছেন আগুন নেভানোর কাজ দেখতে তদারকী করতে। ফাল্গুনীদার রাতের ডিউটি সেদিন বোধ হয় খাসখবরে।সেই চেনা খৈনি ডলতে ডলতে ফাল্গুনী দার বিখ্যাত কথা। ওরে প্রতীম এই সব পুরোনো পাইপ দিয়ে কি আর আগুন নিভে যাবে। না, হবে না আমার মনে হয় অন্য পাইপ লাগবে রে ভালো মোটা পাইপ। তোর নিজের পাইপ দিয়ে একবার ট্রাই করে দেখ যদি এই আগুন নেভে। সবার মাঝে বিব্রত মন্ত্রী এই কথা শুনে। ফাল্গুনী দা হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠে ঘুমোতে শুরু করে দিলো। আগুন নিভে যাওয়ার আগেই। 
এমন নাইট ডিউটির সময় অন্য অফিসের লোকদের বলে রাখা হতো যে তাকে যেনো খবর হলেও কেউ ফোন করে রাতের বেলায় বিরক্ত না করে। সত্যিই কি অসাধারন সহজ উপায় বলে দেওয়া। পুলিশ কে যে অবলীলায় হাসতে হাসতে বলতে পারে আরে আপনি তো খবর চাপবেন আর আমি ছাপবো দাদা। এটাই হলো আমাদের দুজনের মনের কথা। তাতে আর কি হবে আপনার একটু ফাটবে। বড়ো সাহেব গাল দেবে আপনাকে। নিন একটা দুধের চা খাওয়ান তো। খবর করতে গিয়ে এমন কত যে স্মৃতি জড়িয়ে আছে আজ মনে পড়ে আমার। 

যেদিন ফাল্গুনীদার মা মারা গেলেন সেদিন দেখেছিলাম এই মানুষটার কি বুক চাপড়ানো কান্না। অভিজিৎ আমার মা ছেড়ে চলে গেলো রে। কেউ আর পৃথিবীতে রইলো না আজ আমার। অনেক বেশি বয়সে বিয়ে করলো। ছেলে হলো ফাল্গুনীদার। কিছু দিন আগেই ফোন করলাম দাদা কি খবর বললো কুল তোর কি খবর রে। টোটো চালকের কাজ করিস তুই। আমি বললাম ওই আর কি। মিডিয়ার কাজ কোথায়। শোন আমি পড়ে ফোন করছি বলেই কট করে ফোন কেটে দিলো। সেই এক আগের মতই আছে আজও এই এত বছর পরেও সে। সেই এক চরিত্র মজার মানুষ। যাকে তাকে যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে। খবরের জন্য হোক বা না হোক।

 সেই তারকেশ্বর থেকে কাজ করতে আসা মহিলা সাংবাদিককেও ঘোষ বলে ডাকতো ফাল্গুনী দা। বলতো আমি যা বলব সেটা শুনে চল ভালই হবে তোর। এমন নানা রং এর বর্ণময় জীবনের মানুষ ফাল্গুনীদার সাথে বহুকাল দেখা হয়নি আমার। পূজো দিয়ে দেবো বাবার কাছে স্পেশাল পূজো বলে টাকা নিয়ে বাবার প্রসাদের ফুল নিয়ে আর আসেনা শ্রীরামপুরে। ভেঙে গেছে সেই বিখ্যাত পল্লীডাক এর প্রেস, সাংবাদিকদের আড্ডা সুখের বাসর। এখন তো নতুন ঝাঁ চকচকে প্রেস ক্লাব হয়ে গেছে শ্রীরামপুরে। অসুস্থ প্রবীর মুখোপাধ্যায় এখন। 
কিন্তু এই সবের মাঝে হুগলীর সেই ত্রিশ বছর আগের টিভির সাংবাদিকতা, ক্যাসেট নিয়ে খবর ধরানোর সাংবাদিকতা। খবর নিয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতা, সেই নানা দলের রাজনীতির লোকদের কাছে আবদার করে, গাল দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে খবর করেও কিছু না বলা এসব আজ কেমন যেনো অচেনা লাগে আমার আজকাল। মনে হয় আজকে বোধ হয় ফাল্গুনীদার মত লোক ফিল্ডে থাকলে বেশ মজা হতো। কাজের মাঝে নেতা, মন্ত্রী,পুলিশ সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া যেত ভয় দেখিয়ে আর ক্ষমতা দেখিয়ে আর অল্প কিছু উৎকোচ দিয়ে সাংবাদিকদের মাথা নিচু করানো যাবে না কিছুতেই কোনও ভাবেই। 

কিন্তু কেনো যে ভোটের সময় হঠাৎ একটা ভিডিও তে দেখলাম ফাল্গুনীদা এক রাজনীতির দলে যোগ দিলেন। কিছুটা অবাক হলাম আমি। হাতে ঝান্ডা দেখে। মনটা একটু খারাপ হলো আমার। পরে ভাবলাম যাক গে সেটা তো ওর ব্যক্তিগত বিষয়। সেই তারকেশ্বরের মন্দির পাড়ার ফাল্গুনীদা, সেই বিখ্যাত বুচুন, আমাদের সবার প্রিয় হয়েই আছেন আজও এতদিন পরেও এত বছর পরেও। না হলে কি আর রাত দুপুরে এত কথা লিখতে বসি আমি। 

তবে যে কথা লিখে শেষ করবো আমি বেশ মজার ছড়া বানাতে ওস্তাদ ছিল ফাল্গুনী দা। ওর বিখ্যাত ছড়া ছিল সেই সময় সেটা হলো। দত্ত বাড়ির চিংড়ি ইলিশ, যাচ্ছে নগা করতে পালিশ। ওর বিখ্যাত এই ছড়া। তখন এই ছড়া জেলা সাংবাদিকদের মুখে মুখে ঘুরছে। দুপুরে নিজে কাগজে লিখে প্রেসে প্রবীরদার টেবিল এর নিচে রেখে দিলো। আর বলল টেকো তুই বসে থাক দেখ কি হয়। দত্ত মানে দুর্গা দত্ত। পুরপ্রধান ছিলেন বৈদ্যবাটি পুরসভার। যার মেয়ে মেজদিকে বিয়ে করেছিলেন আকবর দা। মেজদি মানে  স্বাতী খোন্দকার। বর্তমানে চন্ডীতলার বিধায়ক। সেই সময় সব মাছ মিষ্টি নাকি চলে যাচ্ছে জিটি রোড পার করে নওগাঁ তে যেখানে প্রবীর মুখোপাধ্যায় এর বাড়ী। অন্য সাংবাদিকরা কিছুই পাচ্ছে না তার নাগাল।
ভোটের রেজাল্ট বের হলো। খুব অল্প ভোটে হেরে গেলো আমাদের সবার প্রিয় তপন দাশগুপ্ত। খুব সম্ভবতঃ লোকসভা ভোটে। ঊনিশশো নিরানব্বই সাল হবে বোধ হয়। সাংবাদিকদের খুব খাতির যত্ন করতেন তপন দা। সেই বড়বাজারে অফিস তখন মনমরা। ভোটে হেরে গেছেন তপন দা। আর জেলায় তপন বনাম আকবর এর লড়াই ছিল সুবিদিত।  কে কোন অফিসে যাবে কে কোথায় যাচ্ছে সেটা নিয়ে জোর গুজব ছড়িয়ে যেতো। ফাল্গুনী দা ছড়া বেঁধে ফেলল সেই দিনেও, হেরে যাবার দিনেও। কপাল হলো গোড়া, তপন আজ ---  আকবর চড়ে ঘোড়া। সত্যিই কি মজার রসবোধ ছিল তার। আজ সেই আকবর দা নেই। সেদিনও হেরে গেলেও তপনদা ফনী আর নিখিলকে ডেকে সাংবাদিকদের অতিথি সেবা করতে কসুর করেন নি। দিনগুলো বোধহয় একটু অন্য রকম ছিল সে সময়।

তবে আজ যে যাই বলুক আমার মনে হয় সেই খাস খবরের যুগের দৌড়ে অফিসে ক্যাসেট পৌঁছে দেওয়া। ইটিভির সাথে এটা একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা। একজন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হিসেবে আমি আজ এতোদিন পরেও গর্ব অনুভব করি আমি। হাজার গল্পের মাঝে এমন একজন মানুষের সাথে আমি হুগলী জেলায় কাজ করেছি বলে। 

যে অনায়াসে যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজ আদায় করে নিতে পারে হাসি মুখে। এটাই বোধহয় ফাল্গুনী দার বিশেষ গুণ। যে গুণ সব রিপোর্টার এর থাকে না। এর জন্য এতদিন পরেও কিছু কথা লিখে ফেললাম। হয়তো অনেক কিছুই বলা হলো না আমার। তবু জেলার এই সবার সাথে মিলে মিশে কাজ করা আমি আজও মিস করি ফাল্গুনীদাকে। যে আর কুল বলে ডাকে না। বলে না শোন অভিজিৎ মন দিয়ে কাজ কর।

 যে হাসতে হাসতে একজন সাংসদকে বলে না তুই আমায় পুড়িয়ে মারার ছক করেছিলিস। কিন্তু বাবা তারকনাথ লর্ড আমায় বাঁচিয়ে দিল বুঝলি আকবর। যে এসপি কে বলে না বেঁচে ফিরলে ডিজির কাছে কমপ্লেন করবে। আর যে মমতার সেই ভিখারী পাসোওয়ান‌ এর ঘটনায় পুলিশকে হাসতে হাসতে বলে কেমন দিলো ওই একটা মেয়ে আপনাদের আন্দোলন করে তো টিকি নাড়িয়ে দিলো। সত্যিই অসাধারন সেই সব দিনগুলো যদি একবার ফিরে পেতাম তাহলে কি ভালই যে হতো। 

ফাল্গুনী দা ও আমি - অভিজিৎ বসু।
তেইশে‌ আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...