সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইনকিলাব বনাম ঘাসফুল

একটা ছোট্ট স্ফুলিঙ্গের যে এত শক্তি আছে সেটা বোধহয় সেই রাতেও বুঝতে পারেনি রিমঝিম নিজেও। যেদিন একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা,অস্থিরতা আর ভয় নিয়ে সেই রাতে এই কথাগুলো সে লিখেছিল তার নিজের সমাজ মাধ্যমের দেওয়ালে। তার মনে হয়েছিল এই ঘটনার একটা প্রতিবাদ হওয়া উচিত গোটা দেশ জুড়েই। যে প্রতিবাদ হোক মধ্যরাতে। যে আলো আঁধারির রাতে ওই মেয়েটাকে ছিঁড়ে কুটে শেষ করে দিয়েছে কিছু পশুর দল। সেই মধ্যরাত হোক প্রতিবাদের আসল সময়।
সেটা নিয়ে যে এমন আগুন জ্বলে উঠবে গোটা রাজ্য জুড়ে, দেশ জুড়ে সেটাও অনুধাবন করতে পারে নি রিমঝিম সেই দিন। কিন্তু আজ এই আটাত্তরতম স্বাধীনতা দিবসের এই মধ্যরাতে এই বাংলায়, এই দেশে যেনো এক অন্য ছবি ধরা পড়ল। শহরে, গ্রামে, পথে, প্রান্তরে, মাঠে, এক অন্য ছবি। স্বাধীনতার এতদিন পরেও কি মধ্যরাতে নতুন করে সূর্যোদয় হলো আবার। সাধারণ মানুষের বিবেকের সূর্যোদয় ঘটলো এই মাঝরাতে। 
যে মধ্যরাত আমাদের নতুন করে বুঝিয়ে দিলো প্রতিবাদ রাজনীতির আঙিনা থেকেই হোক বা কোনো রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেই হোক প্রতিবাদ তো প্রতিবাদই। যে প্রতিবাদে শাসকের বুকেও কিছুটা হলেও ধাক্কা লাগে, ঝাপটা লাগে আর ভয় ধরায়। পাল্টা রাস্তায় নামার ডাক দিয়ে বলতে হয় আমরাও চাই এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তির ফাঁসির শাস্তি চাই। তাই তো স্ফুলিঙ্গের মোকাবিলায় রাস্তায় নামছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। আগামী ষোলোই আগষ্ট বেলা তিনটের সময় মৌলালি মোড়ে জমায়েতের ডাক দিলেন তিনি। তারপর তিনি পদযাত্রা করে, মিছিল করে রাস্তায় হাঁটবেন। তাঁর দাবি একটাই দোষীর ফাঁসির শাস্তি চান অন্যদের সাথে তাঁরাও।
 কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে যে বাংলাকে বদনাম করার চক্রান্ত আছে। তাঁকে আঘাত করে সরিয়ে দেবার চক্রান্ত আছে সেটা তিনি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন এই কদিনে। আর সেটা বুঝেই কিছুটা তড়িঘড়ি করে পথে নামছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ঘাসফুলের দল। শুধু একটা ছোট স্ফুলিঙ্গের মোকাবিলায়। সত্যিই আমি নিজেও কিছুটা অবাক হলাম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে এই কথার ঘোষণা শুনে মুখ্যমন্ত্রীর মূখে। যে তিনিও বিচার চাইতে রাস্তায় হাঁটতে নামছেন অবশেষে। 
যার ডাক তিন দিন আগে রিমঝিম তাঁর একটা ছোট্ট পোস্টে দিয়েছিল মুঝে গুলাব নেহি ইনকিলাব চাহিয়ে। রিমঝিমের ইনকিলাব ছড়িয়ে পড়ল কালনা থেকে কাকদ্বীপ, কোচবিহার থেকে সুন্দরবন, শান্তিনিকেতন থেকে দার্জিলিং, হুগলী থেকে হলদিয়া, কলকাতা থেকে কল্যাণী, গুয়াহাটি থেকে ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ থেকে দিল্লী একটাই আওয়াজ গর্জে উঠলো মানুষ we want justice .  
 
 আর এই এক দাবিতে সরব হয়ে পথে নামছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। আসলে তিনিও বোধহয় কিছুটা  বুঝতে পেরেছেন যে শুধু ভাতা, আর্থিক সাহায্য, ক্লাবকে অনুদান, কন্যাশ্রী,আর রূপশ্রী দিয়ে কোনো ভাবেই এই ছোটো স্ফুলিঙ্গের মোকাবিলা করা আর সম্ভব নয়। তাই সেটা বুঝতে পেরেই দ্রুত পথে নামার সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। রাজনীতির খেলার মাঠে ব্যাট ধরে সিবিআইকে চাপে রাখতে দোষীর ফাঁসির আওয়াজ তুলে দিলেন প্রথম ওভারেই। কলকাতা পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে বলে দিলেন তদন্তের নব্বই ভাগ কাজ তারাই করে দিয়েছে। বাকি কাজটা সিবিআই করুক।
আসলে তিনিও বোধহয় কিছুটা সিঁদুরে মেঘ দেখতে পেয়েছেন এই আর জি কর এর ঘটনায়। তাই ওই ছোট্ট একটা রিমঝিমের পোস্ট, ছোট্ট একটা স্ফুলিঙ্গকে কেনো যে এত পাত্তা দিচ্ছেন কে জানে। তিনি বারবার বলছেন শুধু ছাত্র ছাত্রীদের বিষয় নয় এটা। এর মধ্যে গভীর একটা চক্রান্ত আর রাজনীতি লুকিয়ে আছে। যে রাজনীতি করছে রাম,বাম, অতি বাম ও কংগ্রেস দল। যাদের কাছে তিনি কোনোদিন মাথা নিচু করেননি আর করবেনও না। কিন্তু মানুষের কাছে মাথা নত করবেন তিনি বারবার। 
রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো বহু লড়াই এর সাক্ষী অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি তাহলে এই ছোটো স্ফুলিঙ্গের মোকাবিলায় কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে আজ। না, সেটা তো তিনি কিছুতেই বুঝতে দেননি কোনো সময়। লড়াই করে যে কোনো উপায়ে সব কিছুর মোকাবিলা করেছেন তিনি সারা জীবন ধরেই। এটাই তাঁর আসল ক্যারিশমা, আসল জাদু।
 কিন্তু বামেদের চৌত্রিশ বছরের রাজত্বের শেষ পর্বে যেমন ছোটো ছোটো এমন স্ফুলিঙ্গের বিচ্ছুরণ তাদের সাধের ইমারতকে একদিন ধূলিসাৎ করে দিলো। সেই স্ফুলিঙ্গের মোকাবিলায় পথে নামছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যাক এই অসম লড়াইতে কে জেতে আর কে হারে। রিমঝিমের ইনকিলাব। নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের মাটির গন্ধ মাখা ঘাস ফুল। 

ইনকিলাব বনাম ঘাসফুল - অভিজিৎ বসু।
পনেরো আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...