আজ সাদা জীবনের কালো কথায় শুধুই রাত্রি পুনরুদ্ধারের ডাক এর কথা। ইংরেজিতে যাকে বলা হচ্ছে Rclaim The Night. আর জি কর কান্ডের পর আমাদের রাজ্যে যে ডাক দিয়েছেন রিমঝিম সিনহা। না, রিমঝিমকে আমি চিনিনা। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী। দু হাজার কুড়ি সালে পাশ করেছেন তিনি। বর্তমানে রিসার্চ করছেন। আমি, আপনি, কেউই হয়তো চিনতাম না এই রিমঝিমকে বাহাত্তর ঘন্টা আগেও। কিন্তু বর্তমানে রিমঝিম এখন সেলিব্রিটি হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া আর টিভির দৌলতে।
যাকে আমরা কেউই চিনতাম না সেই মেয়েটির একটি আবেদন, সমাজ মাধ্যমে করা তার একটি পোস্ট সারা শহর, গ্রাম, রাজ্যে ছেড়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে আজ। যার ডাকে আজ সবাই পথে নামবেন ঠিক রাত বারোটায়। রাত দখল করতে পথে নামবে মেয়েরা। যে পথের ধারে অপেক্ষা করবে না কোনো হিংস্র হায়নার দল। কেউ হয় তো খুবলে খাবে না তাদের নরম শরীর।
আসলে এই যে প্রতিবাদ, এই যে আওয়াজ, রাত দখলের আওয়াজ এটা প্রথম শুরু হয় ঊনিশ শো সাতাত্তর সালের বারোই নভেম্বর। ব্রাসেলস এর লিডস শহরে রাতে মহিলারা তাদের বিরুদ্ধে পুরুষদের যৌনো অত্যাচার এর প্রতিবাদ করতেই রাস্তায় নামেন সেদিন। সেই রাতে মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে রাতের শহরে ডাইনিদের পোশাক পরে রাস্তায় হাঁটেন মহিলারা। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সেই রাতে লিডস শহরে। সেই রাতে রেড লাইট এলাকায় এই প্রতিবাদ অভিযান চালান মেয়েরা। যাতে সেই এলাকার মেয়েদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।
সকলের দাবি একটাই সুনিশ্চিত করতে হবে মেয়েদের নিরাপত্তা। পুরুষদের কাছে যেনো কোনো ভাবেই তাদের হেনস্থা ও নির্যাতনের শিকার হতে না হয়। লিডস শহরে সেই রাতে মহিলারা নারীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পুরুষের যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। তারা তৈরি করে দ্যা নাইট গ্রুপ। যারা পুরুষদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে এই ভাবেই পথে নেমে আন্দোলন করেছিলেন। সেই দিন আজ থেকে প্রায় আটচল্লিশ বছর আগে। শুধু ব্রাসেলস নয় পৃথিবীর নানা জায়গায় যেমন লন্ডনেও এই রাত দখল করার আন্দোলন হয়।
আসলে মহিলারা এই ভাবেই বোধহয় নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে, নিজেদের বাঁচাতে, পথে নামেন বুক চিতিয়ে। এটাই তো একমাত্র রাস্তা তাদের। যার জন্য তাঁরা সবাই জানেন যে দেশ রাজ্যে সব কিছুর গণ্ডী পার করে এই ইস্যুতে গোটা বিশ্বের সব মেয়েরাই এক ভাবেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন বারবার। আর সেই এক ভাবেই নারী নির্যাতনের বিরূদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন রিমঝিম। যার চোখের ভাষায়, মুখের কথায় ধরা পড়েছে সেই রাতের অন্ধকারে ভয়ঙ্কর ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। যে ঘটনার পর সে নিজেও আতঙ্কিত।
প্রথমে সে নিজেই বোধহয় কি করবেন বুঝে উঠতে পারেন নি এই ঘটনার অভিঘাতে। তাই নিজেই নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে লিখেছিলেন সেই ভয়ার্ত রাতের কথা। যে রাত মেয়েদের কাছে বিভীষিকার রাত। যে রাতের কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে হিস হিস করা সরীসৃপের দল। যারা ছোবল দেয় সুযোগ পেলেই। আর তাই সেই আর জি কর হাসপাতালের ঘটনা ঘটার পরেই তাই রিমঝিম এই রাত দখল এর ডাক দেয়। তাঁর সেই প্রথম দেওয়া ডাক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
যেখানে কোনো রাজনীতির মারপ্যাঁচ নেই। যেখানে কোনো লাল, গেরুয়া, সবুজ পতাকার দাপাদাপি নেই। যেখানে কোন হিসাব কষা নেই এই রাত দখলে কার লাভ আর কার ক্ষতি। শুধু নিজেদের অধিকার রক্ষা, আর নারী সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করতেই এই রাত দখলের ডাক দেওয়া। যে ডাক দেশে দেশে পিঠ ঠেকে যাওয়া নারীরা, মেয়েরা পুরুষদের এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে পথে নেমে বুঝিয়ে দিয়েছে।
মেয়েরা বুক ফুলিয়ে রাতের অন্ধকারে একা একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুরুষদের দিকে তাকিয়ে বলেছে এই রাত শুধু তোমার ভোগ দখলের রাত নয়। এই রাত আমার, এই রাত আমাদের সবার। যে রাতে আমরা মেয়েরা সবাই নিশ্চিন্তে নিরাপদে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবো যত্রতত্র। যেখানে হিংস্র হায়নার দল আমাদের ছিঁড়ে কুটে খাবে না। আপনাকে স্যালুট রিমঝিম।
রাত দখল এর ডাক - অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন