সকালে উঠেই একটা মন খারাপের খবর পেলাম আমি। কি দ্রুত যে খারাপ খবর ছড়িয়ে যায় সেটা ভেবেই মনটা ভার হয়ে গেলো আজ এই সকাল বেলায়। ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস এর পোস্ট। তারপর সাংবাদিক সুচারু মিত্র লিখলো সেই এক খারাপ খবর। আসলে জীবন আর মৃত্যুর মাঝে এই দুই এর ফারাক যে একটা শুধুই বিন্দুমাত্র। এই জীবন আছে আর এই জীবন নেই। এর মাঝেই তো কত কিছু।
কত তাড়াহুড়ো, দৌড়, ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশন, বুম হাতে কত বড় বড় লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়া। আর তারপর দুম করে সব ফেলে, সব ছেড়ে চুপিসারে চলে যাওয়া দূরে অনেক দূরে। জীবনের এই অধ্যায়কে মাঝে মাঝে কেমন ভয় হয় আমার আজকাল। এই চেনা পৃথিবী, চেনা মানুষ, চেনা সম্পর্ক, চেনা আত্মীয় স্বজন সবাইকে ছেড়ে, সবাইকে ফেলে হাসি মুখে চলে যাওয়া। সত্যিই বড়ই অদ্ভুত এই জীবন আর মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা কটা দিন আর তার স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দূরে অনেক দূরে মিলিয়ে যাওয়া।
আমি হয়তো কোনোদিন শ্রাবণী গুপ্তর সাথে একসাথে এক অফিসে কাজ করিনি। কিন্তু আমি এই মিডিয়া জগতে দুর থেকে দেখেছি তাঁকে। নাম শুনেছি কত। ইন্টারভিউ নিতে দেখেছি নানা সময়ে নানা চ্যানেলে। আসলে একজন সাংবাদিক হয়ে অন্যজনের এই ছুটে বেড়ানো, দৌড়ে বেড়ানো দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। যে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে একজন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী যতদিন সে কাজ করতে পারে দৌড়তে পারে ততদিন।
কিন্তু হঠাৎ যদি অসময়ে অসমাপ্ত কাজ রেখে যদি তাঁর চলে যাবার খবর আসে একটু থমকে যেতে হয় আর কি। দাঁড়িয়ে পড়তে হয় সেকি কি করে হলো এটা। এমন তো হবার কথা ছিল না এই সময়ে। অসুস্থ ছিল, নানা চিকিৎসায় ভালো হচ্ছিল ধীরে ধীরে কিন্তু তার মাঝেই এই খারাপ খবর এলো আজ সাত সকালেই । সত্যিই সকালটা কেমন যেন ঘেঁটে গেলো। তাই কটা ছবি ওর থেকে ধার নিয়ে দু চার কথা লিখতে ইচ্ছা হলো আমার।
আজ থেকে বহুদিন আগের কথা তখন নিউজটাইম এর অফিস ওদের খবরের সিটি অফিস কলামন্দির এর কাছে একটা জায়গায়। সবে জেলা থেকে কাজে কলকাতায় এসেছি আমি। কোনো একটা খবরের ছবি ট্রান্সফার নেবার জন্যে সেই অফিসে গিয়ে শ্রাবণী গুপ্ত সাথে দেখা করে বলি তাঁকে। তিনি আমার এক চেনা ক্যামেরাম্যানকে বলেন ছবিটা ট্রান্সফার দিয়ে দিতে। সেই একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয় প্রথম আমাদের দুজনের নিউজ টাইমস এর সিটি অফিসে।
এর বহুবছর পর রাস্তায় খবর করতে গিয়ে দেখেছি আমি কিন্তু সাহস করে আলাপ করে কথা বলা হয় নি আর। এর বহুদিন পর আজকাল ওন লাইন এ অনির্বাণ চৌধুরীর সাথে শ্রাবণী কাজ করে কিছুদিন। সেই সময় অনির্বাণদা আমায় বলেন শ্রাবণী গুপ্তর সাথে যোগাযোগ কর ওরা একটা নতুন চ্যানেল করবে শুনছি। সিভি দিয়ে বল আমার কথা তুই ওকে। ফোন করেছিলাম ওনাকে একটু ভয়ে ভয়ে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে। বেশ ভালো ভাবেই বললেন হ্যাঁ সিভি দিন খবর হলে আপনাকে জানাবো। সায়ন্তন এর সাথে যোগাযোগ রাখবেন আপনি। ওই গোটা বিষয়টা দেখছে। এই অল্প কিছু স্মৃতি রোমন্থন করতে ইচ্ছা হলো আজ আমার এই মন খারাপের সকালে।
মাঝে মাঝে দেখতাম অসুস্থ হলেও ভালো হয়ে উঠছেন তিনি। কখনও হাসি মুখের ছবি। কখনও বাবাকে ধরে হাসি মুখের ছবি দিয়েছেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা ছবি দিয়ে বলতেন তিনি একটু ভালো আছেন আর কি। কিন্তু মাঝে একদিন ভেবেছিলাম আমি ফোন করবো বলবো ভালো থাকবেন আপনি। দেখবেন ঠিক সুস্থ হয়ে আবার আগের মত ফিল্ডে ফিরবেন আপনি। লাইট, ক্যামেরা, বুম সব ফিরে আসবে এই জীবনে।
চেনা মুখ সহকর্মীদের সাথে হাসি ঠাট্টায় কাজে মেতে উঠবেন আবার আপনি। ফিরে পাবেন আগের সেই দৌড় এর জীবন আপনি। যে জীবনের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে একজন রিপোর্টার সারাটা জীবন। অসুস্থ হয়েও সে স্বপ্ন দেখে মাঠে ফেরার। কিন্তু না সঙ্কোচ কাটিয়ে আর ফোনটা করা হয়ে ওঠেনি আমার আপনাকে। আর কোনোদিন সেই ফোনটা করতেও পারবো না আমি। তার আগেই আপনি লড়াই করতে করতে আমাদের সবাইকে আলবিদা জানিয়ে এই দৌড় এর মাঠ ছেড়ে চলে গেলেন অচিনলোকে। বড়ো অসময়ে চলে গেলেন আপনি। যেখানেই থাকুন সেখানে ভালো থাকবেন আপনি।
শ্রাবণী আপনি ভালো থাকবেন - অভিজিৎ বসু।
বিশে আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন