সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধু ভাদ্র মাস শেষ হলেই যে সেই আশ্বিনের আনন্দের ডাক। চারিদিকে এত দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার মাঝে একটু যেনো অন্য রকমের দিন যাপনের হাতছানি। যার জন্য আমাদের অপেক্ষা বছর ভর। আকাশে বাতাসে মেঘের ভেলার ভেসে যাওয়া এদিক থেকে ওদিক। দুর থেকে আকাশ বাণীর রেডিওতে শোনা যাচ্ছে সেই বিখ্যাত গান, আশ্বিনের শারদ প্রাতে। চারিদিকে কেমন পুজোর ডাক। পুজোর ছুটির কাউন্ট ডাউন। আর পূজোর গন্ধ। অন্য সব কিছুকে দূরে ঠেলে সরিয়ে একটু যেনো অন্য রকমের দিন যাপন এর স্বপ্ন দেখা।
কদিন বাদেই যে শিউলির গন্ধে ঘুম ভাঙ্গবে আমাদের সবার। দেখবো মাটির উঠোনে শিউলির লুটোপুটি। আর তখন ঠাকুর দালানে কাঠের খাঁচায় তখন খড় বাঁধার কাজ চলছে জোর কদমে। কেমন যেনো একটু একটু করে অচেনা মায়ের মৃন্ময়ী রূপ আমাদের সবার সামনে উন্মোচিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। খড়ের বাঁধনে বাঁধা পড়ছেন তিনি। তৈরি হচ্ছে এক নতুন সম্পর্ক।
আমাদের ঘরের মেয়ে উমা কেমন একটু একটু করে সেজে উঠছেন তিনি নিজেই। তারপর খড়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, নিজে নিজে মাটির গন্ধ গায়ে মেখে মা আমার যে চিন্ময়ী রূপ ধারণ করবেন শুনলাম। সেই মায়ের রূপ দেখে আমরা সবাই যে মোহিত হবো। দু হাত কপালে ঠেকিয়ে বলবো মা তুমি সবার মঙ্গল করো মা।
আর তখন সেই বহু পুরোনো একটা শ্রীরামপুরে লাহিড়ী পাড়ার মোড়ে সেই আমার বহু পরিচিত জায়গায় কেমন বাঁশের খুঁটির ঠকঠক আওয়াজ। মণ্ডপের পাশের এক চিলতে ফ্ল্যাটের জানলা বেয়ে সেই আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত এদিক থেকে ওদিক। ঠিক যেনো দেয়ালের গা বেয়ে সেই এদিক ওদিকে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে পেটমোটা টিকটিকি। মাঝে মাঝে আওয়াজ তুলছে সে টিক টিক। ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপও। মা আসছেন যে। কিন্তু আমার মা যে এই পুজোতেও নেই। দূরে অনেক দূরে চলে গেছে আমার মা।
আসলে এই পুজোর গন্ধ ছোটকাল থেকেই কেমন যেন আমাদের সবার কাছে জীবনে একটা নতুন স্বাদ আস্বাদন এর সুযোগ করে দিত। পূজো মানেই যে হৈ হুল্লোড়। আর কটা দিন এর নির্ভেজাল ছুটির স্বাদ পাওয়া। পরিবারের সাথে সময় কাটানো। চারিদিকে নানা ঘটনা, রটনা, নানা দুর্ঘটনা। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও যে আমাদের এই অপেক্ষার পালা। ভোরের বেলায় রেডিও আর টিভিতে মা আসার আগমনী গান। সব মিলিয়ে হাজার মন খারাপ এর মাঝেও যে একটু মায়ের আগমনীর সুলুক সন্ধান পাওয়া।
খড় আর মাটির প্রলেপে মা আমার কেমন করে যে একটু একটু করে তৈরি হচ্ছেন তাঁর নিজের চেনা রূপে সেটা দেখে মন ভরে যায় আমার। সন্ধ্যা হলেই তাই আমি ছুটে যাই বোলপুরের এই রামকৃষ্ণ রোডের পাশে ভিকিরবাঁধ দুর্গমন্দিরে। চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখি আমি।কেমন করে সেই খড় বাঁধা প্রতিমাকে দুর থেকে আপনমনে দেখি। নিষ্প্রাণ মায়ের মূর্তিতে যে কদিন বাদেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। ঢাক বাজবে। কাঁসর বাজবে। ধূপের গন্ধে ম ম করবে এই গোটা এলাকা। সবাই মাতোয়ারা হয়ে যাবে পূজোর আনন্দে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন