সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রামদার দোকান ত্রয়ী

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আপনাদের এক অন্য নতুন ধরনের গল্প শোনাই। যে গল্পের চরিত্র চিত্রন করতে আমায় অনেক কসরৎ করতে হয় নি একটুও এই রাতদুপুরে। অনেক কিছু ভাবতে হয়নি আমায় এই লেখার জন্য। রূপকথার কোনো আজব গল্পও রচনা করতে হয় নি কাউকে নিয়ে আমায়। আসলে এই গল্প তো কোনো হাত পা ওলা কোনো মানুষকে নিয়ে নয়। যে কোনো ভালো মানুষের ভালো কথা আর মন্দ কথা নিয়ে নয়। যে সেই মানুষটার জীবন নিয়ে কাটা ছেঁড়া করতে হবে সেটা কিন্তু নয় একদমই। এ এক অন্য ধরনের গল্প। যে গল্পের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নানা হাসি,কান্না,দুঃখ আর আনন্দের ইতিহাস।

এই গল্প হলো এক বহু বছরের পুরোনো এক দোকানকে নিয়ে। যে দোকান শান্তিনিকেতনের এক অনামী শতাব্দী প্রাচীন মুদি দোকানকে ঘিরেই এই গল্প কথা। যে দোকানের গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে অজানা নানা গল্প, কাহিনী, রহস্য, আর নানা জীবনের গভীর গোপন সব বেদনার কথা। যে সব অকথিত কথা অজানাই থেকে গেছে এত দিন আমাদের সবার কাছে। আসলে কে আর সেই সব পুরোনো কথা কে মনে রাখে বলুন। বিস্মৃত অতীত তো আমাদের কাছে একটা ফেলে আসা সময় মাত্র। 

তবুও এই দোকানে আসতেন একসময় শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত সব মানুষজন। কে না আসতেন এই তালিকায় ছিলেন অমর্ত্য সেন, তাঁর মা, কণিকা দি মানে মোহরদি, আসতেন সৈয়দ মুজতবা আলী, রামকিঙ্কর বেইজ, পার্থ বসু, সেলিম আলী, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, অপর্ণা সেন ও  প্রবীণ আশ্রমিকগণ। আরও কত এমন সব বিখ্যাত গুণী মানুষজন এই ভাবেই দোকানে হাসি মুখে আসতেন আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। তারপর জিনিস কিনে ঘরে ফিরতেন। দোকানের সেই বিখ্যাত পুরোনো কাঠের টেবিলে কত বিখ্যাত মানুষ জন যে বসেছেন তার হিসেব নেই। দেওয়ালে সেই হল্যান্ড থেকে আসা সেই বিখ্যাত চিত্র আজও কেমন চুপটি করে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষয়িষ্ণু হয়েও। 

গল্প আছে যে একসময় এই দোকান যাদের ছিল সেই ভকতরা এই দোকানে ফিলিপস এর জিনিস বিক্রি করতেন। তার ডিলার ছিলেন তাঁরা। আর ফিলিপস কোম্পানি সেই আমলে এই বিখ্যাত পৃথিবীর ম্যাপ আঁকা এই ছবি দিয়েছিলেন তাদের এই দোকানে যা হল্যান্ড থেকে সোজা এসেছিল এই শান্তিনিকেতনের লাল মাটির দোকানে। যা আজও অনেক গর্ব নিয়ে বেঁচে আছে। এই পৃথিবী বিখ্যাত বিদেশ থেকে আগত দেওয়ালে টাঙানো চিত্রটি আজও ঝুলে আছে অতীত স্মৃতিকে আঁকড়ে।

অনেকেই একে কিনে নিতে চাইলেও রাম বাবু একে ছাড়তে চান নি কিছুতেই। আসলে এত দিনের একটা স্মৃতি যাকে আগলে জড়িয়ে বড়ো হলেন তাকে বিক্রি করে দেবেন কি করে। ছবিটা নষ্ট হয়ে গেলেও দেওয়ালে আজও বিদ্যমান তাই। যার ইতিহাস এর সাথে জড়িয়ে গেছে এই দোকানের শতবর্ষের প্রাঞ্জল ইতিহাস। যে ইতিহাসকে বুকে ধরেই তো বেঁচে আছে এই রতনপল্লীর সেই রামদার দোকান আজও একা একা বহু দোকানের ভীড়ে। এই দোকানের পাশেই তো সেই বিখ্যাত কালোর চায়ের দোকান যে দোকান আজ বন্ধ হয়ে গেছে। কত যে কথা মনে পড়ে যায় রামদার এই বাহান্ন বছরের জীবনে।

প্রায় একশো বছরের পুরোনো রতনপল্লীর এই দোকান যে আজও অমলিন হয়ে বেঁচে আছে আমাদের সবার কাছে সবার সামনে। যে দোকানের ইতিহাস, যে দোকানের সেই বিখ্যাত পুরোনো চেয়ার টেবিল, দেওয়ালে ঝুলে থাকা পুরোনো সেই হল্যান্ডের চিত্র আজও কেমন চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সবার সামনে স্থবির হয়ে স্থির নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে চেয়ে। শুধু একটাই কথাকে মনে করিয়ে দিতে এই ভাবেই যে সে এত বছর ধরে বেঁচে আছে আজও। কবির শহরের অতীত কে বুকে আগলে, অতীতের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসকে বুকে জড়িয়ে ধরে। যার জন্য তার নিজেরও গর্ব কম হয় না এক এক সময়। 

আজকাল যতই সেই দোকানের রমরমা কমে যাক তার আভিজাত্য আর ঐতিহ্য আজও একচুলও কমেনি যে। আর একসময় তো এই দোকানই ছিল এই বোলপুর শান্তিনিকেতনের একমাত্র দোকান যেখানে সব জিনিস মিলতো। কোনো কিছুই অমিল ছিল না এই বোলপুর শান্তিনিকেতনের খদ্দেরদের কাছে। সে নিউমার্কেটের বিখ্যাত চিজ বা কেক হোক বা অন্য কোনো দামী খাবার জিনিস হোক বা অন্য কোনো শৌখিন জিনিস হোক। সব মিলতো এই দোকানেই। আর সেই যে ঠাণ্ডা পানীয় যেবার বোলপুর শহরে প্রথম এলো সেতো এই দোকানেই পাওয়া যেতো একমাত্র। কি হৈ হৈ ব্যাপার পড়ে গেছিলো সেই সময় বোলপুরে।

কত দূর দুর থেকে যে ঠাণ্ডা পানীয় কিনতে ভীড় করতেন খদ্দেররা সেই সময় বলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন দোকানের বর্তমান মালিক রামদা। তাঁর চোখে মুখে খুশির হালকা ঝলক উপচে পড়ছে এই শ্রাবণের ভরা সন্ধ্যায়। জানেন দুমকা থেকে প্রথম আনা হয় তাদের এই দোকানেই সেই সময় ঠাণ্ডা পানীয় গাড়ি করে। সে গল্প তো সবার জানা এই কবিগুরুর দেশ শান্তিনিকেতনে। রামদার কথায় কেমন মন খারাপের মেঘ বৃষ্টির আলো আঁধারির খেলা বর্ষার সন্ধ্যায়। 

শুধু শান্তিনিকেতনের নয় শ্রীনিকেতন, গুরুপল্লী, পূর্বপল্লী, রতনপল্লী, অবনপল্লী সব জায়গা থেকেই ভীড় করতেন খদ্দেররা জিনিস কিনতে এই মুদির দোকানে। শুধু মুদি নয় সমস্ত স্টেশনারি জিনিসও মিলতো যে এই দোকানে। দোকানের শাটার খুলতে না খুলতেই ভীড় জমে যেত দোকানের সামনে সেই সময়। আর বাবাকে সাহায্য করতে ছেলে রামদার পড়াশোনা শেষ করেই এই দোকানে আসা পা দেওয়া। সেই কবে গ্রাজুয়েট হয়ে পাস করেই দোকানে ঢুকে পড়লেন তিনি। কত বছর আগের কথা সেই সব মনে হয় এইত সেদিনের কথা যেন।

 তিনি মাধ্যমিক পাশ করলেন তো উনিশশো সাতাশি সালে। তারপর ধীরে ধীরে গ্রাজুয়েট হলেন। কত আর বয়স তার সেই সময়। মেরে কেটে কুড়ি বা একুশ হবে। সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে কাস্টমস এর কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিও জুটে গেছিলো এই বোলপুরে। না, কিন্তু সেই চাকরিতে মন দেয়নি রামদার। তাই কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়েও করলেন না সেই কাজ। দোকানে বাবাকে সাহায্য করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন ছেলে সেই কম বয়সেই। ব্যবসার নেশা লেগে যায় কিছুটা। বাবা, ছেলে ছাড়াও কর্মচারী ছিল সেই সময় ভীড় সামলাতে। সেই থেকেই দোকানের জীবন শুরু তার, তারপর আর থেমে থাকেননি তিনি। সেই চলছে আজও দোকানকে নিয়েই বেঁচে আছেন আমাদের সবার প্রিয় রামদা।

 যিনি শুরু করেছিলেন সেই রামলাল বাবুর বাবা আজ আর বেঁচে নেই। কিছুদিন হলো মারা গেছেন তিনি প্রায় নব্বই বছর বয়সে। কিন্তু তাঁর ছেলে আজও এই দোকান চালিয়ে যাচ্ছেন হাসি মুখে। বাবার স্মৃতিকে বুকে আগলে নিয়ে চলেছেন তিনি আজও। আসলে এক সময়ের জনপ্রিয় এই একমাত্র দোকান আজ হয়তো আধুনিকতার মোড়কে মুড়ে যাওয়া কবিগুরুর দেশে আজ একটু বেমানান বিসদৃশ হয়ে গেছে কিছুটা। সে দাঁড়িয়ে আছে একদম অন্য ভাবে একপাশে রতনপল্লীর সেই লাল মাটির রাস্তায় ধারে। 

ভাড়া বাড়ির এই দোকান যখন এই জায়গায় তৈরি হয় তখন মাত্র তিনশো টাকা কাঠা এই সব জমির দাম ছিল। কিন্তু এখন তো এই দোকানের আশেপাশে কাফে শপ এর সুন্দর আলোয় ভীড়ে সেই পুরোনো দোকানের সামনে কেমন নতুন আলোর ঝিকিমিকি স্পর্শ সব কেমন হারিয়ে গেলো বদলে গেলো ধীরে ধীরে রামদার গলায় বিষাদের সুর। সেই যে সব ছোটো ছাত্র ছাত্রীরা কেমন হাসি মুখে রামদাকে জানিয়ে দেয়, না না সিগারেট আছে তার কাছে আজ আর লাগবে না। কত চেনা সম্পর্কের বন্ধন যেনো পড়তে এসে হয়েছে তাদের রামদার সাথে। 

একদম যেনো এই কবির প্রাণের শহরে, ভালোবাসার শহরে অন্য ধরনের সব শপিং মল কালচারের আধুনিকতার হাওয়া বইছে গোটা শহর জুড়ে এখন চারিদিকে। আধুনিকতার হাওয়া সব ভেঙেচুরে সাফ করে দিচ্ছে দ্রুত। পুরোনো সব বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট কালচার হলো এখন এই শহরের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরোনোকে ভেঙে তার স্মৃতিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নতুন করে তৈরি হচ্ছে নানা স্থাপত্য শহরের চারিদিকে। যেখানে এই দোকান হয়তো কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে এই নব্য কালচার থেকে। তবুও তো আজও সেই দোকান তিন বন্ধুর নেওয়া এই দোকান যার সুন্দর একটা নাম আছে ত্রয়ী। তিন বন্ধুর সেই দোকান হাত বদল হয়ে এখন রামদার হাতেই।

আজও সে বাইশে শ্রাবণের আগের রাতে মন খারাপ নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে সে একা একা চুপটি করে বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়। বৃষ্টি ভেজা রাতে ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে যার ঘুম আসে প্রতিদিন। আবার ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে যার নতুন ভোর হয়। যে ভোরের আলো রবির দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই শ্রাবণের মেঘ ঢাকা আকাশে। যেখানে ত্রয়ী দাঁড়িয়ে থাকে নানা রঙের উজ্জ্বল রঙিন সব স্মৃতিকে বুকে আগলে নিয়ে। যে স্মৃতির সরণী বেয়ে আজ এই বাইশে শ্রাবণের সকালে কিছুটা পথ চলতে বড়ো ভালো লাগলো আমার।

 যে রতনপল্লীর পথ বেয়ে সেই লকডাউন এর সময় আমি রামদার দোকানে আসতাম মেয়েকে পড়াতে নিয়ে এসে জিনিস কিনতাম, গল্প করতাম দুজনে সেই ফাঁকা দোকানে। সেই আলাপ আজ হয়তো আধুনিকতার মোড়কে মুড়ে গিয়েও হারিয়ে যায়নি আজও আমাদের দুজনের। রামদার ছেলে বিদেশী ভাষা পড়ে চাকরি পেয়ে চলে যাবে হায়দরাবাদ কিছু দিন বাদে।  না, ছেলে আর বাবার মতো চাকরি পেয়েও ব্যবসা আঁকড়ে ব্যবসার নেশা ধরে বসে থাকেনি যা তিনি করেছেন একসময়। 

তিনি শুধুই অতীত দিনের ঐতিহ্যকে বুকে আগলে একা একাই বসে আছেন এই দোকানে আজও। মাঝে মাঝেই আমি যে দোকানে সাইকেল নিয়ে চলে যাই ঘুরতে ঘুরতে। ঘুরে আসি, গল্প করি শুধু একটাই নেশায় পুরোনো আমলের নানা গল্পের নেশায়। বদলে যাওয়া কবিগুরুর শহরে যা দ্রুত ধীরে ধীরে কমছে। বাড়ছে আধুনিকতায় মোড়া নতুন সম্পর্কের নানা শহুরে জীবন। যে শহরে শুধু পড়তে এসে সম্পর্কের টান, ভালোবাসা, গভীর জীবনবোধ, আর শিকড়ের টানে থেকে যাওয়া এই কবির ভালোবাসার শান্তির নিকেতনে। যার টানে বার বার ছুটে আসা আমাদের। বাইশে শ্রাবণের সকালে, মন খারাপের সকালে ঘুম থেকে উঠে তাই সেই পুরোনো স্মৃতি আর ইতিহাসকেই একবার স্মরণ করলাম আমি। 

রামদার দোকান ত্রয়ী - অভিজিৎ বসু।
সাত আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...