সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিস্টার আন্না

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক স্কুলের সিস্টার এর কথা। যে সিস্টার আমার মেয়ের স্কুলের সিস্টার ছিলেন। আসলে জীবনের মেঠো পথে ক্যানভাসে কিছু আঁকিবুঁকি কাটা। আঁকাবাঁকা অক্ষরে কত কিছুই যে লিখে ফেলতে ইচ্ছা হয় আমার এই রাতদুপুরে কে জানে। যেসব কথা হয়তো না বললে, না জানালেও ভালো হতো, তবুও কেমন যেন একটা ভিতর থেকে মনে হয় এমন মানুষের কথা না লিখে থাকা যায় কি আর। জীবনের হাজার ঝড় ঝাপটা আর বৃষ্টির মাঝেও যে এমন স্মৃতি রোমন্থন সত্যিই তো বেশ আনন্দের মনে হয় আমার। আসলে মানুষ তো অতীত কে বুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতেই বেশী ভালোবাসে। যে ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই তার। 
যাই হোক এবার আসল গল্পে আসি। ছোটো বেলার বুটা তখন মেরে কেটে চার বছর বয়স হবে। শ্রীরামপুরে প্রদীপ ভড় এর সেই প্লে গ্রুপের স্কুলের পড়া শেষ করে ও এইবার ভর্তি হবে বড়দের স্কুলে। একদম দুম করে বেশ বড়ো হয়ে গেলো একধাক্কায় সেই ছোট্ট মেয়েটা যেনো। কিন্তু যে স্কুলে পড়াবে বলে ওর মার ইচ্ছা সেই চন্দননগর সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি হতে পারবে কি। যাই হোক ইন্টারভিউ পর্ব পার করে ছোট্ট বুটা ওর মার ইচ্ছানুযায়ী ভর্তির লিস্টে নাম তুলে ফেললো। যা বেশ আনন্দের খবর একটা। জীবনের শুরুতে এই ভাবেই এগিয়ে চলল বুটা। শ্রীরামপুর থেকে ট্রেনে করে প্রতিদিন সকাল হলেই চন্দননগর এর যাত্রী হয়ে স্কুল যাওয়া। প্রথম প্রথম যেমন কান্না জুড়তো স্কুল যাবে না বলে আমার তো মনে হতো কি দরকার ছিল এই টুকু বাচ্চাকে ওই বিশাল বড় স্কুলের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঠেলে ফেলে দেবার। কিন্তু কথায় আছে মানুষ অভ্যাস এর দাস। 

ধীরে ধীরে আমার ছোট্ট বুটাও কেমন করে যে স্কুলকে ভালোবেসে ফেলল কে জানে। একটা টলোমলো শিশিরবিন্দুর মত শৈশব জীবন ছেড়ে নতুন কঠিন চ্যালেঞ্জের একটা শৈশব জীবনকে আঁকড়ে ধরলো সে। যে শৈশবে শুধুই নিয়ম মেনে চলতে হবে এই নির্দেশ আর নিদান মানতে হবে তাকে। স্কুল জীবনের এই কঠিন ব্যালেন্সের খেলায় বুটা বেশ ক্লান্ত আর নাজেহাল অবস্থা হলো ওর। স্কুলের চাপ, পড়ার চাপ, প্রতিদিন স্কুলে হাজিরার চাপ সব নিয়ে বেশ খারাপ অবস্হা ওর। একদম কাহিল অবস্থা ওর। আসলে আমার মতই বুটার স্কুল জীবনের ওই ধরাবাঁধা কঠিন জীবন একদমই ভালো লাগতো না ওর। তবু কনভেন্ট শিক্ষা না দিলে ভালো হবে না ওর জীবন।আমার মত অবস্থা হবে যে এক কলম ইংরাজি লিখতে আর বলতে জানে না । ভালো জায়গায় কাজ পাবে না এই সব চিন্তা করেই ওর মার ইচ্ছা মেয়েকে যে করেই হোক পড়াতে হবে ওই কঠিন ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলে। 
ওর মার ইচ্ছা আর ওর নিজের কঠিন কঠোর পরিশ্রমে একে একে ক্লাস পাশ করতে লাগলো বুটা বেশ অনায়াসেই। সেই ছোট্ট লাল জামা ছেড়ে নীল স্কার্ট পড়লো মেয়ে কেমন একটা অচেনা হয়ে গেলো ও ধীরে ধীরে আমার কাছেও। মুখচোরা লাজুক ওই ভীতু মেয়েটাও কেমন করে যে বড়ো হয়ে গেলো কে জানে। রেজাল্ট এর দিন তাই গুটি পায়ে ভয়ে ভয়ে আমিও ওর মার সঙ্গী হতাম ক্লাস টিচারদের সামনে একপ্রকার হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে মেয়ের রিপোর্ট কার্ড নিতে। কথা বলতে পারতাম না ওর মা যা বলার আর যা শোনার শুনে সই করে পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বেরিয়ে আসতো স্কুল থেকে। কিন্তু ওই যে একটা শৃঙ্খলা, নিয়ম, আর কঠিন অনুশাসন এর জীবনে চলতে শুরু করলো সেটা ওকে ওর সেই ছোটো বেলার জীবনকে কিছুটা হলেও ভালো করলো মনে হয়। ওর জীবনের ভিত মজবুত করে দিলো। 
সেই সময় ও মাঝে মাঝেই খুব অসুস্থ হতো। বার বার মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে স্কুলকে জানিয়ে সিস্টারকে জানিয়ে ম্যানেজ করতো। আর সেই সূত্রেই সেই সিস্টার আমাদের চিনে গেছিলেন বেশ ভালো করেই। যে স্কুল জীবনে একটু এদিক ওদিক হলেই অভিভাবকদের ডেকে বলে এত কামাই করলে হবে না কিন্তু। যে সিস্টার এর ভয়ে স্কুলের সবাই কম্পমান সেই সিস্টার এর এক অন্য রূপ দেখলাম একদম যেন মাতৃ রূপ। বুটা তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। সামনে জীবনের সবথেকে বড়ো পরীক্ষা দেবে ও। সেই সময় মেয়ের থেকে ওর মার প্রিপারেশন বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। আমার আর বুটার চিন্তা যদিও কম এই সব নিয়ে। তাই ডোন্ট কেয়ার মনোভাব।
 কিন্তু কি যে হলো ওর কেমন যেনো থমকে গেলো বুটার জীবন। ধীরে ধীরে হেঁটে চলে বেড়ানো বন্ধ হয়ে গেলো ওর। প্রতিদিনের স্কুল জীবনের ছন্দ হারিয়ে গেলো ওর জীবন থেকে। কেমন যেনো একটা মনমরা ভাব। সারাদিন শুয়ে থাকে বিছানা ছেড়ে উঠে হেঁটে চলে বেড়াতে পারছে না একদম মেয়েটা। ওর সেই স্বাভাবিক জীবনটা কেমন থমকে গেলো। হাজার চিকিৎসা হাজার ডাক্তার দেখিয়েও কিছু হচ্ছে না। রোগ সারছে না কিছুতেই। কি করবো প্রায় পাগল পাগল অবস্থা আমাদের দুজনের। স্কুল থেকে ফোন আসছে বারবার। মেডিক্যাল রিপোর্ট দিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিলাম এই অবস্থা মেয়ের। কিন্তু কতদিন চলবে এইভাবে। কেমন একটা অসহায় অবস্থা আমাদের। দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমরা মেয়েকে নিয়ে এদিক ওদিক গাড়ি করে চিকিৎসকের কাছে। 
এর মাঝে একদিন স্কুল এর প্রিন্সিপাল সিস্টার আন্না মারিয়ার ফোন তাঁর সাথে দেখা করতে বললেন। সামনে স্কুলের পরীক্ষা। কোনরকমে ভয়ে ভয়ে গাড়ি করে মেয়েকে নিয়ে গেলাম স্কুলে গুটি গুটি পায়ে। সিস্টার এর সাথে দেখা করতে। বুক কাঁপছে আমাদের সবার। কি বলবেন নিশ্চয়ই খুব বকবেন মেয়েকে। স্কুল থেকে বের করে দেবেন। চুপ করে ঘরের বাইরে বসে আছি আমরা তিনজন মুখ শুকনো করে। সিস্টার এর রুমে ডাক পড়ল আভেরী বোস। মেয়েকে প্রায় কোলে করে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম আমি। হাত জোড় করে বললাম, সিস্টার দেখুন আভেরীর এই অবস্থা। তাই ও স্কুল আসতে পারে না কিছুতেই। দাঁড়াতেই পারে না ও নিজে নিজে। অনেক চিকিৎসা হচ্ছে ওর কিছুতেই কিছু হচ্ছে না যে। সব শুনলেন সিস্টার আন্না চুপ করে।
 ধীরে ধীরে ঘরের ভেতর যে চাপা উত্তেজনা আর ভয়ের অনুভূতি নিয়ে সিস্টার এর ঘরে প্রবেশ করলাম আমরা সেই গুমোট আবহাওয়া একটু একটু করে কেটে যেতে লাগলো যেনো। কেমন যেনো কত দিনের পরিচয়ে কাছে টেনে নিলেন মেয়েকে। কত গল্প করলেন। মেয়ে চুপ করে সব শুনলো সিস্টার এর কথা। মেয়ের সাথে আলাদা করে কথা বললেন সিস্টার। যেনো কত দিনের পরিচয় দুজনের। কি সুন্দর বন্ধু ওরা দুজন যেনো। যে মেয়ে একদম কথা বলে না সে কেমন করে কথা বলল কি হয়েছে পায়ে কি হয়েছে সব খুলে বললো । সিস্টার আন্না মন দিয়ে শুনলেন মেয়ের কথা। তারপর প্রভু যীশুর কাছে ওকে নিয়ে গেলেন বললেন আপনারা বসুন একদম ভয় পাবেন না ওর কিছুই হয় নি। কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি আমরা মেয়ের দিকে। 
কোনো পড়ার চাপ নয়, পড়ার কথা নয়, স্কুল কামাই এর প্রসঙ্গ উত্থাপন নয় একদম মামুলি গল্প কথা বলে মেয়ের কনফিডেন্স বাড়াতে চেষ্টা করলেন সিস্টার। কেমন এক নতুন অভিজ্ঞতা হলো আমাদের এই ইংরাজি মাধ্যমের স্কুলে। প্রভু যীশুর কাছে ওকে নিয়ে গিয়ে প্রার্থনা করলেন। ওর পায়ে ওষুধ দিয়ে দিলেন। সেই যীশুর পবিত্র হোলি ওয়াটার দিলেন। বললেন আভেরী তোমার কিচ্ছু হয়নি। একদম ঠিক আছো তুমি। একদম ভয় পাবে না তুমি। বলে ওর মাথায় গায়ে পায়ে হাত বুলিয়ে আদর করলেন। বললেন স্কুল আসতে হবে না যদি তুমি আসতে না পারো। তবে মাঝে মাঝে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবেন আপনারা। দেখবেন ওর ভালো লাগবে এই পরিবেশে এলে। আমি আর ওর মা হাত জোড় করে সিস্টার এর ঘরে দাঁড়িয়ে আছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না কিছুই। মাথার ওপর বড়ো সিলিং ফ্যানটা ধীরে ধীরে ঘুরছে। সিস্টার বললেন আভেরী ডোন্ট বি এফ্রেইড। ভয় পেওয়া না তুমি একদম। আমরা সবাই আছি তোমার পাশে।আর আমার সেই ছোট্ট মেয়ে চুপ করে শুনছে সে সিস্টার এর কথা মন দিয়ে।
 সেই শুরু তারপর ধীরে ধীরে সপ্তাহে এক দিন দুদিন করে সিস্টার এর কাছে যাওয়া। গল্প করা। ওকে প্রভু যীশুর কাছে নিয়ে গিয়ে প্রার্থনা করা। আমার মেয়ে একটু একটু করে হাঁটতে শুরু করলো। একটা অর্ধের হাফ ইয়ারলি এক্সাম দিতে পারলো না সে। সিস্টার আন্না বললেন কোনো ভয় নেই তুমি ফাইনাল এক্সাম দেবে। এরপর থেকে ভালো করে পড়া করো তুমি। মা, বাবার কত চিন্তা তোমায় নিয়ে। তুমি তো ব্রেভ গার্ল তাই না আভেরী। কেমন করে ধীরে ধীরে ওকে কথা বলে ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়ে সিস্টার সুস্থ করার চেষ্টা করলেন। এই ভাবেই চলল মেয়ের চিকিৎসা। এরপর গাড়ী করে স্কুলে যেতে শুরু করল একটু একটু করে সে। ক্লাস করতে শুরু করলো। সিস্টার আন্না মাঝে মাঝেই ওকে নিয়ে গিয়ে প্রার্থনা করেন প্রভু যীশুর কাছে। হাত জোড় করে হয়তো প্রভুর কাছে শক্তি প্রার্থনা করেন। বলেন হে প্রভু, তুমি এই ছোট্ট শিশুকে শক্তি দাও। যে শিশুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে একটা পরিবার। 
 ফাইনাল পরীক্ষা হলো মেয়ে ভালো পার্সেন্টেজ পেলো। পাস করলো নতুন ক্লাসে উঠলো। এক অর্ধের পরীক্ষা না দিয়েও মেয়েকে নতুন ক্লাসে পড়ার সুযোগ করে দিলেন সিস্টার আন্না। রেজাল্ট নিয়ে আমরা তিন জন মিলে সিস্টার এর রুমে গেলাম। সিস্টার আন্নার মুখে হাসি। বললেন আভেরী ভেরি গুড গার্ল।  বলে প্রভু যীশুর কাছে নিয়ে গেলেন প্রার্থনা করলেন আবার। ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলেন। সেই হোলি ওয়াটার দিলেন। আমরা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে ভাবলাম ঈশ্বরকে আমরা দেখিনি। জানিনা তাঁর স্বরূপ কেমন। হয়তো এই ভাবেই মানুষের রূপ ধরে ঈশ্বর আমাদের কাছে ধরা দেন।
আজ এত দিন পর সেই স্কুলের কথা, সেই সিস্টার এর কথা মনে পড়ে গেলো যে আমার। জানি না প্রভু যীশু কেমন মানুষ ছিলেন। শুধু সেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কথা শুধুই গল্প শুনেছি আমি আমরা সবাই। কিন্তু এই সিস্টার আন্না আমাদের প্রভুর সেই ভালোবাসার স্পর্শকে অনুভব করতে সাহায্য করলেন একটু একটু করে। আজ এতদিন পর সেই কথা ভেবে, মনে করে কেমন যেনো দু চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে আমার। মনে হয় সত্যিই তো সেই তাঁর বিখ্যাত কথা প্রভু এদের তুমি ক্ষমা করে দাও, এরা কি করছে জানে না। সেই ভালবাসার মানুষটার জীবনের হাজার যন্ত্রণা কষ্টের মধ্যেও তো তিনি পরের মঙ্গল কামনা করে গেছেন সারা জীবন। নিজে ক্রুশ বিদ্ধ হয়েও হাসি মুখে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। পরের মঙ্গল কামনা তো নিজ মঙ্গলের প্রসূতি। এই ধূলি ধূসর পৃথিবীতে ভগবান, আল্লা, খৃষ্ট সব কিছুই এক হয়ে যান। মানুষের মাঝে মানুষের রূপ ধরে সামনে এসে দাঁড়ান তাঁরা সেই ভালোবাসার সুখ স্পর্শ নিয়ে। যে স্পর্শে বদলে যায় আমাদের জীবন। ভালো থাকবেন সিস্টার আন্না।

সিস্টার আন্না - অভিজিৎ বসু।
আট আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

  1. সংসারের নানা টানাপোড়েন, ভালমন্দকে সঙ্গে নিয়ে অন্যরকম প্রেরণা জোগানো এক জীবনের গল্প।লেখকের কলম এঁকেছে এক আশ্চর্য ছবি।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...