সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুকন্যার জামিন

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সুকন্যার জামিন এর কথা। জেল মুক্তি হলো অনুব্রত মন্ডলের কন্যা সুকন্যা মন্ডলের। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সমাজ মাধ্যমে এই খবরটা। হাজারও খবরের ভীড়ে কেমন করে হারিয়ে যাবে হয়তো এই ছোটো খবরটা আজ। কারণ একটাই এই আন্দোলন আর প্রতিবাদের ঝড়ে উড়ে যাবে এই খবরটা। কিছুটা স্বস্তি পেলেন অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে। কারণ দিল্লী হাইকোর্ট গরু পাচার মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছে সুকন্যার। দু হাজার তেইশ সালের ছাব্বিশে এপ্রিল ইডির হাতে গ্রেফতার হন তিনি বোলপুরের বাড়ী থেকে। তিহাড় জেলে বন্দী ছিলেন তিনি এতদিন। তার বাবা অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেলে বন্দী আছেন এই এক মামলায়। 
বীরভূমের এই দাপুটে নেতা যেদিন গ্রেফতার হলেন সেদিন হৈ চৈ পড়ে গেছিল গোটা রাজ্য জুড়ে, দেশ জুড়ে। বীরভূমের বাঘ ধরা পড়েছে। বোলপুরের লিচুপটির এই  হৈ হুল্লোড় করা বাড়িটা কেমন খাঁ খাঁ করত এতদিন ধরে। হাজার মানুষের ভিড় গাড়ির আনাগোনা সব এক নিমেষে কেমন ফাঁকা হয়ে গেলো। বাবা মেয়ের একসাথে জেল যাত্রা হলো। সচরাচর এমনটা দেখা যায়না। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটাই হয়েছিল। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সুকন্যা মণ্ডল। 
আমরা জানিনা তার সত্যিই কি অপরাধ ছিল। যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয় সেটা ঠিক না বেঠিক জানিনা আমরা সাধারণ মানুষরা। কিন্তু এটা ঠিক যে এক বছরের বেশি সময় তিনি জেল বন্দী ছিলেন। এক জেলের এক কুঠুরিতে তার বাবা। অন্য কুঠুরিতে সে নিজে। এই অন্ধকার জীবনটা তাকে কাটাতে হয়েছে।যা তার জীবনে সারাজীবন একটা কালো দাগ রেখে যাবে। অভিযোগ প্রমাণ করার দায় তো সাধারণ মানুষের নয়, তদন্তকারী সংস্থার। তারাই বলতে পারবেন কি ভীষণ অপরাধ করেছিলেন সুকন্যা মন্ডল। যাঁর জন্য এত খেসারত দিতে হলো তাকে এই এক বছরের বেশি সময় ধরে। 
আমরা এটাও জানিনা গরু পাচার মামলার সর্বশেষ আপডেট কি। যার জন্য অনুব্রত মণ্ডলের মত দাপুটে রাজনীতিবিদকে জেলে থাকতে হলো ঠিক ভোটের আগে থাকতেই। এটাও জানা নেই যে তারপর থেকে কি এই গরু পাচার এর অপরাধ একদম কমে গেছে জেলায় জেলায়। কে জানে সঠিক পরিসংখ্যান পেশ করলে সেটা হয়তো জানা যাবে। কিন্তু এটা জেনে ভালো লাগলো যে সুকন্যা মন্ডলের জামিন হলো। যে জামিনের খবরে কেউ সমালোচনা করছেন কেউ আবার খুশি হয়ে বলছেন ভালই হলো। কিন্তু এটা তো ঠিক যে বাবাকে ছেড়ে আসতে হয়তো একটু কষ্ট হবে মেয়ের। 
ভাববেন কেনো এসব উল্টো পাল্টা লিখছি আমি। কেনো এই সব কথা বলে আসল বিষয়কে গুলিয়ে দিতে চাইছি। তদন্তকারী সংস্থার উদ্যোগকে ছোটো করে দেখতে চাইছি আমি। না, সেটা নয় শুধু কিছু প্রশ্ন কিছু জিজ্ঞাসা মাথায় ঘুরপাক খায় আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায়। এত বড় দুর্নীতি যার জন্য তোলপাড় গোটা দেশ। যে দুর্নীতির মাথাকে ধরতে গিয়ে মেয়েকে জেলে বন্দী করে আটকে দেওয়া হলো একবছর ধরে। 
চারিদিকে কেমন হৈ চৈ পড়ে গেলো। সবার ভাবটা এমন দেখ কেমন লাগে এইবার। সব একটানে ফাঁস হয়ে যাবে এইবার। বাবা মেয়ের এই একসাথে ধরা পড়ে জেলে যাওয়া। বেশ হয়েছে এমন ভাব অনেকের। কারুর মতে অপরাধ করেছে বাবা, মেয়েকে কেনো বন্দী করা। এই সব নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মাঝে আজ এই খবরটা পেলাম জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
 তাহলে কে ঠিক আর কে ভুল। নাকি শুধুই খেলনা বাটি নিয়ে খেলা করা আর নাটক করা। লুচি ভেজে পাতে খেতে দিয়ে পাত থেকে কেড়ে নিয়ে তাকে খেতে না দিয়ে তুলে দেওয়া। আবার সেলুলয়েডের পর্দায় ছবির মত আদর করে পাখার বাতাস দিয়ে আসন পেতে খেতে দেওয়া। সবটা কেমন যেনো গুলিয়ে যায় আমার এই বুড়ো বয়সে। সত্যিই কি যে হয়েছে আমার।
 বোলপুরে আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি হচ্ছে এখন। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে কেমন যেন লাগছে আমার এই ভাদ্রের শেষ বেলায়। নিম গাছের ডালে বসে একমনে শেষ বিকেলের বৃষ্টির জল গায়ে মেখে কাক গুলো কেমন আনন্দে ডাকছে ঘরে ফেরার আগে। পূজোর আগে সুকন্যার ঘরে ফেরা নিয়ে অনেকে অনেক রকম কটাক্ষ করছেন সমাজ মাধ্যমে। কিন্তু এই সব কিছুকে ছাপিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে সেই লিচুপট্টির সেই বিখ্যাত কেষ্ট মন্ডলের বাড়ী। সেই বাড়ির সামনের ফাঁকা শুনশান রাস্তা। হয়তো জেলের দুই কুঠুরিতে বসে বাবা আর মেয়ে দুজনেই সেই বৃষ্টির জলে ভিজে যাচ্ছেন একা একাই। 

সুকন্যার জামিন - অভিজিৎ বসু।
দশ সেপ্টেম্বর দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...