সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হার আর জিতের খেলা

একদম টান টান উত্তেজনা। দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় ছয় ঘণ্টার টানা প্রতীক্ষা। আমার মনে পড়ে গেলো সেই ঊনিশশো তিরাশি সালে ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জেতা ম্যাচ এর কথা এই রাতে। একবার খেলার মাঠে বার বার হাতের বাইরে গেম চলে যাওয়া এক পক্ষের দলের। আবার কাদা মাখা মাঠ থেকে কোনও রকমে উঠে পড়ে, হাত পা ঝেড়ে ফেলে আবার মাঠে দৌড়তে নামা। অন্য দলের খেলোয়াড় এর কাছ থেকে বল কেড়ে নেবার প্রাণপণ চেষ্টা করা। যদি কোনভাবে নিজের অনুকূলে গেমকে ফিরিয়ে আনা যায় সেটার জন্য ঘুঁটি সাজিয়ে ফের চেষ্টা করা আর কঠোর পরিশ্রম করা। সত্যিই এই জন্য কুর্ণিশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কেউ কেউ আবার বলবেন অনেক হয়েছে আর তেল দিয়ে কি লাভ। কিন্তু কজন এমন ম্যাজিক করে দেখায় বলুন। 

আসলে এই প্রথম বোধহয় তিনি নিজেই যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করে দু পা পিছিয়ে এলেন কিছুটা বর্তমান পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে। তিনি হেরে গেলেন একটা আন্দোলনের যুদ্ধে। যে যুদ্ধের ওপর দিকে ছিল তাঁর কথায় ছোটো ছোটো সব ছেলে মেয়েরা। যাদের তিনি আজ দীর্ঘ এই আটত্রিশ দিন আন্দোলনের পর কালীঘাটে নিজের ঘরে বসে জানিয়ে দিলেন, তিনি সব কিছুই মেনে নিচ্ছেন তাদের আবদার আর এতদিনের বায়না। হ্যাঁ তাতে জয় হলো তাঁর বিরুদ্ধ পক্ষের। তারা জয় পেয়ে উল্লসিত হলো। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি হেরে গেলেন আজ। যেটা তাঁর রাজনীতির জীবনে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু আজ সেটাই বারবার প্রতিভাত হলো। তাঁর মুখে শোনা গেলো আমি ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। ওদের সব কথাই শুনে নিলাম আমরা। মানে তোমাদের দাবি মেনে নিলাম। তোমরাও এবার কাজে ফেরো। 
তাহলে কি জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাকি কিছুটা সরকার এই তিলোত্তমার মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাকফুটে চলে যাওয়া সরকার কিছুটা আন্দোলনের এই দমবন্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এই পথকে বেছে নিলো। তার সাথে আছে রাজ্যে বন্যার করাল ভ্রুকুটি। যে কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি এই পরিস্থিতিতেও সবাইকে। 
কে জানে তবে যিনি জনতার আন্দোলনের নেত্রী, যিনি আন্দোলনে জয় ছাড়া আর কোনোদিন পরাজয় গ্রহণ করতে অভ্যস্ত নন একদম। সেই তিনিই আজ যেনো কেমন করে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এই ছোটো ছোট ছেলে মেয়েদের কাছে হার স্বীকার করলেন। নিজের অনমনীয় জেদকে দূরে ঠেলে কাছে টেনে নিলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সব দাবি দাওয়া। 
আর সেটা দেখে টগবগে রক্ত ফোটা সেইসব তাজা ছেলে মেয়েরা দু হাত তুলে আকাশ পানে তাকিয়ে স্লোগান দিলো আজ আমাদের অন্দোলনের জয় হলো। এই জয় আগামী দিনে আরও বেশি করে ছিনিয়ে আনতে হবে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ওদের মুখের দৃপ্ত ভঙ্গি, চোখের ইস্পাত কঠিন দৃষ্টি দেখে মনে হলো এই জয় তো শুধু আঠারোর জয় আর তারুন্যের জয়। যার জন্য খুশি আজ তারা সবাই। কিছুটা খুশি বোধ হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। 

একসময় সিঙ্গুরে, নন্দীগ্রামে, তেলেনিপাড়ায়, চমকাইতলায়, শিহড়ে, খানাকুলে, গোঘাটে, গড়বেতায়, মান্দারনে, লড়াই করে এইভাবেই বার বার লড়াই করে জিতে এসেছেন তিনি এতকাল এতদিন ধরে। হারতে যে তাঁর একদম ভাললাগে না কিছুতেই কোন সময়েই কোনো দিন। তাহলে এই জয় যে তিনি পেলেন না তার জন্য আফশোষ হবে না তাঁর আজ।‌

 না, রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো লোকদের মতে এটাও এক ধরনের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দু পা পিছিয়ে এসে বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের তীব্র অভিমুখকে যে কোনো ভাবেই হোক একটু শ্লথ গতি করে দেওয়া। পরে না হয় তিন পা এগিয়ে চলা যাবে বুঝেশুঝে।যে কাজে আজ তিনি পুরোপুরি সফল হলেন।

 একদম বিলিয়ার্ড বোর্ডের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে একটা একটা করে বলকে ঠিক নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। এতদিন ধরে যেটা করা যাচ্ছিল না কিছুতেই। আজ সেই কাজটাই কেমন হাসতে হাসতে তিনি দিদি হয়ে করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ওই ভারী চেয়ারে বসেও।

জানিনা আমি এরপর সত্যিই কোনো বদল হবে কি না আমাদের এই করুণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। বদল হবে কি না সরকারি হাসপাতালের এই করুণ ছবির। সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতির শিকড় যে গভীরে পৌঁছে গেছে তাকে তুলে ফেলা যাবে কি না জানিনা আমরা এই সাধারণ মানুষরা কেউ। যাদের সরকারের দেওয়া কার্ড নিয়ে এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়াতে হয় বারবার একটু ভালো চিকিৎসার আশায়।

শুধু এটা জানব আমরা এই তিলোত্তমার মৃত্যুর ঘটনায় যে টানা আন্দোলন হয়েছিল,সেই উত্তাল আন্দোলনের মোকাবিলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হার স্বীকার করতে হয়েছিল। যিনি জিতে এসেছেন বরাবর যে কোনো রাজনৈতিক কঠিন লড়াইতে। সেই জেতা নেত্রী, অন্দোলনের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গেলেন কেমন করে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে। অন্যকে জিতিয়ে দিয়ে।

হার আর জিতের খেলা - অভিজিৎ বসু।
সতেরো সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...