সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এমন একজন মানুষের কথা লিখবো যার সাথে আজও দেখা হয়নি আমার একেবারে সামনা সামনি। আমি জানিনা তার সাথে কোনোদিন আমার দেখা হবেও কি না সেটাও জানি না আমি। তবে দেখা হলে ভালো লাগবে এটা বলতে পারি। এতদিন যাদের কথা লিখে ফেললাম আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথায় তারা তো সব আমার আশপাশের এলাকায় ঘুরে বেড়ানো নানা ধরনের,নানা বর্ণের সব চেনা জানা লোকজন। যাদের মধ্যে কেউ বন্ধু, কেউ আবার বন্ধুর বেশ ধরে আমার চারপাশে ভীড় করে থাকা এমন কিছু মানুষজন যাদের আমি বারবার চিনতে ভুল করি আর ঠোক্কর খাই। আবার কেউ বন্ধু বা শত্রু না হয়েও তিনি কেমন করে যে জীবনের জলছবিতে দাগ কেটে রেখে দিয়ে যান কে জানে।
তিনি আমার এই জীবনে ঘুরে বেড়ান মাঝে মাঝেই হঠাৎ করেই। ঠিক যেমন ওই দুপুর বেলায় উঠোনে ধান শুকিয়ে ঘরে তোলার সময় যেমন নাম না জানা ওই বৃষ্টি ভেজা শালিক পাখি এসে ভিড় করে ঠিক তেমন করেই চলে আসে সে উড়ে উড়ে। আবার উড়ে চলেও যায় সে আপনমনে। যদিও অনেকেই আবার আমার এই লেখাকে স্তাবকতার বহিঃপ্রকাশ বলতেও দ্বিধা করেন নি। বলেছেন বৃহত্তর পরিসরে এইভাবে এইসব লেখার কোনো যুক্তি আছে কি। কিন্তু আমার মনে হয় আমার জীবনের এই অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, জীবন আর সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে থাকার কথা বলা সেগুলো যে একান্ত ভাবেই আমার নিজের। এর ভাগীদার যে আর কেউই নয়।
যাকগে এত কথা না বললেও চলবে হয়তো। যার কথা বলতে গিয়ে এত বড় ভূমিকা লিখতে হলো আমায়। সে হলো হিরণ্ময় ভট্টাচার্য। হ্যাঁ উওর পূর্ব ভারতের অসম এর এক অসমীয়া চ্যানেলের সাংবাদিক সে। হিরণ্ময় এর সাথে আমার আলাপ হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। যাকে নিয়ে এত কথা বলছি তাকে আমি আজও চোখে দেখিনি বিশ্বাস করুন। ফোনের মাধ্যমে কথা হয় তার সাথে মাঝে মাঝে। আর এই খিল্লি করা সমাজ মাধ্যমের দেওয়ালে ঠিক ওই পেটকাটি বা চাঁদিয়ালের মত ঝুলে থাকা সম্পর্কের মাঝে আচমকাই কেমন করে যে সে আমার জীবনের সবচেয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জড়িয়ে গেলো সে কে জানে। হয়তো সবটাই ঈশ্বরের জন্য সম্ভব হলো।
আমর জীবনের হেরে যাওয়া আর হারিয়ে যাওয়ার সময়ে, বিশ্বাস হারিয়ে যাওয়া, আস্থা হারিয়ে যাওয়া, নিজের আত্মমর্যাদা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে এই হিরণ্ময় ভট্টাচার্য আমার জীবনের অনেকটাই আমায় জিতিয়ে দিলো ফের। বহুদিন পর আমার এই দৌড়ে বেড়ানো জীবনে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছে সেই সময় সে একটি বাংলা চ্যানেল এর বিজ্ঞাপন দিয়ে আমায় বলেছিল এই নতুন বাংলা চ্যানেল হবে অসম থেকে। আপনি দেখুন এটা। এই চ্যানেলে কিছু হলে আপনি জায়গা পাবেন। সেই ব্যবস্থা কিছুটা হলেও সে করে দেয় আমায়। আজও ওর সেই কথা মনে পড়ে আপনি কলকাতা অফিসে কাজের সুযোগ পাবেন। আমার এক দীর্ঘ কুড়ি বছরের এক বন্ধু যে আমায় অনেকটাই সাহায্য করে সেই চ্যানেলে কাজ করার সুযোগ দিয়ে। যদিও আজ আর তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই আমার।
হ্যাঁ, সেই নতুন চ্যানেল হলো কাজের সুযোগ হলো অনেকের। আমার বহুদিনের চেনা চেনা টুকরো মুখ এর পরিচিত সব মানুষদের সাথে একসাথে মাঠে নামলাম, কাজ করলাম, দৌড়ে বেড়ালাম আমি। অনেক লোকজনকে কাজের সুযোগ করে দিলাম আমি সেই চ্যানেলে। যার জন্য হিরণ্ময় এর কৃতিত্ব অনেকটাই। কিন্তু আজ আর সেই চ্যানেলের সব চেনা বন্ধু আর বন্ধুর বেশ ধরে চারপাশে ঘুরে বেড়ানো কিছু শত্রু কেমন করে যে অচেনা হয়ে গেলো তারা সব দূরে সরে গেলো তারা কে জানে। আমিও কেমন করে যেনো ছিটকে গেলাম সেই উত্তর পূর্বের বাংলার সেই বিখ্যাত চ্যানেল থেকে কিছুটা অভিমান আর স্বেচ্ছায়। বাংলার সব মাতব্বরদের হাতে তৈরি সেই এক নম্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখা চ্যানেল থেকে দূরে সরে গেলাম আমি অনেকটাই। বেশিদিনকার কথা নয় এই তো মাত্র একবছর আগের ঘটনা সেটি। আজও কেমন করে সব যেনো মনে পড়ে যায় আমার।
ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই এই চ্যানেলে কাজের সুবাদে গৌহাটিতে যাবো একদিন। দেখা হবে আমার সাথে হিরণ্ময় এর। একসাথে আমরা দুজন মা কামাখ্যার মন্দিরে পূজো দেবো। ঘুরে বেড়াবো একসাথে দুজন মিলে। সেই সুযোগ হলো না আর আমার। সেই দূরের ফেসবুকে ভেসে বেড়ানো সম্পর্ক ভেসে রইলো আকাশ পথে ওই বিমানের মতই। আসলে কি জানেন এই সম্পর্ক, এমন একটা জিনিস যা ভেসে থাকে নিজে নিজেই কারুর সাহায্য ছাড়া। যদি না তাকে কেউ গলা টিপে মেরে ফেলে। যোগাযোগ কিছুটা কমে গেলেও আবার সেই লোকসভা ভোটের সময় কিছু এজেন্সির কাজের সুযোগ হলো আমাদের দুজনের। সেই কাজ করলাম আমরা। এইভাবেই কেটে যাচ্ছিল আমাদের দুজনের জীবন।
আর তার মাঝেই আবারও সে দুদিন আগেই আবার একটি জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেল হবে সেই বিজ্ঞাপন এর সন্ধান দিলো আমায়। মনটা বড়ো ভালো হয়ে গেলো আমার। বিশ্বাস করুন এতদিন ধরে এতগুলো বছর যে বাংলায় কাজ করলাম আমি। যাদের সাথে গা ঘষাঘষি করে সাংবাদিকতা করলাম দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে তাদের কাছে আজ আমি বাতিল হয়ে গেছি কেউ নয় আর। কিন্তু ওই অজানা অচেনা একজন মানুষ যার সাথে আমার পরিচয় শুধু ফেসবুকের দেওয়ালে তার দৌলতে সে আমায় জানালো এই নতুন খবর। বিশ্বাস করুন আপনারা আমার এই আপাত দৃষ্টিতে বিক্ষিপ্ত আর আমার অসুখী মনটা কেমন যেনো সুখের আবেশে ডুবে গেলো বুঁদ হয়ে।
মনে হলো আমার আমি চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে বলি জীবনের সম্পর্ক মানে তো শুধু কিছুদিন পাশে পাশে হেঁটে যাওয়া নয় বন্ধু সেজে কিছুটা ভান করে। বন্ধু হয়ে বেঁচে আছি ঝুলে থেকে এমন কিন্তু নয়, হিসেব আর নিকেশের নিক্তিতে মাপা জীবন কাটিয়ে দেওয়া নয়, এক অপরকে হাসি বিনিময় করে আর হিংসা করে সেটা নয়। কত দূরের না দেখা অদেখা একটা সম্পর্কও কেমন করে যে বন্ধুত্বের নিনড় বাঁধনে বাঁধতে পারে দুর থেকেও সেটাও বোধহয় আর একবার প্রমাণ হয়ে গেলো। সেটা প্রমাণ করলো হিরণ্ময় আবার এতদিন পরেও।
সেটা ওই মেঘের দেশের কাছে উড়ে বেড়ানো মেঘপুঞ্জের মত করে আবার আমায় বুঝিয়ে দিলো হিরণ্ময়। যার সাথে আজও দেখা হয়নি আমার। জানি না আমি এই জীবনে সেটা কোনোদিন হবেও কি না দেখা দুজনের। শুধু এটা জানি যে আমার এই আপাত শান্ত জীবনে আবার একটা হিল্লোল এনে দিল সে ওই নতুন বিজ্ঞাপন এর খবর দিয়ে। যে হিল্লোল , যে খবর আমায় আবার উদ্বেলিত করে, আন্দোলিত করে। রাতের অন্ধকারে আবার আমি স্বপ্ন দেখি। পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। যে দিনে আমার জীবনে দৌড় ছিল। মনে মনে দুর থেকেই হাতজোড় করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আমি হিরণ্ময় এর কাছে। আর বলি দূরে থেকেও এইভাবেই যেনো টিকে থাকে আমাদের এই বহুদূরের মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়ানো সম্পর্ক।
মেঘের দেশের সাংবাদিক হিরণ্ময় - অভিজিৎ বসু।
উনিশে সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন