সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সেই বাতাসপুরের স্টেশনে

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই এমন এক মানুষের কথা লিখতে ইচ্ছা করছে আমার এই ভোরবেলায় যার সাথে আমার আলাপ পরিচয় খুব কম সময়ের আর কম দিনের। মাত্র এক মাসের দেখা আর আলাপ। তাও সেটা যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সেটা নয় কিন্তু। কিন্তু তবুও কেমন করে যেনো আমার মনে হয় বেশ আপনার কাছের মনের একজন মানুষ যার সাথে প্ল্যান করে বাতাসপুরের স্টেশনে একবুক বাতাস বুকে ভরে নিঝুম সন্ধ্যায় একা একা বসে থাকার ইচ্ছা হয় আমার। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনে কেমন সন্ধ্যা বেলায় ভাবতে হয় সত্যিই তো জীবনের এই সন্ধ্যায় সাইকেল নিয়ে যদি মাঠ ঘাট পেরিয়ে ঘুরতে পারতাম আমরা দুজন মিলে কি ভালো যে লাগতো আমাদের তাহলে। ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা বেলায় পিদিম হাতে যে বউ তুলসী তলায় সাঁঝ বাতি জ্বালিয়ে প্রনাম করছে তার মুখের পানে তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে ওর মুখের অপরূপ রূপ। ঘুরতে ঘুরতে ধানের মরাইতে আমাদের সাইকেলকে হেলান দিয়ে রেখে মাটির দাওয়ায় বসে থাকা। বাইরে প্রবল বৃষ্টির ছোঁয়া। গ্রামের নিঝুম রাস্তায় কেউ নেই। কেমন যেনো একটা আলাদা অনুভূতির রাজ্য ডুবে যাওয়া।

 শহর ছেড়ে, ফ্ল্যাট বাড়ির কুঠুরি ছেড়ে, জীবনের হাজার মানুষের ভীড় ছেড়ে একা একদম একা দুজন। অনেক বাজে বকলাম আমি। যাকে নিয়ে এত কথা সেই মানুষটাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখেছিলাম কলকাতা টিভির অফিসে একটা চেয়ারে। বেশ সুন্দর চেহারা। মুখে একটা স্মিত হাসি সবসময়। অফিসের সাতে আর পাঁচে না থাকা একজন মানুষ। যার হাতের ছোঁয়ায় জাদু আছে। বাংলা বানান নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম দাদা এই বানান কি ঠিক লিখলাম আমি। উনি ঘাড় নেড়ে হেসে বলতেন উ নয় ঊ হবে ওটায়। তারপর আবার নিজের কাজে মগ্ন হয়ে যেতেন তিনি। কাগজে বহু লেখা পড়েছি ওনার। সেই মানুষটাকে  যে এত কাছ থেকে দু হাত দূরে বসে থাকতে দেখবো সেটা আমি কোনোদিন ভাবিনি কিন্তু।

হ্যাঁ, সেই বিখ্যাত মানুষটি হলেন সেই আমাদের সবার অনিমেষ দা। অনিমেষ বৈশ্য। একসময় আনন্দবাজার কাগজে ওনার লেখা পরে বুঁদ হয়ে থাকতাম। সেই মানুষটাকে পেলাম কলকাতা টিভির অফিসে। বেশ সুখেই দিন কাটছিল আমাদের। কিন্তু সব কি আর সুখের হয়। কেনো জানিনা উনি একদিন সেই কলকাতা টিভি অফিস থেকে চলে গেলেন। আমিও চলে এসেছি সেই কলকাতা টিভির অফিস ছেড়ে। কিন্তু আমাদের সেই অল্প দিনের যোগাযোগ আজও রয়ে গেছে। ঠিক ওই সন্ধ্যা বেলায় গাছের ডালে ঘুঁড়ি আটকে থাকার মতো আজও ঝুলে আছে আমাদের সেই এক চিলতে সম্পর্ক। ঠিক যেনো ওই লুচি পাতার সুবাস মাখামাখি হয়ে বেঁচে আছে সে।

 সত্যিই বলতে কি হয়তো আমি জানিনা এর বেশি কিছুই ওনার বিষয়ে। তবু এটা মনে হয় যে এমন একজন মানুষ যিনি কাশফুলের বনে হারিয়ে যান আপন মনে। যিনি এদিক ওদিক নক্ষত্রের আলোয় দেখেন চেনা মানুষের অচেনা নানা ছবি। যাঁর হাতের লেখার ছোঁয়া লেগে কত সাধারণ ঘটনা যে অসাধারন হয়ে ধরা দেয় আমাদের চোখের সামনে। যাঁর হাতের লেখায় নীল আকাশের মাঝে রামধনুর মত রং এর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে নানা রং এদিক থেকে ওদিক। আর আমরা সবাই মিলে একসাথে সেই রং গায়ে মেখে বেঁচে থাকি বিভোর হয়ে বুঁদ হয়ে। সেই বেঁচে থাকায় যে কি সুখ আর কি আনন্দ কে জানে। সত্যিই ভাবলে বড়ো কষ্ট হয় যে এই মানুষটা আজ লিখে যান আপন মনে শিরদাঁড়ার কথা, লুচি পাতার কথা, শেষ বিকেলের আলোয় ঘুড়ির গাছের ডালে আটকে যাবার কথা, কাশ ফুলের ঝোপ ঝাড়ের মধ্য ঘুরে বেড়াবার কথা। আর আমরা কেমন স্বার্থপর দৈত্যের মতো সেই সব লেখা পড়ি আহা আহ করি আর বলি দাদা অসাধারন আপনি ভালো থাকবেন।

 সত্যিই কি এই ভাবে ভালো থাকা যায়। ঝোপ ঝাড় জঙ্গলে ঘুরে লাল মাটির রাস্তায় লাল পলাশের পদাবলী গাইতে গাইতে ভালো কি থাকা যায় কে জানে। তবু তো জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসে একটাই সাধ হয় আমার সেই বাতাসপুরের স্টেশনে বসে আছি আমরা দুজনে একসাথে এক সন্ধ্যায়। ট্রেন চলে গেছে অনেকক্ষণ। আর ঘরে ফেরার কোনো ট্রেন নেই যে আমাদের। দুজন মিলে একা একাই রাত কাটাচ্ছি বাতাসপুরের বাতাস গায়ে মেখে। চাঁদনী রাতের নরম আলোয় দূরে হাতছানি দিয়ে আমাদের ডাকছে খোয়াই এর জঙ্গল, ভুবনডাঙ্গার মাঠ, কোপাই নদীর মন কেমন করা সেই সবুজ শ্যাওলা পড়া জল। জলের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে প্রতিপদের চাঁদের মিষ্টি মধুর হাসি। আমরা একে অপরের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বসে আছি।

সেই বাতাসপুরের স্টেশনে - অভিজিৎ বসু।
বিশে সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...