অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো। হ্যাঁ, এই অকাল দেওয়ালীর রাতে এই লাইনটার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সত্যিই তো আজ বোধহয় এই অসময়ে অকাল দেওয়ালী পালন করলো গোটা বাংলা। শুধু বাংলা কেন সারা দেশের বিভিন্ন শহরে অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলোর রেখা দেখলাম আমরা।
যে আলোর ক্ষীণ রেখা ধরে হাঁটতে হাঁটতে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ গলা মেলালেন তারা we want justice. সকলের দফা এক, দাবি এক লেখায় পিচের মসৃণ রাস্তা ভরে গেলো।
শুধু একটাই কথা বিচার চাই। এই অপরাধের বিচার চাই। সঠিক অপরাধীর সঠিক বিচার চাই। এই দাবিতে মোমবাতির শিখায় ভরে গেলো আঁধার মাখা রাত। সত্যিই এমন বিচার চেয়ে পথে নামার রাত বোধহয় বহুদিন পর প্রত্যক্ষ করা গেলো। রাত দখলের রাত এর পর এটাও এক অন্য রাত। যে রাত আবার প্রতিবাদে মুখর হলো।
আসলে আমি নিজেও ভাবছিলাম সত্যিই তো এই বিচার কবে হবে। কবে আসল অপরাধী শাস্তি পাবে। যার জন্য উত্তাল গোটা দেশ। গোটা রাজ্য। কারণ আমাদের দেশের বিচার প্রক্রিয়া তো অনেক সময় সাপেক্ষ বিষয়। অনেক ধীর গতির বিষয়। ঘটনা ঘটলেই যে তার বিচার হয়ে যাবে আর ঘটনার শাস্তি পেয়ে অপরাধী মাথা নিচু করে জেলখানায় ঢুকে যাবে পচে মরবে সারাজীবনের জন্য এমনটা যে হয়না কিছুতেই খুব দ্রুত। আর অপরাধীও যে দ্রুত শাস্তি পেয়ে ফাঁসিতে ঝুলে যাবে এমনটাও নয় কিন্তু। যে কোনো ভাবে এই অপরাধীকে চিহ্নিতকরণ করে তার বিচার না হওয়া অবধি এই প্রতিবাদ, আন্দোলন, থামবে না কিছুতেই। এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা।
শাসক যখন সব কিছুকে নিজের মত করে সাজিয়ে নেয়, ভেবে নেয় তার মতো করেই হবে সব কিছু। আর সেটা ভেবেই যদি ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে আজীবন, আমৃত্যু যে কোনো উপায়ে সেই সময় এমন কিছু ঘটনা শাসকের ভিত টলিয়ে দেয় হঠাৎ করে আচমকাই। আর জি কর এর ঘটনায় সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে বার বার। অন্ধকারেও যে আলোর ক্ষীণ রেখা ধরে এগিয়ে আসতে পারে শহর থেকে গ্রাম, ব্লক থেকে মহকুমা, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, হাইটেক সিটি থেকে বিদেশের নানা শহরের দেশের মানুষ সেটাও কিন্তু কম আশ্চর্যের বিষয় নয়। আর সেটা বোধহয় কিছুটা হলেও বুঝতে পারেননি আমাদের রাজ্যের সরকার বাহাদুর।
তাই প্রথমে এই ঘটনার অভিঘাত এতোটা প্রবল হবে সেটাও বোঝা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। আসলে ক্ষমতায় থাকলে যে অনেক কিছুই বুঝে ওঠা যায় না কিছুতেই খুব সহজেই। ক্ষমতার মসনদে বসা অবস্থায় কত যে বসংবদ আর মোসাহেব তৈরি হয়ে যায় যাঁরা আসল সত্যিকে সামনে প্রকাশ হতে দেয়না কিছুতেই কিছুটা নিজেদের স্বার্থে। ভাবে সবটাই তাদের বাঁ হাতের খেল, সবটাই ম্যানেজ করে নেওয়া যাবে যে কোনো উপায়ে আর যে কোনো ভাবে। কিন্তু সব হিসেব কি আর মেলে।
আর জি কর এর ঘটনাও তেমন কিছু হবে ভেবে মনে করেছিল পুলিশ ও প্রশাসন। কিন্তু কথায় আছে না দিনে দুপুরে ভূতে পেছন মেরে দেবে যখন তখন। জল মিলবে না একটুও কিন্তু তখন পেছন ধোয়ার জন্য। শুধু চুপ করে দেখে যেতে হবে। কোথা থেকে যে জনগণের মাথায় এমন রাত জাগার আর প্রদীপ জ্বালার ভূত চেপে বসবে কে জানে। কোথা থেকে যে সবাই সমস্বরে চিৎকার জুড়বে we want justice বলে সেটা বোঝাই দায়।
আর সেই সুযোগে কিছু রাজনীতির লোকজন পথে ঘাটে নেমে পড়ে প্রাণপণ বোঝাতে সচেষ্ট হয়ে পড়েছেন আগামী দিনে তারাই আনবেন সব থেকে ভালো সুশাসন। যে শাসনের দণ্ড একমাত্র তাদের হাতেই আছে আস্তিনের ভিতর। দু পক্ষ লড়ে যাচ্ছেন কে কত ভালো তার হিসাব দিতে। জনগণকে তারাই বোঝাচ্ছেন দ্রুততার সাথে অপরাধের বিচার করবেন একমাত্র তারাই।
এক লহমায় বদলে দেবেন এই গোটা ভেঙে পড়া একটা সিস্টেমকে। এক মুহূর্তে তাদের হাতে ক্ষমতা এলে সব কিছু তারা ভালো করে দেবেন। আর কারুর কোনো অভাব, অভিযোগ থাকবে না। এমন ঘটনা আর ঘটবে না সেটা না বললেও এই আমলের থেকে যে আরও ভালো আমল আসবে সে কথা বলতে কসুর করছেন না কেউই এই সময়ে। আসলে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার মনে হয় যে এই যে সাধারণ মানুষের হঠাৎ করে জেগে ওঠা প্রতিবাদ করা এতে কিছুটা হলেও ভয় পেয়ে যায় শাসক।
আর তাই তারপর নানা ভাবে, নানা রূপে, নানা শিবিরে হিসেব নিকেশ শুরু হয়ে যায়। এটা দেখে আমার বেশ ভালো লাগে মনে মনে। নিজেদের এতটা বোকা ভেবে খুব মজা হয় আর কি। রাজনীতির ময়দানে ঘোরা ফেরা করা একজন মানুষ, যে মাঠে ঘোরা ফেরা করা মানুষকে ঠিক আমার মতোই আর কি। বাসের পাদানিতে ঝুলে অফিস যাওয়া একজন মানুষকে, খেতে মাটি কোপানো একজন চাষীকে কারখানায় কাজ করা একজন শ্রমিককে, স্কুল কলেজে পড়তে যাওয়া একজন ছাত্রকে, গ্রামের খেটে খাওয়া একজন মহিলাকে খুব বোকা ভাবেন এনারা।
কারণ একটাই কিছু অর্থ প্রাপ্তি যে তাদের ঘটেছে এই জীবনে তাদের জন্য। তারা শুধু জনগণকে মনে করেন পাঁচ বছরের এই একটা দিনে কোনো চালাকি না করে আঙুলের ছাপটা দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। কেনো যে এত গলা ফাটানো চিৎকার, আর কেনো যে এত প্রতিবাদ কে জানে। এত কিছু পেয়েও এত প্রতিবাদ। সত্যিই বড্ড খারাপ এরা। কেনো যে অন্য লোকদের কথা শুনে নেচে বেড়াচ্ছে এরা কে জানে।
কিন্তু অন্ধকার এর উৎস হতে কখন যে আলোর এই ক্ষীণ রেখা জেগে ওঠে আচমকাই কে জানে। যে আলোর ক্ষীণ রেখা ধিকি ধিকি করে জ্বলতে জ্বলতে কখন যে হু হু করে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পরে এদিক থেকে ওদিক কে জানে। কখন যে ঘুমিয়ে থাকা বোকা বানিয়ে রাখা মানুষরা হঠাৎ করে জেগে ওঠে আর সোজা হয়ে দাঁড়ায় কে জানে। আর সোজা চোখে চোখ রেখে বলে রাজা তোর কাপড় কোথায় কে জানে।
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো -
অভিজিৎ বসু।
পাঁচ সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন