সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গোবিন্দ ও আমি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমাদের সেই গোবিন্দর কথা। রাত হলেই আমার মনে হয় কি যে লিখি আর কাকে নিয়ে যে লিখি এই রাতের অন্ধকারে কে জানে। আমার জীবনের সমুদ্রতটে হাজার হাজার মানুষের ঢেউ উপচে পড়ে দিনে, রাতে, দুপুরে, সাঁঝ বেলায়। আমি সেই ঢেউ এর ধাক্কায় কখনও পড়ে যাই আবার কোনো সময় সেই ঢেউকে সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি সমুদ্রের তীরে একা একা। উপভোগ করি জীবনের নানা ছন্দের অনুভূতির অনুরণন। যা কোনো সময় আমায় দুঃখ দেয় আবার কোনো সময় আনন্দ দান করে। 


আমাদের রিষড়ার বাড়ীর পাশেই গোবিন্দর বাড়ি। সেই কবেকার কথা ছোটো বেলায় আমি দেখেছি কি নিদারুণ কষ্ট করে বড়ো হয়েছে ওরা চার ভাইবোন। দুই দিদি আর এক বোন এর মাঝে ওই একমাত্র ছেলে ওদের পরিবারে। ওর বাবা মাথায় ঝুড়ি নিয়ে বাজারে কলা বিক্রি করে কতদিন যে সংসার চালিয়েছে সেটা আজও মনে আছে আমার এই এতদিন পরেও। ওর মা ভোর বেলায় ছটা বাজার আগেই কেমন করে লক্ষী নারায়ণ কটন মিলে পৌঁছে যেতো হেঁটে হেঁটে সেই ঝড় জলকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন। সংসারে দুটো টাকা আয় করতে। আসলে এই ভাবেই তো ওরা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে বহুদিন আর বহুবছর। 


সেই ওদের বাড়িতে সারাদিন ওর মা মিলে কাজের পর ওর মা নিজের হাতের পিঠে বানিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিত গোবিন্দর হাত দিয়ে । সেই গরম গরম কলার বড়া করে সেটা দিয়ে যাওয়া। এই ভাদ্র মাসের শেষে তেঁতোর ডাল আর নানা ভাজা দিয়ে ভাত খেতে বলা ওদের বাড়িতে সাথে গন্ধ লেবু। সেই স্টিলের থালায় গরম ভাত আর গন্ধরাজ লেবুর গন্ধ আজও আমায় আবিল করে দেয় কেমন এতদিন পরেও। সেই মাটির ঘরে পিঁড়ি পেতে খেতে বসা দুজন মিলে একসাথে। সেই ওদের মাটির উনুনে কাঠের সাহায্য চালের পায়েস করে সেটা দিয়ে যাওয়া বাটি ভর্তি করে। তারপর কতদিন যে আমাদের ঘরে বাজার না থাকায় গোবিন্দ ওর ঘর থেকে আলু এনে আমার মাকে দিয়ে বলেছে রান্না করেন আপনি কাকিমা। যা কোনোদিন ওর দিদি মাকে জানতে দেয়নি। এসব কি আর এই সাদা জীবনের কালো কথায় বলে শেষ করা যাবে। এসব দিন কি আর ভোলা যাবে কোনোদিন। না, কোনোদিন ভোলা যাবে না। 
এমন হাজারো স্মৃতি আর সেই স্মৃতির ভারে আমি আজ নুজ্ব্য হয়ে গেছি যে এই বুড়ো বয়সে। ছোটো থেকেই পড়াশোনায় ওর মাথা খুব পরিষ্কার। তাই কষ্ট করে পড়লেও কেমন ভালো রেজাল্ট করেছিল ও স্কুলের পরীক্ষায়। বয়স হলে ওর বাবা আর বাজারে যেতে পারত না হেঁটে হেঁটে। ওর মা নিজের হাতে সব সংসার সামলে নিত। সেই ভোর হলেই ভাতের টিফিন বাক্স নিয়ে মিলে গিয়ে কাজ করা। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের আগে ধুলো মেখে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা। এইভাবেই ছেলে মেয়েদের মানুষ করলেন তিনি। একটু একটু করে গোবিন্দ বড়ো হলো কাজের সুযোগ পেলো। বোনের বিয়ে দিল ও। বদলে গেলো ওর নিজের জীবনও। নিজের বিয়ে হলো আজ আর সে ওর রিষড়ার বাড়িতে থাকে না। আজ ওর মা নেই, বাবাও নেই। এক দিদি ঘরে থাকে। দিদির দেখাশোনা করে ভাই নিজেই।

আসলে ওদের সাথে এই আমাদের সম্পর্ককে অনেকেই বলতো আমার নিজের ভাই এর মত। আমার মা তো ওকে ছোট ছেলে বলেই বলতো সবাইকে। আমার দুই ছেলে। দিন রাত এক করে ও আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকতো। সে ঠাকুরের নাম কীর্তন হোক বা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠান হলে গোবিন্দই ভরসা আমাদের। এই তো কিছুদিন আগেও আমার মার অসুস্থ অবস্থায় ও প্রতিদিন কাজ সেরে উত্তরপাড়া হাসপাতালে এসে খবর নিত। যে কোনো দরকার হলে টাকা দিয়ে সাহায্য করত ও নিজেই। তার জন্য কোনো হিসেব নিকেশ করে নি কোনো দিন কোনো সময়। 

আমার দিনের পর দিন কাজ নেই জেনেও আমার মা চলে যাবার পরে বাবাকে দেখভাল করতে ওই এগিয়ে এসেছে বার বার। কাজের মাঝে দুপুর বেলায় ফোন করে বাজার এনে রান্না করে বাবাকে ভাত এর ব্যবস্থা করে দিয়ে রান্না করে দিয়ে ঘরে ফিরেছে সন্ধ্যা বেলায়। হয়তো রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের দুজনের। এক জায়গার এক পাড়ার বাসিন্দা আমরা শুধু মাত্র এটুকুই। তবু এক গভীর গোপন ভালোবাসার সম্পর্কে কেমন জড়িত হয়ে গেছি আমরা দুজন। যা আজও অটুট হয়ে আছে। মাঝে কিছুদিন কি কারণে জানিনা আমার মা বেঁচে থাকার সময়ে ওর বিয়ের পর কিছুদিন আমাদের বাড়িতে আসেনি ও। তারপর ধীরে ধীরে সেটা আগের মতই ঠিক হয়ে যায় সবকিছুই। সেটার কারণ আমি জানিনা জানতে চাই না।

জীবনের মোরাম রাস্তায় এমন গোবিন্দর মত একজন কাউকে পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার। যে সারা জীবন বিপদে আপদে সুখে দুঃখে সব সময় জড়িয়ে আছে আমার জীবনের নানা অধ্যায়ে। আজ এই রাতের অন্ধকারে লিখতে বসে তাই হাজারও ঘটনা ভীড় করে আসে। মার শেষ কাজের সময়ে আমার পাশে শ্মশানে হাজির গোবিন্দ, শ্রাদ্ধ শেষ করে সেই পদ্মপুকুর এর পাড়ে ভাতের থালা নিয়ে দিতে যাবার সময় হাজির গোবিন্দ, বাড়ির সৎসঙ্গের সময় একাই সব কাজের দায়িত্ব নিয়ে বুক দিয়ে সব হাসি মুখে করে দেয় ও নিজেই। মাঝে মাঝে জিনিস বেশি খরচ করা নিয়ে আমার ওর মধ্য ঝগড়া বা মতান্তর হলেও সেটা নিয়ে মুখ দেখা বন্ধ হয়নি আমাদের। কোনো দিন সম্পর্কের অবনতি হয়নি। এখন তো অনেক বড় চাকরি করে ও। আর আমি কিছুই করিনা কাঠ বেকার তবু সেই পুরোনো সম্পর্ক রয়ে গেছে আমাদের দুজনের। 

সম্পর্ক তো এমন ভাবেই টিকে যায় বোধহয়। মনে পড়ে যায় গোবিন্দর সাথে সেই ট্রেনে বাদাম বিক্রি করা শিবু, সেই গাড়ির চালক দুলাল,সেই পাগলা সুখা, সেই কার্তিক সাঁতরা, জয় পাল, কেষ্ট পাল, সেই ব্যবসায়ী কাজল সাহা, মিনু দাস, সুবোধ গোপাল রায়, বাবু মালি এর কথা। সেই সব নানা মুখ এর নানা কথা মনে পড়ে যায় আমার এমন হাজারও মুখ রাতের অন্ধকারে আমার অন্ধকার জানলায় ভীড় করে একে একে। তারা ঠক ঠক করে জানলায় টোকা মারে। স্মৃতির উত্তাপ গায়ে মেখে আমি কেমন স্মৃতি কাতর হয়ে পড়ি এই রাতের অন্ধকারে। মনে মনে ভালো লাগে বেশ এদের কথা বলতে আর লিখতে আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায়। যার কোনো দাম নেই। আমার মেয়ে বউ সেটাই বলে কি হবে এইসব কথা লিখে। 


আমার মা চলে যাবার আগে ওর মা চলে গেলো। অনেক বয়স হয়েছিল। সেদিন মনে হলো কত গভীর ভালোবাসাময় একটা জীবন শেষ হলো। কত মধুর স্মৃতি যে উপচে পরে আজও কে জানে। যে সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক নয় সেই সম্পর্ক কি করে যে এতদিন ধরে টিকে রইলো কে জানে। মাঝে মাঝে আমার নিজের অবাক লাগে কেমন। মায়ের পেটের ভাই বোনের সম্পর্ক কেমন স্বার্থ ছাড়া ক্লিশে হয়ে যায়। বহুদিন এক বাড়িতে বাস করেও কেমন সম্পর্ক দূরের হয়ে যায়। কিন্তু এই সম্পর্ক তেমন কিছুর ফাঁদে পা দেয়নি এতদিনেও। আশা করি সেটা আর দেবেও না।

 
ওর ছেলে আর মেয়ে পড়াশোনায় ওর মতই ভালো হয়েছে। কষ্ট করে বড়ো হয়েও আজ বেশ ভালো আছে ওরা। যা দেখে আমার বেশ ভালো লাগে। হয়তো এই স্বল্প পরিসরে অনেক কথা লেখা হলো না। সেই আমার বিয়ের সময়ের গল্প। সেই আমার মার খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সময় ওর প্রতিদিন সকালে এসে হরলিক্স দিয়ে যাবার গল্প। আমার মাকে প্রতি মাসে লুকিয়ে ওর টাকা দেবার গল্প। পূজোর সময় আমার মাকে শাড়ি কিনে দেবার গল্প। যা লুকিয়ে থাক আমার এই জীবনের বাঁকে বাঁকে বাঁশ ঝাড়ের ঝোপ জঙ্গলে। কিন্তু এইসব কিছুর মাঝেই দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর ধরে আমার আর ওর এই সম্পর্ক দুজনের জীবনে জড়িয়ে আছে ওই সেই হলুদ স্বর্ণলতার মতই। ফ্যাকাশে হলেও কেমন করে যে বেঁচে আছে কে জানে। ভালো থাকিস ভাই তোর পরিবার নিয়ে। ঠাকুরের কাছে এই প্রার্থনা করি আমি। 

গোবিন্দ ও আমি - অভিজিৎ বসু।
বিশে সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...