সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঝাঁজ

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধু ঝাঁজ এর কথা। এমন বিষয় নিয়ে আমায় লিখতে হবে এটা আমি ভাবিনি কোনদিন। পরিবেশ, পরিস্থিতি আর নানা পারিপার্শ্বিক নজরদারি আমায় বাধ্য করলো এই ঝাঁজ এর বিষয় নিয়ে কিছু লিখতে। আসলে আমি একজন সাধারণ অতি সাধারণ টোটো চালকের আসনে বসে বিন্দাস জীবনে মেঘের আকাশ দেখে ঘুরে বেড়ানো এলেবেলে এলোমেলো একজন মানুষ। 
সেই মানুষের জীবনে ঝাঁজ আছে না নেই সেটা নিয়ে গবেষণা করে কি লাভ বলুন তো আপনাদের। কিন্তু এই আমি যে একদা এই ঝাঁজ নামক বস্তুকে সঙ্গে নিয়েই তো একসময় কাজ করেছি বাংলা সংবাদ মাধ্যমে। খুব বেশিদিন নয় মাত্র তিরিশ বছর বা একটু বেশি সময় হবে হয়তো। সেটা তো সবাই আড়ালেই বলে আমার ব্যবহার খারাপ, কথা খারাপ, কাউকে রেয়াত করে চলতে জানিনা আমি মিডিয়াতে তাই আমার এই হাল।
 নেতা, মন্ত্রী, সান্ত্রী, পুলিশ, অফিসের বস, সবাইকে ঝাঁজ দেখিয়েই চলে এলাম সারাটা জীবনভোর। যার জন্য জীবনে লাভ এর থেকে ক্ষতি আর প্রাপ্তি অনেক কম হলো কিছুটা। তাহলে হঠাৎ করেই আমার বিরুদ্ধে ঝাঁজ কমে যাওয়ার অভিযোগ ওঠায় আমি একটু অবাক হলাম আর কি। যে মানুষটা সারাজীবন প্রতিষ্ঠান বিরোধী আর ক্ষমতার মসনদে বসা লোকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে লড়াই করে একা হয়ে গেলো একদম এক। ঘরে,বাইরে, অফিসে,রাস্তায়, পথে, ঘাটে সব জায়গায় একা। সেই মানুষটার কাছে ঝাঁজ কমে যাওয়ার কথা উড়ে এসে কিছুটা বোধহয় আমার ঝাঁজের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিলো এই বুড়ো বয়সে।
 এই বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ের সময়ে, এই কঠিন ক্রান্তিকালে যে কড়া নজরদারি আর র‍্যাডারে আমরা একে অপরকে জরিপ করে চলেছি দুর থেকে দিনে, রাতে, দুপুরে, সন্ধ্যায় সেটা বোধহয় একটা দমবন্ধকর পরিস্থিতি। আপনি কতটা সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন নিজের ঝাঁজকে দেখিয়ে এই বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে। সেই মাপকাঠি বোধহয় আপনার সারা জীবনের মাপকাঠি হয়ে থাকবে। আপনি কোন পক্ষে আর কার পক্ষের নয়। এটা বড়ো ভয়ংকর জিনিস যে। সোনা মাপার মত নিক্তিতে মাপা হচ্ছে আপনার ঝাঁজ। তারপর তার ফল প্রকাশ হলে দেখা যাবে আপনি পাশ করলেন না ফেল করলেন। সত্যিই অসাধারন এই অনুভূতি।
কিছু চেনা, কিছু অচেনা মানুষ দুর থেকে আপনাকে জরিপ করে যাচ্ছে একমনে, একদৃষ্টে। আপনাকে নজরে রাখছে আপনি কি বলছেন, কি লিখছেন। কার হয়ে বলছেন, আর কার হয়ে বলছেন না। কার হয়ে ব্যাট ধরছেন আর কাকে গুগলি বলে বোল্ড করছেন। সত্যিই অসাধারন এই নজরদারি। যে নজরদারিতে বন্দী আমি, আপনি, আমরা সবাই। যার হাত থেকে নিস্তার নেই কোনো ভাবেই। 
আসলে যার জন্য এতকিছু জানিনা আমি তাঁর বিচার নানা ভাবে নানা রূপে প্রতিবাদে মুখর হয়ে আমরা সত্যিই আনতে পারবো কি না। সরকারের পেশী শক্তি, প্রশাসনের শক্তি বেশি না আমাদের সবার প্রতিবাদের জোর বেশি। যে প্রতিবাদ আজ দেশ, বিদেশ, গ্রাম, শহর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে নানা ভাবে, নানা রূপে। সেই বাড়ির মা বাবা তাঁদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে সত্যিই আসল অপরাধী ধরা পড়বে কি না জানে না এখনো। 
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে কি না। গুমড়ে মরবো কি না তাঁরা ও আমরা সেটাও জানি না আমরা কেউই। শুধু লড়াই আর প্রতিবাদকে সম্বল করে এক এক জন, এক এক ভাবে হয়তো গুমড়ে মরি আমরা। সেই মরার মধ্যেও তো লুকিয়ে থাকে কান্না, যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট আর প্রতিবাদের নানা রংয়ের, নানা রূপের ঝাঁজ। তাই আসলে মনে হয় আমার চরিত্র অনুযায়ী যে ঝাঁজ নিয়ে আমি একা একদম এক বন্ধুহীন, স্বজনহীন হয়ে পঞ্চাশ বছর ধরে বেঁচে আছি। ঠিক সেই ভাবেই তো আমি আজও বেঁচে আছি একা একদম একা।
এলোমেলো এলেবেলে সেই এক কড়া ঝাঁজের জীবনকে সঙ্গী করেই। একটু সমঝোতা করে হাই ফাই জীবনের মোরাম রাস্তায় না হেঁটে আমি একটু গ্রামের মেঠো রাস্তায় হেঁটে চলেছি। যারা বলছেন আমি নেতিয়ে গেছি বা ন্যাতা হয়ে গেছে আমার সেই ফেলে আসা অতীত দিনের ঝাঁজের জীবন। তাদের শুধু একটা কথাই বলবো কিছু লেখা, কিছু মন্তব্য আর কিছু উক্তি দেখে মানুষের সারা জীবনের ঝাঁজ এর মাপকাঠি করবেন না প্লিজ। একটু সময় দিন তাদের সঠিক ভাবে জরিপ করুন। একেবারে তাকে হাঁড়িকাঠে তুলে দেবেন না। রিপোর্ট কার্ড বের করে তার গায়ে স্ট্যাম্প লাগিয়ে বলবেন না কি ঝাঁজ কমে গেলো যে।

ঝাঁজ - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...