সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এই ভোর রাতে আমার হঠাৎ মনে পড়ে গেলো আমার সেই হায়দ্রাবাদ এর জীবনের কথা। আমার সেই দৌড়ে বেড়ানো রিপোর্টার এর জীবন থেকে বিখ্যাত সেই পানিশমেন্ট লাইফ এর কথা। যদিও আজও আমার জানা নেই কেনো সেই পানিশমেন্ট আর কাদের জন্য এই পানিশমেন্ট হয়েছিল আমার। যদিও আমার মাত্র দশ মাসের সেই পানিশমেন্ট এর জীবন কত কিছুই যে দেখিয়ে দিল বুঝিয়ে দিলো মানুষকে চিনিয়ে দিলো সেটা ভুলবো না আমি কিছুতেই। যদিও আমায় শিকলে বেঁধে রাখবে বলে আর সহবত শেখাবে বলে যারা নিয়ে গিয়েছিল হায়দ্রাবাদ তাদের সবাইকে মুখে ঝামা ঘষে চাকরি ছেড়ে চলে এলাম হাসতে হাসতে। আসলে বাঁধা পড়া জীবন আমার বড়ো অপছন্দের। বরাবর আমি বেদুইন।
আজ সেই সাদা জীবনের কালো কথায় বিখ্যাত সুদর্শন বিশ্ব বিখ্যাত সাংবাদিক রাজেশ রায়নার কথা। আসলে কিছু কিছু মানুষকে আপনি কিছুতেই ভুলতে পারবেন না তাদের কর্মদক্ষতা আর কাজের পরিধির বিচারে। রামোজি রাও এর সাম্রাজ্যে এই রায়না ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। সেই ছোটো ইটিভি উর্দু চ্যানেল এর ছোটো ক্ষমতা দখল করতে করতে কি করে যে নিজের ক্যারিশমা আর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মুখে মৃদু হাসি দিয়ে সিঁড়ি টপকে টপকে ক্ষমতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেলেন কে জানে। তার জন্য কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি তাকে।
সেই বিখ্যাত মৌচাক সিনেমার বিখ্যাত লাইন আপনার কপাল দিয়ে যে জ্যোতি বের হচ্ছে মশাই। মহানায়ক উত্তম কুমারকে বলেছিলেন পাত্রীর বাবা। সেই জ্যোতির বিচ্ছুরণ হয়তো আমাদের সেই বিখ্যাত কাশ্মীরের পন্ডিত রায়না স্যার এর কপালের মাঝেও দেখা গেছিলো। তাই এত সুন্দর জীবনের গ্রাফ আর তার রেখাচিত্র। যা দেখে পৃথিবীর যে কোনো ধরনের সাংবাদিকের চোখ ঝলসে যাবেই। আর সেই জ্যোতির জোরে তাঁর নিজের কর্মজীবনে শুধুই উত্থান আর আমাদের পানিশমেন্ট ট্রান্সফার। হ্যাঁ আমার মত মানব গুহ যে এখন বিখ্যাত ইউটিউবার তাকেও পানিশমেন্ট ট্রান্সফার করা হয়। অপরাধ কি আমাদের কেউ জানে না। শুধু কারাগারে নিয়ে গিয়ে সহবত শেখানো। যাতে তাদের পা ধরে হাত জোড় করে বলা হয় যে স্যার আপনি আমার মা বাপ। তাহলেই সব মাপ। সে আপনি কাজ জানুন আর না জানুন। ঠিক সেই যন্তর মন্তর ঘরে পুড়ে দেওয়া।
আগে ভাবতাম বাংলা মিডিয়ার বসরা বোধহয় শুধু তেল খায়। কিন্তু আমি পড়ে দেখলাম না এই জিনিসটা সব জায়গার বসদের জন্য প্রযোজ্য। তেল এর কোনো বাছ বিচার নেই। আর স্থান কাল পাত্র নেই। তেল বড়ো বিষম বস্তু যে। যা দিতে না পারার ফল ভোগ করলাম আমি সারা জীবন ধরেই। আর সেটা প্রয়োগ করে একজন ছোটো দৈনিক পত্রিকায় কাজ করা একজন ওয়েব এর ডেস্ক এর মাত্র তিন চার বছর মিডিয়াতে কাজ করা এক সাংবাদিক যে এক ডেপুটি এডিটর এর হাত ধরে টিভি চ্যানেলে কাজ পেলো। সেই এখন এক সর্বভারতীয় চ্যানেলের ক্ষমতাধর সঞ্চালক হয়ে গেছেন। হয়তো ভবিষ্যতের সুমন দে হবারও স্বপ্ন দেখেন তিনি। শুধু মাত্র তেলের জোরে।
যাক গে বাদ দিন সেই সুদর্শন বিখ্যাত জার্নালিস্ট রাজেশ রায়না দেশের প্রধানমন্ত্রী বা কোনো মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এমন কোনো ছবি আমি দেখিনি কোনো দিন। যাক গে সেতো অনেক জার্নালিস্ট কিছু না করেই চরম উচ্চতায় পৌঁছে যান। রায়না স্যারও সেই জেড ক্যাটাগরিতে পড়েন মনে হয়। আমার কলকাতা থেকে হায়দ্রাবাদ চলে যাওয়া পানিশমেন্ট ট্রান্সফার নিয়ে। হাত জোড় করে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা কিছু অপরাধ না করেই।
বারবার আবেদন করা স্যার, আপনি আমার রিপোর্টার লাইফটা ফিরিয়ে দিন। আমার সরকারি প্রেসের এক্রিডেশন কার্ড ফিরিয়ে দিন। কিন্তু বিনা অপরাধে জেল দিলে বা ফাঁসি দিলে যা হয় ঠিক তেমনি ভাবেই আমায় জেল খানায় পুড়ে বন্দী করে বেশ মজা পেতেন তিনি গ্রুপ এডিটর হয়ে চেয়ারে বসে। মিটি মিটি হেসে দেখতেন দুর থেকে আমার অবস্থা। আর ভাবতেন দেখ কেমন লাগে। পাহাড়ের রাজ্যের মানুষ হয়ে ভাবতেন তিনি এই ভাবে ভয় পেয়ে হয়তো পালিয়ে চলে যাব লড়তে পারবো না আমি সমতলের মানুষ কি আর পারবে লড়তে।
কিন্তু না, সারাজীবন শিরদাঁড়ার জোরে বাঁচা এই রোগা আর বোকাসোকা মানুষটা কেমন করে খেয়ে আর না খেয়ে বা আধপেটা খেয়ে চাকরি বাঁচাতে লড়ে যাচ্ছিল প্রাণপণে। শুধু আমার পরিবার আর বুটার কথা ভেবে। আর যেটা দেখে একদিন তিনি আমায় বলেদিলেন তোমায় কলকাতা পাঠিয়ে দেবো। সেদিন যে কি অবস্থা হয়েছিল আমার কি আনন্দ হলো কি বলব আর বলুন আপনাদের।
বাড়িতে ফোন করে জানালাম আমার সত্যিই মুক্তি হবে। আমার এই পানিশমেন্ট জীবনের মুক্তি হবে। আমার আকাশে মুক্তির আলোর ক্ষীণ রেখা দেখলাম আমি সেদিন। বিশ্বাস করুন চোখ ফেটে জল এলো আমার। অপরাধ না করে শাস্তি পাওয়া একজন মানুষ জানতে পারল তার জেলমুক্তি হবে। যে জেলার নিজেই তাকে জেলখানায় পুড়েছিলেন তিনি বলেন মুক্তির কথা। দিন গুনি কবে আসবে সেই কাঙ্খিত দিন। আমার নিজের জেলার ছেলে বিভাস হিন্দমোটরে বাড়ী ভাবলাম জিজ্ঞাসা করি কবে চিঠি পাবো আমি মুক্তির চিঠি। কিন্তু না সঙ্কোচ কাটিয়ে আর তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না আমি। দিন কেটে যায় না, মুক্তি পাওয়া আর হয় না আমার।
বুঝতে পারি আমি মুক্তি হবে না আমার আর কোনো দিন। ফেরা হবে না আমার সেই দৌড় আর খবরের পুরোনো ফেলে আসা জীবনে। যে জীবনে আনন্দ, উচ্ছাস, দৌড়, খবর করা, বাইট নেওয়া, বুম ধরে এগিয়ে চলা, ক্যামেরা, অ্যাকশন, লাইট, ডিঙ্কি, কত কিছুই তো জড়িয়ে ছিল। না, সেই বিখ্যাত বিশ্ববিখ্যাত জার্নালিস্ট রাজেশ রায়না আমায় ফিরতে দিলেন না খবরের মাঠে। আমি নিজেই স্বেচ্ছায় আমার সেই পনেরো বছরের পুরোনো ভালোবাসার ইটিভির চাকরি ছেড়ে কলকাতা ফিরে এলাম একা একা খবরের জীবনকে ফেলে।
অজানা অচেনা জীবনে ভেসে বেড়ালাম আমি। আজও যে জীবনকে সঙ্গে নিয়েই ভেসে চলেছি আমি। একা, একদম এক। না সেখানে রায়না স্যার সামনে হাতজোড় করে ঘরে ফেরার জন্য আবেদন নিবেদন নেই। মেয়ের জন্য ঘরে ফেরার কোনো কাকুতি মিনতি নেই। সারা জীবনে শিরদাঁড়া সোজা করে চলা বেঁচে থাকা মানুষটা ওই একবার হাতজোড় করে নিজের খবরের দুনিয়াতে ফিরতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি মৃদু হেসে নরম জন্ম দিনের কেকের মাঝে যেমন ছুরি চালিয়ে হ্যাপি বার্থডে বলার মত করেই আমার খবরের জীবনে ছুরি চালিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন না, খবরের মাঠে আর ফেরা হবে না তোমার কোনোদিন।
আসলে নিজে কোনোদিন কেউ মাঠে না দৌড়লে বস হলে একজন খবরকে ভালোবাসা মানুষের দুঃখ, যন্ত্রণা কষ্ট বুঝবেন কি করে। মাঠের বাইরে বসে থাকার যন্ত্রণা বুঝবে কি করে। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আজ তাই মনে হলো আমার সেই কালো দিনের কথা লেখা থাক আঁকিবুঁকি ব্লগে আঁকাবাঁকা অক্ষরে। যে দিন আমি হয়তো থাকবো না কিন্তু আমার এই খবরের মাঠে ফেরার জন্য আবেদন নিবেদন আকুতি মিনতি থাকবে। কারণ একটাই আমি আজও যে খবরকে ভালোবেসেই বেঁচে আছি। আপনি ভালো থাকবেন খবরের দুনিয়ায় উচ্চ শিখরে ওঠা রাজেশ রায়না স্যার।
আমার পানিশমেন্ট লাইফ - অভিজিৎ বসু।
আট সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
শাবাশ, সংবাদ জগতের মুখ হয়ে থাকা এই সব মুখোশধারীদের আসল চেহারা সামনে আনার জন্য ধন্যবাদ।ছোট বড় প্রায় সব মিডিয়াতেই এই রকম উপরতলার পা চাটা, তৈলে তৃপ্ত,মুদ্রাভক্ত, প্রভুভক্তদের ছড়াছড়ি।দিন বলে গেছে, স্বাধীনভাবে কলম ধরা মানুষদের কাছ থেকে এদের কথা মানুষ জানুক।
উত্তরমুছুন