সেই চেনা রূপে আর চেনা ছন্দে রাস্তায় নেমে আর জলে নেমে পা ভিজিয়ে জনতার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া আর মিশে যাওয়া। যা তিনি বারবার করেছেন অতীতে। আবারও সেই একভাবেই হাজারো জনতার মাঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসির ছাড়া জলে বারবার ভেসে যাওয়া হুগলীর গ্রামকে পরিদর্শন করতে এসে সেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভেঙে যাওয়া বাঁধ টপকে মুন্ডেশ্বরীর জলের মতই চেনা রূপে ফুঁসে ওঠা তাঁর। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একভাবে গর্জে ওঠা পুরোনো চেনা ছকে।
বাংলাকে ডুবিয়ে দেবার চক্রান্ত করছে যে কেন্দ্র এইভাবে জল ছেড়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে। শুধু মাত্র কেন্দ্রের চক্রান্তের জন্য এমন জল থৈ থৈ অবস্থা দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলার। যার দায় একমাত্র ডিভিসির। আর কারুর নয়। নিজেদের রাজ্যকে বাঁচাতে তারা এমন করছে বারবার। আর এই বিষয় নিয়ে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সাথেও হেমন্ত সোরেন এর সাথেও কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু কে আর শোনে এই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা।
বহু বছর আগে রাজ্যে লাল পার্টির সরকার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার জিগির তুলে তিন দশকের বেশি সময় রাজ্যে ক্ষমতা দখল করে হাসিমুখে সুখেই দিন কাটিয়ে ছিলেন তাঁরা একসময়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এমন একটা ভাব যেনো সব কিছুই যা ঘটে ওই লালকেল্লার মাথায় হাত রেখেই করা হয় আর কি। রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে জল ছাড়া নিয়ে রাজনীতি, টাকা দেওয়া নিয়ে রাজনীতি, জিএসটির বেশি টাকা কেটে নিয়ে আয় করে রাজ্য থেকে নিয়ে চলে যাওয়া নিয়ে রাজনীতি, ভোটের সময় বেশি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো নিয়ে কেন্দ্রের রাজনীতি আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে যে আমাদের সব সময়।
আর এই সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সেই চেনা ছকে জনতার কাছে গিয়ে হাতজোড় করে সেই রাজনীতির কথা বলে নিজেদের অবস্থান ফের স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি জানেন রাজনীতি তো মাটির মানুষদের নিয়েই তাদের পাশে দাঁড়িয়ে করতে হয়। যেখানে জল থাকে, আগুন থাকে, গরীব মানুষের ঘরবাড়ির টাকা আটকে থেকে, একশো দিনের কাজের টাকা আটকে থাকে। আসলে এই একটা জায়গায় তিনি আমার বেশ পছন্দের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি জানেন হাজার কঠিন কঠোর পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেও কেমন করে যে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় সেটা তিনি জানেন খুব ভালো করেই। আর জানেন বলেই দৌড়ে যান এই গ্রাম থেকে সেই গ্রাম জলে ভেসে যাওয়া মানুষের কাছে ছুটে যান। তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন আমরা আপনাদের পাশে আছি সব সময়। আমার প্রশাসন আপনাদের পাশে আছে সব সময়।
ডিভিসির ছাড়া জলে হুগলীর আরামবাগ, পুরশুড়া, গোঘাট, খানাকুল এর বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। ডুবে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। আর তিনি সেই গ্রামে ঘুরে বার্তা দেন যতই কেন্দ্র বাংলাকে ভাতে আর জলে মারার ব্যবস্থা করুক বাংলাকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর আমি নিজেই। আর এটাই বোধ হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ইউএসপি। যা নিয়ে তিনি নিজেই একাই লড়ে যাচ্ছেন ঘরে বাইরে সর্বত্র। আর সেই লড়াই করার আশীর্বাদ চাইতে কামারপুকুর মঠে গিয়ে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্মভিটায় গিয়ে মাথা নিচু করে প্রনাম জানিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন তিনি। বলেন প্রভু শুধু এই লড়াই করে টিকে থাকবার শক্তি দিও আমায়। যত মত তত পথকে মেনে নিয়ে যেনো এইভাবেই কাটিয়ে দিতে পারি বাকি জীবন।
এই সবের মাঝে শুধু একটা ছবি বীরভূমের লাভপুরের ছবি আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। বন্যা পরিদর্শনে গিয়ে বোট উল্টে জলে পড়ে যাওয়া ( যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হয় নি) বীরভূমের জেলাশাসক, সাংসদ আর বিধায়কের। যা নিয়ে হৈ চৈ আর হুল্লোড় পড়ে যায়। গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় তাঁদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়। জানিনা এর মধ্য কি কোনো কেন্দ্রীয় চক্রান্ত লুকিয়ে আছে কোথাও সেটা জানা নেই আমার। না অন্য কোনো রাজনীতি লুকিয়ে আছে এই ঘটনার মধ্যে। যা হয়ত হাইলি সাসপিসিয়াস। যা জানা যাবে না কোনোদিন।
পুরনো চেনা ছকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় - অভিজিৎ বসু।
উনিশে সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন