সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আপনারাই ভগবান

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই প্রতিবাদ, আন্দোলন আর তার জেরে অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু এক তরতাজা যুবকের। যদিও এই অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি আন্দোলনরত চিকিৎসকদের। আর তার মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদ আর কান্না। সন্তানকে হারিয়ে মায়ের বুক ফাটা কান্না। আসলে এই কান্না দেখলেই কেমন যেন মনটা ভার হয়ে যায়। চারিদিকে শুধুই সন্তানহারা মায়ের কান্না। 
এই একটাই তো জীবন তার মায়া কাটিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। যে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে হাসি মুখে চলে যাওয়া। যা জীবনের স্বাভাবিক একটা ঘটনা। জীবন আর মৃত্যুর মাঝে সেই মৃত্যু যদি হঠাৎ করেই হয়। তিলোত্তমার মত মৃত্যু হয়। যদি হুগলী জেলার কোন্নগরের বিক্রম ভট্টাচার্য এর মত মৃত্যু হয়। তাহলে যে সেই মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না। বিক্রমের পরিবারের অভিযোগ আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে গাফিলতির জেরে মৃত্যু হয়েছে তাদের সন্তানের। তাহলে তো মন খারাপ হয়ই।

 বিশ্বাস করুন চারিদিকে এত মৃত্যু,এত কান্না সত্যিই বলতে কি মনটা বড়ো ভার হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। একটা আর জি কর এর তিলোত্তমার মৃত্যুর ঘটনার রেশ এখনও চলছে। সেই ঘটনার বিচার এখনও হয়নি। আর সেই ঘটনার বিচারের দাবিতে যখন গোটা দেশ উত্তাল তার মাঝেই আর একটা মৃত্যুর খবরে কেমন যেনো থমকে যায় জীবন আর জীবনের শ্লথ গতি। মৃত্যুই তো থমকে দেয় জীবনের এই গতিকে হঠাৎ করেই। 

পরিবার, পরিজন, আত্মীয় স্বজন, সন্তান, স্ত্রী, বাবা আর মা সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হয় মৃত্যুকে কাছে পেয়ে। দূরে অনেক দূরে। অজানা দেশে, অজানা পথে। যে পথে একদম একা আর কেউ নেই পাশে। কেউ জিজ্ঞাসা করার নেই কেমন আছো তুমি। কিন্তু সেই মৃত্যু যদি কারুর গাফিলতির কারণে হয় সেটা তো বড়ো দুঃখের,যন্ত্রণার, আর কষ্টের। 
কোন্নগরের আঠাশ বছরের বিক্রম ভট্টাচার্য। তার পায়ের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যায় তার বাড়ির কাছেই। তাকে চিকিৎসার জন্যে প্রথমে শ্রীরামপুরের ওয়ালস হাসপাতাল। সেখানে থেকে পরে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চলছে প্রতিবাদ আর আন্দোলন। সেই প্রতিবাদের জেরে সঠিক চিকিৎসা পায় না ছেলে বিক্রম কাঁদতে কাঁদতে এমনই অভিযোগ বিক্রমের মায়ের। তাঁর কথায়, প্রতিবাদ হচ্ছে হোক। আমরাও তো চাই তিলোত্তমার মৃত্যুর প্রতিবাদ হোক, বিচার হোক। কিন্তু আমার ছেলেটার একটু চিকিৎসা করলে যে আমার ছেলেটা বেঁচে যেতো। আমায় ছেড়ে চলে যেতো না। বলেই হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি। 

হাত জোড় করে বিক্রমের মায়ের আবেদন তাঁর ছেলেকে হারিয়ে তিনি বলেন, এমন প্রতিবাদ কি খুব দরকার ছিল ওই চিকিৎসকদের। একটা জীবনের বদলে যে আরও জীবন কেড়ে নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে সেটা কেমনতর প্রতিবাদ। সেখানে যে আমার ছেলেটা চলে গেলো। অভিযোগ তিনি বারবার আবেদন করেন। যদি একটু তাঁর ছেলেকে দেখা হয়। কিন্তু কোথায় কেউ কি আর সেই কথা শুনেছেন। তাহলে তো আর নিজের সন্তানকে হারাতে হতো না এই ভাবে। কি দোষ ছিল ২৮ বছরের বিক্রম ভট্টাচার্যের?? তাকে কেনো এই ভাবে চলে যেতে হলো?? প্রশ্ন তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
আসলে এই হাত জোড় করা বিক্রমের মায়ের ছবি। মায়ের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ। তাঁর একটা প্রশ্ন, আমাদের সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছুর সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। এই জীবন আর মৃত্যুর মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে একটা প্রতিবাদ, একটা আন্দোলন, একটা জীবনকে কেড়ে নিলো।
 যে জীবনকে ফিরে পাবে না কোনোদিন বিক্রমের পরিবার। সারাজীবন তাদের মনে হবে একটাই কথা যদি একটু ছেলেটা চিকিৎসা পেতো, যদি ওই ডাক্তাররা একটু সাহায্য করতেন তাহলে হয়তো ছেলেটাকে এইভাবে মরতে হতো না। তাই বারবার বিক্রমের মায়ের কথাগুলো শুনছিলাম আমি। যদিও আন্দোলনরত চিকিৎসকদের অভিমত এই রোগীকে কেউ দেখেনি এমন অভিযোগ সঠিক নয়। এই রোগী গুরুতর জখম ছিল আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি এটা অবশ্যই দুঃখের। কিন্তু রোগীকে দেখা হয়নি এই অভিযোগ একদম এটা ঠিক নয়।

আর মনে হচ্ছিল মা আর সন্তানের এই করুন অভিজ্ঞতা আর যেনো কারুর না হয়। আন্দোলনরত চিকিৎসকরা একটু ভাববেন আপনারাও এই বিষয়ে।আপনারা তিলোত্তমার সুবিচারের জন্য আন্দোলন করুন, প্রতিবাদ করুন কিন্তু জীবনকে বাজি রেখে নয়, জীবনকে বাঁচিয়ে করুন। আপনাদের হাতেই যে জীবন আর মৃত্যুর চাবিকাঠি তুলে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর, আল্লা,ভগবান, জেসাস। আপনারাই যে আমাদের ভগবান। 

আপনারাই ভগবান - অভিজিৎ বসু।
আট সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...