সাদা জীবনের কালো কথায় আজ চারিদিকে বিচার এর বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। চারিদিকে একটাই আওয়াজ, আর একটাই স্লোগান we want justice. চারিদিকে একটাই আওয়াজ বিচার চাই আর শুধু বিচার চাই। আজ শাসক দলের গলায় আওয়াজ শুধু বিচার চাই। বিরোধীদের চিল চিৎকার শুধু বিচার চাই। ডাক্তারদের প্রতিবাদ বিচার চাই। কৃষকের প্রতিবাদ বিচার চাই। শ্রমিকের প্রতিবাদ বিচার চাই। মহিলার প্রতিবাদ বিচার চাই। ট্রেনে, বাসে, ট্রামে, অটোতে, টোটোতে একটাই শুধু স্বর বিচার চাই। চারিদিকে কেমন যেনো একটা প্রতিবাদের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে চোখ জ্বালা করছে বড়ই যেনো আমার।
হ্যাঁ , ওই যে রাস্তায় সবার সাথে হেঁটে যাওয়া হুগলীর কোন্নগরের বিক্রমের মা তিন আগে যে সদ্য ছেলেকে হারিয়েছেন। যার চোখের জল শুকিয়ে যায়নি এখনও, সেও আজ সবার সাথেই রাস্তায় বিচার চাই বলে বেরিয়ে পড়েছেন কেমন। সদ্য ছেলেকে হারিয়ে মাও যে বার বার অস্ফুটে সবার সাথে খুব জোরে চিৎকার না করতে পারলেও বলছেন তারও বিচার চাই। আসলে বিচার হোক বা না হোক যে করেই হোক সেই ঘটনাকে সামনে রেখে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া আর কি। সে যে কোন উপায়ে হোক। বিচারের বাণী যতই কঠিন আর কঠোর হোক তবুও মায়ের মন বলে তো কথা।
নিজের ছেলের মৃত্যুর বিচার চাইতে আজ তাই তিনি রাস্তায় নেমেছেন। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে, উত্তরপাড়া কোতরঙ পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব, কোন্নগরের পুরপ্রধান স্বপন দাস এর সাথে, জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরিন্দম গুই এর সাথে পায়ে পা মেলালেন তিনি। শুধুই বিচার এর দাবিতে। একদিকে যখন নবান্নের সামনে বিচারের দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা অনড় হয়ে দাবি করে যাচ্ছেন তাদের মিটিং এর লাইভ স্ট্রিমিং না করলে কোনো বৈঠক করবেন না তারা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে। এই দাবিতেই অনড় রইলেন তারা। পাঁচ দফা দাবি মানতেই হবে। না হলে কোনো বৈঠক নয়। ঠিক সেই সময় নবান্ন থেকে খুব বেশি দূরে নয় হুগলী জেলার কোন্নগরে সন্তানহারা মায়ের কাতর আর্তি বিচার চাই তাঁরও। রাস্তায় নেমে মশাল হাতে হেঁটে চলেছেন তিনিও সবার সাথে। আর তাঁকে ঘিরে রাস্তাঘাটে রাজনীতির নানা স্লোগান আর নানা আওয়াজ।
একদিকে যখন তিলোত্তমার বিচার চেয়ে সারা দেশ জুড়ে আন্দোলন, প্রতিবাদ সংঘটিত হচ্ছে। ঠিক তেমনি ভাবেই কোন্নগরের এই বিক্রমের মাও নেমেছেন রাস্তায়। তাঁরও একটাই অভিযোগ যে চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে তার ছেলের মৃত্যু হলো তারও যে বিচার না হলে তার ছেলের আত্মার শান্তি হবে না কোনোদিনই। যেমন তিলোত্তমার মা বিচার চাইছেন।এই দুই মা এর ছবি এখন কেমন যেনো মিলেমিশে এক হয়ে গেছে ধীরে ধীরে। দুই পরিবারের আওয়াজ যেনো কেমন এক হয়ে যাচ্ছে।
আর ঠিক সেই সময়ে নবান্ন সভা ঘরে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সেই এক কথা, ওই যে কোন্নগরের মা, যে মা ছেলেকে হারিয়েছেন তিনিও যে বিচার চান তাঁর ছেলের। সত্যিই তো তাঁর কথাও ভাবুন একবার। তিলোত্তমার বিচারের সাথে সাথে এই সন্তান হারা মায়ের বিচারের প্রসঙ্গ তুলে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী। হয়তো সেখানে রাজনীতি আছে। হয়তো সেখানে রাজনীতির সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ আছে। কিন্তু এই সবের ঊর্ধ্বে উঠে শুধু এক সন্তান হারা মায়ের একটাই কাতর আবেদন, আর্তি, বিচার চাই।
আজকাল আমার কেমন যেন চোখ বুজেও শান্তি নেই। ঘুমিয়ে পড়েও শান্তি নেই। দিনে,রাতে,দুপুরে শান্তি নেই শুধুই বিচার চাই এর ধ্বনি। যে ধ্বনিতে আকাশ বাতাস আজ মুখরিত। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার সত্যিই কি সুবিচার মিলবে এই দুই মায়ের। তিলোত্তমার মা আর বিক্রমের মায়ের। এত আন্দোলন,প্রতিবাদ, মিটিং, মিছিল এর মধ্যে কি বিচার মিলে যাবে একদিন না একদিন। সন্তানহারা মায়েদের মুখে একটু হাসি ফুটবে কি কোনোদিন কে জানে। তবে একবুক আশা নিয়েই তো বিচার পাওয়ার আশায় বেঁচে আছেন এই সন্তান হারা দুই মা। তাঁদের আশা ভরসা নিশ্চয়ই একদিন সুবিচার মিলবে তাদের। সেদিন হয়তো একটু শান্তি পাবেন তাঁরা।
বিচার চাই - অভিজিৎ বসু।
তেরো সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন