সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নদীর মতো ভেসে যাওয়া

জীবন তো এমন বহমান। যে জীবনে বহতাময় নদীর তীরে কেমন যেনো অগোছালো পংক্তিমালা ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকে চুপটি করে। বহমান নদীর জলে কখনও কেমন যেন গদ্য আর পদ্যের পংক্তি ভেসে বেড়ায় দুলে দুলে আপনমনে। আবার কোনো সময় ভালো আর মন্দের পংক্তি ভীড় করে নদীর ঘাটে। আবার কোনো সময় সুখ আর দুঃখের পংক্তি জেগে ওঠে সন্ধ্যা বেলায়। ভালোবাসা আর বিরহের পংক্তি ভেসে যায় এদিক থেকে ওদিক নদীর জলে ঢেউ ঠেলে ঠেলে। যে জলে অবগাহন করে কোনো সময় শান্ত হই। আবার কোনো সময় অশান্ত হয়ে পড়ি।
 সত্যিই বড়ো বিচিত্র এই জীবন। যে সাদা জীবন নিয়ে মাঝে মাঝেই আমার কাটাছেঁড়া করতে ইচ্ছা হয় বড়ো। যে জীবন নিয়ে মাঝে মাঝেই লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় ঠিক ওই গুবড়ে পোকার মতো বাগানের ঝোপ ঝাড়ে গা ঢাকা দিয়ে আনমনে। যে বাগানের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে বাসা করে ছোট্ট টুনটুনি গাছের আড়ালে আবডালে। কেমন লুকিয়ে লুকিয়ে চুপটি করে ঘাপটি মেরে থাকে সে সবাইকে এড়িয়ে। আজকাল আমারও কেমন যেন ওই টুনটুনি পাখি হতে বড়ো সাধ হয় যে।
 হাজারও ভীড় উপচে পড়া সংসারের মাঝে, ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় হাঁটতে নেমে কেমন যেন এলোমেলো লাগে আমার এই এলেবেলে জীবনে। মনে হয় বহতা নদীর ধার ধরে সবার সাথে পাল্লা দিয়ে, সবার সাথে হাত ধরে অনেক তো ছুটলাম আমি, অনেক দৌড় করলাম এই জীবনে। এবার একটু হাত ছেড়ে দিয়ে একা একাই ভেসে বেড়াই না ওই সবুজ কচুরিপানার মত দুলে দুলে আপন মনে একা একাই নদীর পাড় ধরে। কেমন দিক হীন, তাল হীন, লয় হীন, ভাবনা হীন, রাজনীতিহীন, সমাজনীতিহীন গদ্য আর পদ্য হীন, হিসেব নিকেষ হীন এই জীবন নিয়ে। 
যে জীবনের এলোমেলো রাস্তায় ঝোপে ঝাড়ে লুকিয়ে থাকে টুনটুনি পাখি কেমন নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে। যাকে আঁচড়ে খামচে ধরে না কেউ কোনো সময়, ঢিল ছুঁড়ে বিরক্ত করে না কেউ। যে ঝোপ জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় ওই গুবরে পোকা কেমন নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে তাকে তাড়া করে না কেউ পিছু পিছু। জীবনের পিচ্ছিল রাস্তায় খোলস থেকে নির্ভয়ে মাথা বের করে আনমনে আপনভাবে হেঁটে যায় ওই লজ্জা মাখা শামুক কেমন গুটি গুটি পেয়ে। ঠিক অমনি করেই তাড়াহীন জীবন‌ পেতে বড়ো সাধ জাগে মনে। একা একা নদীর পার ধরে হেঁটে যাই আমি। 
দূরে, অনেক দূরে ওই ঢলে পড়া আকাশের শেষ সীমায় পৌঁছতে হবে যে আমায় একা, একদম একাই। জানিনা আমি শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো কি না সেই জীবনের শেষ সীমানায়। বড়ো ভয় হয় আজকাল আমার এই গভীর রাতে। সাদা জীবনের কালো কথার মাঝে লুকিয়ে থাকে একরাশ ভয়, অভিমান, আহত বিবেকবোধ এর যন্ত্রণা, আর আত্মসম্মান এর ঠুনকো অহংকার। যাদের নিয়ে আজকাল বারবার আমি বিব্রত হই বড়ো। 
জীবনের মোরাম রাস্তায় তাই আমি পথ খুঁজি শর্টকাট এর পথ। যে পথের ধারে এদের সকলকে রেখে আমি একাই চলতে পারবো এই আমার বাকি জীবনটা কোনোভাবে।যে এলোমেলো আর এলেবেলে এই সাদামাটা জীবনে এরা কেউ পিছু ধাওয়া করবে না আর কোনোদিন কোনো সময়। আমার পিছু নেবে না এরা আর কোনোদিন। সবাইকে এড়িয়ে আমি একা একাই কেমন নিশ্চিন্তে নিরাপদে আর নির্ভয়ে ওই নদীর ধার ধরে কেমন সবাইকে এড়িয়ে হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যাবো আমার নির্দিষ্ট গন্তব্যে ঠিক সময়ে। ওই সবুজ কচুরি পানার মতো ভেসে ভেসে আপনমনে একা একাই মাথা উঁচু করে।
 কেউ আমায় ঢিল ছুড়ে মারবে না আর, কেউ আমায় বিরক্ত করবে না আর, কেউ আমায় এই অসময়ে 
রাতের অন্ধকারে আঁচড়ে খামচে দেবে না আর। আমি রক্তাক্ত হয়ে যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে গুমড়ে মরবো না আর। তারপর আমায় ঠেলে ফেলে দিয়ে কেউ এগিয়ে দৌড়ে চলে যাবে না আর। আমি একা, একদম একাই জীবনের বাকি পথটা ওই বহমান নদীর মত ভেসে যাবো। ধীরে সুস্থে আপনমনে নিশ্চিন্তে আর নির্ভয়ে। 

নদীর মতো ভেসে যাওয়া -  অভিজিৎ বসু।
পনেরো সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...