সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের তরুণ দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমাদের সবার শ্রীয়ামপুর এর সেই সদা হাস্যময় সাংবাদিক তরুণদার কথা। সেই খটিরবাজারের তরুণ মুখোপাধ্যায়। সেই প্রতিদিন কাগজের তরুণ দা। সেই নিউজ টাইম চ্যানেলের মহাকরণের সাংবাদিক তরুণ দা। সেই তাজা খবরের তরুণ দা। ফাল্গুনী দার কথায় টেকো শোন তুই ওই সব ডেঙো আর ডোঙলাদের কেনো যে তুই মাথায় তুলিস আর জায়গা দিস কে জানে বাবা। ওদের একদম পাত্তা দিসনা।
কিন্তু সব কিছু শুনেও একগাল হেসে তরুণ দা সব কথা উড়িয়ে দিয়ে কেমন করে, যে কোনো উপায়ে যে কোনো ভাবে মানুষকে সাহায্য করার জন্য ব্যাকুল সবসময় তিনি। কত ছেলেকে যে সাংবাদিক হবার লাইনে এনে তার স্বপ্ন পূরন আর পেটের ভাত জোগাড় করে দিয়েছে তার হিসেব নেই কোনো। আসলে এই সব জেলার পিছিয়ে পরা ছেলেদের মধ্যে আমাকেও কম সাহায্য করেন নি তরুণদা। সেই কথা লিখতেই আজ কলম ধরা। 
পঁচিশ বছর আগের কথা হবে আমি সেই সময় মাত্র পাঁচশো টাকার বেতনে কলকাতার এক সান্ধ্য কাগজ পট পরিবর্তনের হুগলী জেলার সংবাদদাতা। কিন্তু খবর পাবো কি করে আর টেলিফোন বুথ থেকে এত পয়সা খরচ করে খবর পাঠাবো কি করে। তরুণ দা বললেন কোনো অসুবিধা নেই তুই আমার বাড়ি চলে আসবি। সকাল বেলায় উঠে খালি পেটে সাইকেল চালিয়ে বেলা এগারোটা নাগাদ তরুণদার বাড়ী হাজির হয়ে যেতাম আমি প্রতিদিন। 
সেই খটির বাজারের পুরোনো দোতলা বাড়ির নিচের তলায় বসতাম দুজনেই। বৌদি এসে আমাদের টিফিন খেতে দিতেন প্রতিদিন। তরুণদার থেকে জেলার খবর নিয়ে ওই বাড়ি থেকেই টেলিফোন থেকে অফিসে খবর পাঠিয়ে বাড়ী ফিরে আসতাম দুপুরবেলায়। এটাই ছিল আমার রোজের খবর পাঠানোর জায়গা আর রুটিন। আমার আজও সেই তরুণদার বাড়ির ল্যান্ড ফোনের নম্বরটা মনে আছে সেটা হলো 26521261 যদি না খুব ভুল হয় আমার। এর জন্য কোনোদিন বাড়ির কাউকে বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে দেখিনি আমি।
 সেই এক ম্যাজিসিয়ানকে রিপোর্টার করে দেওয়া। সেই হিন্দি কাগজের অফিসে যোগাযোগ করিয়ে কাউকে কাজের খবর বলে সুযোগ করে দেওয়া। সেই উত্তরপাড়ার সৌম্যকে খবরের লাইনে এনে দেওয়া। কিংশুক কে সাংবাদিক করে দেওয়া। নিউজ টাইম চ্যানেলে তাপস আর বাপিকে কাজের সুযোগ করে দেওয়া তার আগে তাজা খবরে কাজের সুযোগ করে দেওয়া ওদের। মৃনালদাকে কালান্তর কাগজে সুযোগ করে দেওয়া। প্রদীপকে বর্তমানের কৃষি বিভাগের পাতায় লেখার সুযোগ করে দেওয়া। আসলে কাউকে একটু বলে দিলে কারুর উপকার হলে তরুণদা এমন একজন ব্যক্তি সেটা বলতে গিয়ে দুবার ভাবেন না একবারও তিনি। তাতে নিজের যাই হোক ভালো বা খারাপ। এমন কত যে উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কে জানে। 
আসলে মিডিয়াতে আজকাল এমন লোকের সংখ্যা দ্রুত কমছে। শুধু নিজে এগিয়ে চলা,বেঁচে থাকা, বেড়ে ওঠার মাঝে তরুণদা একটু আলাদা আর তাই মনে হলো আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় কিছু কথা তরুণদাকে নিয়ে লিখে ফেললাম আজ। বহুদিন পরে কাজের সূত্রে মহাকরণে দেখা হলো তরুণদার সাথে আমার। সেখানেও সেই এক ভাবেই সাহায্য করে যাওয়া খবরের বিষয়ে। মহাকরণের সবাই একবাক্যে এই বিষয়ে একমত যে কারুর কোনো দরকার হলে কোনো খবরের বিষয়ে তরুণদা তাকে এক কথায় সাহায্যে করেছেন কোনো সম্পর্কের কথা না ভেবেই। এই ভাবেই সব সময় সাহায্য করে গেছেন তিনি আমাদের সবাইকে।
বহুদিন ধরে আমি কর্মহীন হয়ে বসে থাকা অবস্থায় বাংলা জাগো চ্যানেলে কাজের সুযোগ হলো আমার। যে সময় তখনও তরুণদা রাজাময়কে বলে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি আমায়। আমি যদিও ব্যক্তিগত কারণে সেই কাজ করতে পারিনি। আজও এতদিন পরেও যে কোনো দরকার পড়লে তরুণদাকে আমি ফোন করি। যে কোনো সময় কোনো দ্বিধা না রেখে। আমার মা মারা যাবার খবর পেয়ে তরুণ দা সৌগত কে নিয়ে হাজির হলেন শ্মশানে উত্তরপাড়ায়। যা আমার মনে থাকবে চিরকাল যা অনেকে জেনেও আসেনি শুধু আমি মিডিয়ার কাজ করিনা বলে। 
আজ আমি কোনো মিডিয়াতে কাজ না করলেও তিনি আজও আমায় গাইড করেন ঠিক বড়ো দাদার মতোই। বলেন কি করা উচিৎ আর কি করা ঠিক নয়। একদম বড়ো দাদার মত। তাই হয়তো অনেক কিছু লেখা হলো না আমার এই লেখায়। তবু সেই পুরোনো দিনের খটির বাজারের দোতলা বাড়ি। সেই ঘোরানো টেলিফোন থেকে খবর পাঠিয়ে দেওয়া। সেই খবর ছাপার অক্ষরে দেখে আনন্দ পাওয়া। এগুলো যে আমার স্মৃতির পাতায় উত্তাপ দেয় আজও। সেই উত্তাপকে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আজও আমি এতদিন পরেও বেশ আনন্দ অনুভব করি। সেই দিনের সেই খবর পাঠানোর ব্যবস্থা না করে দিলে কি আর খবরের নেশায় বুঁদ হতে পারতাম আমি। যে নেশাটা ধরিয়ে দেওয়ার কাজে অনেকটাই সাহায্য করেছিলেন আমাদের সবার চির তরুণ সেই তরুণ দা। 

আমাদের তরুণ দা - অভিজিৎ বসু।
বারো সেপ্টেম্বর দু হাজার চব্বিশ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...