কিছু কিছু মানুষ আছেন যাদের কথা মনে হয় আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথাতে লিখি। যাদের সান্নিধ্য লাভ করে আনন্দ পেয়েছি। খুব অল্প সময় তাঁদের সাথে কাজ করেছি আমি। কিন্তু কি লিখবো এমন একজন মিডিয়াতে কাজ করেও চুপচাপ থাকা অন্তর্মুখী এই মানুষকে নিয়ে, কি লিখবো আমি নিজেই ভেবে পাইনা যে। এই মানুষটিকে নিয়ে ভেবেছি আমি অনেকবার যে এতজনের বিষয়ে লিখছি ওনাকে নিয়ে কিছু লিখবো। কিন্তু ওই ভাবনাই যে সার। আমি ভেবেই পাইনা যে কি লেখা যায়। তাই আমি থমকে যাই। ভাবি না সম্ভব নয় ওনাকে নিয়ে কিছু লেখা ।
হ্যাঁ, সেই একদম চুপচাপ থাকা চিৎকার আর চেঁচামেচি না করা হৈ চৈ না করা একজন বস। একদম আদ্যন্ত ভালো মানুষ, সাধারণত মিডিয়াতে এমন মানুষ এর দেখা পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। একজন সুবক্তা আর সুলেখক সেই সাংবাদিক মানুষটি হলেন সেই আমাদের সবার খুব প্রিয় শুভাশীষ মৈত্র। হ্যাঁ, আমাদের সবার শুভাশীষ দা। ইটিভির একদম শুরুতে সেই তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ারের সেই অফিস এর নিউজ রুমে পকেটে হাত দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। মুখে স্মিত হাসি লেগে আছে সব সময়। কিন্তু কোনোদিন কোনো রিপোর্টার খবর মিস করে গাল শুনেছেন শুভাশীষদার কাছে এমন বদনাম তাঁর বিরুদ্ধে কেউ দিতে পারবে না মনে হয়। তাঁর সাথে কাজ করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে কোনো সাংবাদিক এমন ঘটনা বোধহয় ঘটেনি।
আজকাল তো এসব অনেকেই বলবে মহাভারত বা রামায়ণ যুগের গল্প বলে কি হবে। বর্তমান যুগে এমন চলে না যে মিডিয়াতে। চিৎকার আর চেঁচামেচি ছাড়া, মাতব্বরি ছাড়া, চাকরি খেয়ে নেবার হুমকি ছাড়া, থ্রেট কালচার ছাড়া, এক্স দাদার আমল আর ওয়াই দাদার আমল এর উদাহরণ ছাড়াই বেশ দিব্যি চলতো সেই ইটিভির কলকাতার অফিস। কি প্রাণবন্ত যে ছিল সেই অফিস। সেই সব বিখ্যাত রিপোর্টারদের দেখা মিলত কলকাতায় ক্যাসেট নিয়ে যাবার সময়। সেই সব রিপোর্টারগণ আজ কেউ কাগজে আর টিভিতে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। সেই রবিশঙ্কর দত্ত, সোমা মুখোপাধ্যায়, সৈকত বসু, গার্গী, অনিন্দিতা চৌধুরী, পিয়াসী, দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় বর্তমানে বিখ্যাত কবি, আজকের বিখ্যাত না বলা কথার কারিগর সেই স্পোর্টস রিপোর্টার অমৃতাংশু, এমন অনেকেই ছিলেন তার মধ্যে অন্যতম আর দাপুটে সেই অরূপ কালী। আরও অনেকেই ছিলেন নাম মনে আসছে না আজ আমার এতদিন পর।
একদিন বিকেল বেলায় ক্যাসেট নিয়ে সেই ইটিভির কলকাতার অফিস গেছি। নিউজরুম এ চূড়ান্ত ব্যস্ততা সেই সময় মুখে হাসি নিয়ে শুভাশীষ দা এগিয়ে এলেন আমার দিকে। অভিজিৎ তুমি খুব ভালো করেছো ওই স্টোরিটা। বলে আমায় বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি অবাক জেলার একজন পাতি রিপোর্টারকে ওই মাপের একজন সাংবাদিক একজন বস এই ভাবে তাকে তার কাজের প্রশংসা করলো। আমি কিছুটা সঙ্কোচ নিয়ে বললাম না না দাদা ওই আর কি। আসলে বোধহয় মিডিয়াতে এই ধরনের মানুষ এত কম আছেন তাই বোধহয় এসব দেখে কেমন যেন অবাক লাগে আমার। আবার ভালোও লাগে বেশ। একজন সেই জেলার খেটে খাওয়া একজন খুব কম টাকার রিপোর্টার যে কলকাতার ওই সব স্টার রিপোর্টারদের সামনে তার কাজের প্রশংসা করে তাকে ভালবাসা এটা আমার আজও মনে আছে এতদিন এতবছর পরেও এই ঘটনার কথা।
তারপর দীর্ঘদিন পর কলকাতা টিভিতে কাজ এর সময় কথা হলো ওনার সঙ্গে আবার। এর মাঝে যদিও কথা হতো মাঝে মাঝে কারণে অকারণে। অভিজিৎ ভালো আছো বলে হেসে জিজ্ঞাসা করতেন তিনি। ওনার দিদি কোন্নগর থাকেন আমায় নির্মাল্য বললো শুভাশীষদার দিদির একটা কাজ আছে একটু বলে দিতে হবে। নামটা শুনেই বললাম হ্যাঁ হ্যাঁ আমি চিনি ওনাকে। বহুদিন পর কথা বললাম। উনি বললেন হ্যাঁ এই ব্যাপারটা একটু হলে ভালো হয় দিদি একা থাকেন। যাক কাজটা হয়েছিল, বললেন খুব ভালো হলো অভিজিৎ। আসলে এই ধরনের মানুষরা মিডিয়ার ঘেরাটোপে থেকেও কি আশ্চর্য ভাবে নির্লিপ্ত থাকেন। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে যে তিনি কি মাপের মানুষ কেমন মানুষ। ক্ষমতার অধিকারী হয়েও উচ্চ শিখরে বসেও এমন নির্লিপ্ততা সত্যিই এটা শিক্ষণীয় বেশ।
আমরা তো সেই বিখ্যাত করা উক্তি সব দু পয়সার সাংবাদিক হয়েও যে কত কিছুই দেখিয়ে বেড়াই কে জানে। যে দেখন দাড়ির যুগ চলছে এই বাংলা মিডিয়াতে। যে যত দেখাতে পারে সে ততো হিরো তার তত নাম। যে যত মাতব্বরি দেখায় সে তত বিখ্যাত বস। যে যত চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারে সে সবথেকে ভালো বস তার টিআরপি সবথেকে বেশি মিডিয়াতে। এই সবের মাঝে শুধু অমন সেই রামায়ণ আর মহাভারত যুগের অল্প কিছু গুটিকয় মানুষ আজও উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে আছেন আমাদের চোখের সামনে। এই সব না করেও যে বস এর আসন অলংকৃত করা যায়। সেটা ভেবে দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর মিডিয়াতে কাজ করার পর মনে হলো এমন মানুষ নিয়ে কিছু কথা লেখা দরকার। যা এই হাল আমলের বস আর সাংবাদিকদের জানা দরকার এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়।
আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে লেখা লিখে ওনাকে মাঝে মাঝেই আমি পাঠিয়ে দি বলি দাদা আপনি দেখবেন। ওনার ছোট্ট উত্তর অভিজিৎ আমি তোমার সব লেখা পড়ি। বিশ্বাস করুন এই উত্তর পেয়েই মনে হলো হয়তো আমার সাথে তেমন ঘনিষ্টতা নেই। তেমন যোগাযোগ নেই তবু এই ধরনের মানুষকে নিয়ে সাদা জীবনের কালো কথায় কিছু লেখার চেষ্টা করি। তাহলে হয়তো জানা যাবে যে এমন মানুষও এই রামায়ণ আর মহাভারত এর যুগে ছিল। যে মানুষটির সঙ্গে কাজ করতে রিপোর্টাররা, অন্য কর্মীরা খুশী বোধ করত, আনন্দ পেতো। তাঁর যে কোনো আদেশকে মাথা পেতে নিয়ে সেই কাজ করে দিত কোনো রকম অসুবিধা হচ্ছে এমন মনে না করেই। বস আর রিপোর্টারদের এমন সুন্দর গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক আজও অমলিন হয়েই বেঁচে আছে। যাঁরা তার সাথে কাজ করে অনেক উচ্চপদে আসীন তারাও সেটা আজ স্বীকার করেন। কেউ কেউ কলকাতা শহর থেকে অনেক দূরে থেকেও বলেন শুভাশীষদার মত মানুষ হয়না।
সত্যিই বলছি এই বদলে যাওয়া বাংলা মিডিয়ার যুগে এমন বিরল মানুষ এর দেখা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। ভালো থাকবেন দাদা আপনি। কিছুটা ভয় আর অস্বস্তি নিয়ে লিখে ফেললাম আমি কিছু কথা আপনাকে নিয়ে। ভুল হলে আমায় ভালোবেসে ক্ষমা করে দেবেন। আমি জানি আপনি বলবেন না চিৎকার আর চেঁচামেচি করে যে এইসব কি হয়েছে কি ভাই। তুমি কি মনে করেছ যে এইসব লিখে দিলে। এই ভরসা, আস্থা আর বিশ্বাস নিয়েই আমি আমার ব্লগে লিখে ফেললাম দাদা। একটু এই লেখাটা পড়ে দেখবেন। একজন জেলার এক সময়ের পাতি রিপোর্টার এর লেখা।
শুভাশীষ দা ও আমি - অভিজিৎ বসু।
আট অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
Beautiful ❤️
উত্তরমুছুন