সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সুচিক্কন দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমাদের সেই অফিসের এক নাইট ওয়াচম্যান এর গল্প। হ্যাঁ, রাতের অফিসের পাহারাদার তো বটেই তিনি। যিনি হাসি মুখে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ভরসা ছিলেন অফিসের সবার বিশেষ করে অফিস এর বসদের। যাঁরা সব দাপটের সাথে নানা পদে বিরাজ করে অফিস সামলাতেন নিজেদের কর্ম দক্ষতায় আর কর্ম কৃতিত্বের জোরে। কিন্তু রাত গভীর হলেই তাঁরা সব সারা দিনের কাজের চাপে একটু এদিক ওদিক চলে যেতেন মাথা ঠাণ্ডা করতে আর নিজেদের চাপ কমাতে। 


আর সেই সময়ে যিনি হাসি মুখে যিনি, দুপুর তিনটে থেকে রাত বারোটার শিফটে ডিউটি করে মাঝরাতে বাড়ী ফিরে যেতেন হাসি মুখে সেই ষাট বছর বয়সে ও সেই অবসর গ্রহণ পর্যন্ত। সেই ব্যক্তি হলেন আমাদের সবার পরম শ্রদ্ধার সেই সুচিক্কন দা। চব্বিশ ঘণ্টার আগে যিনি আনন্দবাজার পত্রিকার জেলা ডেস্কের কাজ করেছেন। তারপর দু হাজার ছয় সালে চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেল শুরু হবার ছয় মাস পরেই তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ছেড়ে টিভি চ্যানেলে যোগ দিলেন তিনি। 

আর সেই থেকেই তিনি একদম নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ শুরু করলেন। চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে অবসর নিয়েও তিনি একদম না বসে থেকে তিনি শুরু করেন আজকাল অফিসে ডেস্কের কাজ। আজ ও সেই একভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন মিডিয়াতে দু হাজার আঠারো সালে অবসর নেওয়ার পরেও তিনি। যে কোনো বড়ো খবর রাতে ঘটেছে সেটা ধরাতে হবে নির্দ্ধিধায় সুচিক্কন দাকে ফোন করতে হবে। আর বলতে হবে দাদা এটা একটু ধরিয়ে দেবেন কষ্ট করে। আর তখন উনি নিজেই ছবি দেখে, ছবি কেটে, ব্রেকিং এর লাইন লিখে সম্ভব হলে রিপোর্টার এর ফোন নিয়ে গুরত্বপূর্ণ খবর ধরিয়ে দিতেন হাসি মুখে। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে।

 সেই রাতের বেলায় ডিউটি করা পত্রলেখা, দেবাশীষ, বা অনুতোষ, সূচিক্কন দা, সেই রতন, সেই সোমনাথ, সেই সৌম্য সিনহা, ডেস্কের দিব্যেন্দু, অদিতি, সোমনাথ, প্রদীপ, এমন নানা জনের ভীড় থাকতো পুরোনো পোদ্দার কোর্টের অফিসে। আর সবাইকে আশ্বস্ত করে শৌনক, সোম, সুবীর, ধ্রুব, অনির্বাণ দা এদের কাউকে বুঝতে না দিয়ে ফাঁকা অফিস সামলে দিতেন তিনি দিনের পর দিন হাসিমুখে। আমার আজও মনে আছে সেই ওনার অবসর নেওয়ার দিন আমরা সবাই মিলে প্রেস ক্লাবে গেছিলাম গাড়ি করে সুচিক্কনদার ফেয়ার ওয়েলের দিন। অনির্বাণ চৌধুরী, ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক, শৌনক ঘোষ, আমি, বেশ ভালো লাগলো সেদিন সন্ধ্যায়। একজন এর কাজ এর জীবনের নাইট ওয়াচম্যান এর শেষ দিন পালন। 

দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করে যে যার মতো দূরে চলে যাওয়া। আর তার কোনো খবর না রাখা। যাই হোক এটা ছাড়াও সুচিক্কন দা ভালো জাপানী ভাষা জানতেন। তাই আমার মেয়ের এই ভাষা নিয়ে পড়ার সময় খুব সাহায্য করেন তিনি বারবার। গাইড করেন মেয়েকে নানা ভাবে কি করতে হবে। আর তাই আমি মাঝে মাঝেই ওনাকে ফোন করে জানাতাম যে দাদা মেয়ের এই পড়া হলো এরপর কি করবে একটু বলে দেবেন আপনি। ওনার মেয়ে লন্ডনে থাকেন বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত বর্তমানে।

 তাই মাঝে মাঝেই তিনি বলেন আমায় অভিজিৎ তোমার মেয়ের একটা পড়ার পর, কাজ এর খবর পেলে আমার বেশ ভালো লাগবে। যখন শুনতেন যে বহু তাঁর পুরোনো দিনের সহকর্মী যারা আজ কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে কষ্ট পান তিনি। বলেন এমন পরিস্থিতি আগে হয়নি কোনো সময়। তুলনা করেন বাম আমলের সাথে এই আমলের। দীর্ঘদিন এই বাংলা সংবাদ মাধ্যমের নানা ঘটনার সাক্ষী তিনি।
এই কাজ এর আগে তিনি বিদেশী ভাষা জানার সুবাদে টাটা কোম্পানিতেও কাজ এর সুযোগ পান। কিন্তু সেই কাজে যোগ দেননি তিনি। তারপর তিনি এই মিডিয়ার কাজ শুরু করেন। সেই কাজ তিনি আজও চালিয়ে যাচ্ছেন হাসি মুখে। হয়তো আর নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ করেন না তিনি। তবু বাংলা ডেস্ক এর কাজে বেশ সিদ্ধ হস্ত তিনি। কোনো বানান নিয়ে, শব্দ নিয়ে সন্দেহ জাগলেই যাঁর কাছে দৌড়ে যেতাম আমরা সবাই মিলে। আর তিনি হাসি মুখে সব বলে দিতেন। 

আর তিনি বলে দিতেন কোনটা ঠিক, আর কোনটা বেঠিক। হারিয়ে যাওয়া নানা মুখের ভীড়ে মনে পড়ে গেলো আজ সেই সুচিক্কন দার কথা। আর তাই সাদা জীবনের কালো কথায় লিখে ফেললাম আমি তাঁর কথা। অনেকেই আমায় বলেন কালো দাগ এর কথা কই। আমি বলি সাদাই থাক না। কালো দাগ এর কথা না হয় অকথিত থাক। নিজের গভীর গোপন ভালোবাসার সম্পর্কের মাঝে লুকিয়ে থাক আপন সেই সব কথা নানা ছন্দে। তাকে আর ডিস্টার্ব করে লাভ কি।

আমাদের সুচিক্কন দা - অভিজিৎ বসু।
নয় নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...