সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্মরণে, শ্রদ্ধায় সমরেশ অভিজিৎ বসু

ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ আমার প্রিয় লেখকের জন্মদিন। আমি জানিনা এ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা সমরেশ বসু বা কালকূট এর লেখা পড়ে কিনা। হয়তো পড়ে তারা আমার এই প্রিয় লেখকের লেখা। তবে সদ্য কৈশোর পেরিয়ে আমব়া এই ক্ষণজন্মা সাহিত্যিকের লেখার অমোঘ আকর্ষণে সেই শ্রীরামপুরে নেতাজী পাঠাগার লাইব্রেরী থেকে তাঁর বই নিয়ে এসে একটার পর একটা কালকূট বা সমরেশ বসুর লেখা উপন্যাস গিলেছি প্রাণপণে। বলা যায় হজম না করতে পারলেও তাঁর লেখা গলাধঃকরণ করেছি একটার পর একটা। কারণ সেই সময় তিনি যেনো প্রথম প্রেম হয়ে গেছিলেন আমার জীবনে। আমার লেখার জীবনের প্রথম প্রেম। লেখককে না দেখেও তাঁর প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ। যে আকর্ষণ আমায় সারাজীবন ছুটতে সাহায্যে করলো আমায়। 


কালকূটের লেখা অনেক উপন্যাসে লেখকের এই বোহেমিয়ান রোমান্টিকতার সঙ্গে নিজেকে সংপৃক্ত কব়ে এক অন্যরকম ভালোলাগায় আর ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে নিমজ্জিত হয়ে ভাসিয়ে দিলাম আমি আমার এই নিজের ক্ষুদ্র জীবন। আসলের লেখক সমরেশ বসুর জীবনটাই ছিল নানা অভিজ্ঞতার একটা কোলাজ ৷ যে কোলাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ, আর নানা জীবনের মেঠো রাস্তার আঁকাবাঁকা ঘুরপথ। যে পথ ধরে তিনি আপনমনে একা একাই হেঁটে গেছেন সারাটা জীবন ধরে। যে জীবনে জড়িয়ে আছে প্রেম ভালোবাসা বিরহ যন্ত্রণা আরোও কত কিছু। 


সেই বাংলাদেশ থেকে নৈহাটি ৷ ডিম বিক্রি থেকে চটকল শ্রমিকের জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখা৷ কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে জেলখাটা। আর এই ভাবে জীবনের ওঠা আর নামা। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবন দেখার এই যে অভিজ্ঞতা খুব কম লেখকের হয়েছে সারা জীবনে ৷ আর শেষ পর্যন্ত লেখাকে পেশা করে সরস্বতীর চ়র্চা করে গেছেন তিনি সারাটা জীবন ধরে । যে জীবনে ছিল প্রজাপতি, বিবর, দেখি নাই ফিরে, অমৃত কুম্ভের সন্ধানে, ঘরের কাছে আরশি নগর, আরব সাগরের জল লোনা, কোথায় পাবো তারে, পৃথা, প্রাচেতস, প্রেম নামে বন এমন আরও কত কি। হয়তো সেই তালিকা লিখে শেষ করা যাবে না কিছুতেই। যে তালিকায় রয়েছে আরও অনেক নাম। যা হয়তো বলা হলো না আমার এই ক্ষুদ্র পরিসরে।



তাঁর অনেক উপন্যাস বাংলা এবং হিন্দী চলচিত্রকে সমৃদ্ধ করে গেছে ৷ উল্টো পথে হেঁটে প্রজাপতি ( একসময় নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিল) ও বিবর উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যকে সাবালক করেছিলেন সেই সময় তিনিই। না হলে হয়তো আমারও লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়ার ফাঁকে হারিকেন এর আলোয় প্রজাপতি পড়া হত না কোনদিন। যে প্রজাপতি আমাকেও কেমন যেনো সাবালক করে দিলো খুব অল্প বয়সে। বড়ো হয়ে গেলাম হঠাৎ করেই আমিও এক ধাক্কায় প্রজাপতির ডানায় ভর করে। প্রেমে পড়লাম প্রজাপতির। বারবার উল্টে পাল্টে এই বই পড়তে থাকলাম আমি। আসলে সমরেশ বসুর লেখায় একটা জাদু আছে। যে জাদু আমায়, আপনাকে, সবাইকে কেমন বেঁধে ফেলে আষ্টেপৃষ্টে এক নিনড় বাঁধনে। যার হাত থেকে মুক্তি নেই আমার আপনার কারুর। আজ সেই দেখি নাই ফিরের লেখক স্রষ্টা প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ বসুর জন্মদিন। 



তাঁর শেষ অসমাপ্ত কাজ হিসাবে প্রখ্যাত ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের জীবন নিয়ে " দেখিনাই ফিরে "
বাংলা সাহিত্যের একটি মাইল ফলক ৷ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই তাঁর রামকিঙ্কর বেইজ এর জীবন নিয়ে লেখা। যে লেখায় ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে সেই বিখ্যাত ভাস্কর এর নানা অকথিত জীবন কথা। যে জীবনের প্রতি পাতায় ফুটে উঠেছে রামকিঙ্কর এর জীবন এর করুন কাহিনী। যে অসম্পূর্ণ অসমাপ্ত কাহিনী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে দলিল হয়ে থেকে যাবে। সেই শান্তিনিকেতনের রতনপল্লীর একচিলতে ঘর, সেই ছোটো ঘরে ঠাসা ক্যানভাস, রঙিন ছবি, সাদা কালো ছবির পোট্রেট,আর তার মাঝে বসে থাকা এক শিল্পী। তাঁর শিল্পের সংসারে বসে আছে আপনমনে আপন খেয়ালে।



২রা এপ্রিল, ১৯৮৮ সালের দেশ পত্রিকার সংখ্যাটিতে যে “ দেখি নাই ফিরে “ নামক জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাসটির অকাল-সমাপ্তি ঘটেছিল ( সমরেশ বসুর অকালপ্রয়াণে ) সেটির প্রকাশ শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ৩রা জানুয়ারি । যারা সেই উপন্যাস পড়েছেন তাঁরাই জানেন যে সমরেশবাবু রামকিঙ্কর বেইজের আশ্চর্য জীবনকাহিনীর অপরূপ এক বিন্যাস ফুটিয়ে তুলছিলেন এই উপন্যাসে। যা তাঁর এক অনন্য সৃষ্টি।

লেখক হিসেবে সমরেশ বসু আর কালকূট-এর মধ্যে যেন একটা দেওয়াল রচিত ছিল । অথবা একই মানুষের দ্বৈত সত্তা যেন । কালকূট এর আউল বাউল ভাব আর সমরেশ বসুর তীক্ষ্ণ , তীব্র অবলোকন দুটোই যেন এক মানুষের পৃথক দুই রূপ। অমৃত বিষের পাত্রে, এক যে ছিলেন রাজা , ধ্যান জ্ঞান প্রেম , পণ্যভূমে পূণ্যস্নান , যে খোঁজে আপন ঘরে ,শাম্ব , মুক্ত বেণীর উজানে , আরব সাগরের জল লোনা , এমন আরো কত কালজয়ী সৃষ্টি , আরো একটি উপন্যাসের নাম না করলে অন্যায় হবে - অমৃতকুম্ভের সন্ধানে । কলেজ জীবনে বই পড়বার একটা নেশা চেপে গিয়েছিল যা পরে খানিকটা থিতিয়ে যায় চাকরির জগতে ঢুকে। তবু তাঁর লেখার বড়ো ভক্ত ছিলাম আমি বরাবর।


ঠিক কত বড় সাহিত্যিক ছিলেন এই সমরেশ বসু ? এই আলোচনা করতে গেলে তাঁকে বা তাঁর সৃষ্টিকে যতটা নিবিড় ভাবে জানতে হয় , সেই যোগ্যতা আমার নেই অথবা তাঁকে পুরোপুরি অধ্যয়ন না করে এ বিষয়ে বেশি বলাটাই ধৃষ্টতা । তবু কিছু কিছু উপন্যাস বা গল্প অথবা রচনা তো পড়তেই পেরেছি - তাই তাঁর এই জন্ম দিনের দিন কিছু লিখতে ইচ্ছে হল বলেই কলম খুলে বসেছি। 

অনেকেই নানা ভাবে সমরেশ বসুর রচনা সম্পর্কে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ভাবে। তবে আমার সব চাইতে প্রাসঙ্গিক লেগেছে তাঁর লেখা সম্বন্ধে দেশ পত্রিকার কিংবদন্তী সম্পাদক শ্রী সাগরময় ঘোষের মূল্যায়ণ ! 

……” পাপে পুণ্যে হেজে-মজে গাঁজিয়ে ওঠা জীবনকে এমন সাষ্টাঙ্গে সাপটে ধরতে হলে কেবল জীবনশিল্পী হলেই চলে না, হয়ে উঠতে হয় জীবনশিকারী। সমরেশ যেন ছিলেন তাই। গহন গাঙের মহাকর্ষে ভাসা অবিশ্বাস্য শিকারীর মতই সমরেশের আঙুলেও যেন জড়ানো ছিল সেই জালের খুঁটনি, সেই বার্তাবাহী সুক্ষ্ম সুতো। যে আঙুলে বসে থাকতো তাঁর সমস্ত মন, তাঁর অস্থির প্রাণের আবেগ। “….. কি গভীরতায় ভরা এই পর্যবেক্ষন সাগরময়বাবুর ! 



ছাপার হরফে বাইরের জগতের সাথে সমরেশ বসুর শুভদৃষ্টি ঘটল “ আদাব “ গল্পটির মাধ্যমে। ১৯৪৬ সালের শারদীয়া পরিচয় পত্রিকায় , অজ্ঞাতনামা এক লেখকের আবির্ভাব সাহিত্য-সমাজকে যেন চমকে দিয়েছিল । এই প্রথম “ সুরথনাথ বসু “ তাঁর বন্ধু এবং শ্যালক দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া - “ সমরেশ “ নামে পরিচিত হলেন । সে এক সাংঘাতিক গল্প ! সুতাকলের হিন্দু মজুর আর মুসলমান মাঝির বাঁচামরার এক কাহিনীর মধ্য দিয়ে প্ররোচনামূলক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এমন এক মৌল প্রশ্ন তুলে ধরেছিলেন যা এক সঙ্গে প্রতিবাদ এবং শ্লেষ । সবচাইতে আশ্চর্যের কথা এই গল্প আজকের দিনেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এই এত বছর পরেও। 

এই প্রসঙ্গে আরো একটি গল্পের কথা না বললেই নয় । ২২শে সেপ্টেম্বর , ১৯৫১ সালের দেশ পত্রিকায় সেই প্রথমবারের জন্য সমরেশ বসুর গল্প প্রকাশিত হল , নাম - গুণিন। প্রেম-পিরিতের গল্প যে এত মর্মান্তিক হতে পারে সেটা সমরেশবাবুর আশ্চর্য কলমে সেটা ফুটে উঠেছিল ।আর গ্রাম্য পরিবেশে জীবন্ত সব চরিত্রকে এক যাদুদন্ড দিয়ে যেন তৈরি করেছিলেন - নকুড়, কাশেম,ললিত এবং হরিমতি …… যা আজও চোখের সামনে ভাসে। 


১৯৫৫ সালে লেখা “ অমৃতকুম্ভের সন্ধানে “ পাঠকসমাজ অভূতপূর্ব সমাদর পেয়েছিল। মহাভারতের স্বরূপ দর্শনের আবেগ জড়িয়েছিল ঘর ভেঙে বেরিয়ে আসা এই পদযাত্রা যা ফুটে উঠেছিল এই উপন্যাসের পাতায় পাতায়। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হওয়া “ বিবর “ এবং ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হওয়া “ প্রজাপতি “ - এই দুটো উপন্যাসের মাধ্যমে সমরেশবাবু যেন একটি আগ্নেয়গিরির মুখ খুলে দিয়েছেন যার লাভাস্রোত পরবর্তীতে বাংলা গল্প- উপন্যাসের ঢেউ-এ পরিণত হয়েছিল। 

সেই প্রখ্যাত লেখক সমরেশ বসু ১১ ডিসেম্বর ১৯২৪ জন্মগ্রহণ করে। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু; কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূট ও ভ্রমর ছদ্মনামে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০। তার প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ২০০ তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে ভারতের কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বাবার নাম মোহিনীমোহন বসু, মা শৈবালিনী বসু। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। তিনি একসময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন।


 এই লেখকের তাঁর প্রকৃত নাম ছিল সুরথনাথ বসু। "সমরেশ" নাম দিয়েছিলেন তার শ্যালক, দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। আজীবন সাহিত্যসৃষ্টি করে গিয়েছেন সেই নামেই। প্রথম উপন্যাস "নয়নপুরের মাটি"। যদিও গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ছিল "উত্তরঙ্গ"। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। 'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে।


১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ইছাপুর বন্দুক কারখানায় চাকরি করেছেন সমরেশ বসু। এই সময়পর্বের মধ্যেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক' (প্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২–১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, 'তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো "কেরানি লেখক" ছিলেন না, যাঁদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার অথচ ষোল আনার ওপর আঠারো আনা শখ আছে লেখক হওয়ার।' হ্যাঁ এটাই হলেন আমাদের সমরেশ বসু।


কালকূট মানে তীব্র বিষ। এটি ছিল তার ছদ্মনাম। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে বেড়াতে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধর্মী উপন্যাস। হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি অমৃতের সন্ধান করেছেন। তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে।


তাঁর নিজের লেখায় “ এ কথা বিদিত সংসারে, জানেন সর্বলোকে, ছদ্মনামের প্রয়োজন হয় , নামের আড়াল থেকে নিজেকে ব্যক্ত করা । ….. কিন্তু আমি তো আর সাধক না অতএব বলি , নামের আড়াল থেকে নিজেকে ব্যক্ত করা কথাটা তেমন জুতসই লাগছে না। বরং আমার আরশীনগর যদি হয় জগত ও জগতজন, তাদের মধ্যে আমার পড়শী সত্তাটিকে সন্ধানই নামের আড়ালে ঘুরে ফেরা। ইংরেজিতে একে আইডেন্টিফিকেশন বলে নাকি ? যা খুশি বলুক গিয়ে, ওতে আমি নেই । যা বলেছি তাই, আড়াল দিয়ে খুঁজে ফিরি বোধহয় নিজেকেই। তারই নাম কালকূট। কিন্তু এমন নামটি কেন ? তাহলে যে প্রাণটি খুলে দেখাতে হয়। দেখলেই বোঝা যাবে, বুক ভরে আছে গরলে, আপনাকে খুঁজে ফেরা , আসলে তো হা অমৃত, হা অমৃত। বিষে অঙ্গ জরজর,কোথা হা অমৃত ! …..কালকূট ছাড়া আমার আর কী নাম হতে পারে ? “ ( গাহে অচিন পাখি - কালকূট ) 

স্মরণে শ্রদ্ধায় সমরেশ - অভিজিৎ বসু।
এগারো ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...