শ্রীরামপুরে এর মনোরম এর সামনে সেই বাবুয়াদার দোকানে আর পকেটে হাত দিয়ে কালুদাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবো না কোনোদিন আমি। সেই মোটা গোঁফ, কালো চশমার ফ্রেমের ভিতর উজ্জ্বল স্থির দুটি চোখ। দেখা হলেই এগিয়ে এসে খবর নেওয়া অভিজিৎদা কেমন আছো গো তুমি। বৌদি ভালো আছে তো। মেয়ের কোন ক্লাস হলো এই বছর। এই খারাপ খবরটা পেয়ে মনটা কেমন থমকে গেলো আমার। প্রকাশ পাল প্রথমে দিলো আমায় এই খবরটা সবার প্রথমে। যে কালুদা আর নেই। তারপর আমি শ্রীরামপুরে নেতাজী সুভাষ রোডের স্টেটসম্যান কাগজের সিঙ্গুরখ্যাত রিপোর্টার সমীর সাহাকে ফোন করলাম। বললো হ্যাঁ, দিন কয়েক আগেই হঠাৎ হলো। আমরা পরে শুনলাম। বাবুয়াদার কাছ থেকেই যে কালু দা নেই।
সত্যিই কি অদ্ভুত এই জীবন আর মৃত্যু। এই আছি আর এই নেই। এখনও দেখলাম কালুদা আর আমি মানে সঞ্জীব ঘোষ ফেসবুকের দেওয়ালে আমরা বন্ধু হয়েই বেঁচে আছি। কেমন যেনো উদাসী দৃষ্টি নিয়েই আমার দিকে যেনো হাসি মুখে তাকিয়ে আছে কালুদা আজও অনেক দুর থেকেও। আসলে সেই পল্লীডাক প্রেস এর দফতরে আমার যেদিন থেকে যাওয়া শুরু হয় দু হাজার সাল থেকে। সেই সময় থেকেই মনোরম এর দোকানে সাংবাদিকদের আনাগোনা। ওটা সাংবাদিক দের দ্বিতীয় ঠেক বলা যায়। দরকার পড়লে আমরা সবাই সাংবাদিকরা মনোরম এর দোকানে ভিড় করেছি। তাতে কোনদিন বিরক্ত হয়নি বাবুয়াদা। আর সেই দোকানেই কালুদাকে প্রথম দেখি আমি। সবার সাথে মিষ্টি ব্যবহার। অন্বয় চট্টোপাধ্যায় এর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু একদম হরিহর আত্মা দুজন মিলে। সেই কালুদা আজ আর নেই। সত্যিই বড়ো খারাপ খবর এটা।
অঙ্কিত ভবনে আমার শ্বশুর বাড়ি কালুদার দিদিরও ফ্ল্যাট ছিল এই এক জায়গায়। কতোবার যে এই আমার শ্বশুরবাড়ির ফ্ল্যাট বিক্রি নিয়ে কথা হয়েছে আমাদের দুজনের মধ্যে। ভালো সাজেশন দিত আমায় এই সব বিষয়ে। কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয়। রাস্তায় দেখা হলেই নানা বিষয়ে খবর নিয়ে আলোচনা হতো আমার সাথে। সেই মিন্টে, বাপি, তাপস, তরুণ দা, সৌগত, প্রদীপ, প্রকাশ, ফাল্গুনী, গৌতম দা সবাই আমরা চিনতাম কালুদাকে।
সেই কালুদা একদিন শুনলাম খুব অসুস্থ। অন্বয় চ্যাটার্জীদার মুখেই শুনলাম আমি সেই খবর। পরে শুনলাম চিকিৎসা হচ্ছে কালুদার। একটু ভালো আছেন। ভাবলাম তাহলে হয়তো একটু ভালো হয়ে যাবেন কদিন পরে তাহলে। দু একদিন রাতে ফোন করেছি খবর জানতে অন্বয় চট্টোপাধ্যায়কে। আর তার মাঝেই এই হারিয়ে যাওয়ার খবর পেলাম আমি হঠাৎ করেই।
লিখতে হাত সরছে না আর আমার। হয়তো বাবুয়াদার দোকানের সামনে গেলেই পাও আটকে যাবে আমার। সেই দোকানের সিঁড়িতে কালুদাকে আর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবো না আমি কোনোদিনই। একজন নির্বিরোধী চুপচাপ মিশুকে মানুষকে। যাঁর কোনো শত্রু ছিল বলে আমি জানতাম না একদম কোনোদিন। আর তাই এই খবরটি শুনেই আমার মনে হলো কালুদার কথা একটু লেখা দরকার। তাই সাদা জীবনের কালো কথায় লিখলাম কালুদার কথা। জুটি ভেঙে গেলো কালুদার সাথে অন্বয় চট্টোপাধ্যায় এর। দুজনের দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব পারিবারিক সম্পর্ক একটা সুখ দুঃখের সাথীকে,বন্ধুকে হারালো অন্বয়দা।
জীবনের এই টুক করে চলে যাওয়া আমায় কেমন যেনো ভয় পাইয়ে দেয় আজকাল। মনে হয় সব কিছু ছেড়ে দিয়ে কেমন করে যেনো চলে যাওয়া। মায়া কাটিয়ে, ভালোবাসা কাটিয়ে, সুন্দর জীবনকে উপভোগ না করে , সংসার ছেড়ে, সবাইকে ছেড়ে এই অভিনয় মঞ্চ ছেড়ে চলে যাওয়া। তারপর মহাবিশ্বে বিলীন হয়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া। কোথায় কেউ জানিনা। তবু তার মাঝে জীবনের রাস্তায় কত মান, অভিমান, ঝগড়া, দূরে সরে যাওয়া, আবার কাছে আসা আর এসবের মাঝেই তো সময় শেষ হয়ে যায় আমাদের।পড়ে থাকে কিছু কথা, কিছু ভালো মন্দ স্মৃতি। যে স্মৃতিকে আগলে ধরেই বেঁচে থাকতে হয় আমাদের। ভালো থেকো তুমি কালুদা। মনোরম এর আড্ডার আসরে তোমার না থাকা আমরা সবাই মিস করব দাদা।
কালুদা তুমি ভালো থেকো - অভিজিৎ বসু।
দশ ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন