একটা লড়াই করা মেয়ের গল্পো। সত্যিই বলতে কি,যে গল্পো সে আমায় একদিন নিজেই বলেছিল লিখতে পারবে আমায় নিয়ে। এত তো তুমি লেখো। আমার কথা লিখতে পারবে তুমি। একদম সোজা সাপটা কথা। সত্যিই বলতে কি কিছুটা আমি ঘাবড়ে গেছিলাম ওর এই কথা শুনে। কিন্তু কি করে লিখবো সেই কথা। যে নিজেকে সব সময় গুটিয়ে রেখে দেয় নিজের মধ্যে। কোনো ভাবেই সে নিজে কিছু বলতে চায় না কাউকেই।
তবু সে চায় তার কথা লেখা হোক কলমের আঁচড় দিয়ে। তার জীবন যন্ত্রণার কথা, লড়াইয়ের কথা লেখায় ফুটে উঠুক। বললেই কি আর লেখা যায় অজানা মানুষের জীবন কথা। হয়তো এটা বলে আমায় পরীক্ষা নিতে চায় সে। শুধু এটুকু আমি জানি, সে গানকে ভালোবেসে খুব। গানকে সম্বল করে জীবন কাটিয়ে দেয় সে। বলতে নেই,গান তার প্রাণ। পেটের রুটি রুজিও বটে।গানের জন্য সে সব কিছু ছাড়তে রাজি।
সে নিজেই,লড়াইয়ের গল্পো লিখতে অনুরোধ করে আমায় একদিন। কিন্তু নিজে কিছু বলতে চায় না সে কোনো সময়। মুখে কুলুপ এঁটে থাকে একদম। কিছু না বললে লিখবো কি করে, বললেও সে মুখ ফুটে কিছুই বলতে চায় না। অদ্ভুত রহস্যময় ভাবে নিজেকে গুটিয়ে ঢেকে রাখে, ঠিক যেভাবে শামুক নিজেকে বাঁচাতে গুটিয়ে রাখে খোলস এর মধ্য একান্তে। ঠিক সেই ভাবেই বেঁচে থাকে সে। জলে বাস করেও কেমন যেন পাঁকাল মাছের মতো।
এক এক সময় আমার খুব রাগ হয় ওর ওপর,তাহলে আমি লিখবো কি করে। বলে তো দিলে তুমি লিখতে পারবে। আমি যা জানি সেটা দিয়ে লেখা যাবে না কিছু কথা। তাই বার বার তাকে অনুরোধ করি কিছু বলতে।কিন্তু মুখে কুলুপ তার। বার বার এক অনুরোধ করায় যাতে রেগে না যায় সে দুম করে, আমি তাকে বারণ করি রেগে যেতে। তাকে আড়াল থেকে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে দুর থেকে মনে মনে বলি। তোমার বর্ম আমি কোনো দিন ভাঙতে পারিনি, আর পারবোও না জানি। সেটা আমি ভাঙতে চাইও না কোনো দিন তুমি বিশ্বাস করো।
তোমার এই আলো আঁধারি রূপ, আমার কাছে ধরা থাক বাকি জীবন ধরে। সেটাই অনেক বেশি কিছু আমার কাছে। কিন্তু কিছু তো বলো মুখ ফুটে। না হলে কি করে লিখি বলতো।জানি তোমার নির্লিপ্ততা কেনো।শুধু যোগাযোগ থাক দুর থেকে আমাদের তাই তো।এর বেশি কিছু আমিও চাই না।সেটা রেখেই তো চলি আমি। দুর থেকে যোগাযোগ। তাহলে কিসের এত কষ্ট তোমার। যে কারণে তুমি তোমার বর্ম ভাঙার চেষ্টা করো না কোনো সময়। সত্যিই কি তুমি আমাকে এড়িয়ে যেতেই বর্মর আশ্রয় নাও। কে জানে। হয়তো তাই। কিন্তু এই সেদিন তো তুমি বললে না যোগাযোগ রেখো বন্ধ করো না। তাহলে সেটা কি অভিনয় করে বললে। না সত্যিই মন থেকে বললে তুমি।আসলে তোমার মনের গভীরে প্রবেশ করা অসাধ্য ব্যাপার।
কী আর বলবো, তোমার এই সংসার বাঁচানোর লড়াই দেখে, অনেকেই আমাকে বলে দেখো একটা মেয়ে তার ফ্যামিলি বাঁচাতে কত লড়ছে। আর তুমি কিনা পালিয়ে যাও সব জায়গা থেকে। আসলে তুমি ভীতু, তাই পালিয়ে যাও বার বার সব কাজের জায়গা থেকে। আর সে ভীতু নয়, তাই লড়ে বাঁচে। নিজের কলজের জোরে। আমি সত্যিই তো তোমার কাছে হারি তাই বার বার। ভাবি হেরে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার।আর তোমার কাছে মুখ দেখাই কি করে। তাই আমি মুখ লুকিয়ে রাখি, কিন্তু পারি না দূরে লুকিয়ে থাকতে। আবারও ছুটে আসি তোমার কাছে।মাটির টানে।
তোমার দৃঢ়তা আমায় শিক্ষা দেয় বার বার। বলে দেখো শেখো ওকে দেখে, কি করে সমাজে, কাজের জায়গায় অ্যাডজাস্ট করে বাঁচতে হয়, বাঁচাতে হয় পরিবারকে। তুমি শুধু পালিয়ে বাঁচতে জানো। কত দিন এই ভাবে পালিয়ে বাঁচবে। তোমার চোখের কড়া দৃষ্টিতে সেই প্রশ্নই করো তুমি দূর থেকে। আমি চুপ করে থাকি।
নিজের যন্ত্রণাকে সহ্য করে বুকে চেপে কি করে কাজ করতে হয় সেটা তোমায় দেখে শেখা উচিৎ আমার। রাতের অন্ধকারে আচমকা কলম হাতে অনেক কিছু লিখে ফেললাম আমি।এত কিছু লেখার রসদ আছে জানলে, তোমায় বলতাম না কিছু বলো বলে বার বার বিরক্ত করতাম না তোমায় একটুও।
দেখো আজকাল চিঠি লেখার পাট প্রায় উঠেই গেছে জীবন থেকে। ফেসবুকের কল্যাণে নিয়োজিত আমরা তাই কলম হাতে আর ধরি না বলতে গেলে। খাতা কলমের যুগ প্রায় শেষ। তাই রাতের অন্ধকারে আচমকা কলম ধরলাম আজ, কিছুটা স্বগতোক্তি করব বলে। আশা করি রেগে যাবে না তুমি।
জানি না এসব পাগলামি কি এই বয়সে আমার সাজে। সমাজে আমাকে বলে, আমি নাকি পাগল। যেখানে কাজ করতাম সেই কাজের ছেড়ে আসা জায়গা গুলো বলে,আমি পাগল। আজকাল আমার বাড়ির লোকরাও পাগল বলে মাঝে মাঝেই। তাতে আমি লজ্জা পাই না আর। পাগলকে তো সবাই সেই নামেই ডাকবে কি বলো। এতে আর আশ্চর্যের কি আছে।
এই রে , এতক্ষন ধরে তোমার নাম ধরে ডাকা হয় নি একবারও। দেখো লিখতে লিখতে ভুলতে বসেছি সেটা। আর এই লেখার অভ্যাস নেই তো তাই। আগে তবু দু এক কলম হাতে লিখতে হতো, এখন তার সময় কই বলো। সবাই এখন মুঠোফোনের জগতে বিচরণ করে। এর বাইরে কোনো জগৎ নেই তাদের।
ফোনে যোগাযোগ করে সুপ্রভাত, শুভ রাত্রি এটুকুই। মানুষের সম্পর্ক দাঁড়িয়ে এখন এই ভাবেই হিসেব করে। হিসাব নিকাশ করা একদম মেপে জুকে সম্পর্ক চলে আজ কাল। যেখানে আবেগ অনুভূতি কিছুই নেই।
আমি যদিও আবেগকে গুরুত্ব দিই। জীবনে বাঁচতে হলে আবেগ অনুভূতি নিয়ে বাঁচতে হয়। এটা ভালো লাগে আমার। আবেগের আবেশকে গায় জড়িয়ে নিয়ে বাঁচতে। যদিও তোমার জীবনে কোনো আবেগের স্থান নেই। তুমি খুব হিসাব করে মেপে চলো। সেটাই স্বাভাবিক। হাজার কষ্ট, যন্ত্রনাময় জীবনে তোমার গানের সুর, তার অনুভূতি আনন্দ দেয় তোমায় সেটা আমি জানি। গান তোমার প্রাণ। যে প্রাণ নিয়ে তুমি বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখো প্রতি দিন, হাজার কষ্টের, যন্ত্রণার মধ্য। সেই কথা বলেছিলে একদিন আমায়।
অল্প আলাপে এই টুকুই বর্ম ভাঙার সাহস হয়েছিল আমার। তারপর আবার নিজেকে শামুকের খোলে গুটিয়ে নিয়েছিলে তুমি। আমিও আর চেষ্টা করিনি তোমার কথা জানার শুধু এটা জানি আমি তুমি ভালো নেই। ভালো না থেকেও অন্যকে, অন্যদের ভালো রাখতে প্রতিদিন লড়াই করো নিজের সাথে,অন্যদের সাথে কাজের জায়গায়। বার বার অপদস্থ হয়েও তুমি সেটা গায় মাখো না। তোমার কাছে জীবনের মানে এক ধরনের কঠিন লড়াই। আমি সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানাই সব সময়। যে লড়াই করতে না পেরে আমি এখন বাতিলের দলে।
কি বলে ডাকবো তোমায় আজ। ভয় হয় যদি রেগে যাও তুমি। সত্যিই বলতে কি তোমার নীরবতা পালন আমার মনে ভয় ধরায়। তাই আমি তোমায় কিছুই বলতে পারিনা। আচ্ছা তুমি ঊষা হয়েই থাকো আমার কাছে আজ এই রাতের লেখার নায়িকা হয়ে।
সকাল হলেই যে আমাদের ঘুম ভাঙায় প্রতিদিন। যে আমাদের বাঁচতে হবে বলে দৌড় করতে বলে জীবনের মাঠে।সেই ঊষা হয়েই থাকো তুমি আমার কলমের কালিতে। ঊষা সত্যিই বলতে কি খুব ভালো লাগছে আজ আমার।কেমন যেনো হালকা লাগছে অনেকটা।
এই ঊষা বেশ ভালো নাম কি বলো। দেখো চিঠি লেখার সময় এমন কাটাকুটি হয় তাতে কিছু মনে করলে কি চলে বলো। তুমি শুধু আমার দোষ দেখো। আমি যে তোমায় প্রতি মুহূর্তে অনুধাবন করি ভালো বাসি সেটা দেখো। সেটা বুঝতে পারো না তুমি কিছুতেই। তোমার নিজের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি না দিতে পারলেও। আমি তোমায় বলতে পারি না সবুর করো একটু, ঠিক মুক্তি পাবে তুমি। কলমটাও আর সরতে চায় না বুঝলে। সেও আজ তোমার মতই ক্লান্ত খুব টায়ার্ড হয়ে গেছে।
তবু তোমার মতই সে জানে তারও কোনো উপায় নেই। তাকে ঘষতে ঘষতে লিখতে হবে বাধ্য হয়ে জোর করে। জানি তুমি এসব পড়ে মন খারাপ করবে। হয়তো কষ্ট পাবে। বিশ্বাস করো আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। শুধু এটুকু বলতে চাই তোমার এই নিশ্চুপ নিরবতার লড়াই আমাকেও একদিন নিশ্চয়ই সাহস যোগাবে লড়াই করার।আমিও নিজের ভয় কাটিয়ে তোমার মতই লাফাতে লাফাতে একদিন মাঠে নামব, খেলবো বলে। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে চলে আসবো না আর কোনো দিন ভুল করে।
সেদিন হয়তো তুমি তোমার বর্ম ভাঙার অভিনয় করে। একটু অবাক বিস্ময়ে চুপ করে মনে মনে বলবে বাহ সুন্দর, আমি তো এতদিন এটাই চাইছিলাম যে তোমায় বোঝাতে। এই ভাবে বার বার পালিয়ে বাঁচা যায় না। তুমি ঘুরে দাঁড়াও। যারা বলছে তুমি বাতিল তাদের জবাব দাও । রাত অনেক হলো ক্লান্ত কলম, ক্লান্ত আমি তবু রাতের আধারে তোমার বর্ম ভাঙার আওয়াজ শুনতে পেয়ে আমিও অবাক হই কিছুটা ঊষা। ভাবি সত্যিই বোধ হয় আমার জীবনেও নতুন ভোর হলো, অবশেষে অনেক কষ্টে তোমার হাত ধরে। পাগলের ভোরের সূর্য উঠেছে আকাশে অসময়ে। নামহীন পাগলের এই লেখা পড়লে ভালো লাগবে আশা করি তোমার।
যে পাগল আজও স্বপ্ন দেখে দুনিয়ার বদল হবে এক দিন। যারা জীবনে হিসেব করে মেপে মেপে চলতে পারে নি তারাও একদিন নিশ্চয়ই ভালো জীবনের সন্ধান পাবে।কি বলো তুমি।তোমার গান নিশ্চয়ই একদিন তোমায় আরও প্রতিষ্ঠা দেবে। তুমি আরও বড়ো হবে। মানুষকে আরও গভীর ভাবে চিনতে পারবে। যাদের নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখো তারাও তোমায় আরো বেশি করে ভালোবাসবে। তোমার আশ পাশের লোকজন তারাও একদিন নিশ্চয়ই বদলে যাবে। পৃথিবীটা তোমার কাছে আরও সুন্দর হয়ে ধরা দেবে। তোমার বিমর্ষতা কেটে যাবে ধীরে ধীরে। রঙ হীন জীবনে রং বেরঙ এর প্রজাপতি উড়বে তোমার চারি দিকে।
তুমিও আর আলো আঁধারিতে একা একা চুপ করে গালে হাত দিয়ে গঙ্গার ধারে বসে ভাববে না কি করে বাঁচা যায় সেই কথা। প্রতি নিয়ত হিসেব করে মেপে পা ফেলতে হবে না আর তোমাকে। দেখো তুমি আমার কথা বিশ্বাস করো, একদিন নিশ্চয়ই মিলে যাবে। সেদিন আমি হয়তো তোমার কাছে থাকবো না। অনেক দূরে থাকবো কিন্তু সেদিন তুমি তোমার বর্ম ভাঙার অভিনয় করে নিশ্চয় আমাকে খুঁজবে সেদিন। মনে মনে বলবে পাগল হলেও লোকটা সত্যি কথাই বলেছে কিন্তু।
সেদিন আমিও আনন্দ পাবো অনেক দূর থেকে। ভালো লাগবে আমার তোমার মুখের হাসি দেখে। যে বিমর্ষতা নিয়ে তোমায় বাঁচতে হয় সেটা কেটে গিয়ে একদিন তোমার চোখে দেখবো চাঁদের আলোর রোশনাই এর ঝলকানি। যা দেখে মনটা ভাল হয়ে যাবে আমারও। মনে মনে আমি তখন দূর থেকে তোমায় দেখে বলবো তোমায় আমি না থাক যদি রেগে যাও তুমি। তাই ভালোবাসার কথা নাই বা শুনলে ঊষা।
বিশ্বাস করো যা বলা হয় নি কোনোদিন। বলতে সাহস হয় নি আমার। আজ তাই অনেক বাজে বকলাম আমি। রেগে যেও না তুমি। শুনলাম তুমি দুর থেকে গাইছ। এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়..
কোন আকাশের কথা বলছো আমি জানিনা। শুধু এটা জানি যে আমাদের মুক্তি তো আকাশের আলোয় আলোকিত হয়ে হবে। যে আলোর সন্ধান করছি আমি তুমি দুজনেই। নিশ্চয়ই একদিন আমরা সেই আলোর আকাশে ভেসে বেড়াতে পারবো।
ইতি, থাক নামটা আর লিখলাম না।
নামহীন পাগল।
একটি লড়াই করা মেয়ের গল্প - অভিজিৎ বসু।
দশ ডিসেম্বর, দু হাজার তেইশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন