সেই রাত সাড়ে দশটা বেজে গেছে আমরা দুজনে চব্বিশ ঘণ্টা অফিস থেকে বের হয়ে সেক্টর ফাইভের কলেজ মোড়ে বা ওয়েবেল মোড়ে কিংবা ঝিল পাড় এর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। সেই লাস্ট এস টুয়েলভ এর শেষ বাস এর জন্য অপেক্ষা করছি হাঁ করে আমরা। রাস্তার দু দিকে দুজন দাঁড়িয়ে আছি কখন লাস্ট বাস আসবে সেই অপেক্ষায়। দুরে কোনো গাড়ির আলো দেখলেই উদগ্রীব হয়ে পড়ছি আমরা। দ্রুত এগিয়ে চলেছে ঘড়ির কাঁটা। সেই পোদ্দার কোর্ট থেকে বেরিয়ে দৌড়ে টি বোর্ড গিয়ে দৌড়ে বাস ধরে হাওড়া স্টেশন যাওয়া। সেই চব্বিশ ঘণ্টা অফিস ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ আর চ্যানেল হবে বলে খবর পেয়ে সেই দক্ষিণ কলকাতার একটি জায়গায় একসাথে মিটিং করতে যাওয়া এক বিখ্যাত মহিলার সাথে। যদিও সেই চ্যানেল আর হয়নি কোনো দিনই।
সেই পোদ্দার কোর্টে কলকাতা টিভিতে কাজ করতে এসে। ব্রেকিং লিখতে বসে বানান নিয়ে বারবার দৌড়ে যাওয়া তাঁর কাছে বানান জানতে যাওয়া। আর তাঁর হাসিমুখে সঠিক বানান বলে দিয়ে হেসে ফেলা এতে কোনো লজ্জা হয়নি আমার কোনোদিন। সেই কলকাতা টিভিতে ইনপুট এর দায়িত্ব পেয়ে ওর সেই অ্যাসাইনমেন্টের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে বলা আমি বলছি তুমি এটাই লিখবে এখন। বলে ভিন্ন সুরে অচেনা সুরে কথা বলে নিজের রানডাউন এর চেয়ারে গিয়ে গম্ভীর মুখে বসে পড়া। আর কোনও কথা না বলা বহুক্ষণ। আবার বিকেল হলেই একসাথে চা খেতে যাওয়া। সত্যিই কত যে ঘটনায় জড়িত আমাদের এই মেঠো সম্পর্ক।
আবার হাওড়া স্টেশন নেমে দুজন সেই দৌড়ে লাস্ট ট্রেন ধরে একে অপরকে ফোন করে জেনে নেওয়া ট্রেন পেলাম কিনা আমরা। আর সেই অফ বিট চব্বিশ এর কপি লিখতে বসে ছবি না পেলে আমায় বলা এই যে অ্যাসাইনমেন্টের লোকজন সব, কমলাক্ষর ছবি কোথায় গেলো কি নামে ইনজেস্ট হলো সেই বিখ্যাত বৌদির ছবি বলো তুমি। এমন নানা ছবি, নানা স্মৃতি নানা ঘটনাই ভেসে আসছে আজ এই রাতের বেলায়।
আজ সেই বিখ্যাত সাংবাদিক এর বই প্রকাশ হলো। শুধু কপি লিখেই থেমে গেছে তাঁর কলম এমনটা হয়নি কিছুতেই। তাই হাসিমুখে কলম চালিয়ে ভাসতে ভাসতে তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস বাজারে আত্মপ্রকাশ করল। আজ সাদা জীবনের কালো কথায় সেই কখনো চেনা আবার কখনও অচেনা সেই মানুষটার কথা। সেই শব্দের জাদুকর, শব্দ নিয়ে আঁকিবুঁকি কাটতে ভালোবাসে যে ডেস্ক এর লোক। সেই দিব্যেন্দু ঘোষ এর কথা আমার সাদা জীবনের কালো কথায়।
সেই লম্বা, রোগা, মুখে কখনও দাড়ি কোনসময় ক্লিন সেভ। নানা চ্যানেলে কর্মরত হয়ে মিডিয়ার অভিজ্ঞতায় পুষ্ট তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের ঝুলি। যে কোনো কথার পাল্টা কড়া উত্তর দিতে আমার মতই তাঁর ঠোঁটকাটা বলেই তাঁর নাম আছে এই বাংলা বাজারে। তবু কেমন বিন্দাস হয়ে বুক ফুলিয়ে স্ট্রেট ব্যাটে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছয় মেরে আবার পরের বলে চার মারার জন্য প্রস্তুত হয় সে। ক্রিজে দাঁড়িয়ে ব্যাট ঠুকে বুক চিতিয়ে লড়াই করে সে ক্রিকেটের মাঠে হাসিমুখে।
হ্যাঁ, এটাই তো আমার চেনা সেই দিব্যেন্দু। যে দিব্যেন্দু আর আমি রাতে লাস্ট বাসে বাড়ী ফেরার জুটি। যে দিব্যেন্দু আর আমি এক ভাবেই কেমন শিরদাঁড়া সোজা করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা দুটো মানুষ, সেই দিব্যেন্দু আর আমি মাওবাদী কিসেনজির ভক্ত হয়ে সোজাকে সোজা আর বাঁকাকে বাঁকা বলা দুই মানুষ। সেই দিব্যেন্দু আর আমি প্রতিবাদে মুখর হয়ে ঘাড় শক্ত করে লড়াই করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা দুই মানুষ। কারুর কাছে নিজেকে বেচে দিয়ে, বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে শেখেনি যারা কোনদিনই। সেই ওর ডেস্ক থেকে বলা হুগলীর বিখ্যাত সাংবাদিক কি বলছে। বেচারামকে ধরে জিজ্ঞাসা করো কি হলো আজ মিটিং এ। আর আমি ফোন করে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করে নিজের ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়া। এমন সময়, এমন দিনগুলো বেশ ভালই ছিল আমাদের দুজনের।
আজ সেই বিখ্যাত সাংবাদিক দিব্যেন্দুর প্রথম বই প্রকাশ হলো। লেখালিখি করা, লেখাকে ভালোবাসা এক বন্ধুর প্রথম বই প্রকাশ হলো। আমার সেই ওর নানা ছবি দেখে বেশ ভালো লাগলো। মাঝে মাঝেই আমার দু একটা লেখা পড়ে ওর মন্তব্য বেশ ভালো হয়েছে দেখে আমার ভালো লাগে। রাত বিরেতে আড্ডা মারা। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা। কি হবে সেই নিয়ে চিন্তা করা দুজনের।
আর এর মাঝেই একটা কথা শুধু বলা চেনা হয়েই এমন কাছের হয়েই থেকে যাও তুমি। বদলে যেওনা তুমি। পাল্টে যেওনা তুমি একদম। আমাদের রাতের শেষ ট্রেন ধরা বন্ধুত্ব টিকে থাক এইভাবেই। গভীর রাতের আঁধারে জোনাকির আলো গায়ে মেখে। ভালো থেকো তুমি দিব্যেন্দু। আর এমন ভালো লেখা লিখে যাও তুমি। আর সুযোগ হলো আবার সেই লাস্ট ট্রেন ধরে বাড়ী ফেরার স্বপ্ন দেখব আমরা আবার। সেই লাস্ট ট্রেন এর দুই অমলিন বন্ধুত্বের যাত্রী হয়ে না হয় বাকি জীবন কাটিয়ে দেবো আমরা হাসিমুখে। এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবন নিয়ে।
লাস্ট ট্রেনের বন্ধুত্ব - অভিজিৎ বসু।
পঁচিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন