সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চেনা সেই রনজিৎ

রঞ্জিত কে কি আর মনে আছে কারুর এখন। সেই ২৪ চৌরঙ্গী রোডের ফাঁকা অফিসে একা বসে আছে সে গালে হাত দিয়ে । কখন দাদা আসবেন এই আশায়। তখন তো আর এখনকার মতো মোবাইল ফোনে খবর পৌঁছে যাওয়া নেই এদিক থেকে ওদিক দ্রুত ভাবে। যে নিমেষে খবর এসে যাবে দাদা আসছেন বলে। আবার সেই ভবানীপুরের জগুবাবুর অফিসেও দেখা যায় তাকে। যেখানেই দাদা সেখানেই রনজিৎ হাজির হাসি মুখেই। একদম ঠিক ছায়াসঙ্গী হয়ে। 


একদম সেই কবে কার পরিচয় ওর সাথে আমার সেটা আর ঠিক মনে নেই আমার আজ এতদিন পরে এতো বছর অতিক্রান্ত হবার পরে আমর সাংবাদিক জীবনে। তবু কেনো জানিনা আজ ওর একটা ছবি ফেসবুকে দেখে মনে পড়ে গেলো ওর কথা আমার হঠাৎ করেই। সেই বিকেল বেলায় সান্ধ্য কাগজ নিয়ে ২৪ চৌরঙ্গীর অফিসে হাজির হওয়া আমার মত সদ্য দাড়ি ওঠা নবীন সাংবাদিক হয়ে কলকাতা শহরে কাজ করতে গিয়ে। আর সেই সময় প্রতিদিন এর সান্ধ্য কাগজ পকেটে নিয়ে হাসিমুখে চলে আসা সেই বিখ্যাত সাংবাদিক হাফ শার্ট পড়ে কুণাল ঘোষের। যদিও তিনি সেই সময় এই আমলের মত এত বিখ্যাত হননি সেই সময়েও। 

আমিও তখন ছোটো পট পরিবর্তন কাগজ নিয়ে হাজির হয়েছি সেই জওহরলাল নেহেরু রোডের ২৪ চৌরঙ্গী রোডের অফিসে।‌ সাদা জুতো পড়ে সাদা জামা পড়ে হাজির হয়ে ঘন ঘন চুল আঁচড়ে নিজেকে ফিট রাখছেন সবার সামনে তরুণ তুর্কি কংগ্রেসের নেতা বর্তমানের রঙিন ও লাভলি নেতা সেই পুরোনো মদন মিত্র। যদিও সেই এতদিন আগে আজকের মত এতটা রঙিন হয়ে যাননি তিনি আর লাভলিও হননি কিছুতেই সেই সময়ে। এসব তো এই হাল আমলের ঘটনা। সামনে সপারিষদ বসে আছেন তারা দাদার সামনে। দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। আর সেখানে রনজিৎ হলো দাদার আসল লোক। একদম ডান হাত তাঁর। দাদার সবকিছুই যেনো রনজিতের নখদর্পণে। 

সেই মদন মিত্রকে ধরতে হবে রিপোর্টার হয়ে। খবর নিতে হবে, বাইট নিতে হবে আমাদের ভরসা সেই রনজিৎ। কখন দাদা আসবেন, কটায় পৌঁছবেন তিনি। সবটাই সেই রনজিৎ এর নাগালের মধ্যেই। সেই হাসপাতালে অন্দোলন করা, হাসপাতালে ভর্তি করতে হবেকোনোও রোগীকে। দাদাকে বলতে হবে ভরসা কিন্তু সেই রনজিৎ। বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু। সেই মেট্রোর চেকিং এসিস্ট্যান্ট ইউনিয়ন আর সেই পুরোনো ইউনিয়নের নেতা সেই রনজিৎ দে। ওর টাইটেল দে মনে হয়। সেই ট্যাক্সি নিয়ে আন্দোলন, আলোচনা করা আন্দোলন উঠে যাওয়া তার খবর দেওয়া আমাদের সেই সময় এর রিপোর্টারদের সেই চেনা রনজিৎ।

 সেই মনীষা অন্তর্ধান রহস্যের বন্ধ ফাইলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা বিখ্যাত চিঠি। সেই চিঠির নিচে লেখা ইতি, ব ব। যিনি আজ বামপন্থীদের এলাকায় নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন এর কথা বলেছেন নেতাজীর জন্মদিনে ফুলের মালা দিতে গিয়ে। কত গোপন লেখা চিঠি দিয়ে খবর হলো মনীষা অন্তর্ধান রহস্য উদঘাটন এর নানা কাগজে। সেই বিখ্যাত বিকেলের জনপ্রিয় প্রতিদিন কাগজে, সেই সান্ধ্য পট পরিবর্তনের কাগজে। আর সেই কাগজে নিজের খবর বের হলেই রনজিৎ এর হাত দিয়েই মদনদার কাছে পৌঁছে যাওয়া। হ্যাঁ, এটাই তো ছিল রিপোর্টারদের সাথে মদন মিত্রের সেতু বন্ধনের কাঠবিড়ালি। কিন্তু কাঠবেড়ালি হলেও ক্ষমতায় অনেক বড় ব্যাপার।

আজ রনজিৎ কোথায় আছে আমি জানিনা। সেই মাঝে মাঝেই ওর কবিতা দেখি পোস্ট করেছে সে। হাসিমুখেই পুরস্কার গ্রহণ করছে রনজিৎ মঞ্চে উঠে। বহুদিন আগে কথা হয়েছিল আমার সাথে ওর। বললো আমি আর রাজনীতিতে নেই গো। অভিজিৎ তুমি কেমন আছো। তোমার লেখা আমি দেখি। রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে, দাদাকে ছেড়ে সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করা। 

বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু এটা যা সে করে নিলো এই এক জীবনেই। জীবনের এই দীর্ঘ পথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই ওর ঘুরে যাওয়া। চেনা জগৎ ছেড়ে অচেনা জগতে। চেনা মানুষকে ছেড়ে আচেনা সাহিত্যের জগতে। আর তাই এই রাতে মনে হল আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় রনজিৎ এর কথা লিখে যাই। আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে রনজিৎ এর কথা লিখে যাই।

 কতদিন ওকে ফোন করা হয়নি। দেখা হয়নি দুজনের। ওর সাথে আড্ডা দেওয়া হয়নি বহুদিন। ও বলেনি যে আমার লেখা গুলো দেখে একটু লাইক দিও অভিজিৎ তুমি। তুমি এখন কি করছ। এমন কত জন যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুরে বেড়ায় আশপাশে তার ঠিক নেই। সত্যিই জীবনের এই মেঠো রাস্তায় রাজনীতির মাঠ ছেড়ে কেমন হাসি মুখেই দিব্বি ঠিক ভালই আছে রনজিৎ। ওর সেই প্রেম, ভালোবাসা, সংসারকে নিয়ে ভালোবাসার কবিতার লেখার জগতে একাই ঘুরে বেড়াচ্ছে রনজিৎ। ভাল থেকো তুমি। রাজনীতির মাঠ ছেড়ে সাহিত্যের জগতে।

চেনা সেই রনজিৎ - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...