মকর মানেই নতুন জামা
কাক ভোরে স্নান,
রাত্রি জেগে মিঠে সুরে
টুসুমণির গান।
মকর মানেই পিঠে - পুলির
গন্ধে ম - ম হাওয়া,
ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায়
দল বেঁধে যাওয়া।
মকর মানেই মোরগ লড়াই
পাহুড় জেতার সুখ,
সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের
স্বাদে ভরা মুখ।
মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার
পুজো করম তলে,
সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী
দিমির দিমির বোলে।
আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।
এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পালিত হয়। মকর সংক্রান্তি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা সূর্য দেবতাকে উৎসর্গ করা হয় এবং শীতের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। ফসল কাটার উৎসব নামেও পরিচিত, মকর সংক্রান্তি সূর্যের মকর রাশিতে (মকর রাশি বা রাশিচক্র) স্থানান্তরকে চিহ্নিত করে। এটি দীর্ঘ দিনের শুরুর সূচনা করে এবং সূর্য উত্তর দিকে চলে যায়, এই কারণেই এই সময়টিকে উত্তরায়ণ বলা হয় এবং এটি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। মকর সংক্রান্তি চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসারে পালিত হয়, তাই এটি প্রতি বছর প্রায় একই দিনে পড়ে।
ঐতিহাসিকভাবে, মকর সংক্রান্তির প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার ঋতুর সাথে যুক্ত, যা মানুষ এবং প্রাকৃতিক বিশ্বের মধ্যে গভীর সংযোগ প্রতিফলিত করে। উৎসবটি পৌরাণিক কাহিনীগুলির সাথেও যুক্ত, যেমন রাক্ষস শঙ্করাসুরের উপর ভগবান বিষ্ণুর বিজয়।
মকর সংক্রান্তির তাৎপর্য এর জ্যোতির্বিদ্যা এবং পৌরাণিক দিকগুলির বাইরেও বিস্তৃত। এটি অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয়, মন্দের ওপর ভালো এবং হতাশার ওপর আশার প্রতীক। উৎসবটি নবায়ন, কৃতজ্ঞতা এবং জীবনের অনুগ্রহ উদযাপনের একটি সময় বলে বিবেচিত হয়।
উৎসবের ঐতিহ্যগুলি ভারত জুড়ে পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণ অনুশীলনগুলির মধ্যে রয়েছে,
ঘুড়ি ওড়ানো: একটি জনপ্রিয় বিনোদন, বিশেষ করে গুজরাট এবং রাজস্থানে, নেতিবাচকতার মুক্তি এবং ইতিবাচকতার স্বাগত প্রতীক।
পবিত্র ডোবা: অনেকে গঙ্গার মতো পবিত্র নদীতে ডুব দেয়, বিশ্বাস করা হয় আত্মাকে শুদ্ধ করে।
ভোজ এবং ভাগ করে নেওয়া: পরিবারগুলি তিলগুল (তিলের বীজ এবং গুড়ের মিষ্টি), খিচড়ি এবং পোঙ্গলের মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার উপভোগ করতে জড়ো হয়।
বনফায়ার: নেতিবাচকতার জ্বলন এবং উষ্ণতার স্বাগত জানানোর প্রতীক হিসাবে বনফায়ারগুলি জ্বালানো হয়।
দাতব্য ও দান: লোকেরা অভাবীদের দান করে এবং সূর্য দেবতা সূর্যের কাছে প্রার্থনা করে।
মকর সংক্রান্তি হল জীবন, ঐক্য এবং প্রকৃতির আশীর্বাদের একটি প্রাণবন্ত উদযাপন। এটি সম্প্রদায়ের বোধ জাগিয়ে তোলে এবং কৃতজ্ঞতা, সমবেদনা এবং আনন্দের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করে।
আর তার মাঝেই ঘরে ঘরে পিঠে পুলির আয়োজন। নারকেল, নতুন গুড়, চালের গুঁড়ির ম ম করা মিষ্টি গন্ধ। পায়েস, দুধপুলি, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠে, সিদ্ধ পিঠের নরম স্বাদ। সরু চাকলি আর রস বড়ার মিষ্টি স্বাদ মুখে লেগে থাকে। সব মিলিয়ে মকর যেনো সত্যিই অসাধারণ একটা পরবের দিন। যে দিন সবাই মিলে পথে নেমে পড়া। নদীর জলে স্নান সেরে দুঃখ কষ্ট ভুলে নতুন করে বাঁচার শক্তি সঞ্চয় করা। আর সারা বছর ধরে সেই শক্তিকে বুকের মাঝে আগলে রেখে এগিয়ে চলা। এই নতুন বছরের শুরুতেই মকরের সংক্রান্তির দিনে শুভ কামনা করি সবার। সকলকে টুসুমনির মিষ্টি হাসি মাখা আর পিঠে - পুলির ম - ম গন্ধ ভরা.....মকর পরবের শুভেচ্ছা জানাই।
শুভ মকর সংক্রান্তি।
শুভ মকর সংক্রান্তি -অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজস্ব, সৌজন্য ফেসবুক ও গুগল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন