সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চাটুজ্জে বনাম যাদব

সাদা জীবনের কালো কথায় বহু ভালো কথা, বহু জীবনের কথা, লিখে ফেললাম আমি। যে সব কথা কারুর কাছে বড়ই সুখপাঠ্য হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন আমায়। আবার কারুর কাছে সুখের আবেশে মোড়ানো কোনো ভালো অভিজ্ঞতা নয় এই লেখা। যা হয়ত অনেকেই আমায় বলছেন কখনও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপের মেসেজ করে। কিংবা সরাসরি আমায় ফোন করে।
আসলে যাই হোক ভালো অভিজ্ঞতা বা খারাপ অভিজ্ঞতা এই অভিজ্ঞতা তো একদম আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। যার জন্যে শুধু মাত্র আমিই সেই সব পুরোনো ঘটনার সাক্ষী। আর তাই তো রাতদুপুরে ঘুম ভেঙে উঠে পড়ে সেই সাক্ষী লিখতে বসে যায় আপনমনে বেখেয়ালে কিছুটা সেই জ্বর হওয়া রোগীর মত। শুধু মনে হয় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে আমার  জীবনের সময়। তাই হয়তো দ্রুত গতিতে লিখে ফেলতে চাই কিছু মনের অব্যক্ত কথা। যে কথা অকথিত আছে আজও অনেকের কাছেই। 


তেমন সব জীবনের পাওয়া আর না পাওয়ার কথা, মান আর অভিমানের অভিজ্ঞতার কথা। যা সঞ্চয় হয়ে আছে এই আমার ক্ষুদ্র সাংবাদিক জীবনের কুলুঙ্গিতে একদম চুপটি করে। ঘাপটি মেরে সে বসে আছে চোখ বুজে। যেমন করে সাপুড়ে তার ঝাঁপি থেকে সাপ বের করে তেমন ঝাঁপি খুলে বের করা। যাদেরকে নথিবদ্ধ করে রাখতেই আমার এই আঁকাবাঁকা লেখা।আঁকিবুঁকি অক্ষরে কিছু লেখা লেখা খেলা।

 আজ ঠিক তেমনি একুশের শহীদ দিবসের মঞ্চের ভীড়ে একদম একা একা অনেক দূরে দাঁড়িয়ে এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিকের মনকথা বা মনোবেদনার কথা। যে কথায় মান, অভিমান, অপমান, স্বাভিমান সব কিছুই হয়তো তাকে পীড়া দেয় জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে দেবার পর। তবু তো সেই যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েও, বিদ্ধ হয়েও বার বার ছুটে যাওয়া হারিয়ে যাওয়া ওই ভিড়ের মাঝে। জনতার স্রোতে মিশে যাওয়া অভ্যাস বসত। 
দুর থেকে সব কিছুকে তুচ্ছ করে দাঁড়িয়ে থাকা আর মনে মনে ভাবা জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় হারিয়ে ফেলে যে সময় শুধু এই রাজনৈতিক দলের সন্ন্যাস নিলেন তিনি। মনে মনে জীবনের প্রথম প্রেমের মতো জড়িয়ে ধরলেন সেই রাজনীতির কঠিন কঠোর কন্টকময় জীবনকে সব কিছু ভুলে। সেই সব কিছুর সমান মর্যাদা কি পেলেন তিনি এতদিনে। থ্রি টায়ার মঞ্চের একটা তলায় বসার ডাক পেলেও চিঠি পেলেও তো তিনি সেই ভীড় ঠেলে মিছিল করেই আজও সমান ভাবেই জনগণের সাথেই বৃষ্টির জলে ভিজে ডুব দিলেন সেই স্মৃতির রাস্তায় মিছিলের ভীড়ে। যে রাস্তা একদিন তাকে পথ দেখিয়েছিল। সেই পথের নানা ঘটনা আজ বড়ই মনে পড়ে যায় তার এই দুর মঞ্চের দিকে তাকিয়ে কেনো যে তখন এত রিস্ক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নানা ঘটনায় পুলিশের তাড়া খেয়েও আন্দোলন করতে পিছপা হননি তিনি কে জানে। 
ধর্মের মত তাহলে রাজনীতিও কি আফিম মেশানো থাকে কে জানে সেটা তার জানা নেই। একবার নেশা ধরলে আর সেই নেশা ছাড়ার উপায় নেই কোনো। আসলে এই নেশার টানেই যে জীবনের যৌবন কাটিয়ে আজ বার্ধক্যের দোরগোড়ায়। হারিয়ে যাওয়া জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়ে এই ভাবেই যে নেশার ঘোরে ভালো করে প্রেম, ভালোবাসা, সংসার কিছুই করা হলো না তার। এই নিয়ে যে বউ এর কাছে তাকে মাঝে মাঝেই কথা শুনতে হয় টিপ্পনী শুনতে হয় সেটা সে ভালই বুঝতে পারে। কিন্তু উপায় কি রাজনীতির ময়দানের নেশা হলো আসলে ঠিক ওই ঘোড় দৌড়ের রেসের মাঠের নেশার মতই। যাকে একবার ধরে ছাড়া মুসকিল হয়। সেই নেশার টানেই তো সে কাটিয়ে দিলো এত গুলো বছর এই ময়দানের একজন সাধারণ খেলোয়ার হয়ে। 
না, এক এক সময় তার আফসোস হলেও আবার হাসি মুখে সেই অভিব্যক্তিকে বিদায় জানিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজের জগতে। যে কাজে মানুষের জীবনের উপকার হয় সেই কাজেই নেমে পড়ে সে আবার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এই তো সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায় তার সিঙ্গুরের জমিতে দলের ঝান্ডা আটকাতে গিয়ে পুলিশ এর তাড়া খাওয়া। সেই হুগলীর বিখ্যাত পুলিশ অফিসার অসিত পাল এর কাছে। যিনি সাংবাদিকদের কাছে অ্যাসিড পাল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। পুলিশের তাড়া খেয়ে জলে ঝাঁপ দেওয়া। গায়ের লাল জামা খুলে খালি গায়ে লুকিয়ে পুলিশকে বোকা বানিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পালিয়ে যাওয়া। সত্যিই তো নেশা ছিল বলেই বোধ এসব সম্ভব হয়েছে তার জীবনে। না হলে কি আর এই অসাধ্য কাজ করতে পারত সে। 
সত্যিই তো এই সব ভাবলে বুকটা কেমন গর্বে ভরে যায়। কে আর শুনবে এই সব গল্প কথা। বলবে দুর এসব পাগলে বলে। আজকাল পুরোনোদের কোনো দাম নেই তারা সব ব্যাকডেটেড। আর সেই যে ঘটনা মৃতদেহ আটকে রেখে দলের নেতার হাতে তুলে দেওয়ার গল্প। সেদিনও তো দল তার কাছেই আত্ম সমর্পণ করেছিল সেদিন। উল্টে যাওয়া বাসের যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ নিয়ে চলে যাবে জোর করে। 
কিন্তু সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন দিলীপ যে করে হোক বডি আটকাতে হবে। মুকুল যাচ্ছে। বাস দিদির কথা শুনেই আবার চেপে বসলো নেশা তার। ডিএমকে জোর গলায় আঙুল তুলে বলে দিলেন ডিএম সাহেব আপনি যাদব আমিও যাদব এক জঙ্গলে যেমন দুটো বাঘ থাকতে পারে না তেমন এক জেলায় দুই যাদব থাকতে পারে না। দাপুটে সেই যাদব ডিএম পিছপা হলেন এই আওয়াজ শুনে। মৃতদেহ আটকে রেখে সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর মুকুল রায় এর কাছে নিজের স্ট্রাইকার এর খেলা খেলে পয়েন্ট তুলেছিলেন হুগলী জেলার এই যাদব নামের নেতা। 
কিন্তু আজ এত দিন পরে সেই পয়েন্টের কোনো দাম তো দল দিলো না তাকে। বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী হবার কোনো সুযোগ পেলো না সে। এমনকি সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন নিয়ে যে সব বই লেখা হলো যে নিজের প্রাণ বিপন্ন করে প্রথম পতাকা উত্তোলন করে দিলো নিজের ক্ষমতা আর সাহসের জোরে। যে টাটার কর্মীদের ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করলো তার নামের উল্লেখ করা হলো না কোনো সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের বইতে। ভাবলে এই বুড়ো বয়সে একটু বুকের বাঁ দিকটা একটু চিনচিন করে এই আর কি। এই ফাঁকা সভার রাস্তায় একা একা দাঁড়িয়ে সে কথাই ভাবছিল সে আনমনে।
একা একদম একা হলেও। কত যে মুখ এসে দাদা ভালো আছেন বলে প্রনাম জানালো তাকে। এটাই বা কম পাওয়া কি। সেই যে সময় জেলার এক এক করে দলের পার্টি অফিস গুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতির একটি দল। যে সময় দলের সামনের সারির সব নেতারা ঘরে ঢুকে পড়েছে। ভয়ে কেউ ফোন বন্ধ করে রেখে দিয়ে দায় এড়িয়ে গেছে। সেই সময়ে আবার সেই চেনা ফোন। দিলীপ একটু দেখ তুই। বাস আর কি ঝাঁপিয়ে পড়ে একে একে ফের সেই দলের কার্যালয়ের তালা খুলে নিজের দলের ঝান্ডা উড়িয়ে নিজের জাত ফের বুঝিয়ে দিতে কসুর করেন নি এই যাদব নামের নেতা সেদিনও।
 কিন্তু কালীঘাটের গঙ্গাপাড়ের এই দল বোধ হয় একটু ছুঁতমার্গ করে বাছ বিচার করেই চলে। না হলে কি আর এত পরীক্ষার পর সেই পুড়শুড়াতেই তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠায় বিধানসভার টিকিট দিয়ে। যে আসনে নিশ্চিত হার জেনেও। এটাও বোধ হয় নতুন করে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারো কি না পরখ করে দেখার জন্যই করা হলো। তাই নিশ্চিত আসন থেকে অনেক দূরের আসনে টিকিট দিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো নিজের দলের কিছু নেতা সব জেনেই। কিন্তু সেই হেরে যাওয়া পরীক্ষায় তাকে হারতেই হলো অবশেষে। যেটা আগে থাকতেই পিকের টীম এই সাজানো নাটক করে রেখেছিল বলে কান পাতলে শোনা যায় এমন কথা। 
তাই এসব ভেবে আর কোনো অনুশোচনা নয়। শুধু সারাজীবন নেশার ঘোরে দৌড়ে যাওয়া একটা মানুষ বাকি জীবনটা এই ভাবেই দৌড়ে যেতে চায়। এই ফাঁকা একুশের মঞ্চের দিকে তাকিয়ে এই সব কথা ভেবে বুকটা মুচড়ে ওঠে তার ফের। আবার শক্ত হয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে, রাজনীতি তো শুধু উপরে উঠে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা নয়। নিজের জীবনের সবচেয়ে ভালো সুবিধা ভোগ করা নয়।শুধুই অর্থ রোজগার নয়। রাজনীতির এই পাঠশালায় শুধুই পদ পাওয়া, আর ক্ষমতা পাওয়া নয়। সাংসদ,বিধায়ক হয়ে ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকে বসে থাকা নয়। এই ময়দানের নেশা আসলে  হলো সাধারণ মানুষের কথা ভেবে  কিছু কাজ করে যাওয়া। যা কাজের সুযোগ এসেছে তার সদ্ব্যবহার করা সঠিক ভাবে। 
আর সেই কাজ দলের প্রতিষ্ঠা এনে দেয় নিজের প্রতিষ্ঠা নাই বা হলো কিছু। দলের বিপদের দিনে তো সে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছিল একদিন। এটা ভেবেই মনে মনে আত্মপ্রসাদ লাভ করে ষাটোর্ধ্ব এই নেতা। ধীর পায়ে একাই একুশের মঞ্চ ছেড়ে ঘরের পথে ফিরে আসে সে। এই বল ভরসা নিয়ে আবার যদি কোনোদিন ডাক পড়ে খেলতে নামার। সেদিন আবার সে এই বুড়ো বয়সে এসেও সে বুঝিয়ে দেবে নতুন প্রজন্মের ঝাঁ চকচকে খেলোয়াড়দের এর থেকে সেও কম ভালো প্লেয়ার নয় সে।
 রাজনীতির ময়দানের ঘাস মাটি তার সব চেনা। শুধু সে চাটুজ্জে, বাড়ুজ্জে, আর মুখুজ্জেদের ভীড়ে সে শুধু একটু যাদব হয়ে গেছে এই আর কি। এটাই তার বড় আফশোষ। না, হলে সেও হয়তো অন্য অনেক মাঠে খেলতে না পারা খেলোয়াড় এর মতই অতি সাধারণ মানের প্লেয়ার হলেও ভালো পুরস্কার পেতো দলের কাছে। এই ভাবে বউ এর কাছে কথা শুনতে হতো না।
ক্ষতি কি এই যেটুকু পাওয়া গেছে সেটা নিয়েই না হয় বাকি জীবন এইভাবে দৌড়ে কেটে যাবে তার। এভাবেই নিজের চেনা শহরে,চেনা মানুষদের কাছে কাটিয়ে দেবে সে বাকি জীবনটা। ধীর পায়ে একা একা ঘরে ফিরে আসে সে বৃষ্টিতে ভিজে। চোখের জল আর বৃষ্টির জলে ভেসে যায় তার দীর্ঘ রাজনীতির জীবনের পথ, ঘাট, প্রান্তর, গ্রামের মেঠো রাস্তা, চেনা শহরের গলি পথ সব কিছু। কলকাতার রাজপথ ছেড়ে সে আবার নিজের চেনা শহরে ফিরে আসে সে। একবুক আশা নিয়ে, আবার যদি কোনোদিন ডাক পড়ে খেলতে হবে তাহলে এই বুড়ো বয়সেও আবার ভেলকি দেখাবে সে। 

চাটুজ্জে বনাম যাদব - অভিজিৎ বসু।
তেইশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...