সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দুই বৃদ্ধার গল্প

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ দুই বৃদ্ধার গল্প। হ্যাঁ, একশো সতেরো বছরের সেই মারিয়া ব্রানিয়াস মরেরা। যিনি মাত্র কদিন আগেও সারা পৃথিবীর সব থেকে বেশি বয়সের মানুষ হিসেবে বেঁচে ছিলেন ।এই ধুলো জমা বহু পুরোনো এই পৃথিবীতে। যার জন্ম হয়েছিলো উনিশশো সাত সালের মার্চ মাসের চার তারিখ ইউএসএর সানফ্রান্সিসকো শহরে। পরে তাঁর পরিবার কাজের সূত্রে সানফ্রান্সিসকো থেকে চলে আসেন মেক্সিকো শহরে। এদিক ওদিক অনেক ঘুরে টেক্সাস, নিউ অরলিনস ঘুরে তাঁর পরিবার আবার দু হাজার পনেরো সালে স্পেনে ফিরে যান।

 যাঁর জীবদ্দশায় তিনি দুটো বিশ্ব যুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য হয় তাঁর। দুটো মহামারীও দেখেন তিনি। সেই সময় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় তার বাবা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর মারিয়া ও তার মা উনিশশো একত্রিশ সালে বার্সেলোনা শহরে চলে আসেন। এরপর স্পেন এর যুদ্ধের সময় তিনি এক চিকিৎসককে বিবাহ করেন। তারা দুজন একসাথে প্রায় চল্লিশ বছর একসাথে থাকেন, ঘর সংসার করেন দুজনে। কিন্তু বাহাত্তর বছর বয়সে মারিয়ার স্বামী মারা যান। তিনটি সন্তান ছিল তাদের। অনেক নাতি পুঁতি নিয়ে তাঁর সুখের সংসারে তিনি ছিলেন একাই।

 তাঁর এই সুস্থ দেহের জন্য অনেকেই অবাক হন। তিনি বলেন সব সময় পজিটিভ ভাবনার কথা ভাবতে হবে জীবনে, তাহলে অনেক ভালো থাকা যাবে। তাঁর বার্ধক্য জনিত কোনো সমস্যা ছাড়া আর কোনো রোগ ব্যাধি ছিল না শরীরে। শুধু তাঁর হাঁটা চলার একটু সমস্যা ছিল আর কানে একটু কম শুনতে পেতেন তিনি। এটাই ছিল মারিয়ার একমাত্র সমস্যা। যা এই বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সঙ্গী।
কিন্তু মাত্র কদিন আগেই তিনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নার্সিং হোমে মারা যান মারিয়া। শান্তির কোলে চির নিদ্রায় আশ্রয় নেন মারিয়া ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই। তার পরিবার এই খবর টুইট করে জানিয়ে দেয়। কোনো যন্ত্রণা ছাড়া নিশ্চিন্তে নিরাপদে পৃথিবীর সব মায়া মমতা কাটিয়ে সবাইকে হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে মারিয়া চলে যান এক অজানা ঘুমের দেশে। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে যিনি একটি নার্সিং হোমের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছিলেন তিনি। স্পেন এর ওলট শহরের এই নার্সিং হোম ছিল তাঁর শেষ জীবনের ঠিকানা। 

কিছু দিন আগেই জানা যায় তিনি বেশ দুর্বল বোধ করছেন। তাঁর কথায়, সময় আগত প্রায়। তোমরা কেউ কেঁদ না আমার জন্য। আমি চোখের জল একদম পছন্দ করি না। কেউ যেন চোখের জল না ফেলে। আমার জন্য কেউ যেনো কষ্ট না পায়। আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে সুখেই থাকবো। এটাই ছিল মারিয়ার শেষ কথা। যা তাঁর পরিবার তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী পোস্ট করেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড মারিয়া ব্রেয়ানসকে দু হাজার তেইশ সালে সারা বিশ্বের সব থেকে বেশি বয়সের মানুষের তকমা দেয়। 
যে মারিয়া উনিশশো আঠার সালের যে ফ্লু হয়েছিল সেই সময় তিনি সেটাও প্রত্যক্ষ করেন। এমনকি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দর্শন করেন তিনি তাঁর জীবিত কালের সময়ে। স্পেনের গৃহযুদ্ধ দেখেন তিনি। এমনকি দু হাজার কুড়ি সালের সারা বিশ্ব জুড়ে যে কোভিড হয়েছিল সেটাও তিনি দেখেন। এই সময় তাঁর একশো তম জন্মদিন পালন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে হাজির হয় তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা। 

মারিয়ার বড়ো মেয়ে রোসা মোরেট এর কথায় তার মা কোনোদিন হাসপাতালে যান নি। তাঁর কোনোদিন পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভেঙে যায়নি। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বেঁচে আছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দু হাজার তেইশ সালে এই কথা জানান রোসা মোরেট। মারিয়ার কথায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা এটা তো খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার। জীবনের এই বেঁচে থাকা সব থেকে বেশি বয়সের বৃদ্ধ মারিয়াকে বিদায় জানাই আমরাও। 
যিনি এতদিন ধরে পৃথিবীর নানা রং, রস, বর্ণ প্রকৃতির রূপ দেখে জীবন কাটিয়ে গেছেন আমাদের সবার সাথে। যিনি মনে করেন এই পৃথিবীতে বহুদিন বেঁচে থাকা কষ্টের নয়, দুঃখের নয় বরং আনন্দের। যিনি ভাবেন জীবনে পজিটিভ চিন্তা ভাবনা নিয়েই তো জীবন কাটিয়ে যেতে হয়। যে জীবনে অনেক কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণা থাকেই তার মধ্যে বেঁচে থাকে ইতিবাচক কিছু ভাবনা। 
এত গেলো পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া মারিয়ার জীবনের গল্প। কিন্তু একশো সতেরোর সেই বৃদ্ধা মারিয়া চলে যাবার পর যাকে নিয়ে সারা পৃথিবীতে হৈ চৈ শুরু হয়েছে তিনি হলেন জাপানের একশো ষোলো বছরের বৃদ্ধা মহিলা তোমিকো ইতুকা। মারিয়া মারা যাবার পর যিনি বিশ্বের সব থেকে বেশি বয়সের মানুষ বলে খাতায় কলমে যাকে ধরা হয় এখন।
 সেই ইতুকা উনিশশো আট সালের তেইশ মে তাঁর জন্ম হয় জাপানের ওসাকা সিটিতে। বর্তমানে তাঁর বয়স একশো ষোলো বছর পার করে প্রায় একশো দিন। ছোটবেলায় তিন ভাই বোনের মধ্য তিনি ভলিবল খেলতে খুব ভালোবাসতেন। পড়াশোনা করেছেন মেয়েদের স্কুলে। কুড়ি বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। তার দুটি পুত্র ও দুটি কন্যা হয়। প্রথম সন্তানের জন্ম হয় উনিশশো ঊনত্রিশ সালে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তিনি তার স্বামীর টেক্সটাইল কারখানার দায়িত্ব নেন যা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত ছিল , যদিও তিনি জাপানে ছিলেন।1979 সালে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর, তিনি 1989 সাল পর্যন্ত একা থাকতেন। এই দশ বছরে, তিনি প্রায়শই মাউন্ট নিজো আরোহণ করেছিলেন , দুইবার মাউন্ট ওনটেকের চূড়ায় উঠেছিলেন (হাইকিং বুটের পরিবর্তে স্নিকার পরেছিলেন), এবং ওসাকা 33 কানন পিলগ্রিমজেও অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা ছিল 33টিরও বেশি মন্দিরের তীর্থযাত্রা।100 বছর বয়সে, তিনি সফলভাবে আশিয়া মাজারের প্রতিটি ধাপে আরোহণ করেছিলেন কোনো সাহায্য ছাড়াই। এটাই ছিল একশো পার করা এক বৃদ্ধার জীবনের গল্প।
 2019 সালে, তিনি 110 বছর বয়সে Ashia, Hyōgo- তে একটি নার্সিং হোমে চলে যান৷ তিনি তখনও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম ছিলেন (সম্প্রতি 116 বছর বয়সে), কিন্তু প্রধানত একটি হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন তিনি৷ যখন গিনেস আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি হিসাবে মনোনীত করেছিলেন, ইটুকা কেবল "ধন্যবাদ" মন্তব্য করেছিলেন, একটি বাক্যাংশ যা সে সাধারণত তার তত্ত্বাবধায়কদের বলেন। ধন্যবাদ জানান ঈশ্বরকেও । 
 প্রতিদিন সকালে, ইটুকার একটি ক্যালপিস থাকে যা একটি সুস্বাদু পানীয়। আর কলা তাঁর খুব প্রিয় খাবার। প্রতিদিন খাবার তালিকায় কলা রাখেন তিনি। মাত্র তিন মাস আগে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়। কেক কেটে, ফুলের তোড়া দিয়ে, কার্ড দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান শহরের মেয়র। যিনি নিজেও নার্সিং হোম এর ঘরে বসে মনে মনে হয়তো ভাবেন একজন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে তিনি এখন সেই বিশ্বের সব থেকে বেশি বয়স্ক মানুষের শিরোপা পেলেন। যার জন্য মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়ে দেন তিনি। হয়তো এর জন্য ভগবানকেই মনে মনে ধন্যবাদ দেন তিনি। 

যদিও এর আগে একশো বাইশ বছরের জিনে লুইজ কালমেন্ট একজন ফ্রেঞ্চ মহিলা তিনি উনিশশো সাতানব্বই সালে একশো বাইশ বছর বয়সে মারা যান।
 
এই হলো দুই বৃদ্ধার অজানা নানা গল্প। মারিয়া ব্রানিয়া আর তোমিকো ইতুকা। একশো সতেরো যখন নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন। তখন একশো ষোলো তখন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে, ঈশ্বরকে মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যে সুখের। শুধুই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা। 

দুই বৃদ্ধার গল্প - অভিজিৎ বসু।
আটাশ আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...