সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আকাশবাণীর মনোজ কর

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধু আকাশবাণীর সেই মনোজদার কথা। হ্যাঁ সেই মনোজ কর এর কথা। কলকাতা অল ইন্ডিয়া রেডিওর বিজ্ঞান বিভাগের মনোজ কর। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের সাংবাদিক জীবনে নানা মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার  নানা রঙের, নানা জীবনের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি আমি। যাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আমার এই জীবনে জড়িয়ে আছেন তাদের আর ভোলা যায়না কিছুতেই। 
সেই পুরোনো স্মৃতি, সম্পর্ক, যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেলেও মনে হয় এমন একজন মানুষ যে শুধু সারা জীবন দৌড়ে কাটিয়ে দিলো একটা কাজকে গভীর ভাবে ভালোবেসে। সরকারি গণ মাধ্যমের এমন একজন অস্থায়ী কর্মী হয়েও কেমন করে যে এই ভাবে অস্থায়ী একটা জীবন কাটিয়ে দিলো কে জানে। কি করে যে কোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু বিজ্ঞানের ইতিহাস তার নানা জানা অজানার মাঝে নিজের গোটা জীবনটা ডুবিয়ে দিলো কে জানে।
 কিছু কিছু মানুষ বোধহয় এমনই হয়। যারা শুধু কাজ ভালোবাসে। মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করে হাসি মুখে কাজ করে যায়। সব কিছুর সামাল দেয়। দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত না হলেও সব কিছুর মাঝে তাঁকেই লাগে না হলে যে অচল হয়ে যায় গোটা দপ্তরের কাজ। যাকে নিয়ে এত কথা, এত গল্প সেই মনোজদার সাথে আমার আলাপ পরিচয় হয় খুব সম্ভবতঃ ঊনিশ শো বিরানব্বই সালে। আজ থেকে প্রায় বত্রিশ বছর আগে। তখন সবে আমি সাংবাদিক হবো বলে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।আনন্দবাজারের বিখ্যাত সাংবাদিক স্যার কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী আমায় বলেছেন একবার আকাশবাণীতে যেতে। বিজ্ঞান বিভাগের স্বাতী চট্টোপাধ্যায় এর সাথে দেখা করতে। 
তার আগে যদিও একবার আমি যুববানীতে গেছিলাম সেই বিখ্যাত মানস মিশ্রর সাথে দেখা করেছি। একটা অনুষ্ঠান করেছি গ্রাম থেকে বলছি। ভজন আর আমি একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো আর গ্রামের লোকের কথা শোনা। সেই বিখ্যাত দিয়ারার গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে বলছি যেদিন প্রচার হলো রেডিওতে কি যে আনন্দ হয়েছিল সেটা আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। প্রথম অভিজিৎ বসুর নাম শুনলাম রেডিওতে। পেলাম আড়াইশো টাকার চেক। কিন্তু সেই গ্রাম ছেড়ে সোজা বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ। দেখা করলাম স্বাতী চট্টোপাধ্যায় এর সাথে। 
খুব লম্বা, রোগা, গম্ভীর নয় বেশ হাসি মুখে বললেন ও কাজী দেখা করতে বলেছে তোকে। ঠিক আছে কি কাজ করেছি জানতে চাইলেন আমার কাছে। ছোট্ট একটা কোনের ঘর, ফাইলের মধ্য ডুবে আছেন তিনি প্রায়। ফাইল থেকে মাথা তুলে বললেন ওই যে মনোজ আছে ওর সাথে যোগাযোগ করিস কিছু হলে ওই খবর দেবে। দেখলাম ঘরের এক কোণে চেয়ারে বসে আছেন হাই পাওয়ার এর চশমা পরা একজন। আমি বললাম অভিজিৎ আমার নাম। হেসে বললেন হ্যাঁ ঠিক আছে এসো মাঝে মাঝে কিছু খবর হলে বলে দেবো আমি।
 সেই শুরু আমার আকাশবাণীর আকাশ পথে বিচরণ করা একটু একটু করে। ধীরে ধীরে দেখলাম এই বিজ্ঞান বিভাগের আসল অফিসার সেই সময় স্বাতীদি হলেও। সেই গম্ভীর মুখের দত্তদা এই দপ্তরে কাজ করলেও যে নিজের ছেলে মেয়ের প্রশংসা বেশি করতে ভালোবাসতেন। এই দপ্তরের নাড়ী নক্ষত্র কিন্তু সব জানে ওই মনোজদা। দপ্তরের আসল চাবি ওই মনোজ দার হাতেই। কে কোন বিষয়ে বলবেন, কাকে বুকিং করতে হবে সব তার নখদর্পণে। মনোজ কর ছাড়া বিজ্ঞান বিভাগের চাকা পাংচার হবার অবস্হা।
আমি  নিজে কোনো রকমে পাশ করে বিজ্ঞানে স্নাতক হয়ে এই বিভাগেই স্বাতীদির দৌলতে অস্থায়ী কর্মীর কাজের সুযোগ পেলাম হঠাৎ করেই। আউটডোর কাজ করতে পারলেও স্টুডিওতে দাঁড়িয়ে এডিটিং করা সেই কঠিন কাজ হাতে ধরে যে মানুষটা দিনের পর দিন হাতে ধরে শিখিয়ে দিলেন আমায় সেটা সেই মনোজ কর। স্টুডিওতে ডাক্তারদের রেকর্ডিং করা, অডিও ঠিক আছে কি না সেটা বলে দেওয়া, পুল আর রেকর্ডিং এর ফিতে ঠিক করে মেশিনে জড়িয়ে আটকাতে পারলাম কি না ঠিক  করে। সব কিছুই কেমন হাসি মুখে দেখিয়ে দিত ওই মনোজ দা। ভুল করলেও কোনো দিন কোনো রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করেননি তিনি আমাদের ওপর।
 আসলে এটাই বোধহয় ওনার জীবনের সবথেকে বড়ো প্লাস পয়েন্ট। আর তাই বোধ হয় শুধু বিজ্ঞান বিভাগের নয় যে কোনো বিভাগে কিছু কাজ এর দরকার হলেই ডাক পড়তো মনোজ কর এর। আকাশবাণীর সেই লম্বা করিডোর ধরে প্লাস্টিক এর চটি পরে কেমন হাসি মুখে সব কাজের সামাল দিয়ে অফিসারদের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিতেন। আর তাই যে কোনো কঠিন কাজ মনোজদা হাসি মুখে উৎরে দিত। একজন অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যে ছয়দিনের বুকিং পেতেন সেটা নিয়েই। এর জন্য কিছু বাড়তি আয় হয়নি তার কোনো দিনই।
 কেমন যেনো একটা নেশার ঘোরে কাজ করে যেতো মনোজ দা। কিন্তু কোনো দিন কোনো ভাবে নিজের দুঃখ কষ্টের কথা কাউকে বলতে শুনিনি তাকে। আকাশবানীর সেই সময় স্বর্ণ যুগ। স্বাতীদি,কৃষ্ণশর্বরী দি, নুরুল দা, সমরেশ দা, অঞ্জন দা, জামাল দা, হীরক দা, অমর দা, বাসবী দি, অনেক পরে স্বপ্নময় দা, মানস প্রতিম দা, দেবাশীষ পাল দা, বার্তা সম্পাদক সুনিত চক্রবর্তী, অরিজিৎ দাশগুপ্ত, স্টেশন ডিরেক্টর বিখ্যাত মানুষ ড অমিত চক্রবর্তী। এই সব মানুষের মেলা তখন আকাশবাণীর অন্দরে। যেখানে নানা অনুষ্ঠান, আউটডোর, ইনডোর এর কাজ সামলে দেয় একঝাঁক তরতাজা ছেলে মেয়ে। যারা অস্থায়ী তকমা নিয়ে ক্যাজুয়াল কর্মী হয়ে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ করে যায় এই বিখ্যাত গণ মাধ্যমে সকাল থেকে রাত অবধি। তাদের একজন এই মনোজ কর।
 কবে যে যাত্রা শুরু করে মনোজদা ঠিক জানি না আমি সেটা। তার কবে কত সালে এই কাজের জগতে প্রবেশ সেটাও জানি না আমি। কত সালে আকাশবাণীর দরজায় পা রাখে কে জানে। তবে প্রায় চল্লিশ বছর না হলেও পঁয়ত্রিশ বছর বা তার বেশি সময় ধরে আজও মনোজ দা সেই বিজ্ঞান বিভাগের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে  কাজ করে চলেছেন একভাবেই। একদম একভাবে, একরূপে সেই মুখে হাসি নিয়েই কাজ করছেন তিনি আজও। মাঝে মাঝেই আমার কথা হয় মনোজ দার সাথে।
 কোনো বিপদে পড়লে বিজ্ঞানের এই বিষয় নিয়ে কে ভালো বলতে পারবেন জানতে চেয়ে ফোন করলে মনোজদা এক বাক্যে বলে দেন উনি হলেন সব থেকে ভালো লোক এই বিষয়ে। বলে তার নম্বর বলে দেন আমায়। সেই তো শুনেছি আমি লকডাউন এর সময় যখন একটু একটু করে ট্রেনে ওঠার অনুমতি মিলেছে যাত্রীদের। সেই সময় নিজে ট্রেনে উঠে সারা সপ্তাহের বিজ্ঞান বিভাগের কি অনুষ্ঠান এর টেপ জমা দিতে হবে সেটা ডিউটি রুমে জমা দিয়ে সব দায়িত্ব সামলে হাসি মুখে বাড়ী ফিরে যেতেন তিনি। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এমন অস্থায়ী একজন কর্মীর জন্য বোধহয় বিজ্ঞান দপ্তরও গর্বিত।
 আসলে কি জানেন সাদা জীবনের কালো কথায় আঁকা বাঁকা অক্ষরে আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে এমন একজন মানুষের কথা না লিখলে বোধহয় ঠিক করতাম না। একজন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হয়ে তাহলে বোধহয় সেটা অপরাধ করতাম আমি। মনোজদা না থাকলে হয়তো আকাশবাণী কলকাতা স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ দপ্তরে, বিজ্ঞান বিভাগে কাজ করতেই পারতাম না আমি। পরে সেই আকাশবাণীতে আমি নানা এন্টারটেনমেন্ট এর কাজ করেছি বিখ্যাত সেই সুরকার অসীমা মুখোপাধ্যায় এর সঙ্গে। যিনি আজ আর নেই। যে গল্প আমি লিখেছি।
 কিন্তু সেই মনোজ কর এর কাছে কাজ শিখেই তো বিজ্ঞান মেলায় টেপ রেকর্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি চারিদিকে নানা জেলায়। গ্রামে শহরে বিজ্ঞান নিয়ে সচেতন মূলক নানা কর্মকান্ডকে তুলে এনে সেটা প্রচার করেছি আমরা। আর মাসের শেষে ছয় দিনের বুকিং দিয়ে যাতে আমরা ঠিক সময়ে চেক পাই তার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এই আমাদের সবার মনোজদা। আমরা একসময় হয়তো ভেবেছিলাম যে এই অস্থায়ী জীবনে একটু স্থায়ীত্ব আসবে। তাই ক্যাজুয়াল কর্মী হলেও মাঝে মাঝে আশা ভরসা করতাম যদি ভালো কিছু হয় আকাশবাণীতে। এখানেই যদি জীবনের বাকি দিন গুলো কেটে যায় আমাদের। হয়তো মনোজদাও সেই স্বপ্ন দেখতো মনে মনে আমাদের মত। কিন্তু আমি মনোজদাকে সেই কথা কোনোদিন বলতে শুনিনি।
 আশ্চর্য একজন মানুষ যে সারা জীবন মুখ বুজে একটা দপ্তরে বিজ্ঞান নিয়ে প্রচার এর জন্য সব কিছু উজাড় করে দিলো হাসি মুখে। আমি জানিনা মনোজদা বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন কি না। জানি না বিজ্ঞানের প্রতি এই প্রেম ভালোবাসা কি করে হলো তাঁর। কিন্তু সে যাই হোক এই মানুষটা নিজের কথা ভাবলো না কোনোদিন যে তার কি হলো এই জীবনে। সেই চক্ররেল ধরে বাবুঘাটের কাছে ইডেন গার্ডেন্স স্টেশনে নেমে হেঁটে অফিস আসা। আর সন্ধ্যা বেলায় সেই এক জায়গা থেকে ট্রেন ধরে ঘরে ফেরা। আর সেই ছোটো টিফিন বক্সে রুটি আর তরকারি নিয়ে আসা। কাজের চাপে চারটে বেজে যেত টিফিন খেতে তার। কিন্তু আমায় বলতেন অভিজিৎ নাও খাও। আমি বলতাম না না তুমি খাও।
 এমন হাসি মুখে একটা গোটা জীবনের প্রায় বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দিলো শুধু বিজ্ঞান বিভাগের প্রচার করে। সত্যিই কি অসাধারন এই বিজ্ঞানময় অস্থায়ী জীবন। এই জীবন হয়তো কোনো দিন প্রচারের আলোয় আসবে না। আর কয়েক বছর পরে তাঁর ষাট বছর হলেই হয়তো মনোজদাকেও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মে আর অস্থায়ী কাজের সুযোগও দেওয়া হবে না তাকে আর। কোনও বুকিং মিলবে না আর তার। 
কিন্তু আকাশবাণীর বহু অস্থায়ী কর্মীর মাঝে বিজ্ঞান বিভাগের এই মনোজ কর, আমাদের সবার কাছে কিন্তু উজ্বল হয়েই থাকবেন। বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞান আন্দোলনের এই প্রচারের একজন স্থায়ী সদস্য হয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন এই মনোজ কর। হয়তো কোনো ভাবেই কোনো দিন তাঁর এই কথা খাতায় কলমে কিছু লেখা থাকবে না, কিন্তু তাঁর এই অবদান মনে রাখবে আকাশবাণীর সকলেই। আর বিজ্ঞানকে ভালোবাসা মানুষজন। স্যালুট মনোজ কর। 

আকাশবাণীর মনোজ কর - অভিজিৎ বসু।
পঁচিশে আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...