আজ আর সাদা জীবনের কালো কথা নয়। সাদা জীবনের এক স্বপ্নের সওদাগরের রঙিন স্বপ্ন দেখার কথা, স্বপ্ন বেচার কথা। যে স্বপ্নের সওদাগর আজ আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন দূরে অনেক দূরে, স্বপ্নের দেশে, স্বপ্নের রাজ্যে। চির ঘুমে।
হ্যাঁ সকাল বেলায় নিয়ম মেনেই ঘুম থেকে উঠে মোবাইলের পর্দায় ভেসে এলো সেই মন খারাপ এর খবর। বুদ্ধবাবু আর নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আছড়ে পড়ল সেই খবর চারিদিকে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল এই খবর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। নিজের সেই পরিচিত পাম এভিনিউ এর ছোট্ট ঘর ছেড়ে পাড়ি জমালেন তিনি স্বপ্নের রাজ্যে। যে রাজ্যে হয়তো আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস সঞ্চয় করবেন তিনি। একটু একটু করে সেই সাহসের ডানায় ভর করে আবার এগিয়ে যাবেন সেই পরিচিত মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে। মুখের কঠিন বলি রেখায় ফুটে উঠবে সেই চির পরিচিত তাঁর মৃদু হাসি।
আসলে আমরা এই মানুষ যে বড়ো স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। সে যেমন স্বপ্নই হোক। ভালোবাসার স্বপ্ন, ভালো রাখার স্বপ্ন, ভালো থাকার স্বপ্ন। দু চোখের তারায় যে আলো ঝিকিমিকি করে আমাদের এই গভীর অন্ধকার রাতেও। যে স্বপ্নের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছা করে। বিশ্বাস করুন সত্যিই আজ বড়ো মন খারাপের দিন। যে দিনে শুধু মাত্র হিসেব নিকেষ, ভালো মন্দ, সাদা কালো, ঘৃণা প্রেম, রাজনীতি আর বিরোধী নীতি এসব কিছুই নয়। শুধুই দলা পাকানো এক টুকরো মন খারাপের দিন কষ্টের যন্ত্রণার দিন।
একজন সাংবাদিকের কাছে রাজনীতির ময়দানে উত্থান আর পতনের বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকতে হয়। আমার মত ক্ষুদ্রতম একজন মানুষ যে খুব কম সময়ে এই ভাবে দুর থেকে তাঁকে দেখেছে বার কয়েক তাঁকে নিয়ে কিছু বলা বা লেখার ধৃষ্টতা দেখানো উচিত নয় হয়তো। তবু কেনো যে বিধুর ভার হওয়া মনে কলম ধরতে ইচ্ছা হলো আমার আজ কে জানে। সত্যিই বলছি আমি আজ কত কিছুই যে মনে পড়ে যাচ্ছে আমার। যাতে ভারাক্রান্ত হয়েই বোধহয় কিছুটা আচ্ছন্ন হলাম আমিও নিজের সাংবাদিক সত্তা ছেড়ে। মানুষের মন ভালোবাসা আর স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে।
হুগলী জেলায় কাজ করার সুবাদে সিঙ্গুরের কারখানা তৈরীর সময় প্রতিদিন যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি আমি সেটা আমার জীবনের সেরা সময়। আসলে সরকার আর বিরোধীর যে টানাপোড়েন। সরকারি ক্ষমতার মসনদে বসে জোর করে জমি অধিগ্রহণ। আর তার বিরুদ্ধে বিরোধীদের জোরদার আন্দোলন। আর সেই বিরোধীদের জোরদার আন্দোলনকে পুলিশের লাঠি, গুলি দিয়ে, বন্দুকের নল দিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা এসব তো ছিলই। রাজনীতির মারপ্যাঁচ, হার জিত এসবও ছিল সিঙ্গুরের সেই তিন ফসলি জমির সবুজ মাঠে। কিন্তু তবুও এসবের মাঝেও কি আজ এই শূন্যতার মাঝে লুকিয়ে আছে একটু গভীর গোপন যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে সাত সকালেই মন খারাপ হলো আমার। যার জন্য এতটা স্বগতোক্তি আমার।
জানিনা, আমি শুধু এটা জানি একটা স্বপ্ন, আর একটা জেদ। একটা কাজের সুযোগ এর আশা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে যাওয়া কিছু মানুষ আর একটা আন্দোলন করে সেই খুশি, আশাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া। জানিনা কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক। আমি বলতে পারবো না আজ এত দিন পরে। শুধু এটা জানি ভুখা পেটের জ্বালা যে বড়ো কঠিন। হাতে কাজ না থাকলে, পেটে ভাত না থাকলে যে শুধু লড়াই আর আন্দোলন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখা যায়না। ঘুরে দাঁড়ানো যায় না কিছুতেই। সেই স্বপ্ন দেখা মানুষটা বোধ হয় একটু ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন এই ভাবেই। কিন্তু পারলেন না।
ভালই হলো ক্ষতি কি বলুন। ক্ষমতা থাকলেই যে সব কিছু যে হিসেব নিকেশ মিলিয়ে হবে জীবনে তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর তার কোনো গ্যারান্টিও নেই। কিন্তু যারা মানুষকে ভালোবেসে মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে চান। তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চান তেমন মানুষ আর কই বলুন এই সমাজে। যদিও এমন মানুষের সংখ্যা রাজনীতির বৃত্তে দ্রুতই কমছে। ক্ষয়িষ্ণু এই সমাজে শুধুই স্বার্থপরতা আর আত্মসার্থে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। আর নিজের ভালোর জন্য লড়ে যাওয়া। এর মাঝে কিছুই নেই যে।
তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই এই খবরটা পেয়ে মনটা বড়ো খারাপ হলো। স্বপ্ন দেখা সেই মানুষটা আর নেই শুনে। ভালো থাকবেন আপনি। বুদ্ধবাবু আপনি ভালো থাকবেন। পরপারে গিয়েও আশা করি স্বপ্ন দেখা ভুলে যাবেন না। মানুষকে ভালো রাখার স্বপ্ন। মানুষের ভালো করার স্বপ্ন। ভুখা পেটের ভাত দেওয়ার স্বপ্ন। যার পূরণ হয়তো এই রাজ্যে আপনি করতে পারলেন না কিন্তু ওই স্বপ্নের রাজ্যে নিশ্চয় আপনার সেই অধরা স্বপ্নের পূরণ হবে একদিন না একদিন।
স্বপ্নের সওদাগর ভালো থাকবেন - অভিজিৎ বসু।
আট আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন