সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মিন্টে ও আমি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমি মিন্টের কথা বলতে চাই। জীবনের নানা রঙের ভালোবাসার সব উজ্জ্বল জলছবি এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বৃষ্টির ফোঁটার মতো। কেউ বলেন সাদা জীবনের কালো কথা লেখার কি দরকার আছে কোনো। আবার কেউ বলেন যত সব ফালতু কাজ। যাকে তাকে নিয়ে লিখে ফেলার কি দরকার। কি হবে এসব কথা লিখে রেখে। সবার সব কথা, নিজের কথা, অন্যদের কাছে জানানোর কি কোনো দরকার আছে। জীবনের গভীর গোপন অনুভূতির কথা আর নানা অভিজ্ঞতা আর সম্পর্কের কথাকে বাজারে নিয়ে আসার কি খুব প্রয়োজন আছে। কেউ সমালোচনা করছেন এই লেখার। আবার কেউ কেউ বলছেন না না বেশ ভালো লাগে তো পুরোনো দিনের স্মৃতি ঝলমল লেখা পড়তে। কেউ কেউ এই লেখা পড়ে কোনো মন্তব্য করেন না মুখ বুজে চুপ করে থাকেন। আবার কেউ কেউ হাসি মুখে প্রশংসা করেন।এইভাবেই তো আমি লিখে চলেছি আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির নানা কথা আপনাদের ভালোবাসা আর মন্দ কথা শুনে।  সেটা হতে পারে খারাপ হতে পারে সুখের নয় দুঃখের বিষয়। তবু তো ধরা থাকে সেই সব কথা আমার ব্লগে এই ভাবেই আঁকাবাঁকা অক্ষরে আঁকিবুঁকি ব্লগে। 

আর আজ সেই আমাদের সবার কাছে অতি পরিচিত ক্যামেরাম্যান মিন্টের কথা। যে এখন কলকাতার রাজপথে কাজ করা বিখ্যাত এক চ্যানেলের নবান্নের ক্যামেরাম্যান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ঘরে প্রবেশ করে নির্ভয়ে ছবি তুলতে যার ডাক পড়ে নবান্নে। যাক সেই কথা বলতেই তো আমার কলম ধরা আজ। কেউ কেউ ওকে মিন্টাই বলেও ডাকে। সেই যে যার ভালো নাম জ্যোতির্ময় বসু। সদা হাস্যময় সেই রোগা পাতলা চেহারার হাসি মাখা মুখের ছেলে মিন্টে। সকাল হলেই যে সেই সাইকেল নিয়ে আমাদের নন্দী মাঠের ইটিভির অফিসে এসে হাজির হতো ঘড়ি ধরে একদম টাইম মেপে।

 বেশ মজার দিন গুলো কাটত আমাদের সেই সময়। যা কোনোদিন ভোলা যাবে না। ওর মা ওকে মিন্টু বলে ডাকতো মনে হয় খুব সম্ভবত। সেই ইটিভির অফিসে অরিন্দম, সুদীপ, মিন্টে আর আমি এই চার মূর্তির গুছানো সাজানো সংসার। নতুন খবরের চ্যানেল এর অফিস বেশ জমজমাট। সৌরভ বন্দোপাধ্যায় এবিপি আনন্দে চলে যাওয়ার পর ক্যামেরাম্যান এর খোঁজ করতে গিয়ে ওর সন্ধান পাওয়া গেলো। স্টিল ক্যামেরা চালানো পাকা হাতের ফটোগ্রাফার এর সন্ধান পাওয়া গেলো। সেই দেবাশীষ মৈত্র সেই সময় ইটিভির ক্যামেরা বিভাগের প্রধান। আর তাঁর বাবা শ্যামল দা তিনি ছিলেন মিন্টের সাদা কালো ছবির জগতের গুরু। যে শ্যামল দার কথা একদিন লিখবো আমি ইচ্ছা আছে।

এই সব নানা লতায় পাতায় মোড়া সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মিন্টে জড়িয়ে গেলো ইটিভির সংসারে কেমন করে। সাদা কালো ছবির জগতের শাটার টেপা আর ক্লিক করে ধরে রাখা ছবির জগতের বাসিন্দা মিন্টে বিয়ে বাড়ির ছবি তোলা সেই মিন্টে হয়ে গেলো
 ইটিভির ক্যামেরাম্যান। আমার তখন নতুন চাকরি। দু চাকার গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই। ওর ভাই ঝন্টের গাড়ি করে বহুদিন আমরা খবর করতে গেছি। পরে হাওড়া থেকে শাশ্বত আর শুভেন্দু সেই গাড়ি কিনে দিয়ে যায় শ্রীরামপুরে। মাসে মাসে ই এম আই দিয়ে দু চাকার বাজাজ এর গাড়ি কেনা হলো।

 ওদের সেই চাতরার সি ই এস সি ক্লাবের কাছে রেশন দোকানের ওপর ওদের সেই বহু পুরোনো দিনের ভাড়া নেওয়া ঘর। ছোট্ট ঘরে দু দুটো সংসার আর ওর মার কষ্ট করে হাসি মুখে সেই সংসারকে সামাল দেওয়া দুই ছেলের পরিবারকে নিয়ে। বেশ সবাই মিলে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। যা আমার বেশ ভালো লাগতো।  আমার পরিবারের সাথে ওদের বাড়ির একটা গভীর বন্ধন তৈরি হয়ে গেছিল কাজের সুত্রে। সেই শ্রীরামপুরে ওয়ালস হাসপাতালে সকাল থেকেই ওর মার দাঁড়িয়ে থাকা বুটা হবার সময়। হাসপাতালে আমার টেনশন এর সময় মিন্টে, বাপি, তাপস, মৃণাল দা, ঝন্টের উপস্থিতি আমায় স্বস্তি দিয়েছিল সেই সময় অনেকটাই। লেবার রুম থেকে পয়লা বৈশাখের দিন সাদা কাপড়ে মুড়ে প্রথম বাইরে এসে যিনি আমাদের টেনশনের মুক্তি দিলেন এই তো অভিজিৎ এর মেয়ে হয়েছে। আজতক চ্যানেল এর মৃণাল দত্ত দা সেই বৈশাখের প্রথম দিন মেয়ে হবার খবর পেয়ে মেয়ের নাম দিয়ে ফেললেন বৈশাখী। 

সত্যিই তো এই সব দিনের কথা লিখে ফেলি আমি রাতের অন্ধকারে টিপটিপ বৃষ্টি ভেজা রাতে। যে রাতে আমার স্মৃতির সরণীতে বৃষ্টির ছোঁয়া লেগে ভিজে যায় আমার মন,রাস্তাঘাট সবকিছুই। এই ভাবেই বুটার বড়ো হয়ে যাওয়া বাংলা পড়তে ওদের বাড়ি যাওয়া। মিন্টের বউ এর কাছে বাংলা পড়া। এই নানা কথাই যে আজ অজানা রয়ে গেছে। মনে নেই এর মাঝে একবার ও হয়তো আমার সাথে মতান্তরের কারণে কাজ ছেড়ে দেয় অল্প দিনের জন্য। কিন্তু পরে সেটা আবার মিটেও যায়। যেটা মেটাতে সব থেকে বেশি সাহায্য করে আমার বউ সোমা। বলে না ওকে ডেকে নাও তুমি। আমাদের ভেঙে যাওয়া জুটি আবার জোড়া লেগে যায়। এই একবার ছাড়া আমাদের দুজনের এই লরেল আর হার্ডির জুটি বেঁধে একসাথে জেলা জুড়ে কাজ করা দৌড়ে বেড়ানো। খবরের নেশায় দিন রাত এক করে ছুটে বেড়ানোর মজাই আলাদা ছিল।

আসলে রিপোর্টার আর ক্যামেরাম্যান এর জুটির মধ্য সমঝোতা না থাকলে কি আর ভালো কাজ হয়। যে কোনো সময় যে কোনো কঠিন কাজ করতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়নি ও কোনোদিন। যেটা ছিল ওর সব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট। তার জন্য তো সেই সিঙ্গুরে অন্দোলনের সময় এবিপি আনন্দের ওবি ভ্যান ভাংচুরের ঘটনায় ওদের রিপোর্টার বিতনু আর ওর ক্যামেরাম্যান দুর থেকে ছবি করলেও আমি আর মিন্টে দুজন একসাথে এগিয়ে যাই। ওকে বলি চলো তো দেখি কারা গাড়ি ভাঙছে। হাতে অফিসের ক্যামেরা নিয়ে ও এগিয়ে গেলো ছবি করতে কোনো দ্বিধা না করেই। আর তারপর সবটাই তো ইতিহাস। 

ওকে দেখে  তৃণমূল সমর্থকদের ঝাঁপিয়ে পড়া। ওর মাথায় ইট দিয়ে মারা। রক্তে ভেসে যাওয়া ওর সারা শরীর। গোটা রাজ্য জুড়ে সেই ওর রক্ত মাখা মুখ এর ছবি প্রচার করা সিপিএমের। ওকে সেই ওয়ালস হাস পাতালে নিয়ে আসা সবাই মিলে। পরে মদন মিত্র আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় হাসপাতালে দেখতে গেলে তাদের ভাগিয়ে দেওয়া, আমার মাথা গরম করে গাল দিয়ে এসব কথা লিখে রাখলে ক্ষতি কি বলুন তো। তৃণমূল নেতাদের আমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরিকল্পনা করা। যদিও সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয় কলকাতার জয়ন্ত চৌধুরী। পরে সেই জাভেদ খান এর কলকাতা থেকে আসা লোকজন যারা মিন্টেকে মারে তাদের চিহ্নিত করা কামারকুন্ডু রেল মাঠের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সভায়। ছবি তুলে দেখিয়ে দেওয়া এরাই হলো আসল তৃণমূলের সব আসল  ক্যাডার বাহিনী যারা সেদিন মিন্টেকে ছবি তুলতে বাধা দেয় আর মারধর করে।

 কিন্তু হাসি মুখে ও সব কষ্ট সহ্য করে মার খেয়ে ছবি করতে পিছপা হয়নি। আসলে একজন ছবি তোলার সাংবাদিক এর এই যে ভয়ডরহীন জীবন এটা অনেক বেশি তার ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে সাহায্য করে। যেটা আজ ওর হয়েছে। সেই সিঙ্গুরে দিন রাত এক করে আমার সাথে দৌড়ে যাওয়া, সেই ভোরবেলায় হিন্দমোটর কারখানাতে দৌড়ে যাওয়া শীতের সকালে আন্দোলন এর ছবি করতে, ভিখারী পাসোয়ান এর খবর করতে বৃষ্টি ভেজা রাতে দুজনে একসাথে ভিজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আসার খবর পেয়ে চলে যাওয়া আমার দু চাকার বাইক নিয়ে ভিজে ভিজে, সেই তাপসী মালিকের বাড়িতে গলায় মালা দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর সিঙ্গুর আসা তারপর চাষীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে আমাদের মিন্টের ক্যামেরায় সেই ছবি ধরা পড়ে যাওয়া, অপ্রস্তুত হয়ে পড়া সেই ডাকাবুকো নেতার। সেই ভোরবেলায় ডানলপ সাহাগঞ্জের কারখানাতে তালা বন্ধের ঘোষণা হলেই ছুটে যাওয়া শ্রীরামপুর থেকে বাইক নিয়ে, সারাদিন রাস্তায় ঘুরে খবর করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা। কোনোদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছু খেতে পাওয়া আবার কোনোদিন আমার ছবি ধরানোর তাড়াহুড়োতে সেটাও হতো না ওর।

 এই ভাবেই তো বেশ ভালই চলছিল আমাদের দুজনের এই লরেল আর হার্ডির  হার্ডকোর জেলা সাংবাদিক এর জীবন। যে সাংবাদিক জীবনে সব ভালোর মাঝে কিছু মন খারাপ ছিল। সেই বিশ্বকর্মা পূজোর সময় অফিসের পূজো নিয়ে একটু দ্বিমত ছিল আমার আর ওর। কিন্তু এই সবের মাঝে আজও অমলিন হয়ে বেঁচে আছে আমাদের ধূলি ধূসর সম্পর্ক ঠিক ওই রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ট্রাম লাইনের মতই। কিন্তু না সব কি আর ভালো হয়। হুগলী জেলার সেই অফিস উঠে গেলো। কলকাতায় ট্রান্সফার করা হলো আমাদের সবাইকে। আমরা দুজন চলে গেলাম কোলকাতা। আমি এডজাস্ট করতে না পেরে হায়দরাবাদ বদলি হয়ে গেলাম কলকাতা থেকে। ও টিকে গেলো কলকাতার জল হাওয়া বাতাসে এডজাস্ট করে সেই হাসি মুখে। 

সেই ইটিভির চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম অজানা অচেনা আর অনিশ্চিত জীবনে। ভেসে পড়লাম কেমন সুন্দর জীবন ছেড়ে। এই তো সেদিন দেখলাম নবান্নে যাবার জন্য দৌড়ে ট্রেন ধরছে ও বেশ ভালো লাগলো একবার ডাকলাম ওকে পুরোনো দিনের কথা মনে রেখে হয়তো ট্রেন ধরার তাড়া থাকায় শুনতে পায়নি ও। মনটা একটু খারাপ লাগলেও পরে মনে হলো আমার আজ জীবনের কোনো তাড়া সেই অর্থে নেই। দৌড় নেই। ওর তো আছে। ওর দিল্লী দৌড়ে যাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সফর সঙ্গী হয়ে, সেই নবান্নের চোদ্দ তলায় ছবি করতে যাওয়া, সেই নানা গুরুত্বপূর্ণ কভারেজ করতে যাওয়ার ওর ছবি দেখে বেশ ভালো লাগে আমার। যাক লরেল আর হার্ডির সেই হার্ডকোর জুটি ভেঙে গেছে বহুদিন আগেই। একজন নিজেই ছিটকে গেছে এই মিডিয়ার ট্রাক এন্ড ফিল্ড থেকে। কিন্তু অন্যজন তো এখনো হাসি মুখে লড়াই করে যাচ্ছে মাঠে ময়দানে, পাহাড়ে, জঙ্গলে মমতার সফর সঙ্গী হয়ে সেই বিখ্যাত হাসি মাখা মুখে।

 মনে পড়ে গেলো আমার সেই সিঙ্গুরের একটা দিনের কথা সেই আন্দোলনের কথা। যখন প্রতিদিন সকাল হলেই বাইক নিয়ে সিঙ্গুর পৌঁছে যেতাম আমরা দুজন নিয়ম করে। মাটি কামড়ে পড়ে থাকতাম সিঙ্গুরের চাষীদের সাথে ঘুরতাম গ্রামে গ্রামে। কখনও ইচ্ছুক চাষীদের গ্রামে কোন সময় অনিচ্ছুক চাষীদের ঘরে ঢুকে পড়তাম আমরা। সেই রকম একদিন সকাল বেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাক্ষাৎকার নিতে কলকাতা ইটিভির অফিস থেকে সিঙ্গুরে এসে হাজির হলেন বিখ্যাত সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী। সিদ্ধার্থ সরকারের নির্দেশে সাক্ষাৎকার নিতে এলেন তিনি। মমতার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক জয়ন্ত দা। সেদিন শ্রীরামপুর অফিস থেকে ক্যামেরা নিয়ে মিন্টেকে বললাম তুমি চলে যাও আমি যাবো না আজ। ও আর জয়ন্ত দা মমতার ইন্টারভিউ করে। সাদা ফুলকাটা কাপে চা খাবার সৌভাগ্য হয় ওদের সেদিন সেই সিঙ্গুরের ধর্না মঞ্চে। যে গল্প ও হাসতে হাসতে পড়ে আমায় বলে। কিন্তু আমি কেনো যে সেদিন গেলাম না এভয়েড করলাম কে জানে। হয়তো সেদিন সেই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সাজানো প্রশ্নের বাইরে কোনো প্রশ্ন করে বিপাকে ফেলব না বলেই সেদিন আমি হাজির হতে পারিনি সেদিন। এটাই যে আমার সমস্যা।

 
আসলে সবাই কি সব কাজ সমঝোতা করে করতে পারে। তবু আজ মনে হয় এই জেলা ছেড়ে ভয়ে ভয়ে দ্রুত কলকাতায় ছুটে চলে না গেলে হয়তো আজও আমাদের এই অমলিন জুটি বেঁধে থাকা হতো এই বুড়ো বয়সে। খবরের দৌড়ে বুড়ো হয়ে আমরা দুজন আজও একসাথে দৌড়ে বেড়াতাম। ঝগড়া মান অভিমান হাসি কান্না পর্ব মিটিয়ে হাসি মুখে দিনের শেষে কাজ করতাম আমরা দুজন মিলে। রাতের বেলায় কাজ সেরে বাটার মোড়ে এসে দাঁড়াতাম আমরা ঘুরতে ঘুরতে। চা খেতাম সবাই মিলে আর খবর নিয়ে আলোচনা করতাম। ওর কোলে চড়ে ওর নাতি হাসি মুখে বায়না করতো দাদুর কাছে। ও হেসে সেই বায়না মিটিয়ে দিত একগাল হেসে। বেশ সুন্দর জীবন কাটিয়ে দেওয়া যেত কি বলেন, একসাথে আমাদের এই জুটি না ভেঙে। সোজা সরল রেখায় সরল পথে চলতো আমাদের এই লরেল আর হার্ডির হার্ডকোর সাংবাদিক এর দৌড়ে বেড়ানো জীবন।

 আজ তাই ওর এই দৌড় দেখে বেশ ভালো লাগে আমার। সত্যিই তো জীবনের এই ব্যালেন্সের খেলায় আমি ছিটকে পরে গেলেও মিন্টে তো পড়ে যায়নি এখনও। কেমন করে সব সামলে নিয়ে আকাশে মেঘের রাজ্যে উড়ে গেছে কোনো সময় খবরের খোঁজে। আবার কোনো সময় পাহাড় আর সমুদ্রের তীরে দৌড়ে বেরিয়েছে ক্যামেরা নিয়ে সকলের সাথে। এই বৃষ্টি ভেজা ভোরবেলায় সেই দৌড়ে বেড়ানোর স্মৃতিচারণ করতে বেশ ভালো লাগলো আমার। একজন জেলার ছেলের এই দৌড়ে বেড়ানো খবরের সন্ধানে আর তার কথা লিখতে ইচ্ছা হলো এতদিন পরে। সাদা জীবনের কালো কথায়।কেউ বলবেন ওর স্তাবকতা করলাম আমি। কেউ বলবেন এত কথা লিখে লাভ কি হলো। লাভ আর ক্ষতির হিসেব করে কি আর জীবন চলে। লরেল আর হার্ডির এই খবরের দুনিয়ার হার্ডকোর সম্পর্কে লাভ আর ক্ষতি নেই। সেই ঝুলিতে শুধু লাভ আর লাভ আছে। যাকে বুকে আগলে জড়িয়ে আজও আমি বেঁচে আছি। স্বপ্ন দেখি দৌড়ে বেড়াবার দুজন মিলে একসাথে। 

মিন্টে ও আমি - অভিজিৎ বসু।
ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...