সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাধন দা ও শ্রীরামপুর সমাচার

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমাদের সেই হুগলী জেলার বহু পুরোনো শ্রীরামপুর সমাচার পত্রিকার সম্পাদক সাধন গাঙ্গুলীর কথা। দীর্ঘদেহী, সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি পড়া একজন মানুষ। বুক পকেটে রাখা একটা কলম। আর তাঁর মুখে হাসি লেগে আছে সবসময়। যিনি শুধু একটা ছোট কাগজ নিয়েই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন হাসি মুখে। আসলে কিছু কিছু মানুষ বোধহয় এমনই হয়। একটা জিনিসকে সঙ্গী করে নিয়ে জীবনের ভালোলাগাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা। হাসি মুখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া। কি পেলাম আর কি পেলাম না তার হিসেব না করে। সংসার জীবন না করে আত্মীয় স্বজনদের থেকে দূরে থেকে তিনি কাটিয়ে দিলেন একটা ছোট পত্রিকাকে সঙ্গে নিয়ে। যেটা সত্যিই অসাধারন একটা কাজ। আজকের এই দৌড়ে বেড়ানো ছুটে বেড়ানোর দিনে এইভাবে জীবন কাটিয়ে দেওয়া সত্যিই বেশ কঠিন কাজ। 

আমার সাথে দেখা হলেই তিনি বলতেন অভিজিৎ ভালো আছো। কি আজ বড়ো কিছু হলো নাকি খবর। আমি বলতাম না না। সন্ধ্যা বেলায় শ্রীরামপুর পল্লীডাক পত্রিকার ছাপাখানায় এসে হাজির হতেন তিনি। এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে তিনি এই সাংবাদিকদের ঠেকে এসে একটু বসতেন। সেই মহাকরণ,বিধানসভা, নব মহাকরণ, জেলাশাসকের অফিস চুঁচুড়া সব জায়গায় তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। যে কোনো মন্ত্রী, বিধায়ক সবাই তাঁকে এক ডাকে চেনেন। এমনকি কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির এক অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায় তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন স্মিত হেসে। এমন ছিল তাঁর নিজের গান্ধীবাদী একটা স্বচ্ছ ইমেজ। আসলে পুরোনো পন্থী এই নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশক মানুষটিকে পছন্দ করতেন সবাই সেই সময়ে। রাজনীতির মানুষজন থেকে শুরু করে আমলারাও পছন্দ করতেন তাঁকে। 

একদম সুন্দর সেজে গুজে পরিপাটি হয়ে এসে তিনি সন্ধ্যার সময় বলতেন প্রবীর ভালো আছো তুমি। প্রবীর মুখোপাধ্যায় যিনি ইন্দুভূষণ মুখোপাধ্যায়ের বড়ো ছেলে। যিনি পল্লীডাক পত্রিকার দেখভাল করেন সেই সময়। তখন পল্লীডাক পত্রিকার অফিসে বসে সন্ধ্যায় তখন সাংবাদিকদের অফিসে খবর পাঠানোর জোর ব্যস্ততা আর তৎপরতা তখন পল্লীডাক এর দফতরে। তার মাঝে সাধনদার আগমনে অনেকেই মুখে না বললেও অস্বস্তি ভাব করতেন সেটা তিনি বুঝতে পারতেন কিছুটা নিজেও। তারপর বলতেন, প্রবীর চলি ভাই। তোমরা সব কাজ করো। এই বলে তিনি উঠে পড়তেন সেখান থেকে। নিজের বাড়ির দিকে চলে যেতেন সেই পটুয়া পাড়াতে হাঁটতে হাঁটতে ফেরার সময় রাতের খাবার রুটি কিনে নিয়ে বাড়ী ফিরতেন তিনি। 

সেই সময় শ্রীরামপুরে তখন পল্লীডাক আর শ্রীরামপুর সমাচার ছোটো পত্রিকার বেশ রমরমা বাজার চলছে।  এখনকার মত ছোটো বড়ো মেজো সেজো নেতারা এই সব পত্রিকাদের গিলে নেওয়ার যুগ চালু করেনি সেই সময়। লাল পার্টির প্রবল দাপটে এই সব ছোটো পত্রিকাও মাথা তুলে উঁচু করে হাসি মুখে কাজ করত অক্লেশে নির্ভয়ে। সরকারি টুকটাক বিজ্ঞাপন জোগাড় করে। আর সেটা দেখে আমার বেশ ভালো লাগতো আর কি। সদ্য মিডিয়াতে তখন প্রবেশ করেছিলাম আমি। এমন একজন সাংবাদিককে সামনে থেকে দেখে বেশ ভালই লাগত সেই সময়। বিশেষ করে ওনার এই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আমায় আনন্দ দিত। 

আজ মনে পরে যায় সেই যে মহাকরণের প্রেস কর্নারে আমার জন্মদিন পালন করলো সবাই মিলে। উদ্যোগ নিলো জি চব্বিশ ঘণ্টার ক্যামেরাম্যান সুনীল মুন্দ্রা। সব সাংবাদিকদের কাছে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করলো সে। সেই দিন মন্ত্রীর ঘরে ঘুরতে ঘুরতে সাধন দা হাজির হলেন প্রেস কর্নারে। সেই ধবধবে সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে ওনার মুখে হাসি। একজন সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে সম্মান দিলাম আমরা তাঁকে। প্রেস কর্ণারে সাধনদাকে বসতে দিলাম। উনি সেদিন আমার হাতে ছোটো উপহার যা প্রেস কর্ণারের সাংবাদিকরা আমায় উপহার দেবে বলে ঠিক করেছিল সেটা সাধন দা আমার হাতে তুলে দিলেন। বহুদিন আগের সেই ছবিটা সুনীল মুন্দ্রা তুলেছিল প্রেস কর্ণারে। সেটা আজ আর নেই ছবিটা কোথায় যে উবে গেলো কে জানে।কেনো জানিনা সাধনদার সেই হাসি মাখা মুখটার কথা আজ মনে পড়ে যাচ্ছে বার বার। সেই ছবিটার জন্য মনটা কেমন আঁকুপাঁকু করছে।

 
যিনি তাঁর ছোটো কাগজে অনেককে কাজের সুযোগ দিয়েছিলেন সেই সময়। উত্তরপাড়ার সৌম্য প্রথম লেখার সুযোগ পায় এই তাঁর কাগজেই। সেই কথাই সেই গল্প সৌম্য বলেছে আমায় নিজেই ফোনে। এই ভাবেই তিনি নানা জনকে নিজের সাধ্যমতো উপকার করতে চেষ্টা করেন সব সময়। কোনো দূরত্ব বজায় না রেখেই কেমন যেন কাছের মানুষ হিসেবে টেনে নিতেন নিজের কাছে সবাইকে সে ছোটো বড়ো কারুর কথা মাথায় না রেখেই। 

এমন আর এক ব্যক্তি হলেন প্রসন্ন বাবু। স্রীরামপুর বাহির শ্রীরামপুর থাকেন। প্রকাশ এনার নম্বর আমায় দেয়। প্রকাশ পাল একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক। সে জানায় সাধনদার খবর প্রসন্ন বাবু দিতে পারবেন। অভ্যাস বসত আমি ফোন করলাম আজকে তাঁকে। তাঁর কাছে শুনলাম সাধনদার নানা কথা। সাধনদার কঠোর সংগ্রামের কথা বলেন তিনি। কাগজকে কি করে ভালোবেসে গড়ে তোলা যায় সেটাই ছিল তাঁর একমাত্র ধ্যান আর জ্ঞান জীবনের। সেই চিন্তায় মশগুল থাকতেন তিনি সব সময়। সেই কাজে তাঁকে সাহায্য করতেন প্রসন্ন বাবু।

এই পুজোর আগেই তিনি তাঁর কাগজের শারদীয়া পত্রিকা বের করতেন প্রতি বছর। কঠোর পরিশ্রম করে ঘুরে ঘুরে সেই কাগজের সব কিছু লেখা বিজ্ঞাপন তিনি জোগাড় করতেন একা একাই। তাঁর কাজের প্রতি ছিল অবিচল নিষ্ঠা আর ভালবাসা। আর যে কাজে সব থেকে বেশি সহায়তা করতেন তাঁকে তিনি হলেন এই প্রসন্ন বাবু। যাকে তিনি পরে ওনার কাগজের সহ সম্পাদক করেন। তাঁর কথায় এমন মানুষ পাওয়া যায় না সচরাচর। প্রসন্ন বাবুর গল্প একদিন লিখবো আমি।

 
আমার শ্রীরামপুরে ইটিভির সেই নন্দী মাঠের অফিস থেকে সাধনদার পটুয়া পাড়ার বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি ছিল না। যাতায়াত এর পথে দেখা হতো তাঁর সাথে মাঝে মাঝেই। কুশুল বিনিময় করতেন তিনি। ধীরে ধীরে আমি কলকাতা চলে গেলে সেখানেও দেখা হতো। কলকাতায় হেয়ার স্ট্রীট এর একটি বাড়িতে তাঁর টেবিল ছিল যেখানে তিনি বসতেন। সেখানে অনেকেই তাঁর সাথে দেখা করতে আসতো। কিন্তু হঠাৎ একদিন নিজের ঘরে শ্রীরামপুরে অসুস্থ হলেন তিনি। সেই সময়ে প্রসন্ন বাবু ছিলেন তাঁর কাছে ঘরের মধ্য। তিনি খবর দিলেন গানের শিল্পী তাপস মুখোপাধ্যায়কে, জানালেন সাধন দার অসুস্থ হওয়ার কথা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ওয়ালস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই খবর পেয়ে সব হুগলী জেলার সাংবাদিকরা চলে আসেন সেখানে। 

কিন্তু খবরকে ভালোবাসা খবরের কাগজকে আঁকড়ে ধরে জীবন কাটিয়ে দেওয়া সেই মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন সেই হাসি মুখে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে। আজ এই পূজোর সময় তাঁর কথা মনে পড়ে গেলো আমার। শেষ পূজো সংখ্যা বের করা হয় তাঁর সেই সাদা পোশাকে বসে থাকা সেই চেনা ছবি দিয়ে। যে পূজোর বিশেষ শারদীয়া সংখ্যা আর দেখা যাবে না সাধনদার হাতে। হাসি মুখে তাঁকে আর শ্রীরামপুরে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যাবে না কোনোদিন। সেই সাদা পোশাকে মাথা উঁচু করে দেখবো না একজন শিরদাঁড়া সোজা রাখা মানুষ শুধু কাগজকে ভালোবেসে হাসি মুখে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। 

সাধন দা ও শ্রীরামপুর সমাচার - অভিজিৎ বসু।
আটাশ সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য প্রসন্ন রায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...