সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পূজো আসছে

সকাল থেকেই আকাশ এর মুখ ভার। কেমন যেনো থম মারা প্রকৃতির মাঝেই কুমোরটুলিতে রং এর প্রলেপ পড়ছে ধীরে ধীরে। মা দুর্গার মুখের ওপর সাদা রঙের ওপর পড়ছে গোলাপী রঙের উজ্জ্বল প্রলেপ। তুলির টানে বদলে যাচ্ছে মায়ের মুখের আদল একটু একটু করে। কেমন যেনো একটা অপরূপ রূপে বিরাজ করছেন মা আমার। সত্যিই তো রং হীন জীবনের এই মোরাম রাস্তায় জোনাকির আলো আঁধারির মাঝে কেমন যেনো উজ্জ্বল রঙের প্রকাশ ধীরে ধীরে। জল রং, তেল রং সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সেজে উঠছেন মৃন্ময়ী মা আমার চিন্ময়ী রূপে।

মা আসছেন। এখন যে শুধুই দিন গোনার পালা। ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রেখে হিসেব করার পালা। বৃষ্টি ভেজা সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলার ফাঁক গলে রাস্তায় তাকিয়ে দেখা ভেজা রাস্তার মোড়ের দিকে। চারিদিকে নানা গুঞ্জন পুজোয় ভাসবে শহর আর গ্রাম। জল থৈ থৈ ভালবাসার শহরে কেমন মন খারাপের মেঘলা ছোঁয়া লেগে গেছে যেনো চারিদিকে। তবু মন খারাপের মাঝেও যে পূজোর গন্ধ লেগে আছে একটু। ঠিক ওই হলুদ ফুলের রেণুর মতই এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যে হলুদ রেণুর স্পর্শে আমার শরীর মন ভরে যায় পূজোর ঠিক আগেই এই বৃষ্টি ভেজা সকালে।

আসলে কি জানেন বছর ভোর হাজার দুঃখ কষ্ট সহ্য করে দিন যাপন করে একটু যেনো মুক্তির স্বাদ পাওয়া এই পূজোর কটা দিন। পূজোর ছুটি, কদিনের চিন্তা মুক্ত উচ্ছল জীবন, কর্মহীন আয়হীন সংসারে দুটো টাকা আয় করতে পারার ভাবনা, রাস্তায় জনসমুদ্র আর সেই সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখতে কেমন যেনো মিশে যাওয়া। জীবনের এই কটা দিন যেনো জানলা খুলে টাটকা বাতাস এর সন্ধান মেলা। থাক না প্রতিবাদ, আর প্রতিবাদের জোরালো কন্ঠস্বর একটু চুপ থাক কটা দিন না হয়। হয়তো বলবেন অনেকে এটা হয় নাকি। 

ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ পড়তেই দেখি বাকি যে মাত্র আর এগারোটা দিন। কিন্তু সত্যি বলতে কি কেমন যেন একটা অগোছালো অবিন্যস্ত ভাব চারিদিকে। কিছুতেই যেনো গুছিয়ে ফেলা যাচ্ছে না কিছুতেই। তবু কুমোর পাড়াতে প্লাস্টিক সার্জারি করে কালো প্লাষ্টিক এর ঘেরা টোপে মায়ের মুখের আদল ধীরে ধীরে বদলে যাওয়া দেখতে বড়ো ভালো লাগে। ত্রিনয়ন এর মাঝে হালকা তুলির টানের প্রতীক্ষায় প্রহর গোনা এক পটুয়ার উদ্বিগ্ন মুখ। ওই সবুজ জামা পরা মাতব্বর অসুরের জমকালো পোশাক পরে যুদ্ধের কৌশল তৈরি করে অপেক্ষা করা কাউন্টডাউন করা ওই স্থির মুর্তিকে দেখে বড়ো মজা লাগে আমার। আর গণেশের রং মেখে দাঁড়িয়ে থাকা চুপ করা মুর্তিটি দেখে মনটা কেমন ভরে যায় আমার। নানা রঙের উজ্জ্বল ছোপ ছোপ দাগ দেখে মনটা বড়ো ভালো হয়ে যায়।

সত্যিই বিশ্বাস করুন আপনারা এই এতদিন পর বুড়ো বয়সে পূজোর গন্ধ মাখা সকাল নিয়ে এত ভাবিনি আমি কোনোদিন কোনো সময়। পূজোর রেনু মাখা সকাল নিয়ে এত মাতামাতি করিনি কোনোদিন আমি। শুধুই দৌড়ে সামিল হয়েছি, আর দৌড়ে বেড়িয়েছি জীবনভর। এত চিন্তা করিনি জল থৈ থৈ শহর আর গ্রাম এর কথা ভেবে। কে জানে হয়তো এই ভাবে পূজো আসেনি কোনোদিন আমার কাছে। এমন মেঘ বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে, প্রতিবাদ এর মাঝে পূজোর ঘণ্টা বাজেনি হয়তো। যে ঘণ্টার আওয়াজ শুনে আমিও উদ্বেলিত হইনি আগে কোনোদিন। 

তবু তো সব কিছুর মাঝে কাশের বনে দোল খায় ওই চঞ্চলমতি ফিঙে আপনমনে। ওই সবুজ মাঠের ধারে গড়িয়ে পরা নীল আকাশের শেষ সীমানায় অপেক্ষা করে শরতের হালকা মেঘ। যে মেঘের ভেলায় চেপে ভেসে আসে পূজোর মিষ্টি গন্ধ , পূজোর আনন্দ, হিল্লোল, একবুক অচেনা চোখের ভালোবাসার সুখ স্পর্শ আরও কত কি। জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসে কেমন যেনো ওই জল রং আর তেল রং কে গায়ে মেখে পূজোর আনন্দে আত্মহারা হয়ে নেচে উঠতে ইচ্ছা করে আমার সবার সাথে। জীবনকে বলতে ইচ্ছা করে দৌড় তো অনেক হলো এবারে না হয় একটু পূজোর আনন্দে রঙিন হয়ে যাই কটা দিন।

পূজো আসছে - অভিজিৎ বসু।
সাতাশে সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

  1. পুজো আসা মানেই মন কেমন।তবে বয়সের সঙ্গে বদলে যায় এই মন কেমনের দিঙ্গুলোও।এই লেখা ফের মনে করালো পুজো আসা,মহালয়ার সেই অন্যরকম দিনগুলো।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...