সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই বন্ধন এর কথা। চারিদিকে মানব বন্ধন এর নানা ছবি, নানা খণ্ড খণ্ড চিত্র ফুটে উঠেছে এদিকে ওদিকে। ঠিক যেনো কোনারকের সূর্য মন্দিরে চিত্রকলার মতই ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা নানা ভাবে নানা রূপে আমাদের চোখের সামনে। হাতে হাত ধরে, একে অপরকে আঁকড়ে জড়িয়ে বেঁচে থাকার কি কাতর আবেদন আর কি নিদারুণ চেষ্টা করা।
আসলে এই যে এইভাবে জড়িয়ে, আঁকড়ে, কাছে টেনে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা সেটা দেখে বেশ মনটা কেমন ভরে যায়, ভালো হয়ে যায় এই স্বার্থপরতার যুগে। মনে হয় সত্যিই তো আজও এই ধূলি ধূসর পৃথিবীতে একে অপরকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার এমন সুন্দর ছবি দৃশ্যমান হয়। যে পৃথিবীতে একে অপরকে টপকে, হারিয়ে,ঠেলে দিয়ে, পিছনে ফেলে, এগিয়ে চলার দুর্নিবার লড়াই অব্যাহত। সেই পৃথিবীতেই এই মানব বন্ধন এর ছবি দেখে বড়ো ভালো লাগে আমার।
বিশ্বাস করুন সেটা যে কোন দলের নির্দেশে এই মানব বন্ধনের কর্মসূচী গ্রহণ হোক রাজ্য জুড়ে। কিন্তু তার মধ্যেও যে বেঁচে থাকে অনেক কিছুই। এমন এক মানববন্ধনের ছবি আমায় পাঠিয়ে দিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি। যেনো কিছু লিখি আমি। কিন্তু কি লিখবো এর কথা। বন্ধন মুক্তির স্বাদ পাওয়ার আশায় যেখানে সব কিছু ছেড়ে ঘুরে বেড়াই আমি পথে প্রান্তরে এই সুন্দর পৃথিবীতে। সেখানে আবার এই মানুষের বন্ধন এর কথা কি লিখবো কে জানে।
কাল থেকে তাই এই ছবি এসে পড়েছিল আমার মোবাইলে ঘাপটি মেরে। আজ সকালে আবার দেখলাম সেই মানব বন্ধনের কর্মসূচী গ্রহণ করে ছবির মালায় সেজে উঠেছে আমার ফেসবুকের দেওয়াল। মনটা বড়ই ভালো হয়ে গেলো। কারুর নির্দেশে বা কারুর আদেশে এই যে হাতে হাত ধরে মানব বন্ধনের ছবিতে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিই কি বন্ধন তৈরি হয়। নাকি সবটাই লোক দেখানো আর শক্তি প্রদর্শন করা মাত্র। কে জানে এসব বললে হয়তো কেউ কেউ বলবেন সোজা সাপটা কথা বলতে পারিনা আমি। সব কিছুতেই বাঁকা দেখার অভ্যাস।
কিন্তু না, এই হাজার হাজার বন্ধনের ছবি দেখে মনে হলো এই কথা। বন্ধন মুক্তির দিনে বন্ধন তৈরি করে কি সত্যি মানবিক সম্পর্কের বন্ধন তৈরি করা যায়। যে সম্পর্ক রক্তের না হলেও কেমন করে যেনো আঁকড়ে ধরে থাকে জড়িয়ে থাকে একে অপরকে পরম ভালোবাসায়, পরম নির্ভয়ে, পরম মমতায় কে জানে। বিশ্বাস করুন দিকে দিকে এই মানব বন্ধনের ছবি দেখে এমন কথা মনে হলো আমার। যেখানে এক বাড়ির তিন হাঁড়ির বন্ধন তৈরি হয়না। যেখানে এক অফিসে কাজ করা কিছু মানুষের বন্ধন তৈরি হয় না। যেখানে স্কুল কলেজের বছর বছর পড়ুয়া হয়েও কোনো টপকে শীর্ষে ওঠার প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো বন্ধন তৈরি হয় না। সেখানে হাতে হাত ধরে হাসি মুখে বন্ধনের এই কর্মসূচী গ্রহণ সত্যিই আমাকে কিছুটা আতান্তরে ফেলে দিলো।
ভাবছিলাম আমি কি লিখবো মনে হলো মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নেতা দিলেন কিছু ছবি যা নিয়ে লেখা উচিত কিছু তাই লিখে ফেললাম আমি এমন এক বন্ধনের কথা। যে দলের এই কর্মসূচি পালন সেই জায়গায় কি একে অপরের সাথে হাতে হাত ধরে শক্ত মজবুত বন্ধন আছে একজনের সাথে অন্য জনের এক দলের সবার সাথে সবার। কে জানে এমন হাজারও প্রশ্ন আর হাজার জিজ্ঞাসা মনের মাঝে ভেসে ওঠে আমার। জানি প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা অন্তত বন্ধন নিয়ে করতে নেই। তবু এক সময়ে আমি সাংবাদিকতা করতাম তাই এমন প্রশ্ন জাগে আমার মনে। এই সব নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা করে আমার।
এই মানব বন্ধন তৈরি করলেই কি মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের, এক জীবনের সঙ্গে অন্য জীবনের, এক আত্মার সঙ্গে অন্য আত্মার সঠিক বন্ধন তৈরি হবে। কে জানে এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর খুঁজে পাই না আমি আজ। মনে মনে ভাবি আমায় যাঁরা বন্ধনের ছবি দেন ভাবেন কিছু লিখবো আমি তাদের ফোন করতে ইচ্ছা হয়। জানতে ইচ্ছা হয় আমার এই বন্ধন তৈরি কি সত্য করেই বন্ধন এর জন্য না শুধুই রাজনীতির কর্মসূচি গ্রহণ মাত্র।
জানি আজকাল এসব জিজ্ঞাসা করা আর কিছু প্রশ্ন করা ঠিক নয়, উচিৎ নয় একদম, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তবু দেওয়ালে দেওয়ালে হেলান দিয়ে এমন নানা বন্ধন এর চিত্র দেখে আমার সাদা জীবনের কালো কথাতে আঁকাবাঁকা অক্ষরে কিছু লিখতে ইচ্ছা হয় আমার। কবির সেই বন্ধন কবিতার লাইন মনে পড়ে যায়।
বন্ধন
......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বন্ধন ? বন্ধন বটে , সকলি বন্ধন —
স্নেহ প্রেম সুখতৃষ্ণা ; সে যে মাতৃপাণি
স্তন হতে স্তনান্তরে লইতেছে টানি ,
নব নব রসস্রোতে পূর্ণ করি মন
সদা করাইছে পান । স্তন্যের পিপাসা
কল্যাণদায়িনীরূপে থাকে শিশুমুখে —
তেমনি সহজ তৃষ্ণা আশা ভালোবাসা
সমস্ত বিশ্বের রস কত সুখে দুখে
করিতেছে আকর্ষণ , জনমে জনমে
প্রাণে মনে পূর্ণ করি গঠিতেছে ক্রমে
দুর্লভ জীবন ; পলে পলে নব আশ
নিয়ে যায় নব নব আস্বাদে আশ্রমে ।
স্তন্যতৃষ্ণা নষ্ট করি মাতৃবন্ধপাশ
ছিন্ন করিবারে চাস কোন্ মুক্তিভ্রমে!
মানব বন্ধন - অভিজিৎ বসু।
পয়লা অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন