একটি ঝড়, আর সেই ঝড়ের রাতে নবান্নে রাতজাগা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মূখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া সৈনিক রাত দখল কর্মসূচি পালন নবান্নের সাংবাদিকদের, মূখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন পুরসভায় রাত জাগা রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার পুরপ্রধানদের, রাজ্যের বিভিন্ন জন প্রতিনিধিদের। আর সেই ছবি দ্রুত সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করে জানান দেওয়া তাঁরওসব জেগে আছেন আজ। মূখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের রাত জেগে পাহারা দেওয়া। রাতভর টিভিতে ঝড়ের বিশেষ অনুষ্ঠান চালু থাকা টিভির নিজস্ব সময়সূচি না মেনেই। হ্যাঁ, এই ভাবেই ঝড় এর মোকাবিলায় গোটা বাংলার প্রশাসন, সংবাদ মাধ্যম সবাই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে সবাই এই ঝড়ের রাতে।
কিছু দিন আগেই রাজ্যে মেয়েদের রাত দখল কর্মসূচি পালন হয়েছে। যা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেছিল। আর তারপর এটা আর এক অন্য রাতজাগা কর্মসূচি। যে রাতজাগা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা কথা শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই। দেখা যাচ্ছে সমাজমাধ্যমে দানা কে মিহিদানা বা নকুলদানার সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে। কেই বলছেন রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে অন্যসব দিক থেকে নজর ঘোরাতেই এই রাত জাগা কর্মসূচি পালন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এমন কাজ তো তিনি আগেও করেছেন। অন্তত পরিসংখ্যান আর ইতিহাস তো সেটাই বলছে।
সেই কথার মাঝে আবার নানা পাল্টা কথাও আছে। কিন্তু ঝড় এর এই দুর্যোগের রাতে রাজ্য সরকারের প্রধান ও রাজ্যের প্রধানের এই রাতজাগা তাঁর সঙ্গে গোটা প্রশাসনের কর্তাদের রাত জাগা অবশ্যই একটা অন্য বার্তা দেয় রাজ্যের মানুষের কাছে। এই ঝড়ের রাতে রাতজাগা এক পুরসভার পুরপ্রধান এর সাথে ভিডিও কলে কথা হলো আমার বেশ কিছুক্ষণ। হুগলীর উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। পর পর তিনবার প্রায় পনেরো বছর তিনি এই পুরসভার পুরপ্রধান এর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হাসি মুখে।
তাঁর সাফ জবাব, দেখুন এই ঝড় তো বছর বছর হচ্ছে। আমাদের পুরসভায় প্রায় সব মিলিয়ে পঞ্চাশ জন বিভিন্ন বিভাগের কর্মী আজ জেগে আছি আমরা। হয়তো খুব বিপদ এলে আমরা সব একনিমেষে ঠিক করতে পারব না শহরের। বড় ডিজাস্টার হলে তার মোকাবিলা করতে কিছুটা সময় লাগে কিন্তু এই রাত জেগে অ্যালার্ট থাকলে কি হয় ঝাঁপিয়ে পড়া যায় দ্রুত। আর যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জেগে আছেন, তাঁর প্রশাসন জেগে আছে, তাই আমরাও জেগে আছি, সতর্ক আছি।
হ্যাঁ, এটা বেশ একটা ভালো যুক্তি। আচ্ছা বাম আমলে কঠিন লড়াই করে উঠে আসা এই এই পূরপ্রধান এর বক্তব্য হলো সিপিএম আমলে এমন ঝড় হয়তো হয়েছে কিন্তু এই সবের কোনো বালাই ছিল না তাদের। তারা মুখে বলতো মানুষের পাশে, মানুষের কাছে তাঁরা আছে থাকবে। কিন্তু সেটার বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল একটু অন্য রকম। এই কথাটা শুনে আমার একটু বেশ মনে পড়ে গেলো পুরোনো স্মৃতি পুরোনো দিনের কথা। আচ্ছা সত্যি সত্যিই তো জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য তো ঝড়ের সময় রাত জেগে কোনোদিন এমন পাহারা দেন নি তাঁরা মহাকরণে। সেই ছবি তো দেখিনি কোনদিন আমরা।
তাহলে কি তাদের আমলে ঝড়, জল, বন্যা, খরা এসব কিছুই হয়নি। নাকি সবটাই সুন্দর করে ম্যানেজ করতেন তাঁরা দলের সুশৃঙ্খল সংগঠন আর কমিটেড ভোট ব্যাংক দিয়ে। যার জোরে তাঁরা রাত না জেগেও বছর বছর ভোটে জিতে যেতেন। যার জন্য এসব রাতজাগা কর্মসূচির কোনো প্রয়োজনই পড়েনি তাঁদের। আর তাই এক সময়ের দাপুটে সেই দানার মতোই ক্ষমতাশালী দলের বাম নেতাদের কথা, এসব ছবি তুলে দেখানোর জন্যই করা। কাজের কাজ কিছুই হয়না এসব রাত জেগে। আর মিডিয়াও এখন সরকার এর হয়েই কথা বলে যে।
পশ্চিমবঙ্গের এই উপকূলবর্তী এলাকায় দীঘা ও সুন্দরবন এলাকায় প্রতি বছর এই ঝড়ের দাপটে ক্ষতি হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের, গরীব মানুষের হাহাকার শোনা যায়। ঝড়ের পর ক্ষতিপূরণ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখে জানান প্রধানমন্ত্রীকে। ভেঙে পরা ঘর বাড়ি সারাবার জন্য গরীব মানুষের কান্না শোনা যায়। ত্রাণ নিয়ে ছুটে যান অনেকেই। কিছু টাকা আসেও দিল্লী থেকে। সেই টাকা পেয়ে কাজও শুরু হয় এইসব দুর্গত এলাকায়। সারাই হয় বাঁধ, ফ্লাড সেন্টার গুলোকে সেই ঝড়ের আগাম খবর পেয়ে দ্রুত পরিষ্কার করে লোককে আশ্রয় দেবার জন্য ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু এই দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে বামেদের আমল আর দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বা তার আগের কংগ্রেসের শাসন কালেও কি এই পশ্চিমবঙ্গের দুই উপকূল ভাগ এলাকায় পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা সমুদ্রের উপকূল ও সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা যে প্রায় এক কোটি ত্রিশ লক্ষ মানুষ বাস করেন তাদের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কোনো আমলের সরকার কি গ্রহণ করেছে। এই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে হৈ চৈ পড়ে গেছে গোটা বিশ্বে। সেই বিষয় নিয়ে কি কোনো সরকার লাল পার্টির সরকার, জোড়া ফুলের সরকার, সেই আদ্যিকালের হাত পার্টির সরকার কি কোনো দিন ভাবনা চিন্তা করেছে। আমার মতে যতদূর মনে পড়ে না তো সেই কথা নিয়ে কেউ ভাবেনি। যাতে একটা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।
হ্যাঁ, তবে মন্দের ভালো যে এই ঝড়ের রাতে এই আমলে সবাই রাত জেগে পাহারা দিয়ে সজাগ থেকে একটা বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা যে রাজনীতির এই পাঠশালায় তারা কিন্তু বেশ মনোযোগী ছাত্র। তাই তারা ফাঁকি না মেরে সবাই মিলেই এই এক ঝড়ের ইস্যুতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বুঝিয়ে দিলো, যে রাতজাগা কর্মসূচি শুধু এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কিছু ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ করা নয়। এই ঝড়ের রাতে পাল্টা রাতজাগা করে সরকার পক্ষও বুঝিয়ে দিল তারাও দানার ক্ষোভের ক্ষতে প্রলেপ দিতে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে তারা সফল ভাবেই।
ঝড়, রাতজাগা কর্মসূচি, রাজনীতি - অভিজিৎ বসু।
পঁচিশে অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
সময়োচিত বিশ্লেষণ
উত্তরমুছুন