সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চোদ্দ অক্টোবর ভোর বেলার সেই ফোন।

নোবেল কমিটি আজকে তাদের টুইটারে এই সেই বিখ্যাত ছবিটা তুলে ধরেছে আবার। হ্যাঁ, সাইকেল নিয়ে লাল মাটির রাস্তা ধরে আপনমনে ছুটে চলেছেন সেই নোবেল জয়ী বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। এই  আজকের মত সেদিনও এক ১৪ অক্টোবর ১৯৯৮ সালে কাকভোরে বেজে উঠেছিল অমর্ত্য সেনের ফোন। তিনি এই ফোনটা ধরার আগে ভেবে নিয়ে ছিলেন নির্ঘাত একটা খারাপ খবর অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। হয় পরিচিত কেউ অসুস্থ হয়েছেন তাই ফোন এসেছে তাঁর কাছে,অথবা কিছু একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে বলে এত ভোরে তাঁর কাছে ফোনটা এসেছে৷ এই কথা ভাবতে ভাবতেই সেই ভোরবেলার ফোনটা তিনি ধরে ফেলেন। কিন্তু না, কোনো খারাপ খবর আসেনি সেদিন সেই ভোরবেলায় তাঁর কাছে৷ তিনি জানতে পারলেন অ্যাকাডেমি অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে৷ সেই দিনটা হলো আজকের সেই চোদ্দ অক্টোবর। 

যে তাঁর এই বিখ্যাত ছবিটা আজ এতদিন পরেও নোবেল কমিটি তাদের সেই টুইটারে তুলে ধরেছে। সেই বিখ্যাত মানুষ যিনি শান্তিনিকেতনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন লাল মাটির রাস্তা দিয়ে তার সেই দু চাকার প্রিয় সাইকেল করে। যে ছবিতে লেখা আছে যে তাঁর এক সহকারীকে যখন গ্রামের কোনো শিশু কামড়ে দেয় তাদের ওজন নেওয়ার সময়। সেই সময় তাঁর সহকারী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি নিজেই সাইকেল করে সেই শিশুদের ছেলে ও মেয়ে তাদের সঠিক পুষ্টি তারা পায় কি না। তাদের সঠিক পুষ্টি পেয়ে ওজন ঠিক মত তাদের হচ্ছে কি না বয়স অনুপাতে সেটা মাপতে তিনি বেরিয়ে পড়েন এই দু চাকার সাইকেল যান করে।

 
ঘুরে বেড়ান এদিক থেকে ওদিক এই গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। আর সেই গ্রাম ঘুরে বেড়ানো, গ্রামের মেঠো রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে গ্রামের প্রান্তিক মানুষের সাথে দেখা হওয়া, তাদের জীবনের সুখ আর দুঃখের কথা জানা, তাদের ঘরের ভাতের অভাবের কথা জানা সেটাই বোধ হয় তাঁকে এই একসময় নোবেল পুরষ্কার এনে দিলো। যিনি মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর দেখেছিলেন। যে দুর্ভিক্ষে মারা গেছিল প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ। যা সেই ছোটবেলায় তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। পড়ে বড়ো হয়েও সেই ছোট বেলার দুর্ভিক্ষের স্মৃতি ভুলতে পারেননি তিনি।

যিনি বুঝেছিলেন এই দেশে ভারতবর্ষে যে দুর্ভিক্ষ তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন সেটা দেখে তাঁর এই গবেষণার সূত্রপাত হয়। তিনি সাইকেল করে ঘুরে ঘুরে শান্তিনিকেতনের আশেপাশে বাস করা মানুষদের জীবনযাত্রা আর নানা তথ্য সংগ্রহ করতেন। সেই সব মানুষদের আয় কত, চালের দাম কত, এইসব জানতেন তিনি গ্রামে ঘুরে ঘুরে। 

এই জনকল্যাণকর অর্থনীতি এবং গণদরিদ্রের অন্তর্নিহিত এই কার্যকারণ বিষয়ে তাঁর এই গবেষণা। এই গবেষণার জন্যই তাঁর নোবেল পুরষ্কার পাওয়া। যে পুরস্কার পেলেন তিনি তাঁর এই দু চাকার সাইকেল করে গ্রাম আর গ্রামের অর্থনীতির সরেজমিন পরিদর্শন করে। এই একটা ছোট দু চাকার সাইকেল তাঁর নোবেল জয়ের অন্যতম বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে একদিন। সেই চির পরিচিত ছবিটা আজ আবার নোবেল কমিটি আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে এই আজকের দিনে। যে দিন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। 

অমর্ত্য সেনের মা অমিতা সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত স্নেহধন্য। অমর্ত্য'র নামকরণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। তাই ঠাকুর বাড়ীর সাথে তাঁর ছোট কাল থেকেই একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। তাঁর সেই ছোটবেলায় এই আশ্রমে পড়াশোনার শুরু। তারপর ধীরে ধীরে একের পর এক হার্ডেল টপকে তাঁর এগিয়ে চলা।  ভারতবর্ষের ইতিহাসে সম্ভবত তিনি সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি যিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান হওয়ার বিরল সম্মান অর্জন করেছেন। যা সত্যিই খুব গর্বের বিষয়। 

এরপর তিনি ট্রিনিট্রিতে ফেলোশিপ অর্জন করায় চার বছরের জন্য নিজের পছন্দসই যে-কোনও বিষয় নিয়ে পড়াশুনোর সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অমর্ত্য সেন যে বিষয় বেছেছিলেন সেটা হলো দর্শন। এই বিষয় পরে তাঁর গবেষণার কাজে অনেক সাহায্য করেছে এই দর্শন শাস্ত্র৷ অবশ্য প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় থেকেই দর্শনের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল৷ সেখানে নিয়মিত দর্শন চর্চা এবং বিতর্কে অংশগ্রহণ করতেন তিনি। তর্কে তুখোড় দক্ষতা ছিল তাঁর। আর এই দর্শন শাস্ত্র তাঁকে আরও নানা ভাবে তাঁর এই দুর্ভিক্ষ আর মানুষের ক্ষুধা নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করে। 

অমর্ত্য সেন  এর জন্ম 3 নভেম্বর, 1933 সালে শান্তিনিকেতনে। তিনি হলেন একজন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ যিনি কল্যাণ অর্থনীতি এবং সামাজিক পছন্দ তত্ত্বে অবদানের জন্য এবং সমাজের দরিদ্রতম সদস্যদের সমস্যায় তাঁর আগ্রহের জন্য অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সেন দুর্ভিক্ষের কারণগুলির উপর তার কাজের জন্য সর্বাধিক পরিচিত, যা খাদ্যের বাস্তব বা অনুভূত ঘাটতির প্রভাব প্রতিরোধ বা সীমিত করার জন্য ব্যবহারিক সমাধান গুলির বিকাশের দিকে পরিচালিত করেছিল তাঁকে।

কল্যাণ অর্থনীতি সম্প্রদায়ের কল্যাণে তাদের প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক নীতিগুলি মূল্যায়ন করতে চায়। অমর্ত্য সেন, যিনি তার কর্মজীবনকে এই ধরনের বিষয়গুলিতে উৎসর্গ করেছিলেন, তাকে "তাঁর পেশার বিবেক" বলা হয়। তাঁর প্রভাবশালী মনোগ্রাফ কালেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার (1970)-যা ব্যক্তি অধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন এবং স্বতন্ত্র অবস্থার তথ্যের প্রাপ্যতার মতো সমস্যাগুলিকে সম্বোধন করে- গবেষকদের মৌলিক কল্যাণের বিষয়ে তাদের মনোযোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

তিনি দারিদ্র্য পরিমাপের একটা পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন যা দরিদ্রদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য দরকারী তথ্য দেয়। উদাহরণস্বরূপ, অসমতার উপর তার তাত্ত্বিক কাজ একটি ব্যাখ্যা প্রদান করে যে কেন কিছু দরিদ্র দেশে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা কম, যদিও পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি জন্মগ্রহণ করে এবং পুরুষদের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার বেশি। তিনি দাবি করেছেন যে এই তির্যক অনুপাতটি সেইসব দেশের ছেলেদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্য চিকিত্সা এবং শৈশবকালীন সুযোগের ফলে।

দুর্ভিক্ষের প্রতি তাঁর আগ্রহ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। একটি নয় বছর বয়সী বালক হিসাবে, তিনি 1943 সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। যেখানে ত্রিশ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। এই বিস্ময়কর জীবনহানি অপ্রয়োজনীয় ছিল বলেই তাঁর মনে হয়েছিল এক সময়ে।  তিনি বিশ্বাস করতেন যে সেই সময়ে ভারতে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ ছিল কিন্তু এর বন্টন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল কারণ বিশেষ গোষ্ঠীর লোক - এই ক্ষেত্রে গ্রামীণ শ্রমিকরা - তাদের চাকরি হারিয়েছিল এবং তাই তাদের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা কমে গেছিলো।

 তার দারিদ্র্য এবং দুর্ভিক্ষ: এনটাইটেলমেন্ট অ্যান্ড ডিপ্রাইভেশন (1981) বইতে , তিনি প্রকাশ করেছেন যে দুর্ভিক্ষের অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহ উল্লেখ যোগ্যভাবে হ্রাস পায়নি। পরিবর্তে, মজুরি হ্রাস, বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান খাদ্য মূল্য এবং দুর্বল খাদ্য-বন্টন ব্যবস্থার মতো সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলির একটি সংখ্যা সমাজের নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে অনাহারের দিকে পরিচালিত করে। আর যে কারণে দেশে শুরু হয় দুর্ভিক্ষ।

খাদ্য সংকট পরিচালনাকারী সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি তাঁর এই কাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তার মতামত নীতিনির্ধারকদের শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক দুর্ভোগ কমানোর জন্য নয় বরং দরিদ্রদের হারানো আয় প্রতিস্থাপনের উপায় খুঁজে বের করার জন্য-উদাহরণস্বরূপ, পাবলিক-কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে-এবং খাদ্যের জন্য স্থিতিশীল মূল্য বজায় রাখার দিকে মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করেছিল।

রাজনৈতিক স্বাধীনতার একজন জোরালো রক্ষক, তিনি বিশ্বাস করতেন যে কার্যকর গণতন্ত্রে দুর্ভিক্ষ ঘটে না কারণ তাদের নেতাদের অবশ্যই নাগরিকদের দাবির প্রতি আরও প্রতিক্রিয়াশীল হতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য , তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, সামাজিক সংস্কার - যেমন শিক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতি - অবশ্যই অর্থনৈতিক সংস্কারের আগে হওয়া উচিত এটাই ছিল তাঁর অভিমত।

 
সহজ কথায়, দীর্ঘস্থায়ী অনুমান যে কোনো প্রদত্ত আয় বৃদ্ধির ফলে একজন দরিদ্র ব্যক্তি ধনী ব্যক্তির চেয়ে বেশি অতিরিক্ত সন্তুষ্টি অর্জন করবে। সামাজিক নীতির স্তরে, এর অর্থ হল ধনী থেকে দরিদ্রে সম্পদ পুনঃবণ্টনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেটা আজ হচ্ছে কোথায়। ধনী আরও ধনবান হচ্ছে। গরীব আরও দরিদ্র হচ্ছে। যেমন প্রগতিশীল আয়করের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির যোগফলকে বাড়ানো যায় না। 

অর্থনৈতিক নীতি বিচার করার জন্য তখন একটি নতুন এবং আরও সীমিত মাপকাঠি তৈরি করা হয়েছিল: একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে অন্যের চেয়ে উচ্চতর বিচার করা হয়েছিল শুধুমাত্র যদি অন্তত একজন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে খারাপ না করে উন্নত করা হয়। বিকল্পভাবে, একটি অর্থনৈতিক অবস্থা পূর্ববর্তী একটি থেকে উচ্চতর বিচার করা যেতে পারে যদিও কিছু ভোক্তাদের খারাপ করা হয়েছিল যদি লাভকারীরা ক্ষতিপূরণ দিতে পারে এবং এখনও আগের চেয়ে ভাল হতে পারে। 

যাইহোক, বেশ কয়েকটি বিকল্পের মধ্যে বিচার করার কোন উপায় থাকবে না যার মধ্যে সবাই এই শর্তটি পূরণ করেছে। তাঁর এই দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব,জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণ দারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান সারা বিশ্ব মনে রাখবে। যিনি শুধু নোবেল পুরস্কার নয় তিনি ভারতরত্ন পান। কিন্তু তিনি বিশ্বনাগরিক হয়েও নিজের শিকড়কে ভুলে যাননি তিনি। তাই মাঝে মাঝেই তিনি ছুটে আসেন তাঁর সেই প্রিয় শান্তিনিকেতনে, সেই প্রিয় তাঁর বাড়ী প্রতীচিতে। হয়তো সেই বাড়ির বারান্দায় বসে ভাবেন তিনি, লালমাটির এই রাস্তা ধরে দু চাকার সাইকেল নিয়ে যদি আবার বেরিয়ে পড়া যেতো গ্রাম দেখতে, গ্রামের মানুষদের জীবন বদলেছে কিনা দেখতে। 

চোদ্দ অক্টোবর ভোর বেলার সেই ফোন - অভিজিৎ বসু।

ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...