সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জয় দেবী কুষ্মান্ডা

নবদুর্গার চতুর্থ রূপ হলো দেবী কুষ্মাণ্ডা। নবরাত্রি উৎসবের চতুর্থ দিনে তার পূজা করা হয়। দেবীর এইরকম অদ্ভুত নাম কেন? ‘কু’ শব্দের অর্থ কুৎসিত এবং ‘উষ্মা’ শব্দের অর্থ ‘তাপ’; ‘কুষ্মা’ শব্দের অর্থ তাই ত্রিতাপ বা দুঃখ–দেবী জগতের সব দুঃখ যন্ত্রণাকে গ্রাস করে নিজের উদরে ধারণ করেন, তাই তার নাম দেবী ‘কুষ্মাণ্ডা’।  মহাদেব যেমন সমুদ্রমন্থনের সময় সমস্ত হলাহল পান করে নীলকণ্ঠ হয়েছেন, ঠিক তেমনি জগজ্জননী দুর্গা আদ্যাশক্তি জগতের সর্বপ্রকার জ্বালা-যন্ত্রণার হাত থেকে সন্তানদের সর্বদা রক্ষা করতে করুণায় দ্রবীভূত হয়ে স্বেচ্ছায় সব তাপ নিজের শরীরে গ্রহণ করেন। দূরিতবারিণী–‘ত্রিতাপহারিণী মায়ের নাম তাই কুষ্মাণ্ডা।” দেবী কুষ্মাণ্ডা ত্রিনেত্রা অষ্টভুজা –তাঁর ডান দিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে পদ্ম, বাণ, ধনুক ও কমণ্ডলু; এবং বাঁদিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে চক্র, গদা, অমৃতপূর্ণ রুধিরাপ্লুত ঘট ও জপমালা। তাঁর বাহন সিংহ। যদিও কাশীর মন্দিরে তাঁর  বাহন বাঘ।

নবরাত্রির চতুর্থ দিনে সাধক তাঁর মনকে অনাহত চক্রে রেখে দেবী কুষ্মাণ্ডার পূজা করেন। দেবীর পূজায় সমস্ত রোগশোক দূরীভূত হয়; ভক্ত আয়ু, যশ, বল , আরোগ্য লাভ করেন। মনে করা হয়, এই দেবী কুষ্মাণ্ডা অল্প পূজাতেই সন্তুষ্ট হন। তাঁর পূজায় কুষ্মাণ্ড (কুমড়ো) বলি দেওয়ার রীতি আছে। কাশীতে দেবী কুষ্মাণ্ডার মন্দির বিখ্যাত। কাশীতে তিনি দুর্গা নামেই সমধিক পরিচিতা। তিনি কাশীর দক্ষিণ দিকের রক্ষয়িত্রী। কাশীখণ্ড-এ রয়েছে, অসি নদীর সঙ্গমস্থলে এই কুষ্মাণ্ডার অধিষ্ঠান। দেবীর মন্দিরটি বেশ বড়ো ও বহুচূড়াবিশিষ্ট। লাল পাথরের তৈরি সুদৃশ্য এই মন্দিরের কাছেই কাশীর বিখ্যাত তীর্থ দুর্গাকুণ্ড। এই মন্দিরে হিন্দুধর্মে অবিশ্বাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী কুষ্মাণ্ডার পশ্চিমমুখী দুই হাত উঁচু বিগ্রহটি অবস্থিত। কাশীতে একমাত্র এই মন্দিরেই নিয়মিত বলিদান হয় (এছাড়া কালরাত্রি মন্দিরে বছরে একবার বলি হয়)। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির চতুর্থীর দিন এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।


মা কুষ্মাণ্ডা পূজার বিধি  হলো নবরাত্রির সময় মা দুর্গার ৯টি রূপের পূজা করা হয়। এর মধ্যে কুষ্মাণ্ডা দেবী হলেন দুর্গার চতুর্থ রূপ। নবরাত্রির চতুর্থ দিনে দেবী কুষ্মাণ্ডার পূজা করার প্রথা রয়েছে। এই দিনে মা কুষ্মাণ্ডার আরাধনা করলে ভক্তরা আয়ু, যশ, শক্তি ও স্বাস্থ্য লাভ করেন। মাতা কুষ্মাণ্ডাকে শক্তির দেবী বলা হয়। 

মা দুর্গার এই অবতারের নাম তিনটি শব্দ নিয়ে গঠিত। 'কু' অর্থ ছোট, 'উষমা' অর্থ শক্তি এবং  'আন্দা' অর্থ একটি গোলক। অর্থাৎ, মা কুষ্মাণ্ডার নামের সম্পূর্ণ অর্থ হল- শক্তির একটি ছোট বল। কথিত আছে, যখন মহাবিশ্বে চারিদিকে অন্ধকার ছিল, তখন মা দুর্গা এই রূপে আবির্ভূত হয়ে চারিদিকে আলোর সৃষ্টি করে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন। এই কারণে মা কুষ্মাণ্ডা আদি স্বরূপা নামেও পরিচিত।

হিন্দু ধর্মে বলা হয়, যখন সৃষ্টির কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তখন এই দেবী মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। এটিই আসল রূপ, মহাবিশ্বের আদি শক্তি। তাদের বাসস্থান সৌর জগতের অভ্যন্তরীণ জগতে। সেখানে বসবাস করার ক্ষমতা কেবল তাদেরই আছে। তাদের দেহের তেজ ও দীপ্তি সূর্যের মতো উজ্জ্বল। কুষ্মাণ্ডা দেবীর আরাধনা করলে ভক্তদের সকল রোগ ও দুঃখ নিরাময় হয়। তাদের ভক্তি আয়ু, খ্যাতি, শক্তি ও স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে। মা কুষ্মাণ্ডা খুব সামান্য সেবা এবং ভক্তি দ্বারা খুশি হতে চলেছেন।

মা কুষ্মাণ্ডা হলেন নবদুর্গা দেবীর চতুর্থ রূপ। নবরাত্রিতে দুর্গাপূজার চতুর্থ দিনে দেবী মাকে পূজা করা হয়। মা দেবী তার ছোট্ট এবং হালকা ঐশ্বরিক হাসি দিয়ে "আন্দা" নামক একটি ডিমের আকারে সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টি করেন, যাতে মা দুর্গার নাম হয় কুষ্মান্ডা।


দেবী দুর্গা এই অবতারে খুব খুশি এবং এটি বিশ্বাস করা হয় যে যখন কোনও সৃষ্টি বা মহাবিশ্বের অস্তিত্ব নেই এবং সেখানে চিরন্তন অন্ধকার ছিল, যা মা কুষ্মান্ডা হাসলে শেষ হয়েছিল। যাতে মা কুষ্মাণ্ডা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা হিসেবে পরিচিত। মা কুষ্মাণ্ডাকে "আদি শক্তি" নামেও ডাকা হয়। সুর্যমন্ডলের মূল (সূর্য) হল দেবী মায়ের বাসস্থান। তিনিই একমাত্র যিনি সূর্যলোকের (সূর্য) কেন্দ্রে বাস করার ক্ষমতা ও শক্তি রাখেন। তার শরীর প্রদীপ্ত সূর্যের মত জ্বলছে। সমস্ত দিক তার ঐশ্বরিক হাসি থেকে আলো পায় যার মধ্যে সূর্য ঈশ্বর নিজেই।

মা কুষ্মান্ডা "অষ্টভুজা" নামেও পরিচিত কারণ তাকে প্রায়শই আটটি বাহু বিশিষ্ট হিসাবে চিত্রিত করা হয়। তার সাত হাতে তিনি কমন্ডলু, ধনুক, তীর, পদ্ম, অমৃতের একটি জার, চাকতি এবং গদা ধারণ করেন। তার অষ্টম হাতে তিনি একটি জপমালা ধারণ করেন যা আটটি সিদ্ধি এবং নয়টি নিদ্ধি দিতে সক্ষম। তিনি একটি সিংহে চড়েছেন যিনি "ধর্ম" প্রতিনিধিত্ব করেন। তার পূজা করলে রোগ-শোক দূর হয় এবং আয়ু, নাম, শক্তি ও স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

 সকালে স্নান করার পরে, মা কুষ্মাণ্ডার ধ্যান করলে মন শান্ত হয়। যে স্থানে মার ঘটস্থাপনা করা হয় সেই স্থান পরিষ্কার করার পর একটি লাল কাপড়ে মাতা কুষ্মাণ্ডার মূর্তি বা ছবি রাখলে ভালো হয়। এবার কুমকুম ও অক্ষত দিয়ে মা কুষ্মান্ডাকে তিলক পরিয়ে দিয়ে মার পূজা করা হয়। মাতা কুষ্মাণ্ডার ছবির কাছে ধূপ জ্বালিয়ে মায়ের পূজা করলে মন শান্ত হয়। মা কুষ্মান্ডা সবুজ রং খুব পছন্দ করেন, তাই তাকে সবুজ ফুল ও নৈবেদ্য দেওয়া ভালো। পুজো শেষ করার আগে কুষ্মাণ্ডা দেবীর আরাধনার মন্ত্র পাঠ করা হয়।


এরসাথে কুষ্মাণ্ডা মাতার আরতি পাঠ করতে হবে। এই মন্ত্র পাঠ করলে সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়। মা কুষ্মাণ্ড ভোগ (মা কুষ্মাণ্ড প্রসাদ) খাদ্য নিবেদন ছাড়া মায়ের পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। মা কুমড়ো খুব পছন্দ করেন। তাই মার পুজোয় কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। অতএব, মাতা কুষ্মণ্ডাকে প্রসাদ নিবেদন করতে ভুলবেন না। এই দিনে মালপুয়া দেওয়ার প্রথা রয়েছে।কোনো কারণে মালপুয়া দিতে না পারলে দেবী মাকে গুড় নিবেদন করতে পারেন। মাতা কুষ্মাণ্ডাকে মালপুয়া নিবেদন করে, মাতা প্রসন্ন হন এবং আমাদের সুখ ও সমৃদ্ধি দিয়ে আশীর্বাদ করেন।

মা কুষ্মাণ্ডার মন্ত্র হলো।

ওম হ্রীম দেবায়য় নমঃ, বন্দে বনচিতা কামার্থে 

চন্দ্রার্ধকৃতশেখরম, সিংহরুধাষ্টভুজা 

কুশমানন্দয়শস্বনীম, ওম আইম হ্রীম ক্লীম 

কৃষ্মানদায়য় নমঃ, ইয়া দেবী সর্বভূতেষু, মা 

কুষ্মাণ্ডা রূপেন প্রতিষ্টান, নমস্তস্যই নমস্তস্যই, 

নমস্তস্যায় নমো নমঃ।"

মা কুষ্মাণ্ডার আরতি হলো।

“কুষ্মান্দা জয় জগ সুখদানি,

মুজ পর দিয়া করো মহারাণী।

পিংলা জ্বলা মুখী নিরালী,

শকুম্ভরী মা ভুলি ভালি।

লাখো নাম নিরালে তেরে,

ভক্ত কে মাতওয়ালে তেরে।

ভীম পর্বত পার হ্যায় ডেরা,

সুইকারো প্রনাম ইয়ে মেরা।

সবকি সুনতি হো জগদম্বী,

সুখ পাহুঞ্চতি হো মা অম্বে।

তেরে দর্শন কা ম্যায় পিয়াসা,

পূর্ন কর দো মেরি আশা।

মা কে মন মে মমতা ভরি,

কিয়ুন না সুনেগি আরজ হামারি।

তেরে দার পার কিয়া হ্যায় ডেরা,

ডোর করো মা সংকত মেরা।

মেরে কাজজ পুর কর দো,

মেরে তুম ভান্ডারে ভর দো।

তেরা দাস তুঝে হাই ধ্যায়ে,

ভক্ত তেরে দার শীষ ঝুকায়ে।”


এই দুর্গাপূজায় নবরাত্রির চতুর্থ দিনে দেবী কুষ্মাণ্ডার পূজার খুবই গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে, যোগী ও সাধক বা অন্যান্য নিবেদিত ভক্তরা তাদের মন অনাহত চক্রে রাখে। কুশমান্ডা আধ্যাত্মিক অনুশীলনে অনাহত চক্রের প্রতিনিধিত্ব করে। নবরাত্রির সময় কুষ্মাণ্ডা পূজা মানুষের স্বাস্থ্য ও শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই আজকে চতুর্থীর দিনে আদি মাতাকে স্মরণ করে আমরা এটাই প্রার্থনা করি, মা তোমার আশীর্বাদ দাও আমাদের সবাইকে। জয় মা দুর্গা। জয় দেবী কুষ্মাণ্ডা।

জয় দেবী কুষ্মান্ডা - অভিজিৎ বসু।
ছয় অক্টোবর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...