সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিশ্ব শিরদাঁড়া দিবস

আজ বিশ্ব শিরদাঁড়া দিবস। কোনো কিছুরই আর দিন পালন বা দিবস পালন এর বাকি রইলো না। সারা বিশ্ব জুড়েই ষোলো অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব শিরদাঁড়া দিবস। যে শিরদাঁড়া নিয়ে এত হৈ চৈ আর হুল্লোড়। কথায় কথায় আমি অনেকের কাছেই শুনি, না না দাদা আমি সব বেচে দেবো রাজা হরিশচন্দ্রের মত। কিন্তু ওই  জিনিসটা আমি কিন্তু বেচতে পারবো না আমি কিছুতেই। বউ, বাচ্চা, বাবা, মা, শ্বশুড় শ্বাশুড়ী সব বিক্রি করতে পিছপা হব না কোনো সময় কিন্তু ওই যার জন্য দাঁড়িয়ে আছি হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটছি না সেটাকে বন্ধক রেখে দিয়ে চলতে পারব না আর বিক্রি করা তো দুরস্ত।

 এই বিশেষ দ্রোহকাল আর আন্দোলনে ভেসে যাওয়া শহরে এই শিরদাঁড়া এখন হট কেক এর মতো বিকোচ্ছে, অলিতে গলিতে দুপুর বেলায় বা সকাল বেলায়। এই তো সেদিন দেখলাম ঝুড়ি করে এক ফেরিওলা হাঁকতে হাঁকতে যাচ্ছে ওই ঠিক বৌবাজার এর ভূপতি চরণ এর দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে শিরদাঁড়া নেবে গো শিরদাঁড়া। আমি ওই ভীড় এর পূজো দেখতে নেবু তলা পার্ক থেকে বেরিয়ে দেখলাম বিভিন্ন সাইজের শিরদাঁড়া বিক্রি আছে ওর কাছে। 

আমি ওকে ডাকলাম বললাম তুমি এই শিরদাঁড়া কিনেছো কোথা থেকে ভাই। হালকা হেসে করিম চাচা অবাক চোখে আমার দিকে দেখলো। বললো, সেকি কথা বাবু আপনে জানেন না কোথায় এটি পাওয়া যায়। আমি বললাম না গো সত্যিই বলছি আমি জানিনা কোথায় পাওয়া যায় শিরদাঁড়া। আর দেখিনি এই জিনিস বাজারে কাউকে ফেরি করতে।  করিম হেসে বলল বাবু সেই বহুদূর থেকে আমি আসছি সেই অজ গা থেকে। গ্রামে বাবু তো কোনো কাজ কাম নাই। আর মাঠে চাষবাস এর অবস্থাও খুব ভালো নয় যে। আর এদিকে শহরে শুনলাম নাকি শিরদাঁড়ার ভালো চাহিদা আছে। যে যাকে পারছে শিরদাঁড়া উপহার দিতে ব্যস্ত আছে সবাই। 

কেউ পুলিশকে হাসতে হাসতে শিরদাঁড়া উপহার দিচ্ছে, কেউ অফিসের কোনো কর্মী তার পাশের একসাথে কাজ করা বন্ধু রূপী শত্রুকে বলছে এই নে তোর জন্য নিয়ে এলাম বাজার থেকে কিনে। এটা পড়ে নে তুই বলে শিরদাঁড়া উপহার দিচ্ছে একজন অন্যজনকে হাসতে হাসতেই। রাজনীতি করা লোকদের বাড়িতেও নাকি মাঝে মাঝে শিরদাঁড়ার দরকার পড়ছে আজকাল আর তাই অনেক ভেবে চিন্তে খুঁজে পেতে এই ব্যবসা করবো বলে কিছু নকল শিরদাঁড়া জোগাড় করে শহরে চলে এলাম যা দু একটা বিক্রি হয় এই আর কি। 

আমি তো করিম এর কথা শুনে থ। সেকি তুমি তাহলে, আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে করিমের উত্তর বাবু ওই জিনিসটা কি আর আসল আপনি খুঁজে পাবেন কোথাও মনে হয় না সেটা আর আপনে পাবেন না।
আমি একটু ওর এই কথা শুনে ঝুঁকে পড়লাম ওর দিকে। দেখলাম ও বিকেল বেলায় নরম রোদ এর আলো মেখে খালি পায়ে হাঁকতে হাঁকতে গলির বাঁকে মিলিয়ে গেলো শিরদাঁড়া নেবেগো কেউ শিরদাঁড়া নেবে বলে। আমিও ধীরে ধীরে হেঁটে ভীড় কাটিয়ে নিজের শিরদাঁড়ার জোরে বাড়ী ফিরে এলাম। 

আসলে করিম বোধহয় ঠিক কথাই বলেছে সত্যিই তো আসল শিরদাঁড়া ওই বা পাবে কোথায়। আর যারা সব কথায় কথায় শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলা মানুষ আমি কারুর কাছে বিকিয়ে যেতে পারিনি বলে জীবনে কিছুই করতে পারিনি বলে চিৎকার করে আর বলে আমি ওই ঝাঁকের মরশুমের ইলিশ মাছ নই তারা কি সত্যি সত্যিই শিরদাঁড়া সোজা করেই চলে সারাটা জীবন কে জানে। মনে পড়ে গেলো সেই বিখ্যাত লাইন এর কথা, তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়।

 হ্যাঁ, বাংলায় এখন একটাই কথা খুব চলছে সেটা হলো শিরদাঁড়া বিক্রি নেই। দু হাজার বারো সাল থেকেই চলছে বিশ্ব শিরদাঁড়া দিবস পালন। দিন দিন এই শিরদাঁড়ার রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যা দ্রুত হারে বাড়ছে। আর তার জন্য এই বছর এই দিবসের থিম হলো,সাপোর্ট ইয়োর স্পাইন। নিজের মেরুদণ্ডকে ভালো রাখতে সুস্থ রাখতে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে।

 এই তো আমার বন্ধু ভজন শিরদাঁড়ার রোগ নিয়ে গত দেড় বছর ধরে বিছানায় শুয়ে আছে। কত কিছু চিকিৎসা করছে কিন্তু কিছুতেই কি হয়েছে কেনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না সে সেটাই ধরা যাচ্ছে না আর দেড় বছর ধরে। শুধু দৌড়ে বেড়ানোই সার হয়ে গেছে ওর।  দেখতে দেখতে দেড় বছর সে ঘরবন্দী জীবন কাটিয়ে যাচ্ছে সে। কি যে হলো ওর কে জানে।  শিরদাঁড়া বড়ো বিষম বস্তু একবার বিগড়ে গেলে বড়ই যন্ত্রণা আর কষ্টদায়ক যে। 

আসলে মেরুদণ্ডস্বল্পতা এই শব্দটি একটু অচেনা কিন্তু এটাই এখন আমাদের মনের ভেতর এই শব্দ ঘুরপাক খায় মাঝে মাঝে। আমাদের দেহে নানা ধরনের উপাদান আছে। তার যে কোনো একটি জিনিস কমে গেলে আমরা তাকে বলতে স্বল্পতা যোগ করি।আর তাই মেরুদণ্ড একটু দুর্বল হলে কিন্তু মেরুদণ্ড স্বল্পতা বলতে পারি না আমরা। এটা একটা বৈষম্য মনে হয় আমার।  

এই প্রাণীজগতের দুটি ভাগ একটি মেরুদণ্ডী অন্যটি অমেরুদণ্ডী। পুরো প্রাণীজগতের সিংহভাগ প্রাণীই হচ্ছে অমেরুদণ্ডী প্রাণী। একটু বইপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে সাতানব্বই শতাংশ প্রাণী অমেরুদণ্ডী প্রাণী। মেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা মোট ষাট হাজার। আর তার উল্টোদিকে প্রায় অমেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ লাখ থেকে প্রায় তিন কোটি। তার মানে এই যে এত শিরদাঁড়া, শিরদাঁড়া করে হৈ চৈ হুল্লোড় হাটে মাঠে ঘাটে, অফিস আদালত ট্রেন বাস সব জায়গায় সারা বিশ্বে মেরুদণ্ডীদের উপস্থিতি অত্যন্ত কম। 

কিন্তু আমরা এই মানুষ যারা সবাই দু পেয়ে হোমো সেপিয়ান্স এর অন্তর্ভুক্ত জীব তারা সবাই জন্ম থেকেই এই একটি মেরুদণ্ড আমরা বিনামূল্যে পেয়ে যাই সবাই। কিন্তু সেই বিনে পয়সায় পেয়ে যাওয়া শিরদাঁড়া নিয়ে কি সারা জীবন সোজা রেখে চলা যায়। নাকি জীবনের নানা ঘাত, প্রতিঘাত আর সংঘাতে সেই শিরদাঁড়া অভিযোজিত হতে হতে, বিবর্তিত হয় আর তার দৈর্ঘ্য ধীরে ধীরে ছোটো হতে থেকে কারণে আর অকারণে। কিছুটা নিজেদের স্বার্থে আর বাঁচার সুবিধার্থে। কে জানে এই দিবসে এই প্রশ্ন আমার মনের মাঝে ঘুরপাক খায় বারবার।

 আমরা কি তাই হাসিমুখে কেউ বলতে পারি আমার একটু মেরুদণ্ডস্বল্পতা আছে। তাই তোমার মতই ঋজু মেরুদণ্ড আমার নয়। তুমি কিন্তু সত্যি স্যালুট যোগ্য একজন। না, এটা কোনো ভাবেই শোনা যাবে না। এটা যেনো আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র। চারিদিকে তো মেরুদণ্ড হারিয়ে যাওয়া দেখছি আমরা। অফিসে সেই মেরুদণ্ড হারানো জি হুজুর মার্কা লোক দিন দিন বাড়ছে। যাঁরা সবসময় জি ছাড়া আর কোনোদিন না বলতে পারেন না। সে যাকগে এই বিশ্ব শিরদাঁড়া দিবসের দিনে ভঙ্গুর দ্রুত ছোটো হয়ে আসা শিরদাঁড়া নিয়ে রাতদুপুরে টানাটানি করে কি লাভ বলুন তো।

 কিন্তু স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান বলছে শিরদাঁড়া রোগে আক্রান্ত পিঠে ব্যথ্যা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে সারা বিশ্বে। আর তাই এই দিন পালন করা। চিকিৎসা ব্যবস্থা বলছে এই শিরদাঁড়ার রোগের এখন চিকিৎসার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রথমে ছিল এক্সরে। তারপর  উনিশশো আশির দশকে এল সিটি স্ক্যান, এম আর আই এসেছে। সারা বিশ্বে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ এই শিরদাঁড়ার রোগে ভুগে কষ্ট পাচ্ছেন। আর যারা ব্যাথা কমে যাবে ভেবে মুঠো মুঠো পেন কিলার খাচ্ছেন তারাও কিন্তু ভুল করছেন। কারণ ব্যাথা কমাতে পেনকিলার খাওয়া ঠিক নয় একদম। তাহলে সমস্যা আরও বাড়বে। 


চিকিৎসকদের কথা সারাদিন মোবাইল দেখুন সেই নেশা তো ছাড়বে না আমাদের। কিন্তু ঘাড় কাঁধ বেঁকিয়ে মোবাইল এর দিকে তাকানো বা ল্যাপটপে কাজ করা এড়িয়ে চলতে হবে আমাদের। আর খাবার এর মধ্য ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, শরীরের হাড় মজবুত করে এমন খাবার খেতে হবে বেশি করে। এত গেলো নানা ভাবে শিরদাঁড়া সোজা করে রাখার টোটকা।

 কিন্তু ওই যে কলকাতা টিভির হুগলী জেলার রিপোর্টার সৌমেন রায় চৌধুরী যে সত্যিই শিরদাঁড়া সোজা রাখা একজন মানুষ হয়ে কেমন হাসি মুখে নিজের কর্ম ক্ষেত্রের সেই চেনা চ্যানেলের এক বিরাট মাতব্বরকে তার লোগো জমা দিয়ে হাসতে হাসতেই বাড়ী ফিরে এলো। বর্তমানে সে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আপনমনে গাড়ি নিয়ে রাত বিরেতে জলে ভিজে হাসি মুখে। এটাই তো আসল শিরদাঁড়া সোজা রেখে হাসি মুখে চলা আর বেঁচে থাকা। যার জন্য আমার গর্ব হয়। ওই ভাবে কেউ কিছু বলার আগেই টেবিল এর ওপর লোগো জমা দিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ী চলে আসা। 

আর ওই যে কবে থেকে আমি শুধু দাদার আমলের লোক বলে এক দিদির কাছে কথা শুনলাম,  দাদার আমলে যা করেছ ওসব ভুলে যাও। আমি সেই বিখ্যাত দিদিকে টোটো চালাবো বলে কিছু না ভেবেই নিজের শিরদাঁড়ার জোর দেখিয়ে আর কলজের জোর দেখিয়ে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম বিন্দাস এলোমেলো এলেবেলে জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়াবো বলে কেমন হাসি মুখে কাজ ছেড়ে চলে এলাম। এটাই বোধহয় সত্যিই করেই শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলা জীবনে। 

কারুর কাছে মাথা নত না করে, কারুর পা না ধরে , একদম বুকের জোরে একা একাই বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। হাসি মুখে কষ্টকে বুকের মাঝে চেপে রেখে  সবাইকে টোটো চালক বলে ঘুরে বেড়ানো। তাহলে বোধহয় ওই রাস্তায় শিরদাঁড়া বিক্রি বলে ঘুরে বেড়ানো লোকটা ওই করিম চাচা ঠিক কথাই বলেছিল। বাবু আসল সোজা শিরদাঁড়া আর পাবেন কোথায় সব যে নকল শিরদাঁড়াতে ভরে গেছে বাবু।



 আমারও কেমন এই রাতের অন্ধকারে একা একা শিরদাঁড়া নিয়ে লিখতে লিখতে মনে হলো দ্রুত পৃথিবীতে কমে যাওয়া এই শিরদাঁড়া সোজা রেখে বেঁচে থাকা লোকের সংখ্যা বোধহয় খুব কমে যাচ্ছে দিন দিন। না, হলে কি আর এত হৈ চৈ হুল্লোড় এর মাঝে শিরদাঁড়া নিয়ে এত রিসার্চ করা লোকজন এর মাঝে এই বিশ্ব স্পাইন দিবস পালনের দিনে, সত্যিই বোধহয় আসল  শিরদাঁড়ার জোরে বেঁচে থাকা মানুষের বড়ই অভাব। জয় শিরদাঁড়ার জয়। 

বিশ্ব শিরদাঁড়া দিবস - অভিজিৎ বসু।
ষোলো অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি - সৌজন্য গুগল

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...