এতদিন জানতাম যাঁর টাকা আছে তাকে নিয়েই আলোচনা হয় সব জায়গায় ঘরে বাইরে সর্বত্র। কিন্তু এই কলি যুগে এসে জানলাম টাকা নয়, টাক নিয়েও এখন জোর আলোচনা চলছে গোটা রাজ্য জুড়েই। কার জোর বেশি টাকার না টাকের সেটা নিয়েই এখন জোর কদমে চলছে যুদ্ধ দুপক্ষের মধ্যে। টাকাওলা মানুষদের মতে এসব ফালতু কথা বলে কি লাভ। চিরকাল আমরাই এগিয়ে ছিলাম, আছি আর থাকবো। কিন্তু হাল আমলের এই টাক বাবুরাও তো ছেড়ে দেওয়ার বান্দা নন, তাদের মতে আগের কথা ভুলে যান সব। কবে কি দিন ছিল। কবে টাকার জোরে বাজার কাঁপিয়ে দাপিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা সেটা সব পুরোনো দিনের গল্প। এখন এই মা মাটি আর মানুষের জমানায় দিন বদলে গেছে অনেক। টাকার দিন এখন শেষ। এখন শুধুই টাক ওলাদের দিন শুরু। তাই ফালতু মেলা ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করবেন না তো। এই টাক আর টাকার যুদ্ধে সরগরম এখন আমাদের এই গোটা রাজ্য।
আসলে এই টাক নিয়ে এত কথা লিখতেই হতো না আমায়। যদি না তৃণমূলের এক দাপুটে বিধায়ক টাকমাথা লোকদের ডেকে নিয়ে এসে সংর্বধনা দিতেন। কারন তাঁর মতে টাকমাথার লোকরা বেশি জ্ঞানী আর বুদ্ধিমান হয়। ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা ১০০ জন টাক মাথার লোককে এনে তাদের সব বুদ্ধিজীবী হিসেবে ঘোষণা করে সংর্বধনা জানিয়েছেন সম্প্রতি। ফুল, পাঞ্জাবি, মিষ্টির প্যাকেট হাতে দিয়ে করজোরে নমস্কার করেছেন বিধায়ক সেই বুদ্ধিজীবীদের। শুধু এখানেই শেষ নয় তাঁর আশা ভবিষ্যতে তিনি আরও এই ধরনের টাক মাথার লোকদের জড়ো করে ঘটা করে টাকের প্রতিযোগিতা করবেন তিনি। সত্যিই তো এহেন পরিস্থিতিতে টাকওলাদের চাপে পড়ে টাকাওলারা যে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে সেটা আর সন্দেহ নেই।
মাথায় চুলের অভাব হলো টাক পড়া। কিছু ক্ষেত্রে পুরো চুল পড়ে যায়। আবার কারুর ক্ষেত্রে আংশিক চুল পড়ে যায়। পুরুষদের এই টাক পড়ে যাওয়াকে বলে আন্ড্রোয়োজেনিক অ্যালোপেসিয়া। অনেক সময় মানসিক চাপের জন্যও এই মাথার চুল পড়ে যায়। আবার এই টাক পড়া বংশগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যেও পড়ে। আর এই টাক যে সৃষ্টি করে সেই হরমোন যার নাম হলো ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন একটি শক্তিশালী যৌনো হরমোন এর জন্য দায়ী। তবে এই টাক মাথার পুরুষরা নাকি নারীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন আর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার এক গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। এছাড়াও জার্মানীর ইউনিভার্সিটি অব সারল্যান্ডের এক মনোবিজ্ঞানী তাঁর গবেষণায় উঠে এসেছে যে, টাক মাথার লোকদের বুদ্ধি ও জ্ঞান বেশি অন্যদের থেকে। এমনকি মিশরের সভ্যতার ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে যে সেই সময়েও টাক মাথার লোকদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই টাক কিন্তু সেই প্রাচীন আমল থেকেই বিদ্যমান।
তাহলে আর এত টাক নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় কেনো। যে কথা বলে টাকপড়া লোকদের ডেকে এনে ফুল মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে সেটা তো তাহলে ঠিক কাজই করা হয়েছে তাই না। সমালোচনার কোনো জায়গা নেই যে টাকলাদের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে। আসলে এই রাজনীতির অঙ্গনে নতুন কিছু অনুষ্ঠান করলেই কেমন যেন হৈ চৈ পড়ে যায়। রে রে করে ওঠে অন্য পক্ষ। টাক আর টাকার এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায় সাধারণ আম জনতাও। কেউ বলেন এই মা মাটি মানুষের আমলে সবকিছুই সম্ভব। সে টাক হোক, আর টাকা হোক যাই হোক। যেভাবে হোক প্রচারে তো থাকা যায় এইসব নানা অনুষ্ঠান করে।
তবে এতদিন যাদের টাকলু, চান্দু, ফুটবল মাঠ, ঠুল্লা এমন সব অবজ্ঞা আর উপহাস সহ্য করেই চুপচাপ মুখবুজে থাকতে হয়েছে। এই তৃণমূলের নতুন টাক তত্ত্বে কিছুটা হলেও হালে পানি ফিরে পেয়েছে তারা। পিছিয়ে পড়া এই টাকওলা মানুষগুলো কেমন যেনো একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো তারা। আর গোবেচারা চেহারার ওই সব টাকমাথার লোকগুলো এখন কেমন বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা ওই টাকাওলাদের পাশে। সত্যিই অসাধারণ এই তৃণমূলের বিধায়কের টাক তত্ত্বের দর্শন।
এই বাংলার রাজনীতিতে টাকওলা নেতার দেখা খুব কম মেলে। তবে বিদেশে কিন্তু টাকওলা নেতা অনেক। সেই চার্চিল থেকে লেনিন, মুসোলিনি থেকে গর্বাচেভ, ক্রুশ্চেভ, পুতিন এমন জগৎ বিখ্যাত নেতারা তাদের টাক মাথাজোড়া টাক নিয়ে রাজত্ব দাপিয়ে সামলে গেছেন। আর বিখ্যাত টাক নিয়ে সেই অনুপম খের আর রজনীকান্ত তো সুপার হিট। তাহলে আর এই টাক নিয়ে দোষ কথায় বল মা সেই গান গাইতে হয়। হ্যাঁ, সত্যিই তো তাহলে আর ওই শুধু টাকওলাদের সংবর্ধনা দেওয়াতেই বা দোষ কোথায়।
এক সমীক্ষা বলছে পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়ে। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের পুরুষদের চুল পড়ার হার ১৬ পার্সেন্ট থেকে বেড়ে ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে সেই হার ৫৩ পার্সেন্ট হয়। তাই টাক যে বয়স হলেই পড়ে সেটা কিছুটা পরিষ্কার। হয়তো একটু বয়স হলে জ্ঞান বুদ্ধি আর বিবেক বৃদ্ধি পায়। আর তাই বুদ্ধিও বেড়ে যায় অনেক। সেই কথা মাথায় রেখেই হয়তো বিধায়কের এই নতুন কর্মসূচি গ্রহণ। আর যাঁদের জন্য এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তাঁদের মুখে বেশ চওড়া হাসি। কারণ চল্লিশে টাক পড়ে গিয়ে ঘরে বাইরে সর্বত্রই একটা হাসির খোরাক হতে হতে হঠাৎ করেই এই সংবর্ধনা আর প্রশংসা পেয়ে তাঁরাও সব কেমন যেন বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে বলছেন, জয় মা মাটি মানুষের জয়। জয় আমাদের টাকের জয়।
নবকলেবরে টাক চর্চা সৌজন্যে : শওকত মোল্লা
অভিজিৎ বসু।
তেইশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে গুগল ও সংগ্রহ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন