সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সৌম্য সিনহা

সাদা জীবনের কালো কথার মানুষদের কথা তো রাতেই মনে পরে আমার। অন্ধকার রাতে তারা হানা দেয় সব আমার কাছে চুপি চুপি। আজ যার কথা লিখতে বসলাম তাঁর সাথে আমার যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল আমার ইটিভির চাকরি জীবনে এমনটা কিন্তু নয়। তবু কেমন একটা টক ঝাল মিষ্টি মধুর সম্পর্ক আর নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ইটিভির আপাত রাগী বসকে নিয়ে বা এই দাদাকে নিয়ে। কাজের সূত্রে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা আজও মনে বেঁচে আছে আমার। যেটা লিখতেই আজকে আমার এই কলম ধরা। 


সেই ইটিভির বিখ্যাত সৌম্য সিনহা। সেই মহাকরণের রিপোর্টার সৌম্য সিনহা। সেই দূর্দান্ত হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল একজন হৈ চৈ করা আর হুল্লোড় করা মানুষ। যে সবসময় আনন্দে আর মহানন্দে থাকেন তাঁর এই কর্মক্ষেত্রে। বেশ রঙিন পোশাক পরে একদম রঙিন মনের একজন মানুষ। আর সব সময় সেই রঙিন সিনেমা, যাত্রা এই সব লোকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বেশি। সেই আমাদের কলকাতার বহু চিফ রিপোর্টার এর পরে এসপি বদলির মত বদলি হয়ে এলেন সৌম্য সিনহা। খবর নিয়ে কোনো ঘটনা হলে মিস করলে এত রেগে যেতেন ভয়ে হাত পা সিঁটিয়ে যাবার অবস্থা হতো আমাদের সেই দূরের জেলায় বাস করেও। কিন্তু পরক্ষণেই রাগ শেষ ফোন করে বলা এই শোন ওই সব যা বললাম কিছু মনে করিস না কিন্তু তুই। হ্যাঁ এটাই আমাদের সৌম্য সিনহা।

জেলায় কাজ করলেও সেই কলকাতার আশপাশের চার জেলার হাওড়া , হুগলী, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কিছু অংশ কলকাতার সংলগ্ন হয়ে যাওয়ায় সেই এলাকার সব খবর সন্ধ্যা ছটার খবর মেট্রো বুলেটিনে যেতো। আর সেটা নিয়ে আমাদের চার রিপোর্টার আমি অভিজিৎ বসু হুগলী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় হাওড়া, উওর চব্বিশ পরগনাতে সমীরন পাল আর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রিপোর্টার সুরজিৎ দেব এর মধ্যে বেশ সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা চলতো। কোনোদিন হাওড়ার শাশ্বত বেশি খবর দেয় মেট্রো বুলেটিনে। সেই ওর বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় যে ফোনে মাঝে মাঝে আমায় বলতো দাদা আজ আমরা জিতে গেলাম কিন্তু তুমি পারলে না। আমাদের চারটে স্টোরি দেখালো কলকাতা কলকাতা বুলেটিনে। হুগলী আজ হেরে গেলো দাদা।

 পরদিন আমার এলাকায় বেশি খবর হতো আমরা বেশি স্টোরি পাঠাতাম। আর সব দেখাতো সেই সময়। এই যে মেট্রো বুলেটিন শহরের বিভিন্ন স্থানের খবরকে তুলে ধরা সেটা ইটিভির সেই কলকাতা কলকাতা মেট্রো বুলেটিনের কনসেপ্ট। আর খবর পড়ছে হায়দরাবাদ থেকে বিখ্যাত সেই গম্ভীর গলায় অয়ন ভট্টাচার্য্য আর সেই কাকলী গোস্বামী। পুরোনো দিনের সেই খবর পরিবেশন করা উত্তম সুচিত্রা জুটি ওরা। যাক এইভাবেই কেটে যায় সুখে আনন্দে দিন আমাদের। 

আর এর মাঝেই তিন মাস অন্তর হায়দরাবাদ এর সেই চেয়ারম্যান এর মিটিং। আর তাঁর কাছে কি কাজ করলাম কি অসুবিধা তার রিপোর্ট লিখে পাঠাতে হবে সব রিপোর্টারদের। সেই রিপোর্ট লেখায় কি লিখবো বহুদিন বলে দিয়েছে আমায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যেহেতু আমি ইংরাজি ভাষায় লিখতে বলতে পারিনা এখনও এক অবস্থা আমার যদিও সেটা প্রকাশ করতে কোনো লজ্জা নেই আমার। একবার হলো কি আমি রিপোর্টে উল্লেখ করলাম শনিবার আর রবিবার আমাদের জেলার এই কলকাতা সংলগ্ন চার জেলার স্টোরি আমরা ফাইল করলেও সেই স্টোরি যাচ্ছে না। জায়গা পাচ্ছেনা বুলেটিনে। 

কারণ কি না শনিবার আর রবিবার সব বিভিন্ন সিনেমার শিল্পীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আসতেন সৌম্য দা ঘুরে ঘুরে। আর সেই সব দেখানো হতো কলকাতা কলকাতা বুলেটিনে। আর ত্রিশ মিনিটের খবরে সিনেমার নায়ক আর নায়িকার ইন্টারভিউ দেখানো হচ্ছে কুড়ি মিনিট বা আঠারো মিনিট। লিখে তো দিলাম আমি রাগের মাথায়। স্টোরি করবো খেটে ঘুরে আর মুখ দেখাবেন চিফ রিপোর্টার নিজে একা। তখন কি আর আমি জানতাম এর কি ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে।

 বিকেলে হায়দরাবাদ এর চেয়ারম্যান মিটিং শেষ হলো। মিটিং থেকে বেরিয়ে সেই ভয়ঙ্কর ফোনটা এলো আমার কাছে। সেই রিলায়েন্স এর ছোটো ফোন থেকে অফিস যে ফোন আমাদের দিয়েছিল। তুই এসব লিখে দিলি চেয়ারম্যান রিপোর্টে। একটু আমাকে জানালি না তুই একবারও অভিজিৎ। আমি তো তখন হুগলী জেলার শ্রীরামপুরে ইটিভি অফিসে দাঁড়িয়ে কাঁপছি ভয়ে। মুখ দিয়ে কোনো কথা সরছে না আমার একদম চুপ। অন্য প্রান্তে তখন শুধু চিৎকার। আমি ফিরে আসছি দাঁড়া বলে ফোন কেটে দিলেন তিনি। 

আমি পরে শুনলাম যারা সেই মিটিং এ হাজির ছিলেন চেয়ারম্যানের সামনে আমার লেখা সেই রিপোর্ট পড়ে চেয়ারম্যান স্যার রামোজি রাও বলেছিলেন it's a ক্রাইম। একটা খবরে শুধু একজনের ইন্টারভিউ হচ্ছে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট। তারপরের সপ্তাহ থেকেই বন্ধ হয়ে গেলো শনিবার আর রবিবার আমাদের সৌম্যদার ইন্টারভিউ নেওয়া। আমাদের অনেক খবর আবার যেতে শুরু করলো সপ্তাহের শেষ দুদিন। হায়দরাবাদ থেকে ফিরে এসে বেশ কিছুদিন গম্ভীর ছিলেন সৌম্য দা। আমিও ভয়ে আর বেশ কিছু দিন ফোন করতে পারিনি সাহস করে। হঠাৎ একদিন নিজেই ফোন করলেন এই অভিজিৎ শোন একটা অনুষ্ঠান আছে ভাইফোঁটাতে তোকে করে দিতে হবে কিন্তু। তোর জেলায় যাবে বুঝলি। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম কে সৌম্য দা। বললেন শতাব্দী রায়। ওর মামার বাড়ি হবে বোধহয় উত্তরপাড়ায়। ফোঁটা দেবে এটা করে দিস তুই।

 সব ফিল্ম আর্টিস্টরা বেশ খাতির করতো সৌম্যদাকে। গিয়ে বললেই হতো ইটিভি থেকে এসেছি দিদি। সৌম্য দা পাঠিয়েছে বাস আর কোনো কথা নেই সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যবস্থা রেডি। শতাব্দী রায় এর ইন্টারভিউ নিয়ে পাঠালাম আমি কলকাতা অফিস। ফোন করে বললাম দাদা পাঠালাম। তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো শতাব্দী রায়। এটা শুনে বেশ খুশী সৌম্য দা। একদম এই আকাশে রোদ আর এই বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া।

 সেই দিনকার ঘটনা যদি আজকের দিনে কোনো চ্যানেলের চেয়ারম্যানের সামনে বলতাম আমি। এই কথা যে বস এর জন্য আমরা স্টোরি করে দেখাতে পারছিনা তাহলে কি যে হতো আমি নিজেই জানিনা যে সেটা। চাকরি তো থাকতই না আমার। আর কলকাতার মিডিয়ার হাউসে এই খবর প্রচার হতো এই ছেলেটি বসের অমান্য করে চলে কথা শোনেনা একদম। অতএব একে বাতিল ঘোষণা করে দাও বাজার থেকে। না, সৌম্য দা ফিরে এসে আর কিছুই করেনি আমায়। এটাই বোধহয় সেদিন এর সাথে আজকের মিডিয়ার কিছুটা পার্থক্য। 

সত্যিই আজ মনে হয় সেই দিন, সেই দিন এর মানুষ গুলো আজ কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে। সৌম্যদার সঙ্গে বহুকাল দেখাই হয়নি আমার ইটিভি ছেড়ে দেবার পরে। কথাও হয়নি বহুদিন মাঝে শুনেছিলাম মনো রোগের চিকিৎসা করেন তিনি হাওড়া জেলায় চেম্বার করেছেন। একদিন ছবিতে দেখলাম জাগো বাংলার অফিসে কোনো অনুষ্ঠানে হাজির তিনি। ফোন করে ফেললাম কিছুটা সঙ্কোচে আর ভয় নিয়ে। বললো বল কি খবর রে তোর। বললাম দাদা মিডিয়া ছেড়ে আমি এখন বেকার আরকি। শুনলেন তিনি কিছুই বললেন না। শুধু বললেন আমি এখন বড় একটা এডিটর পোস্ট এ কাজ সামলাই সব এখানে মুখে সেই উজ্জ্বল চওড়া হাসি।  

সেই কংগ্রেসের নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর বেশ কাছের মানুষ ছিল সৌম্যদা। হাওড়া জেলায় বাড়ী তাঁর। যদিও হাওড়া জেলায় বাড়ী আমাদের হীরক কর এরও। কিন্তু এই দুজনের যে খুব বেশি সখ্যতা ছিল বলে আমার অন্ততঃ মনে হয় না। যাক সে প্রসঙ্গ থাক।কিন্তু সেই বাম আমলে রাইটার্স বিল্ডিং এ প্রথম আমলের টিভি চ্যানেল এর রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সেই লাল বাড়ী, সেই ইটিভির বুম নিয়ে ঘুরেছেন মহাকরণে জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সেই প্রশান্ত শুর, সেই রেজ্জাক মোল্লা, সুভাষ চক্রবর্তী, গৌতম দেব, এদের আমলে। এটা সত্যিই একজন রিপোর্টার হিসেবে এটাতো অনেক গর্বের বিষয়। 

আজ মনে হলো আমার সৌম্যদার কথা তাই আমি আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে লিখে ফেললাম কিছু আমার মনের কথা। জানিনা কেউ লেখা পড়ে খুশি হয়ে বলবেন ভালো। কেউ বলবেন এসব ভালোর মাঝে অনেক কালো আছে সেসব কোথায় গেলো। কিম্বা আমি বাদ পড়লাম কেনো। আসলে আমার অনুভূতি, আমার অভিজ্ঞতা, আমার স্মৃতির পাতায় আঁকিবুঁকি কাটার চেষ্টা করা মাত্র। এই সাদা জীবনের কালো কথা তো শুধু মাত্র তাই। আর কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখা নয়। 

আমাদের সৌম্য সিনহা - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...