এত শুভ বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা পেয়ে গেলাম সকাল সকাল মনটা কেমন যেন খুশ খুশ লাগছে আমার। এত শুভ কামনার লোক চারিদিকে গিজগিজ করছে ভেবেই কেমন যেনো থমকে গেল আমার এই আলসেমির সকালটা। সত্যিই দশমীর আলসেমির সকালে দোয়েল পাখির মন কেমন এর শিষ আর মানুষের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো দেখে ভাবলাম এত মানুষ কি সত্যি সত্যিই মানুষের শুভ চায়। না কি নিছক এটা একটা অভ্যাস বসত শুভ কামনার ফিকির এর বেড়াজাল মাত্র। কে জানে, মনটা কেমন যেনো থমকে যায় আমার পূজো শেষের ভোর বেলায়।
যে মানুষটা সারা বছর কোনো খোঁজ খবর রাখে না তারও শুভেচ্ছা বার্তা লটকে আছে আমার ধূলি ধূসর দেওয়ালে কেমন টিমটিম করে। কেউ হাসছে, কেউ মিষ্টি দিচ্ছে, কেউ বলছে সামনের বছর আবার এসো মা, আবার কেউ পাতায় লিখছে শুভ বিজয়া।
শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা সহায়।।
শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা সহায়।।
শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা সহায়।।
হ্যাঁ, বিজয়ার পর গঙ্গার ঘাট থেকে ফিরে এসে সেই ভেজা পায় ছোটো বেলায় মামার বাড়ির বারান্দায় বসে টালির চালের নিচে মশার কামড় খেতে খেতে লাল আলতা আর কলা পাতায় একশো আট বার লিখতে হতো এই কথা। মা দাঁড়িয়ে থাকতেন বানান ভুল ধরবেন বলে।
গুনে গুনে লেখা দুর্গা মাতা সহায়। বাড়ির বড়ো থেকে ছোটো সবার হাতে সেই কাঠির কলম। সেই লাল আলতার মধ্য ডুবিয়ে লেখা দুর্গা মাতা সহায়। সবার ছোট আমি ধীরে ধীরে কাঁচা হাতে বানান দেখে দেখে লিখতাম এই কথা। আমার পাশে দিদা বসে থাকতো বলতো ভাই ঠিক করে লেখো তুমি। কোনো ভুল হয়না যেনো। তাহলে কিন্তু মা দুগ্গা রাগ করবেন। বারবার উ আর ঊ এর বেড়াজালে আটকে যেতো আমার চলে যাওয়া মা দুর্গার সেই সুন্দর ঘামতেলে ভেজা মুখ, দীঘল টানা টানা চোখ, সেই সুন্দর চোখে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা।
মনটা বড়ো খারাপ খারাপ লাগতো যে। হাত সরতো না কিছুতেই আমার। আবার একবছর সময় লাগবে যে এমন দিন আসতে। কিন্তু সেই মন খারাপ যে বলা যাবে না কিছুতেই কাউকে। একে একে বড়রা কলাপাতায় লিখে সেটা রেখে দিচ্ছেন ঠাকুরের ঘটির মধ্য। গঙ্গায় ফেলা হবে এই লেখা পরদিন। তারপর একে ওকে বড়দের নমস্কার করা পায়ে হাত দিয়ে। মাথায় হাত বুলিয়ে বড়দের সেই হাসিমুখে আশীর্বাদ। মিষ্টিমুখ, কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়। তারপর নাড়ু, ঘুগনি, নিমকির মন ভালো করা গন্ধ মেখে প্রজাপতির ডানায় ভর করে উড়ে বেড়াতাম আমরা এই বাড়ী ওই বাড়ি বিজয়া দশমী সারতে। কেউ কিছু মনেই করতো না এত লোক বাড়িতে আসতো বলে।
সত্যিই বিশ্বাস করুন আজ এত মানুষের শুভেচ্ছা দেখে মনে পড়ে গেলো সেই ফেলে আসা অতীত দিনের শুভ বিজয়ার প্রীতি ম্যাচে নিজেদের চেনা মাঠে খেলতে নামার কথা। যে মাঠে খেলতে গিয়ে কোনো অস্বস্তি হতো না, দুঃখ লাগতো না, মনে হতো না এই বাড়ির সাথে তো যোগাযোগ নেই এক বছর ধরে তাহলে কি বিজয়ার প্রনাম করতে যাওয়া যাবে। তারা কিছু মনে করবে না তো। এই ভাবনা ভীড় করতো না সন্ধ্যা বেলায় ঠাকুর ভাসান দিয়ে আসার পর আমার ছোটো বিধুর মনে।
আজকাল কত সহজেই একটা মোবাইল বার্তায় সেরে ফেলা যায় এসব কিছুই। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে। ভালো থেকো তুমি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেও যে ভালো ভালো কথা বলেও,ভালো চেয়েও যে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়। এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের ঠিক ওই উ আর সেই ঊ এর মত সম্পর্ক রেখে, সেটা বোঝা যায় দায়সারা কোনো ভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় দেখেই এই আধুনিক মোবাইল বার্তায়।
কোনো ভাবে গর্ত থেকে মুখ বের করে সেই গণেশের পায়ের কাছে চুপটি করে চোখ পিটপিট করে বসে থাকা তার বাহনের মতো। একটু যেনো জীবনের ঘেরা টোপ থেকে মুখ বের করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেই আবার ফের নিজের গর্তে ঢুকে পড়া। যেখানে নিজেকে আড়াল করে রেখে দেওয়া। কেমন হাসি হাসি মুখ করে সবাইকে খুশি খুশি ভাব দেখিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েও কেমন যেন একটা দূরত্ব বজায় রাখা। ঠিক যেনো ওই উ আর সেই ঊ এর দূরত্বের মত। যে দূরত্ব মেটেনা কিছুতেই এই মুঠোফোনের দুনিয়ায়। তবু তো সেই দূরত্ব বজায় রেখেও মুঠোফোনের এই ক্ষীণ যোগাযোগ, আর যে শুভেচ্ছার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এই আলসেমির সকালে সেটাই বা এই গর্তে ঢুকে পড়া জীবনের থেকে কম পাওনা কি। ভালো থাকবেন সবাই। শুভ বিজয়া।
শুভ বিজয়ার আলসেমির সকাল - অভিজিৎ বসু।
তেরো অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন